Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গথ: অৎসুইশির পুরস্কারজয়ী গা ছমছমে এক থ্রিলার

মেয়েটির নাম মেরিনো ইয়োরু, যার অর্থ ‘রাতের অরণ্য’। মেয়েটির চোখ, চুল সব ঘন কালো। সবসময় কালো পোশাক পরতেই পছন্দ করে। ওর ত্বকের রং ছিল ফ্যাকাশে সাদা। মনে হবে হয়তো কোনো দিন সূর্যের মুখই দেখেনি। সে ঘরের বাইরে বের হতো না, কারো সাথে মিশত না। চুপচাপ চারপাশের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতো। নৃশংস খুনের ঘটনায় ওর খুব আগ্রহ ছিল। অপরাধ দমনের জন্য না, বরং অপরাধ সংঘটিত হওয়া দেখতেই মজা পেতো। মেয়েটি শুধু একজন মানুষের সাথেই মিশতো, ওর ক্লাসমেট একটি ছেলে, যে নিজেও মেরিনোর মতোই ছিলো। দুজন মিলে একসাথে নৃশংস সব খুনের ঘটনার পেছনে নামলো।

কফিশপে অদ্ভুত এক ডায়েরি কুড়িয়ে পেলো মেরিনো, যেখানে খুনি নিজে তার করা বীভৎস সব খুনের ঘটনা বর্ণনা করেছে। সে আর তার ক্লাসমেট মিলে গভীর আলোচনায় মত্ত হলো বর্ণনা নিয়ে।

ঘটনাচক্র ১

তিন মাস আগে মাউন্টেন হাইকিং করতে গিয়ে এক পরিবার বনের মধ্যে একজন মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ দেখতে পেলো। কেউ তাকে বনে এনে টুকরো টুকরো করেছে। তারপর তার চোখ, জিহ্বা, কান, আঙুলসহ বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একটা একটা করে গাছগুলোতে পেরেকে ঠুকে লাগিয়ে রেখেছে। একটা গাছের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মেয়েটার বাম পায়ের বুড়ো আঙুল, উপরের ঠোঁট, নাক আর পাকস্থলী লাগানো। আরেকটা ক্রিসমাস ট্রির মতো করে সাজানো ছিল।

অন্যদিকে নাকানিসি কাসুমি নামে আরেকজনের লাশ পাওয়া গেছে বনের এক কুঁড়েঘরে। যাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে। মিজুগুশি নানামি নামের মেয়েটাকে ছুরি দিয়ে পেটে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারপর তার চোখগুলো টেনে বের করা হয়েছে, পেটের ভেতরের রং পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। মেয়েটার লাশ এখনো বনের মধ্যে পড়ে আছে। কেউ এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি।

ক্লাসমেটকে সাথে নিয়ে মেরিনো মাউন্টেনে গিয়ে খুঁজে বের করলো মিজুগুশি নানামির লাশ। কিন্তু পুলিশকে কিছুই জানালো না, কারণ অপরাধ দেখাতেই দুজনে মজা পায়, অপরাধীর অপরাধ ঠেকানো তাদের কাজ নয়। তবে ঘটনা মোড় নিলো অন্যদিকে, খুনির পরবর্তী টার্গেট হলো মেরিনো। এবার কি করবে তারা? 

Credit: Elise Bonita

ঘটনাচক্র ২

শহরে কেউ একজন মানুষের হাত কেটে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এর পেছনে কে আছে সেটা পুলিশ কিছুতেই খুঁজে বের করতে পারছে না। সিনোহারা হাত ভালোবাসতো। ওগুলো কেটে আলাদা করার ব্যাপারটা আসলেই বেশ সাহসী, নায়কোচিত একটা কাজ ছিল ওর কাছে। এমনকি তার কাছ থেকে পুতুলের হাতও রেহাই পেতো না। সিনোহারা একাকী বাস করতো, কিন্তু ওর বাসাই ওর জীবন ছিল। প্রতিদিন বাসায় ফিরে ফ্রিজ খুলে সাজিয়ে রাখা কাটা হাতগুলো দেখতো। হাত কাটা তার কাছে শৈল্পিক কাজ মনে হতো। এক কোপে দেহ থেকে হাত বিচ্ছিন্ন করতো, তারপর পকেটে পুরে নিয়ে চলে আসতো। ভিক্টিম কখনোই তার চেহারা দেখতে পেতো না।

কিন্তু অপরাধ সবসময় চাপা থাকে না, কখনো না কখনো কারোর কাছে প্রকাশ হয়েই যায়। মেরিনোর ক্লাসমেট ব্যাপারটি ধরে ফেললো, কিন্তু অপরাধ থামানোর বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, বরং অপরাধ দেখাতে তার যত আগ্রহ। সে তখনই পরিকল্পনা করলো, সিনোহারা কীভাবে মানুষের হাত কাটে সেটা লুকিয়ে দেখবে। ঘটনাচক্রে সিনোহারার পরবর্তী শিকার মেরিনো! এবার কী করবে ওর ক্লাসমেট? নিজের ইচ্ছে পূরণ করবে, নাকি অপরাধ থামাবে?

