নামের সাথে মিল থাকলেও এ সিনেমার সাথে চীনের সর্ববৃহৎ শহর এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সিনেমার এ নামকে ধরে নেওয়া যায় রূপক, স্টেট অভ বিইং বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী কল্পনা হিসেবে। উপমহাদেশের রাজনীতিবিদরা বক্তৃতার মঞ্চে উঠলেই যে কথায় কথায় নির্বাচিত হলে দেশকে লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্ক বা সিঙ্গাপুর বানিয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দেন; এ নাম দিয়ে দিবাকর ব্যানার্জি হয়তো সেদিকেই একটু খোঁচা দিলেন।
সিনেমাটিকে গতানুগতিক ‘বলিউডি’ সিনেমার ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না। কারণ, কেবল টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে তারকাসমৃদ্ধ মাসালা ছবি বানানোর যে প্রবণতা এখানে চলে, তা থেকে সজ্ঞানে অনেক তফাতে থাকেন দিবাকর। তিনি গল্প বলতে চান, নিজের মনোভাব ও দর্শন ব্যক্ত করতে চান, দর্শকের হৃদয় ও মস্তিষ্কে দোলা দিতে চান। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
‘সাংহাই’ দিবাকর ব্যানার্জি নির্মিত চতুর্থ সিনেমা। এর ছয় বছর আগে ‘খোসলা কা ঘোসলা’ (২০০৬) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ক্যামেরার পেছনে অভিষেক ঘটে তার। সে সিনেমায় আমরা এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারকে দেখি, যেখানে পরিবারের এক সদস্যের সাথে অন্যদের মতের মিল হয় না। তবে যখন বাবার শেষ সম্বল দিয়ে বাড়ি করার জন্য কেনা জমি একজন শক্তিশালী ভূমিদস্যু দখল করে নেয়; তখন নিজেদের মধ্যকার বিদ্যমান পার্থক্যকে পেছনে ফেলে ঐ পরিবার এবং তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা একত্র হয়ে জমি উদ্ধারের অভিযানে নামে। এখানে যেরকম জমি দখলের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, ‘সাংহাই’তেও তাই করা হয়েছে। তবে এখানে প্লট আরো অনেক বেশি বিস্তৃত এবং রাজনৈতিক প্রভাব সরাসরি প্রতীয়মান। আর খোসলা কা ঘোসলার কমেডিক টোনের বিপরীতে এখানকার ন্যারেটিভ গম্ভীর প্রকৃতির।
খোসলা কা ঘোসলরর পর দিবাকর ব্যানার্জি যে ব্যক্তিগতভাবে আরো পরিপক্ব এবং গল্প বলার ক্ষেত্রে আরো সাহসী হয়েছেন; সাংহাই মূলত তারই পরিচয় বহন করে। তখনকার সময়ে এটাই ছিল বাজেট, কনসেপ্ট এবং স্কেলের দিক থেকে তার সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট।
সাংহাইয়ের ব্যাপ্তিকাল ১২০ মিনিট, মুক্তি পায় ২০১২ সালে। ধরনের দিক থেকে এটি ড্রামা বা পলিটিক্যাল থ্রিলারের ক্যাটাগরিতে পড়ে। পরিচালনার পাশাপাশি উর্মি জুভেকারের সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে এটির চিত্রনাট্যও লিখেছেন দিবাকর। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন বিশাল-শেখর জুটি এবং নেপথ্যসঙ্গীতে ছিলেন মাইকি ম্যাকক্লিয়ারি। সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং সম্পাদনায় ছিলেন যথাক্রমে নিকোস অ্যান্ড্রিটসাকিস এবং নম্রতা রাও। কিছু কিছু জায়গায় বাংলা ভাষায় মুক্তি পাওয়া এ সিনেমা বক্স অফিসে পেয়েছে সেমি হিটের তকমা, আয় করেছে মোট ৪.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটির আইএমডিবি রেটিং ৭.২ এবং রটেন টমাটোজে অডিয়েন্স স্কোর ৭১ শতাংশ। স্ট্রিমিং সাইট অ্যামাজন প্রাইমের পাশাপাশি ইউটিউবেও দেখা যাবে সাংহাই।
