Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লাইফচেঞ্জার (২০১৮): শরীরহীন এক সিরিয়াল কিলারের অস্তিত্বের গল্প

‘লাইফচেঞ্জার’ (২০১৮) আড়ালে পড়ে থাকা একটি ইন্ডি-হরর সিনেমা। স্বল্প আলোচিত এই সিনেমা, আলোচিত হবার দাবি রাখে হরর জনরার ভক্তদের মাঝে। প্রধান কারণ, এই সিনেমার অভিনব প্রিমাইজ। কাফকার বিখ্যাত উপন্যাসিকা ‘দ্য মেটামরফোসিস’ এর কথা সাহিত্য সমঝদারদের মাঝে তো বহুলচর্চিত। আলাদা করে ওটাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না। কিন্তু ‘দ্য মেটামরফোসিস’-এর কথা সিনেমার আলোচনায় কেন আসছে? আসছে কারণ, মেটামরফোসিসের ওই প্রাথমিক প্রিমাইজটাকেই বাঁকিয়েছে এই সিনেমা। সেই গল্পে, গ্রেগর সামসা রূপান্তরিত হয়েছিল পতঙ্গে। সেই পতঙ্গকে পরজীবী বানিয়েই যেন ‘মেটামরফোসিস’ গল্পের আইডিয়াটাকে পরিশোধন করে, একটা ভিন্ন রূপ দিয়েছে এই সিনেমা।

‘লাইফচেঞ্জার’-এর গল্পবয়ানের ভঙ্গী ‘ফার্স্ট পার্সন ন্যারেটিভ’ স্টাইলটাই অনুসরণ করে। একজন সিরিয়াল কিলারের পরিপ্রেক্ষিত থেকে গোটা গল্প বর্ণিত। প্রকৃতিগত দিক থেকে ওই সিরিয়াল কিলারকে পরজীবী বললে ভুল হবে না! তার এই পরজীবীতাই তাকে খুন করতে তাড়িত করে। ড্রিউ নামের এই সিরিয়াল কিলার কখনোই প্রকাশ্যে আসে না, শুধু একটা ভয়েস ওভার ন্যারেশান শোনা যায়। আসবে কী করে? তার নিজের শরীর নেই, আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করে সে ঘুরে বেড়ায়। সিনেমার প্রারম্ভিক দৃশ্যেই ড্রিউর সাথে দর্শকের পরিচয় হয়। এক নারীর শরীর ছেড়ে তার প্রেমিকার শরীর চুষে ছিবড়ে বানিয়ে ওই রূপ নেয়। ড্রিউ যখন কোনো একটা শরীরে অবস্থান নেয়, একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সেই শরীর ক্ষয় হতে শুরু করে। ড্রিউ তখন অন্য শরীরে আশ্রয় নেয়।

শুরুর দৃশ্যের সেই শরীর বদলানো; Image Source: Free Films

ড্রিউ শুধু শরীরটাই নিয়ে নেয় না, সাথে সেই শরীরের প্রকৃত মালিকের সমস্ত স্মৃতি; চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে নিজের মাঝে। এই কারণেই সর্বদা ধোরাছোঁয়ার বাইরে থাকে ড্রিউ। নিজের এই অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের যন্ত্রণা কাঁধে বয়ে সবসময় ছুটে বেড়িয়েছে ড্রিউ, কিন্তু জুলিয়া নামের এক নারীর সংস্পর্শে নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, অন্যের শরীরে বাস করা ড্রিউ। এত এত খুন করেও কারো জন্য বিন্দু পরিমাণ অনুশোচনা তার জাগেনি। অন্য কারো কথা ভাবেনি  জুলিয়ার ঘনিষ্ঠতা লাভ করার পূর্বে। কিন্তু যে মানুষটির প্রেমে জুলিয়া পড়েছে, সে তো ড্রিউ নয়। ড্রিউর এই কুৎসিত সত্য সে প্রকাশ করবে কী করে? আর এই শরীরই বা কতদিন? শীঘ্রই যে তার নতুন শরীর চাই, নিজের তাগিদেই। 

