Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রুসেড মোকাবিলার মহানায়ক: সুলতান ইমাদুদ্দিন জিনকি

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইন্তেকালের পর খুলাফায়ে রাশেদিন বা উমাইয়া খিলাফতের সময়ে মুসলিম বিশ্বে যে ঐক্য ছিল, তা অনেকটাই হারিয়ে যায় আব্বাসীয় শাসনামলের শেষের দিকে। সেই সময় পৃথক পৃথক অঞ্চলে মুসলিম শাসকরা তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে।

একদিকে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াই, অন্যদিকে ক্রুসেডারদের আক্রমণ, সবমিলিয়ে মুসলিম বিশ্বের অবস্থা একেবারে নাজুক তখন। খ্রিস্টান বাহিনীর আক্রমণে একের পর এক হাতছাড়া হয়ে যেতে থাকে একেকটি দুর্গ। ধারাবাহিক সফলতা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় ক্রুসেডারদের। মধ্যপ্রাচ্যের পর তাদের চোখ পড়ে এশিয়ার দিকে। এসময় সুলতান মালিক শাহ সেলজুকির বীরত্বে গতিরোধ হয়  ক্রুসেডারদের। 

মালিক শাহর মৃত্যুর পর মুসলমানদের মাঝে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ বেধে যায়। শুরু হয় একে অপরকে হটিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে ওঠার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আব্বাসীয় খলিফা তখন মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হলেও তার কার্যত কোনো প্রভাব আসলে ছিল না। তাই তিনি চাইলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না। 

সেই মাৎস্যন্যায়কালে ক্রুসেডারদের হাতে চলে যায় পবিত্র শহর জেরুজালেম। এর পরই নড়েচড়ে বসেন মুসলিম শাসকরা। তবে মালিক শাহর শূন্যস্থান যেন কিছুতেই পূর্ণ হচ্ছিল না। এমনই এক সংকটাপন্ন সময়ে আবির্ভাব ঘটে ইমাদুদ্দিন জিনকির। তিনি যেমন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক ছিলেন, তেমনি রাজনৈতিক দূরদর্শিতায়ও ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ। 

সুলতান মালিক শাহ সেলজুকির বীরত্বে গতিরোধ হয় ক্রুসেডারদের; Image source: Wallpaper Flare

মুসলিম বিশ্বের এই মহামানবকে নিয়ে বাংলা ভাষায় রচিত বইয়ের সংখ্যা অতি সামান্য। তাই তার সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের চোখ বুলাতে হয় বিভিন্ন ইংরেজি নিবন্ধ বা বিদেশী বইয়ের পাতায়। তবে সম্প্রতি কালান্তর প্রকাশনী থেকে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে সুলতান ইমাদুদ্দিন জিনকির রোমাঞ্চকর জীবনের গল্প।

বলা হচ্ছে, ‘দ্য লিজেন্ড: ইমাদুদ্দিন জিনকি’ বইয়ের ব্যাপারে। বইটির মূল ভাষা উর্দু, লিখেছেন বিখ্যাত লেখক আসলাম রাহি। ভাষান্তর করেছেন মুজিব তাশফিন। একই প্রকাশনী থেকে ইতোমধ্যেই লেখকের বেশ কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে এবং সবগুলো বই-ই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ।

দ্য লিজেন্ড: ইমাদুদ্দিন জিনকি

ইমাদুদ্দিন জিনকির পিতা কাসিমুদ্দৌলা ছিলেন মালিক শাহ সেলজুকির একজন প্রিয় সেনাপতি। জীবদ্দশায় সুলতান তাকে ‘হালাব’ শহরের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। সুলতান মালিক শাহর মৃত্যুর পর তার ছেলে ও ভাইয়ের মাঝে শুরু হয় ক্ষমতার লড়াই। এ গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারান কাসিমুদ্দৌলা। ইমাদুদ্দিন জিনকির বয়স তখন ১২/১৪ বছর। পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে কৈশোর কিছুটা মলিন হয়ে যায়, হয়তো এ কারণেই প্রতিকূলতার মুখে জিনকি বেড়ে ওঠেন একজন দক্ষ যোদ্ধা আর বিচক্ষণ ব্যক্তিরূপে।