দিবাকর আর উর্মি এ সিনেমার গল্প লিখেছেন গ্রিক ঔপন্যাসিক ভাসিলিস ভাসিলিকসের ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত রাজনৈতিক উপন্যাস জেড অবলম্বনে। এ উপন্যাস অবলম্বনে একই নামের পলিটিক্যাল থ্রিলার বানিয়ে ১৯৬৯ সালে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে অস্কার জেতেন পরিচালক কস্তা-গাভ্রাস। গাভ্রাসের সিনেমা ইউরোপীয় থিয়েটারে চলে টানা ৪৫ দিন। এটিতে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে সমাজতন্ত্রের প্রতি নিজের হৃদয়মথিত আবেগ এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। সেই সময়ে গ্রিসের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাখা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় এ সিনেমায়। তখন সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রতি জনগণের সমর্থন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল সে দেশে।
ভাসিলিস ভাসিলিকসের এই গল্পকে যখন তারা আধুনিক গণতান্ত্রিক ভারতের প্রেক্ষাপটে স্থাপন করেন, তখন তাতে যুক্ত হয় নানা ভারতীয় উপকরণ। আর এসব উপকরণের সংযুক্তি ছিল প্রাঞ্জল। ফলে, এটি ভারত তথা এই উপমহাদেশের গল্প বলেই ধরা দিয়েছে দর্শকের চোখে, বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে মনে হয়নি।
প্রারম্ভিক দৃশ্যের মতো পুরো সিনেমাই শিল্পানুগ এবং বৈচিত্র্যময়। এখানে আমরা একটি শহরকে দেখি, যা কিনা চাঞ্চল্য এবং উত্তেজনায় টইটুম্বুর। এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিবাকর টেনে আনেন ভারতের পলিটিকো-কর্পোরেট ক্রীড়নকদের বিস্তৃত জালকে, যারা মানুষকে উন্নয়নের আশা দেখিয়ে ধোঁকা দেয়। পাশাপাশি সিনেমার প্লটে তিনি স্থান দেন আধুনিক ভারতে বিদ্যমান দুই শ্রেণির সংঘর্ষকে, যার স্বরূপ ভীতির উদ্রেক করে। এ সংঘর্ষের একদিকে রয়েছে ক্ষমতাবানেরা, আর অন্যদিকে অবস্থান করছে ক্ষমতাহীনেরা। ফলে, এখানকার কিছু চরিত্রের আচরণ গল্পে কৌতুকাবহ সৃষ্টি করলেও গল্পের ভয়াবহ প্রেক্ষাপট দর্শককে অনেকটা অস্বস্তিতে ফেলবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের নামে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। কিন্তু এই উন্নয়ন কেন দরকার আর এর সুফল কাদের কাছে যাবে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য জনগণকে দেওয়া হয় না। অথচ ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণকে এসকল তথ্য জানানো জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব; খাতা-কলমে অন্তত জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। উন্নয়নের নামে জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে নিজেদের আখের গোছানোর যে প্রবণতা উপমহাদেশীয় ব্যবস্থায় বিদ্যমান, তত্ত্ব এবং প্রয়োগের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত পরিহাস বিরাজ করে এখানে; এ চলচ্চিত্রে তারই স্বরূপ তুলে ধরেছেন পরিচালক।
পাশাপাশি শাসক এবং শোষিত, এই পরস্পর বিপরীতধর্মী দুই শ্রেণির মিথস্ক্রিয়াও উঠে এসেছে এখানে। পরিচালক দর্শককে অনুধাবন করাতে চেয়েছেন, এতবার শোষিত হয়েও কেন ক্ষমতাহীনরা ভোট দিয়ে ঐসকল শোষককেই নির্বাচিত করে? নিজের অভিজ্ঞতায় এ প্রবণতার বারংবার পুনরাবৃত্তি হতে দেখেছেন তিনি। ক্ষমতাহীনদের এহেন আচরণ সচেতন মানুষকে অবাক করে চলেছে বহুকাল ধরে।