‘লাইফচেঞ্জার’ বডি হররের আদলে বেড়ে ওঠা রুদ্ধশ্বাস গতির ক্রাইম-থ্রিলার সিনেমা। চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক জাস্টিন ম্যাককনেল প্রারম্ভিক দৃশ্যে শুরু হওয়া আত্মকথনের মাঝপথেই দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন এই দক্ষ সিরিয়াল কিলারের সাথে; মূলত তার অন্ধকার দিকগুলোর সাথে। আর সেখান থেকেই তার সকল অসুস্থ কর্মের সাক্ষী হয়ে দর্শকের চলতে থাকা। কিছু মনোলগ দিয়েই ড্রিউর এই রূপান্তর; তার প্রথম খুন, সবকিছুর টুকরো বিবরণ জানতে পারে দর্শক। ড্রিউর খোলস হিসেবে ব্যবহৃত নতুন নতুন দেহের ব্যক্তিত্ব, বৈশিষ্ট্য, স্বরকে ছাপিয়ে, উঠে আসে ড্রিউর নিজস্ব ভারি একটা স্বর। বয়সের ছাপ তাতে স্পষ্ট। দুটো আলাদা চারিত্রিক দিক এখানে ধরা পড়ে। একটা দেহেই সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর দু’টি চরিত্র এবং একইসময়েই তাদের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য সামনে আসে। একটা দেহের মালিকের, আরেকটা ড্রিউর।

একইসময়ে এভাবে ভিন্ন দু’টি জিনিসকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, শুনতে যতটা কঠিন মনে হয়, ততটাই কঠিন। কিন্তু বেশ চতুরতার সাথেই পুরো ব্যাপারটায় ভারসাম্য রেখেছেন ম্যাককনেল। সত্যিকার অর্থে; কে এই ড্রিউ, ভ্রুকুটি কেটে সেই জিজ্ঞাসা দর্শকের মনে জাগলেও, সিনেমার গতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে সেটা নিয়ে স্থির হয়ে ভাবার অবকাশ পায় না দর্শক। ক্রমাগত নতুন দেহের পরিবর্তনের ধারায় ক্ষয় ও দেখা দিতে থাকে দ্রুতগতিতে, গল্পবলায় এই গতি ধরে রাখতে গিয়ে কোনো চরিত্র সেভাবে দর্শকের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠে না, জুলিয়া চরিত্রটি ছাড়া। তবে স্বভাবতই তা হওয়ার কথা, যেহেতু, ড্রিউর দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প বর্ণিত। একমাত্র জুলিয়াকেই যেহেতু সে প্রাধান্য দিয়েছে, তাই ওই চরিত্রটি সম্বন্ধেই ভালো করে জানবার অবকাশ আছে। ওই চরিত্রটি গঠনেই বেশ সময় দেওয়া হয়েছে। সতর্কতার সাথে এবং খুব সহজে সংযুক্ত হওয়া যায় তেমন উপায়েই গঠন করা হয়েছে জুলিয়া চরিত্রটি। 

ড্রিউর নতুন শরীর এবং জুলিয়া; Image Source: Free Films

ম্যাককনেলের, বুদ্ধিদীপ্ত এবং ধূর্ত একটি ধারণা নিয়ে নির্মিত, এই সিনেমায় বেশকিছু হরর সিনেমার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। খুব কাছাকাছি যে দুটোর ছায়া চোখে পড়ে, তা হলো- বডি হরর সিনেমার পথিকৃৎ ডেভিড ক্রোনেনবার্গের ‘দ্য ফ্লাই’ (১৯৮৬) এবং নরবার্ট কেইলের ‘রিপ্লেস’ (২০১৭)। লাইফচেঞ্জারের গল্পের ডালপালা বাদ দিয়ে একদম শেকড় যদি দেখতে যাওয়া হয়, ‘শিকারী তার শিকারের মায়ায় পড়ে গেছে’, গল্পের এই কোণ আরো প্রচুর সিনেমাতেই ব্যবহার হয়েছে। তবে উপস্থাপনের ভঙ্গিতে ‘লাইফচেঞ্জার’ আলাদা। স্ল্যাশার সিনেমার উপাদান সম্বলিত। কিন্ত উপাদানগুলোর ব্যবহারে একটা স্বতন্ত্রতা আছে এর মাঝে।

