Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঢালিউডের সর্বোচ্চ আয় করা ১০ সিনেমা

হলিউড, বলিউডের মত বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি পরিচিত ঢালিউড নামে। বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ড্রাস্টি ধুঁকতে থাকলেও সম্প্রতি আয়নাবাজি, শিকারী, অগ্নী সহ কিছু বহুল আলোচিত চলচ্চিত্রের হাত ধরে আবারো জেগে উঠছে বাংলা সিনেমা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইন্টারনেট এবং ক্যাবল টিভির কল্যাণে হলিউডে বা বলিউডে কোন সিনেমা কত আয় করেছে, কোন সিনেমা সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দিচ্ছে- এগুলার খোঁজখবর পাওয়া আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। চলুন আজ জেনে নেয়া যাক সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের নাম।

বেদের মেয়ে জোসনা

বেদের মেয়ে জোসনা; Source: linkline.xyz

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। ১৯৮৯ সালে তোজাম্মেল হক বাবুল পরিচালিত ছবিটি মোট ১,২০০টি হলে মুক্তি পেয়েছিলো। ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অঞ্জু ঘোষ অভিনীত এই সিনেমার ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’ শিরোনামের গানটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ছবিটি এতই জনপ্রিয়তা পায় যে, পরবর্তীতে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুননির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়। মোট ২০ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ের বিপরীতে ছবিটি আয় করেছিলো মোট ২০ কোটি টাকা, যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার রেকর্ড এখনো অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

স্বপ্নের ঠিকানা

স্বপ্নের ঠিকানা; Source: Bdmusiccafe.com

আলাদা ধরনের স্টাইলের কারণে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে ‘৯০ এর দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সালমান শাহ। এম এ খালেক পরিচালিত এবং সালমান শাহ-শাবনূর অভিনীত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ সিনেমাটি আয় করে ১৯ কোটি টাকা, যেটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র। ১৯৯৫ সালের ১১ মে সিনেমাটি ঢাকার বাইরে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে দর্শকদের ব্যাপক চাহিদায় ঢাকা সহ সারাদেশে মুক্তি দেওয়ার পর সিনেমাটি বেশ আলোড়ন তোলে দেশজুড়ে।

সত্যের মৃত্যু নেই

সত্যের মৃত্যু নেই; Source: Youtube.com

সালমান শাহকে তো আর এমনি এমনি কিংবদন্তি বলা হয় না।  সেরা ব্যবসাসফল তালিকায় তিন নাম্বারে থাকা চলচ্চিত্রটিও সালমান শাহ অভিনীত। ১৯৯৬ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমাটি আয় করে নেয় ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে ১০ কোটির বেশি আয় করা সিনেমার সংখ্যা ৩টি। এটিই সর্বশেষ সিনেমা, যেটি ১০ কোটির গন্ডি পেরোতে পেরেছিলো।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত

কেয়ামত থেকে কেয়ামত; Source: Youtube.com

সেরা দশের তালিকায় থাকা এটি সালমান শাহের তৃতীয় সিনেমা। এই সিনেমাটি মূলত আমির খান-জুহি চাওলা জুটির সুপারহিট হিন্দি ছবি ‘কেয়ামাত সে কেয়ামাত তাক’ এর অফিশিয়াল রিমেক। ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির পরিচালক ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। এই সিনেমার মাধ্যমে সালমান শাহ এবং মৌসুমী চলচ্চিত্র জগতে তাদের যাত্রা শুরু করেন। জানা যায়, সিনেমাটির নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য সর্বপ্রথম তৌকির আহমেদকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রিমেক সিনেমা হওয়ায় তিনি করতে রাজি হননি। তাকে রাজি করাতে না পেরে আরেক মডেল-অভিনেতা নোবেলকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। রিমেক সিনেমা হওয়ায় তিনিও নাকচ করে দেন।

পরবর্তীতে আলমগীর হোসেনের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীরের মাধ্যমে পরিচালক ইমন নামে একটি ছেলের খোঁজ পান। প্রথম দেখাতেই ইমনকে পছন্দ হলেও পরিচালক তাকে আরেক হিন্দি সিনেমা ‘সনম বেওয়াফা’ এর রিমেকে নায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইমন ‘কেয়ামাত সে কেয়ামাত তাক’-এর কথা শোনার পর এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। এই সিনেমাটি নাকি ইমনের এতই প্রিয় ছিলো যে, মোট ২৬ বার সিনেমাটি দেখেছেন বলে পরিচালকে জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত পরিচালক রাজি হয়ে যান এবং ইমনের নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়। একই সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক হয় আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুনের। ‘বাবা বলেছে ছেলে নাম করবে’, ‘ও আমার বন্ধু গো’, ‘এখন তো সময়’ শিরোনামের গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো সে সময়ে। এই সিনেমা মোট আয় করেছিলো ৮ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।