গল্পের মূল কেন্দ্রস্থল এক ছোট ইউটোপিয়ান শহর। কাল্পনিক হলেও এতে ভারতীয় শহরসমূহের সকল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিরাজমান, নামটাও একদম যথাযথ; ভারতনগর। নির্বাচন উপলক্ষে সাজসাজ রব পড়ে গেছে পুরো এলাকায়। মিছিল-মিটিং চলছে, নেতারা লম্বা লম্বা ভাষণ দিচ্ছেন, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শোনাচ্ছেন। এই এলাকাকে ড্রিম সিটিতে পরিণত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কিছু বাসিন্দা সরকারের এই গগনচুম্বী অট্টালিকা, মল এবং অন্যান্য শহুরে চাকচিক্যসমৃদ্ধ পরিকল্পনার ব্যাপারে সন্দিহান। সরকারের এই রাজকীয় আইবিপি (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস পার্ক) নির্মাণ বিষয়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তারা আদৌ লাভবান হবে কিনা, সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নয়।
হঠাৎ করে এই এলাকাকেই কর্তৃপক্ষ কেন উন্নয়নের জন্য বেছে নিয়েছে, তাও বুঝতে পারছে না তারা। উন্নয়নের জন্যে তো তাদেরকে নিজের ডেরা ছাড়তে হবে, নিজেদের ঘর ছেড়ে তারা কোথায় যাবে? আর আইবিপি নির্মিত হলে তারা যে এখানে থাকার জায়গা পাবে, তারইবা নিশ্চয়তা কি? এসকল প্রশ্ন তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যদিকে, আরেকদল আগে পিছে না ভেবেই দাঁড়িয়ে গেছে নিজের দলের স্বার্থপর নেতাদের পেছনে; যারা নিজেদের লাভ ছাড়া আর কিছু বোঝে না।
এমতাবস্থায় প্রেক্ষাপটে আবির্ভূত হন ড. আহমদি (প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী); যিনি একাধারে অধ্যাপক, সমাজ সংস্কারক এবং চিন্তক। সমালোচনা করে ইতোমধ্যেই উপরমহলের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন তিনি। ভারতনগরে এসে নির্মিতব্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইবিপি’র সমালোচনা করে ভাষণ দেন তিনি। তার মতে, এটি নির্মিত হলে জনগণের পরিবর্তে আসল সুফল যাবে কর্পোরেট হোমরা-চোমরাদের ঘরে। ভাষণ শেষে রাস্তায় নামতেই একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। তার প্রাক্তন ছাত্রী শালিনী সাহায়ের (কল্কি কেকলা) সাথে তার রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল। শালিনী নিশ্চিত, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত ঘটনা।
গল্পে থাকা অন্যান্য চরিত্রেরা হলেন- তিক্ত, বিরক্ত, রগচটা মিসেস আহমদি (তিলোত্তমা সোম), স্থানীয় রাজনীতিবিদের চ্যালা ভাগ্গু (পীতবাস ত্রিপাঠী) এবং সর্বাঙ্গ স্বর্ণালঙ্কারে আচ্ছাদিত করে রাখা মুখ্যমন্ত্রী (সুপ্রিয়া পাঠক)। এদেরকে নিয়ে দিবাকর পর্দায় উপস্থাপন করেছেন অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পেশীশক্তি ব্যবহারের চিরচেনা রক্ত হিম করা এক চিত্র। যে চিত্র এ উপমহাদেশে আমরা প্রায়ই দেখি।
কুশীলব এবং তাদের অভিনয় উভয়ই মনোরম। শেখ, ত্রিপাঠী, সোম- এদের কারো চরিত্রই বিস্তৃতির দিক থেকে বড়সড়, ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ প্রকৃতির নয়। তবে, এসব সহচরিত্র এবং কম স্ক্রিন টাইমের মাধ্যমেই তারা দর্শকের মনে দাগ কেটেছেন নিজেদের অসাধারণ প্রতিভার জোরে। তামিল টানে কিছুটা খামতি থাকলেও আইএএস অফিসার কৃষ্ণাণের রাশভারি, কর্তৃত্বপূর্ণ চরিত্রের সাথে পুরোপুরি মিশে গেছেন হিন্দি আর্টহাউজ ফিল্মের পরিচিত মুখ অভয় দেওল। ক্ষণকালের জন্যেও নিজের চরিত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাননি তিনি।
