Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘ওয়াচার’ এন্ড ‘মেন’: যেখানে ঘাড়ের উপর পড়তে থাকে পুরুষশাসিত সমাজের কদর্য নিঃশ্বাস

‘ওয়াচার’ এবং ‘মেন’ দুটোই ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা। জনরার দিক থেকে দুটোই হরর এবং সাইকোলজিক্যাল ড্রামার অলংকার সমানভাবে শেয়ার করেছে। তবে যে কারণে একই আর্টিকেলে দুটোকে বাঁধা তা হলো, দুটোতেই কেন্দ্রীয় চরিত্রে আমরা দুই ট্রমাটাইজ তরুণীকে দেখি। এবং পৃষ্ঠতলে যা আছে তো আছেই, কিন্তু ভেতরের বক্তব্য অনুযায়ী তারা দুজনেই ট্রমাটাইজ মূলত এই পুরুষশাসিত সমাজের কুৎসিত হাসি আর ঘাড়ের উপর নোংরা নিঃশ্বাসের কারণে। সেই নারীবাদী কোণ এবং বাস্তব জীবনের হরর থেকেই এক পিঠে বাঁধা হয়েছে এই দুটো সিনেমার আলোচনাকে।

ওয়াচার ২০২২

হিচকক এবং ব্রায়ান দে পালমার থ্রিলারকে ড্রামাটাইজ করে এবং পৃষ্ঠতলের নীচে ‘পোস্ট মি-টু’র কণ্ঠস্বর রাখা সিনেমা হলো ‘ওয়াচার’ (২০২২)। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার জনরার এই সিনেমা শুরু হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র জুলিয়া এবং তার হাজব্যান্ডের রোমানিয়া শিফট করা থেকে। জুলিয়া আমেরিকায় থাকাকালীন টুকটাক অভিনয় করতো। সফল হতে পারেনি। তাই বিয়ে করার পর, জীবনটাকে নতুন করে সাজানোর উদ্দেশ্যেই হোক কিংবা অতীতের অসফলতাকে ভুলে থাকার প্রয়াস হিসেবেই হোক, সে রোমানিয়াতেই থিতু হয় তার রোমানিয়ান পতির সাথে। ভাষাগত একটা বাঁধা সে শুরু থেকেই অনুভব করে। ভাষার বাঁধা, সংস্কৃতির ব্যবধান, স্বামীর সময় না দেওয়া; সবকিছুই তার নির্জীবতাকে বাড়িয়ে তোলে।

একাকীত্ব কুঁড়েকুঁড়ে খেতে থাকে তাকে, যার ঢালাও চিত্র না দিয়ে সূক্ষ্মভাবে সেই লেয়ার রাখাটা পরিচালকের অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত। তাইতো, পুরোনো আমলের প্রকাণ্ড বাড়ির ওপাশের একটা ভবন থেকে আলোছায়ায় সিলুয়েট রূপে একটা আকৃতি যখন জুলিয়াকে দেখতে থাকে, জুলিয়া তখন পুরোপুরি ভীত আর অবসেসড হয়ে পড়তে থাকে এই কেইস নিয়ে। তার উপর শহর উপকূলে এক সিরিয়াল কিলারের উদ্ভব হয়েছে, যে তরুণীদের খুন করে তাদের দেহ ব্যবচ্ছেদ করতে আনন্দ পায়। সেই ভীতি জুলিয়াকে আরো কুঁকড়ে ফেলে। কারো সাহায্য না পেয়ে, জুলিয়া দ্বিখণ্ডিত আর ভয়ার্ত হয়ে পড়তে শুরু করে নিজের মাঝে। এরমাঝে তার পাশের ঘরেই পাওয়া যায়, মুণ্ডুবিহীন এক তরুণীর লাশ!

