ওয়াল্ট ডিজনি বিশ্বাস করতেন যে, অসম্ভবকে সম্ভব করার মধ্যে নিহিত রয়েছে জীবনের প্রকৃত আনন্দ, তিনি সবসময় কৌতূহলকে সবার উপরে রাখতেন। তার মতে,
“আমরা সামনে এগোই, একের পর এক দরজা খুলি এবং নতুন নতুন কাজ করি’ কারণ আমরা কৌতূহলী এবং কৌতূহলই আমাদেরকে নতুন পথ সৃষ্টি করে দেয়”
এই অদম্য কৌতূহল ও কল্পনার জগত থেকেই সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক ডিজনি চরিত্র, যাদের সুখে দর্শক হেসেছে, দুঃখে কেঁদেছে। ডিজনির চরিত্রগুলো শৈশবে সঙ্গ দেয়া শুরু করলেও পিছু ছাড়ে না কখনোই। স্থান-কাল-পাত্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে শুদ্ধ বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে প্রায়ই ডিজনির চরিত্ররা। আজ জেনে নেবো তাদেরই সম্পর্কে অজানা ও মজাদার কিছু তথ্য।
মিকি মাউসের নামকরণ
আমাদের অতি পরিচিত মিকি মাউসের নাম যদি অন্য কিছু হতো, তবে কেমন শোনাতো? একটুর জন্যই ওয়াল্ট ডিজনি মিকির নাম রেখে দিচ্ছিলেন ‘মর্টিমার’, ভাগ্যিস বাধ সাধলেন তার স্ত্রী! ওয়াল্ট ডিজনি যখন কার্টুনটির নাম প্রস্তাব করলেন, তখন তার স্ত্রীর খুব একটা পছন্দ হলো না মর্টিমার নামটি। তাই আরো কিছু ভেবেচিন্তে ডিজনি বের করলেন ‘মিকি মাউস’ নামটি। এবারে তার স্ত্রীরও পছন্দ হলো। তবে আর কী! তখন থেকেই চলে আসছে বিখ্যাত মিকি মাউসের চরিত্রের মজার মজার কত না গল্প। তবে একেবারে বাদ পড়েনি মর্টিমারও। মিকির সুদীর্ঘ, খিটমিটে মেজাজের আরেক রূপ হয়ে ওঠে মর্টিমার। ১৯৩৬ সাল থেকে তাকেও দেখা যায় বিভিন্ন ছাপা গল্প কিংবা শর্ট ফিল্মে।
মিকি ও মিনির একই জন্মদিন
আপনি জানেন কি, এই প্রেমিকযুগলের জন্মদিন একই দিনে? কীভাবে? তা-ই বলছি।
১৯৩৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনি ঘোষণা দেন যে ১৯২৮ সালের ১ অক্টোবর মিকি মাউসের জন্মদিন, কারণ এদিনই প্রথম তার ফিল্ম বেরোয়। কিন্তু ১৯২৮ সালে ডিজনি আর্কাইভসের প্রতিষ্ঠাতা ডেভ স্মিথ এই দিনটি পাল্টে মিকির জন্মদিন করেন ১৯২৮ সালের ১৮ নভেম্বর, ‘স্টিমবোট উইলি’র প্রিমিয়ারের দিন। আবার এই একই দিনে মিকি ও মিনিকে একসাথে বিশ্বের সামনে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তার মানে এটি ছিল মিনিরও জন্মদিন।
হলিউডের ‘ওয়াক অফ ফেম’ এ স্থান করে নেয়া ডিজনি চরিত্র
১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর ওয়াক অফ ফেমের স্টার পাওয়া প্রথম ডিজনি চরিত্রই ছিল না শুধু, ছিল প্রথম স্টার পাওয়া কার্টুন চরিত্রও। এরপর আরো ছয়টি ডিজননি চরিত্র এ সম্মানের ভাগীদার হয়। তারা হলো- স্নো হোয়াইট (১৯৮৭), কার্মিট দ্য ফ্রগ (২০০২), ডোনাল্ড ডাক (২০০৪), উইনি দ্য পুহ (২০০৬), টিংকার বেল (২০১০) এবং দ্য মাপেটস (২০১২)
সিনড্রেলার সৎ মা ও ম্যালেফিসেন্ট একই ব্যক্তি
আঁৎকে উঠার কিছু নেই পাঠক! এর অর্থ হচ্ছে অভিনেত্রী ইলিয়েনর অডলি ‘দ্য স্লীপিং বিউটি’তে ম্যালেফিসেন্ট নামক ভিলেন চরিত্র এবং সিনড্রেলার সৎ মায়ের চরিত্র- উভয়টিতেই কন্ঠ দিয়েছিলেন। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই, এরা দুজন একই ব্যক্তি।
মাত্র দুজন রাজকন্যারই রয়েছে জাদুকরী শক্তি
ডিজনি চরিত্রগুলোর মধ্যে মাত্র দুজন রাজকন্যাই আছে যারা নিজের জাদুকরী শক্তি দেখিয়েছে। তারা হলো রাপাঞ্জেল আর এলসা। রাপাঞ্জেলের স্বর্ণকেশে দূর হয়ে যেত সকল জরা, তাই তো ডাইনী বুড়ি তাকে আটকে রেখেছিলো সেই উঁচু দুর্গে। কিন্তু শেষমেশ রাপাঞ্জেল তার চুল কেটে ফেলার পর তার জাদুশক্তি হারিয়ে যায়। আর এলসার কথা মনে আছে তো? ছোটবেলা থেকেই নিজের জাদুশক্তিকে ভয় করতো সে, করবে না-ইবা কেন? এর কারণেই তাকে দূরে থাকতে হয়েছে তার পরিবার থেকে, মিষ্টি ছোট বোন আনা থেকে। গল্পের শেষে এলসা তার জাদুশক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখে যায় এবং সুখের পরিণতি নেমে আসে তাদের জীবনে।
বহুমাত্রিক ‘বিস্ট’
‘বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট’ এর বিস্ট চরিত্রটি যেকোনো একটি পশুর বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়নি, এতে রয়েছে বহুমাত্রিকতা। অ্যানিমেটর গ্লেন কিয়েন বলেছেন, তিনি এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন বিভিন্ন পশুর বিভিন্ন অংশ নিয়ে। বিস্টে রয়েছে নেকড়ের পা, কুকুরের লেজ, ভালুকের শরীর, ষাঁড়ের মাথা, গরিলার ভ্রূ, বন্য শূকরের মুখমন্ডল এবং সিংহের কেশর।
দুটি জনপ্রিয় ডিজনি চরিত্রে জ্যাকি চ্যান
‘বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট’ এর চীনা রূপান্তরে বিস্টের চরিত্রে কণ্ঠ দেন বিখ্যাত অভিনেতা জ্যাকি চ্যান। এছাড়া ‘মুলান’ এর চীনা রূপান্তরেও তিনি কণ্ঠ দেন ক্যাপ্টেন লি শাং এর চরিত্রটিতে। দুটো চরিত্রের জন্যই তিনি গানও গেয়েছিলেন। অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল, তা-ই না?