ইমাদুদ্দিন যখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিলেন, তখন মসুলের শাসক মাওদুদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মাওদুদ ছিলেন ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার শাসক, জিনকিও ছিলেন তেমনই। ফলে দুজনের মাঝে এক অসাধারণ মেলবন্ধন তৈরি হয় এবং একত্রে তারা শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়ে মনস্থির করেন।

সুলতান ইমাদুদ্দিন জিনকি ছিলেন বীর যোদ্ধা ও সুকৌশলী ব্যক্তিত্বের অধিকারী; Image source: Dastan Imaan

প্রথমেই তারা আঘাত হানেন ক্রুসেডারদের দখলে থাকা সিজিস্তানে। সেখানে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জিনকি এবং মাওদুদের অসাধারণ বীরত্বে জয় লাভ করে মুসলিম বাহিনী। সিজিস্তানের পর উদাইয়া ও তিবরিয়াক থেকেও খ্রিস্টানদের বিতাড়িত করা হয়। অল্প সময়ের মাঝেই জিনকির বীরত্বের গল্প ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। ক্রুসেডারদের এমন অবস্থা হয় যে, ইমাদুদ্দিনের নাম শুনেও ঘাবড়ে উঠত তারা।

টানা কয়েকটি যুদ্ধজয়ের পর হঠাৎই ঘটে অঘটন। মসুলের গভর্নর মাওদুদকে দামেস্কের মসজিদে নামাজরত অবস্থায় খুন করে এক আততায়ী। পিতৃসম অভিভাবকের মৃত্যুতে ইমাদুদ্দিন আবারও হতাশ হয়ে পড়েন। এদিকে সুলতান মালিক শাহ সেলজুকিও বেঁচে নেই। তার বংশধরেরা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে। জিনকি চাইছিলেন সেই গৃহযুদ্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে, কিন্তু মাওদুদের  আকস্মিক মৃত্যুতে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, বাধ্য হয়েই তাকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হয়।

বিভিন্ন রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ আর সময় পরিক্রমায় ইমাদুদ্দিন জিনকি মসুলের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে তখনও তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তলোয়ার ওঠাতে পারছিলেন না। মসুল ছিল এমন এক জায়গা, যেখান থেকে চাইলেও কোনো শাসক অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারতেন না।

জিনকি প্রতিনিয়তই চাইতেন, দ্রুতই যেন নিজেদের মধ্যে এই যুদ্ধ-সংঘাতের অবসান হয়। অবশেষে টানা ১০ বছর টানাপোড়েনের পর শেষ হয় মুসলমানদের গৃহযুদ্ধ। জিনকিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। নতুন উদ্যমে তিনি প্রস্তুতি শুরু করেন লড়াইয়ের।

বিভিন্ন রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ আর সময় পরিক্রমায় ইমাদুদ্দিন জিনকি মসুলের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন;
Image Credit: Anna Williams

ইমাদুদ্দিন জিনকি যখন নিজের সৈন্যবল বাড়াতে মনোযোগী, তখন হঠাৎই একদিন পার্শ্ববর্তী সিজার শহর থেকে খবর আসে, ক্রুসেড বাহিনী ধেয়ে আসছে সেদিকে। এ খবর শুনে তিনি এক মুহূর্তও দেরি করলেন না। দূতকে বলে দিলেন, সিজারের গভর্নরকে জানিয়ে দিতে, ক্রুসেডারদের প্রতিহত করতে ইমাদুদ্দিন জিনকির কাফেলা আসছে।

তারপর কী হলো? সিজার শহর কি রক্ষা করতে পেরেছিলেন ইমাদুদ্দিন জিনকি? মুসলিমদের পবিত্রভূমি জেরুজালেমরই বা কী হবে? তাছাড়া তার মতো বীর কি শুধু মসুলের গভর্নর হয়েই থাকবেন, নাকি আরও বড় কোনো উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হবেন তিনি? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে বইটি পড়া জরুরি।

‘দ্য লিজেন্ড: ইমাদুদ্দিন জিনকি’ পৃষ্ঠার হিসেবে বেশ ছোট হলেও, ক্রুসেডের শুরুর দিকের প্রেক্ষাপট আর জিনকি রাজপরিবারের উত্থান সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।

This article is in Bangla. It is a review of the book 'The Legend: Imaduddin Zinki' translated by Mujib Tashofin. The original writer is Aslam Rahi.

Featured Image Credit: Rakib Tushar

Related Articles