ওই চারদেয়ালের ঘরেই আসল ভীতি জুলিয়ার
Image Source- Imdb

‘ওয়াচার’-এর প্লট পড়ে খুব টানটান উত্তেজনার, সিরিয়াল কিলার এবং শিকারের ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলার কিছু মনে হলে, তা অনেকাংশেই ভুল। হ্যাঁ, সেই সমস্ত অলংকার এতে আছে। সুস্পষ্টরূপেই আছে। কিন্তু এর ব্যবহারটা হয়েছে অত্যন্ত ন্যূনোক্তিরূপে । সহজ রাস্তা না ধরে, এই সিনেমা একটি পরিণত সাইকোলজিক্যাল ড্রামা হয়েছে। ‘ওয়াচার’, জুলিয়ারই একটা চরিত্রনির্ভর ড্রামা হিসেবে এগিয়েছে। সিরিয়াল কিলারের চাইতেও এই সিনেমায় প্রধান বড় হুমকি হিসেবে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে এসে জুলিয়ার একা হয়ে পড়া। স্বামী যখন বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়, কোন পার্টিতে নিয়ে যায়- স্রেফ কাঠপুতুল হয়ে একটা মেকি হাসি মুখে ধরে রাখা আর কোন কিছু করবার থাকে না তার। জুলিয়ার বিষাদ, অবসাদগ্রস্ত অবস্থা ওখান থেকেই টের পাওয়া যায়। সিরিয়াল কিলারের ব্যাপারটা মূলত সেই নির্জীবতা আর অবসাদের ক্ষেত্রে একটা আন্ডারটোন হিসেবে কাজ করে।

ওই অবসাদে ঘেরা জীবন থেকে বের হতেই সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে তার ভীতিটা একটা অবসেশন বা আচ্ছন্নতা রূপে কাজ করেছে। সিরিয়াল কিলার তাকে দেখেছে একবার, কিন্তু সে মানসিক দ্বৈরথে পড়ে তাকে খুঁজতে চায় বারবার। যেন ওতেই তার নিষ্পত্তি, ওতেই অতীতের অসফলতার গ্লানি মিটবে। একটা ‘মি-টু’ টোনও ছিল সূক্ষ্ম এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে। জুলিয়ার বিষাদময় অবস্থা, স্বামীর কাছে তার গুরুত্ব এবং সিরিয়াল কিলারের আতঙ্ক; সবকিছুই একটা পুরুষশাসিত সমাজের চাপে তার দিশেহারা, উদ্বিগ্নতা, শ্বাসরোধ হবার মতো অবস্থাকেই উপস্থাপন করে। আর এমন চরিত্রে মাইকা মনরো নিখুঁত কাস্টিং। হরর সিনেমায় এমনিতেই বেশ সপ্রতিভ অবস্থানে আছে এই অভিনেত্রী। তার পূর্ববর্তী এক সিনেমা ‘ইট ফলোজ’-এরও একটা ভাব আছে এই সিনেমায়। 

নির্জন স্টেশনে ভীত মাইকা মনরো
Image Source- Imdb

সাথে হিচককের ‘রিয়ার উইন্ডো’ এবং সামগ্রিকভাবে হিচককিয়ান থ্রিলারের অনুষঙ্গ, ব্রায়ান দে পালমার ‘ড্রেসড টু কিল’, ‘বডি ডাবল’ এসব সিনেমার ট্রিটমেন্ট স্টাইল ‘ওয়াচার’-এর আবহে বেশ ভালোভাবেই অনুভূত হয়। অভিষিক্ত পরিচালক ক্লোয়ি ওকুনো বেশ দক্ষ আর পরিণত ফিল্মমেকার হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছেন। একদম জনরা কাজের মোড়ক নিয়ে একটা সাইকোলজিক্যাল দ্বন্দ্ব ও জটিলতা নির্ভর সিনেমায় যেমন বোঝাপড়া দরকার, তার বজ্র আঁটুনিতে, সেটুকু যথাযথ ভাবেই ছিল। আবার শেষ অংকে জনরা টুইস্ট দিয়ে, জনরা সিনেমার ভক্তিটাকেও অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। আবহনির্ভর পরিচালক তিনি। সাথে রোমানিয়ার বিচ্ছিন্ন স্বভাবটাও এসেছে স্পষ্টরূপে। প্রাচীন স্টাইলের প্রকাণ্ড বাড়িগুলোর জীর্ণ করিডোর আর দূর স্বভাবকে একদম নিখুঁতরূপে ক্যামেরায় তুলেছেন তিনি। এসবে মিলিয়ে ‘ওয়াচার’ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই।