‘দ্য লিটল মারমেইড’ এর কাঁকড়াটির নাম কী?
ডিজনি ভক্ত পাঠকদের উত্তর হবে- ‘সেবাস্টিয়ান’। আংশিক ঠিক। পুরো সিনেমা জুড়েই তাকে এ নামে ডাকা হয়। কিন্তু এটি তার প্রকৃত নাম নয়। সিনেমার শুরুর দিকে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় তার প্রকৃত নামটি বলা হয়েছিলো, মনে পড়ে? হোরেশিও থেলোনিয়াস ইগন্যাসিয়াস ক্রাস্টেশিয়াস সেবাস্টিয়ান! এবার বোঝা যাচ্ছে কেন নামটি সংক্ষিপ্ত করে ডাকা হতো, নতুবা পুরো সিনেমার দৈর্ঘ্য হয়তো অনেকটা বেড়ে যেতো এই নাম ডাকতে গিয়েই।
‘লেডি এন্ড দ্য ট্রাম্প’ এর লেডি চরিত্রের মূলে ছিল একটি কুকুর
স্প্রিঞ্জার স্প্যানিয়েল এই কুকুরটিরও নাম ছিল ‘লেডি’। ডিজনি লেখক জো গ্রান্টের কুকুর ছিল এটি। তার উপর কর কিছু স্কেচ দেখে ওয়াল্ট ডিজনি গ্রান্টকে একটি গল্প তৈরি করতে বলেন। কিন্তু তারপরও তা তৈরি হতে অনেকদিন লেগেছিল, যতদিন না পর্যন্ত ডিজনি ‘হ্যাপি ড্যান, দ্য হুইসলিং ডগ’ গল্পটি পড়ে আবারো গ্রান্টের করা স্কেচগুলোর প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠেন।
‘লেডি এন্ড দ্য ট্রাম্প’ এর সেই স্পেগেটি দৃশ্যটি পছন্দ হয়নি ডিজনির
পরবর্তীতে পপ সংস্কৃতিতে দৃশ্যটি বেশ নামকরা হয়ে উঠলেও প্রথমে তাতে সায় দিতে চাননি খোদ ওয়াল্ট ডিজনি। তার ভাবতেই কেমন লাগছিলো যে দুটো কুকুর একই পাত্র থেকে স্পেগেটি ভাগ করে খাচ্ছে, তার কাছে মনে হয়েছিলো দৃশ্যটি অতটাও শোভন নয়! পরে অবশ্য এক অ্যানিমেটর এর একটি হাস্যকর রূপ বের করেন এবং ডিজনিকে রাজি করান দৃশ্যটি সিনেমায় রাখতে। পরে তা কত জনপ্রিয় হয়েছিলো, তা তো সবারই জানা।
আর একটুর জন্য টাইম ম্যাগাজিনের কভারে থাকতো ‘ডাম্বো’!
ডিজনি চলচ্চিত্র ‘ডাম্বো’ সম্পর্কে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন কী বলেছিলো, জানেন তো?
“যে সিনেমাটি আপনি কখনোই ভুলতে পারবেন না”- টাইম।
১৯৪১ সালে মুক্তি পাওয়া ডিজনির ৫ম এই চলচ্চিত্রটি দর্শকদের বিপুল প্রশংসা ও সমালোচনা পায়। প্রায় ২.৫ মিলিয়ন কামিয়েছিলো ডাম্বো। ১৯৪১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘বর্ষসেরা স্তন্যপায়ী’ (বর্ষসেরা ব্যক্তির বদলে) ডাম্বোকে তাদের কভার পেইজে রাখতে চায় টাইম ম্যাগাজিন। কিন্তু সেবারই জাপানের পার্ল হার্বার আক্রমণের ফলে এর গুরুত্ব কমে যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও ডাম্বোকে কভার পেজে রাখা সম্ভব হয়নি।
ফিচার ইমেজ- Movies.disney.com