তবে আর্টহাউজের আরেক পরিচিত মুখ কল্কি অনেকটাই একঘেয়ে অভিনয় করেছেন এখানে। এমনিতে ভালো অভিনেত্রী হলেও, এখানে তার অভিনয় অনেকটা ছাঁচীকৃত। ন্যায়বিচারের দাবিতে শালিনীর অদম্য ইচ্ছাশক্তির উপর সাংহাইয়ের কাহিনী অনেকাংশে নির্ভরশীল। কিন্তু এ চরিত্রের ক্ষোভ এবং মনস্তাপ প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা তাকে কেবল ভ্রু কুঁচকাতে এবং শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখি। এটাকেই সিনেমার একমাত্র খুঁত বলা যায়। তবে এই দুর্বলতাকে খুব একটা চোখে লাগতে দেয়নি দিবাকরের পরিচালনা।
এতসব পোড় খাওয়া কুশীলবের ভিড়ে সমস্ত আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন ‘সিরিয়াল কিসার’ খ্যাত ইমরান হাশমি। সুন্দর নারী, হাশমি-ইজম ত্যাগ করে এবং নিজের কম্ফোর্ট জোন ভেঙে এ চরিত্রের মাধ্যমে যেন হাশমির শিল্পীসত্ত্বার পুনর্জন্ম হলো। ফুলে উঠা পেট, আঁটোসাঁটো শার্ট, চলন এবং বাচনভঙ্গি, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা, ত্যাড়াবাঁকা হলদেটে দাঁতের অধিকারী এই চরিত্রের সবগুলো দিকের প্রকাশে তিনি দেখিয়েছেন নিশ্ছিদ্র দক্ষতা। রাজস্থান থেকে পালিয়ে আসা যোগিন্দর পারমার চরিত্রটির সাথে তিনি একদম মিশে গেছেন। এটাই এখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে সেরা অভিনয় বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না। পর্দায় সময় কম পেলেও আপোষহীন বুদ্ধিজীবী চরিত্রে নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন প্রসেনজিৎ।
আহমদির মৃত্যুর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কতটা গুরুত্ব দেয়, তা বোঝাতে দিবাকর আমাদেরকে দেখিয়েছেন কৃষ্ণাণের অফিস। স্যাঁতসেঁতে, পিচ্ছিল এক মান্ধাতা আমলের অফিসে বসে তাকে এই কেসের সুরাহা করতে হচ্ছে। এটি বিদ্যমান ব্যবস্থার প্রতি সূক্ষ্ম খোঁচা এবং বুদ্ধিদীপ্ত লিখনশৈলীর পরিচায়ক। এছাড়া, সমাজের মানুষের মানসিকতা কেমন, তাও যেন দেখানো হয়েছে এখানে। যখন শালিনী, ড. আহমদির কেস সংক্রান্ত ব্যাপারে তথ্য খুঁজতে যায়, তখন তাকে তথ্য দেওয়ার বদলে তার সাথে মৃতের কী ধরনের সম্পর্ক ছিল, সেটা জানতে লোকজনকে বেশি উৎসুক হতে দেখা যায়। আবার যোগী সাহায্য করতে এগিয়ে এলেও তার মধ্যেও এমন প্রবণতা রয়েছে। সে শালিনীর নাম মোবাইলে সেভ করে ভুল বানানে ‘ড্রিমগার্ল’ লিখে; বারবার তার দিকে দেখে কামাতুর দৃষ্টিতে।
‘সাংহাই’ গ্রাউন্ড ব্রেকিং কিছু করেনি, সেটা করার লক্ষ্যও এই সিনেমা সংশ্লিষ্টদের ছিল না। বরং এখানকার গল্প উঠে এসেছে বহু বছর ধরে গড়ে উঠা সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে। মাসালা থ্রিলার বা গ্রান্ড ইন্ডিয়া ন্যারেটিভের আশায় এটি দেখতে বসলে হতাশ হতে হবে। তবে ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে সৃজনশীল পরিচালকদের একজনের হাতে পড়ে এরকম একটা গম্ভীর চলচ্চিত্রেও যথেষ্ট বিনোদন-উপাদানের দেখা মিলেছে। শক্তিশালী ইফেক্ট তৈরিতে দিবাকর শব্দ এবং নৈঃশব্দের ব্যবহার করেছেন অনবদ্যভাবে। ম্যাকক্লিয়ারির নেপথ্যসঙ্গীতের ব্যবহারেও রয়েছে বুদ্ধিমত্তার ছাপ। পাশাপাশি নিকোসের সিনেম্যাটোগ্রাফি আর নম্রতার শার্প এডিটিং স্টোরিটেলিংকে চমৎকারভাবে পরিপূরক ভাব দিয়েছে পুরোটা সময় জুড়ে, সিনেমাকে করেছে হৃদয়গ্রাহী। এটি একইসাথে উপভোগ্য এবং চিন্তা উদ্রেককারী।
বাস্তবে সমাজ হিসেবে আমরা কেমন, সেটা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন দিবাকর। আর জানেনই তো, ‘রিয়ালিটি বাইটস’! মুক্তির নয় বছর পেরিয়ে গেলেও ‘সাংহাই’ এখনও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। কেননা, সবকিছু বদলালেও উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হতে বোধকরি এখনও আরো অনেক সময় লাগবে, পেরোতে হবে অনেকটা পথ।