মেন ২০২২

সিনেমার একদম প্রারম্ভিক মুহূর্তের একটি দৃশ্যে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় চরিত্র হার্পার মার্লো নতুন জায়গাটায় এসেই, আপেল গাছ থেকে আপেল পেড়ে খাচ্ছে। এবং পরবর্তীতে প্রোপার্টির মালিকের সাথে কথাবার্তায়, মালিক হুট করে বলে বসে, ওটা যে নিষিদ্ধ গাছের নিষিদ্ধ ফল! পরমুহূর্তেই অবশ্য মার্লোর কাছে স্পষ্ট করে যে, ওই কথাটা স্রেফ রসিকতা করেই বলা। কিন্তু বিব্লিক্যাল রূপকটা ঠিকই রয়ে যায়। নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে অ্যাডাম আর ঈভ হয়েছিল স্বর্গচ্যুত। প্রচলিত আছে, ওটা ছিল জ্ঞানবৃক্ষ। তবে এক্ষেত্রে? হ্যাঁ, জ্ঞানবৃক্ষই তো। ওই আপেল ছিল একটা অনুষঙ্গ। খাওয়ার পর ধীরেধীরেই তো নানান সব অদ্ভুত আর ভীতিকর জিনিসের মুখোমুখি হতে থাকে হার্পার। সে যেন পুরাণেরই ঈভ। আপেল খেয়ে বুঝতে পারে আর দেখতে পায়, কতটা পুরুষতান্ত্রিক আর নারীবিদ্বেষে ভরা এই ধরণী! 

আপেল পেড়ে খাওয়ার দৃশ্যটি
Image- IMDB

হার্পারের অতীতটাও বিষময়। টক্সিক এক প্রেমিকের সাথে থেকেথেকে বিষিয়ে গেছিল তার জীবনটা। একদিন ঝগড়া তুমুলে হেল যখন হার্পার ছেড়ে যাবার কথা তুললো। প্রেমিক তাকে অক্টোপাসের আট শুঁড় দিয়েই বেঁধে রাখতে চায়। আত্মহত্যা করে হলেও। তার উদ্দেশ্য একটাই, হার্পারকে অসুখী দেখা। এবং তাই-ই হয়েছে যখন, আত্মহত্যা না করলেও দুর্ঘটনাবশত উপর থেকে পড়ে মারা যায় ওই প্রেমিক। হতাশা আর যাতনায় পিষ্ট হয়ে হার্পার এখানে এসেছিল নিজেকে জখম থেকে সারিয়ে তুলতে। কিন্তু সেটা আর হলো না। চার্চের ফাদার তার অতীত ঘটনায় মিনমিনে সুরে তাকেই দায়ী করতে চাইলো, যেহেতু এই পৃথিবীতে সব দোষের কথা চিরকাল মেয়েদেরই শুনতে হয়। হার্পার হতভম্ব হয়ে গেলো তাদের একপাক্ষিকতার মাত্রা দেখে। তার উপর হঠাৎ করে, সবুজরঙের চামড়ার এক নগ্ন পুরুষ ঘুরঘুর করতে লাগলো তার ঘরের আশপাশে। অবাক করা, ভীতিপূর্ণ, পরাবাস্তবিক সব ঘটনা ঘটতে লাগলো তাকে ঘিরে। চারপাশ থেকে পুরুষের বিদ্বেষী চোখ আর বিষবাষ্পের দেহ ঘিরে ধরে শ্বাসরোধ করতে লাগলো হার্পারের। 