ঘটনাচক্র ৩ 

অপরদিকে, মেরিনো ইয়োরু আর মেরিনো ইয়ু যমজ বোন ছিল। মৃত্যু সম্পর্কে দুই বোনেরই খুব আগ্রহ ছিল। তারা বিভিন্ন উপায়ে মৃত মানুষ সেজে অভিনয় করতো, আশেপাশের মানুষজনকে চমকে দিতো। মারা গেলে অন্যরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটা দেখে মজা পেত। ইয়ু একটু দুর্বল প্রকৃতির ছিল, অল্পতেই ভয় পেত। অথচ তার বোন ইয়োরু বেশি নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিল। সমস্ত অপরাধ সে ছোট বোন ইয়ুকে দিয়েই করাতো। কাউকে কষ্ট পেতে দেখে সে খুব মজা পেতো। এজন্য বিভিন্ন ফন্দিফিকির বের করতো কষ্ট পাওয়া দেখতে। বাড়ির কুকুরটি পর্যন্ত রেহাই পেত না, এমনকি নিজের ছোট বোনকেও বাদ দিতো না। এমনই এক মজার ছলে একদিন আত্মহত্যার অভিনয় করতে গিয়ে তার ছোট বোন সত্যি সত্যিই গলায় ফাঁস লেগে মারা যায়।

নয় বছর পর একদিন সেই গল্পই ক্লাসমেটকে শোনাচ্ছিলো মেরিনো ইয়োরু। গল্প শুনেই ক্লাসমেট মৃতস্থান দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করলো। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গিয়ে উপস্থিত হলো সেখানে। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে এমন কিছু খুঁজে বের করলো, যা মেরিনো ইয়োরুর সমস্ত অস্তিত্বকেই নাড়িয়ে দিলো।

লেখক অৎসুইশি; Image: Goodreads
বাংলা অনুবাদক কৌশিক জামান; Image: Goodreads

 

পাঠ-প্রতিক্রিয়া

ধরতে গেলে এটাকে ছোট গল্পের বই বলা যায়, কিন্তু অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে উপন্যাসের ক্যাটাগরিতেই ফেলতে হয়। কেননা, দুজন মানুষের জীবনের ঘটনাগুলোই আলাদা আলাদাভাবে লেখা হয়েছে। গথ বলতে আসলে একটা সংস্কৃতি, একটা ফ্যাশন, আর একটা স্টাইলকে বোঝায়। অনলাইনে গথ কিংবা গসু সার্চ দিলে হাজার হাজার পেইজ পাওয়া যাবে। গথিকের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো গথ, কিন্তু এই নামে ইউরোপিয়ান স্থাপত্য স্টাইলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। বরং ভিক্টোরিয়ান লন্ডনের জনপ্রিয় গথিক হরর উপন্যাসের সাথেই এর সম্পর্ক। যেমন- ফ্রাঙ্কেনস্টাইন কিংবা ড্রাকুলা।

বইটি বিখ্যাত জাপানী থ্রিলার লেখক অৎসুইশি লিখেছেন। তার লেখা সেরা একটি বই হিসেবে মানা হয় গথকে। ২০০৩ সালে বইটি জাপানের সম্মানজনক ‘হনকাকু মিস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নেয়।

গত একবছর ধরে পাঁচবারের চেষ্টায় বইটা শেষ করেছি কয়েকদিন আগে। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কেন এতবার হাতে নিয়েও পড়তে পারিনি? তার একটাই উত্তর হতে পারে- নিষ্ঠুরতা। শুরু থেকেই যেসব খুনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো নৃশংসতায় ভরা। প্রতিটি গল্পের মধ্যে দুর্দান্ত সব টুইস্টের সমাহার। এখানে কোনো ইতিহাসের রহস্য নেই, নেই কোনো প্রাচীন গুপ্তজ্ঞান, কিংবা কোনো তথ্যের সমাহার। ধীর-স্থিরভাবে কাহিনী এগিয়ে নিয়েছেন লেখক, খুব বেশি প্যাঁচ রাখেননি গল্পে, কিন্তু তার মধ্যেও যা উপস্থাপন করেছে, এককথায় বলা যায় অসাধারণ।

ব্যতিক্রমী চরিত্রের উপস্থিতি বইটিকে অন্যসব থ্রিলারের থেকে আলাদা করেছে। বইতে লেখক হয়তো মেরিনো চরিত্রকে প্রাধান্য দিতে চেয়েছিলেন বেশি, কিন্তু তার থেকেও বেশি লাইমলাটে ফেলেছেন মেরিনোর ক্লাসমেটকে। পুরো বইতে একদম শেষে এসে ক্লাসমেটের নাম জানতে পেরেছি। 

বইটা পড়ে জাপানি থ্রিলার লেখকদের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ জন্মেছে। কেননা, এ ধরনের ব্যতিক্রমী থ্রিলার এর আগে পড়া হয়নি। আশা করি বইটি সবার ভালো লাগবে।

বইয়ের নাম: গথ || লেখক: অৎসুইশি
অনুবাদক: কৌশিক জামান || প্রকাশক: বাতিঘর প্রকাশনী
অনলাইন প্রাপ্তিস্থান: রকমারি.কম

This Bangla article is a book review of 'Goth'. It is written by Otsuichi and translated by Koushik Zaman into Bengali. It is a Japanese horror novel about two high school students fascinated by murder.

Featured Image: Shahjahan Shourov

RB-SM

Related Articles