তবে যে ব্যাপারটি এই সিনেমাকে আলাদা করে দেখতে বাধ্য করে, তা হলো এই সিনেমা তার অ্যান্টি-হিরোর প্রতিটি বিবরণে যেভাবে নজর দিয়েছে। এবং যেখানটায় আলাদা হয়েছে, তা হলো, এটি সিরিয়াল কিলারের শিকারের গল্প নয় বরং তার নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম। ড্রিউর আবেগের জায়গাগুলো যতটা অনুনাদি হয়ে ধরা দেওয়ার কথা ছিল, তেমন নয়। অনুনাদি করে তোলার চেষ্টাও করেননি ম্যাককনেল। ড্রিউর আবেগের বহিঃপ্রকাশে যখনই দৃশ্যগুলো ভারি হয়ে আসতে চাইছিলো, তখনই গল্প বাঁক নিয়েছে। এই বৈপরীত্যই যেন নিয়ম, যার ব্যত্যয় ঘটেনি পুরো সিনেমায়। এই সিরিয়াল কিলার ড্রিউর কণ্ঠ দিয়েছেন হরর সিনেমার পরিচিত মুখ বিল ওবের্স্ট জুনিয়র।

অস্তিত্ব সংকট, মানুষের অস্তিত্ব টেকানোর চিরন্তন লড়াই, পরিচিতির দ্বন্দ্বের মতো গুরুগম্ভীর বিষয়াদিতে আলোকপাত করেছে এই সিনেমা, জনরা অলংকার গায়ে রেখেই। অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন যেভাবে তুলেছে, তা এর দৈর্ঘ্য আর জনরা অলংকারের উপস্থিতির কথা ভাবলে, অনেকটাই তল ছুঁতে পেরেছে বলা যায়। মি-টু পরবর্তী সময়ের একটা ছাপও আছে বলে মনে হয়। তবে সেটা সুস্পষ্ট আকার পায়নি।

শরীর ক্ষয় হতে যখন শুরু করে; Image Source: Free Films

ম্যাককনেল মূল কাজটা করেছেন খুবই নিগূঢ়, অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা আবহ তৈরিতে। কারণ তার এই গোটা সিনেমাটা যে আবহনির্ভরই। সংলাপে খুব বেশি এক্সপোজিশনের ব্যবহার করেননি, যার কারণে রহস্যময় আমেজটা ভালোভাবেই তৈরি হয়েছে। একটা বিষণ্ণতার ছাপও তাতে আছে। নিয়ন আলোয় যা আরো অভিঘাতী হয়ে ধরা দেয়। নগরের পাঁচিলে লুকানো ওই অস্তিত্বের সংকটটাকে তখন আরো ভালোভাবে বুঝতে পারা যায়। এভাবেই, চিত্রনাট্যের সাথে সাযুজ্য রেখে সঠিক নান্দনিকতাই বেছে নিয়েছেন পরিচালক। ফলস্বরূপ, ভিজ্যুয়াল ভাষাটা হয়েছে যথাযথ।

সিন ব্লকিং, শট কম্পোজিশনে পরিষ্কার পরিকল্পনার ছাপটাই চোখে পড়ে। বাজেটের সংকীর্ণতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চমৎকার প্র‍্যাক্টিক্যাল ইফেক্টস উপহার দিয়েছে এই সিনেমা। প্র‍্যাক্টিক্যাল ইফেক্টস ব্যবহারের স্টাইল অনেকটা আশির দশকের ক্লাসিক হরর সিনেমার কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে এই সিনেমা দারুণ রূপ পেয়েছে সম্পাদনার টেবিলে। খুবই তীক্ষ্ণ সম্পাদনা।

শেষত বলা যায়; আবেগীয় বিষয় আর দ্বন্দ্ব খুব বেশি অমোঘ রূপ না পেলেও, মাত্র ৮৪ মিনিটে ‘লাইফচেঞ্জার’ তার অভিনব ধারণা আর গূঢ় বক্তব্যকে কার্যকর করে উপস্থাপন করতে পেরেছে। বডি হরর সাবজনরায় একটা ভিন্নরকম সিনেমা হয়েই থাকবে, লাইফচেঞ্জার।

This bengali article is a review of the film 'Lifechanger' (2018). It's an unique body horror film. It's about a shape shifter serial killer! An intriguing piece of work. It's the debut film of Justin McConell.

Featured Image: Daily Movies Hub

Related Articles