অ্যালেক্স গার্ল্যান্ডের ‘মেন’ (২০২২) পুরোপুরিই একটা পরাবাস্তবিক আর রূপকধর্মী সিনেমা। স্টাইল আর বেশকিছু বিষয়াদি বিবেচনায় ড্যারেন অ্যারোনফস্কির সর্বশেষ আলোচিত সিনেমা ‘মাদার’ (২০১৭) এর একটা স্পিরিচুয়াল সাকসেসর বলা যায়। ওই সিনেমাও বিব্লিক্যাল রূপকে ঠাসা ছিল। সাথে ছিল প্রকৃতি ধ্বংস নিয়ে ক্ষুব্ধ বক্তব্য। তবে ওই সিনেমা যতটা বিস্তৃত তলের, ‘মেন’ ততখানি হতে পারেনি। অবশ্য নিগূঢ় হয়েছে ঠিকই। পুরুষের সুপিরিয়রিটি আর টক্সিসিটি নিয়ে, নারীকে অবদমিত রাখা এবং কুক্ষিগত রাখার সুদীর্ঘ ইতিহাস, একদম সৃষ্টির শুরু থেকে, নিয়ে বক্তব্য রেখেছে এই সিনেমা।

পুরোপুরি ওটারই উপস্থাপনা। কেন্দ্রীয় চরিত্র হার্পারকে চারদিক থেকে পুরুষের ঘিরে ধরা আর দোষারোপ করতে থাকাটাই সিনেমার একমাত্র তল। এবং এখানেই গার্ল্যান্ড তার গল্পের বিস্তৃত তলকে সংকীর্ণ করে ফেলেছেন। কেন্দ্রীয় চরিত্রের ট্রমা ছাড়া আর কোনকিছুকেই প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। চরিত্রটাকে বিশ্লেষণ করার মতো জায়গা এবং তার নির্যাতিত হবার অতীত ইতিহাস নিয়ে যথার্থ পরিমাণ তথ্য দেওয়া হয়নি। চরিত্রটা স্রেফ বৈষয়িক হয়েছে। ফলত, একমাত্রিকতায় পড়ে গেছে সিনেমাটা। এই কারণেই লেখনীর জায়গা থেকে পিছিয়ে আছে।

হারপার যেন ভীতি বয়ে এনেছে টানেল থেকে
Image Source- Imdb

কিন্তু আবার ভিজুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের ক্ষেত্রে এটা পুরোদমে গারল্যান্ডেরই সিনেমা হয়েছে। শেষ অংকে যেভাবে ভয়ানক অস্বস্তির এক বডি হরর সিনেমা এটি হয়েছে, তা একটা অন্যরকম জায়গাতেও নিয়ে গিয়েছে এই সিনেমাকে। শৈল্পিক উৎকর্ষের প্রমাণ পাওয়া যায় তাতে। গারল্যান্ডের ফিল্মমেকিং সবসময় নৈরাজ্যবাদী আবেদন ধরে রাখে। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। জনরার অলংকার আর শৈল্পিক স্টাইলে বক্তব্য; দু-ই থাকে তার সিনেমায়। দর্শককে সহজবোধ্য কোন পথ তো গারল্যান্ড দেননি কখনো, এবার আরো বেশি জটিলতা উপহার দিয়েছেন সেদিক থেকে। সেরকম অভিজ্ঞতা আর ফিল্মমেকিংয়ের ওমন আবেদন এড়ানো যায় না।

 

জনরা ফ্যানদের নানানভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারবে এই দুটি সিনেমা। এবং ‘মেন’ তার স্টাইলের কারণে দূরবর্তী সময়ে আরো পরিচিতও হয়ে উঠতে পারে।

This bengali article is a compiled review of two most known films of 2022. 'Men' & 'Watcher'. Both are horror and psychological thriller. And both has something to say about this toxic, misogynist world. What women faces, feels and go through in this men's world. Both films are important.

 

Feature Image- NoDope

Related Articles