মনপুরা

মনপুরা; Source: Bongflix.com

অশ্লীলতা এবং কুরুচিপূর্ণ সিনেমার আগ্রাসনে ডুবে যেতে বসেছিলো বাংলা চলচ্চিত্র জগত। ২০০৯ সালে সেই অন্ধকার যুগে আলোর দিশারী হয়েই এসেছিলো গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মনপুরা’ সিনেমাটি। মুক্তি পাওয়ার পর সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো মনপুরা। গ্রামবাংলার পটভূমিতে নির্মিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন টিভি অভিনয় শিল্পী ফারহানা মিলি এবং চঞ্চল চৌধুরী। সিনেমাটির সংগীতায়োজনের দায়িত্বে ছিলেন তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় শিল্পী অর্ণব। ‘নিথুয়া পাথারে’, ‘যাও পাখি বলো তারে’, ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু’ সহ এই সিনেমার গানগুলো ঠাঁই পেয়েছিলো মানুষের মুখে মুখে। মনপুরা ছবিটি ২০০৯ সালে শ্রেষ্ট চলচ্চিত্রসহ মোট ৫টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ব্যবসাসফল এই চলচ্চিত্রের মোট আয় ছিলো ৮ কোটি টাকা।

কুলি

কুলি; Source: Tvguidebangladesh.com

১৯৯৭ সালে ১৬ মে ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় ‘কুলি’ সিনেমাটি। হিন্দি ছবি ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’ এর ছায়া অবলম্বনে এই সিনেমাটি বানিয়েছিলেন মনতাজুর রহমান আকবর। ‘কুলি’র প্রধান কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ওমর সানী, পপি, হুমায়ুন ফরিদী এবং আমিন খান। এই সিনেমার মাধ্যমেই চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। সিনেমাটির মোট আয় ছিলো ৭ কোটি টাকা।

বাদশা দ্য ডন

বাদশা দ্য ডন; Source: Youtube.com

বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত অ্যাকশন-রোমান্টিক ঘরানার ‘বাদশা দ্য ডন’ সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। রাজেশ কুমার যাদব এবং আব্দুল আজিজের পরিচালনায় এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন ওপার বাংলার খ্যাতিমান নায়ক জিৎ এবং আলোচিত বাংলাদেশী নায়িকা নুসরাত ফারিয়া। এই সিনেমাটি মূলত ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া তেলেগু সিনেমা ‘ডন সিনু’ এর রিমেক। জাজ মাল্টিমিডিয়া পরিবেশিত সিনেমাটি মোট আয় করে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।

শিকারি

শিকারি; Source: Cinekolkata.com

২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া জাজ মাল্টিমিডিয়ার আরেকটি চলচ্চিত্র শিকারির আয় ৫ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। অ্যাকশন-রোমান্টিক ধাঁচের এই ছবিতে অভিনয় করেন ঢালিউডের কিং খান খ্যাত শাকিব খান এবং কলকাতার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শ্রাবন্তী।

আয়নাবাজি

আয়ানাবাজি; Source:Youtube

২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ রেজা পরিচালিত আয়নাবাজি সিনেমাটি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মাঝে তুমুল সাড়া জাগিয়েছিলো। থ্রিলারধর্মী এই সিনেমাতে মূল চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী, নাবিলা এবং পার্থ বড়ুয়া। চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ১৭ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি দেয়া হয়। তাছাড়া সে বছরেই নভেম্বরের ১২ থেকে ১৫ তারিখে মানহেইম-হেইডেলবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি মোট ৪ বার প্রদর্শিত হয়। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের জন্য মোট ৬টি ক্যাটাগরিতে মনোনীত হলেও সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী এই ৩টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করে এই সিনেমাটি। আয়নাবাজির মোট আয় পাঁচ কোটি তের লক্ষ টাকা।

প্রিয়া আমার প্রিয়া

প্রিয়া আমার প্রিয়া; Source: jeninbari.wordpress.com

এই তালিকার সর্বশেষ সিনেমাটির নাম ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’। ২০০৮ সালে বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ছবিটি মুক্তির পর আয় করে মোট ৫ কোটি টাকা। রোমান্টিক ধাঁচের সিনেমাটিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান এবং সাহারা। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শাকিব খান শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে ইউরো-সিজেএফবি পারফর্মেন্স পুরস্কার এবং মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। এটি মূলত ২০০২ সালের পুনীত রাজকুমার অভিনীত কন্নড় চলচ্চিত্র ‘আপ্পুর’ এর পুনঃনির্মাণ, যেটি তামিল এবং তেলেগু ভাষায়ও রিমেক হয়েছিলো।

ফিচার ইমেজ- youtube.com

Related Articles