![](https://assets.roar.media/assets/DAQf7StfFsQQ9UGv_A-Casa-Que-Jack-Construiu-DELIRIUM-NERD.jpg?w=1200)
২০১৮ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পাওয়া দ্য হাউস দ্যাট জ্যাক বিল্ট সিনেমাটি যতটা না ছিলো চলচ্চিত্র পরিচালক লার্স ভন ট্রিয়ারের ছয় বছর পর কানে ফিরে আসার মাধ্যম, তার চেয়ে বেশি ছিলো মানুষের চরিত্রের নগ্ন ও অগ্রহণযোগ্য সত্যের সাথে সাধারণ দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যম। আমাদের এই যুগের সভ্য মানুষদের ভেতরও যে নিকৃষ্টতম পৈশাচিক আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, তারই বহিঃপ্রকাশ এই চলচ্চিত্রটি। ২০১৮ সালের ১৪ মে যখন চলচ্চিত্রটি ৭১ তম কান ফেস্টিভ্যালে প্রথম প্রদর্শন করা হয়, তখন সাধারণ দর্শক ও চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা এবং ভর্ৎসনামূলক বক্তব্য- উভয়ই পেয়েছিলেন নির্মাতা ট্রিয়ার। এতে অভিনয় করেছেন ম্যাট ডিলন,উমা থরম্যান এবং ব্রুনো গ্যাঞ্জসহ আরও অনেকে। আইএমডিবির পরিসংখ্যানে চলচ্চিত্রটির রেটিং ৬.৯ এবং সবমিলিয়ে এর মোট আয় ২৬ লক্ষ মার্কিন ডলারেরও বেশি।
![](https://assets.roar.media/assets/QW905X8ADD2lbk5l_THTJB_Quad_AW2.jpg)
ছবিটিতে প্রধান চরিত্র ‘জ্যাক’ এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেতা ম্যাট ডিলন। কাহিনীর বক্তা প্রধান চরিত্র জ্যাক নিজেই, যে কি না পেশায় একজন ব্যার্থ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং নিজের কাছে তার প্রধান পরিচয় হচ্ছে সে একজন সিরিয়াল কিলার। কাহিনিটি জ্যাক বর্ণণা করে ‘ভার্জ’ নামক একজন আগন্তুকের কাছে। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে জ্যাক পাঁচটি আলাদা আলাদা ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করে।
প্রথম ঘটনায় সে বলে রাস্তার পাশে সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীর কথা, যে নিজের গাড়ির চাকা বদলানোর জন্য রাস্তা ধরে নিজের ভ্যান নিয়ে এগোতে থাকা জ্যাকের কাছে সাহায্য চায়। প্রথমদিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও তার কাছে ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠতে থাকা আচরণের কারণে জ্যাক শেষ পর্যন্ত সেই মহিলাকে হত্যা করে। হত্যার সকল প্রমাণ ও নিদর্শন নিশ্চিহ্ন করে লাশটিকে একটি গোপন হিমঘরে নিয়ে রাখে, যেখানে সে তার হত্যা করা মানুষদের মৃতদেহ সংরক্ষণ করতো।
দ্বিতীয় ঘটনায় জ্যাক বর্ণনা করে আরেকজন নারীর কথা, যাকে সে হত্যা করে তার নিজ ঘরে ঢুকে, মহিলার মৃত স্বামীর পেনশনের ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে বলে। তাকে হত্যা করার পরও যথারীতি সেই হিমঘরে নিয়ে তার লাশ সংরক্ষণ করে রাখে জ্যাক।
তৃতীয় ঘটনাতেও জ্যাকের নির্মম আচরণের শিকার হয় আরেকজন নারী, যাকে হত্যা করার ঘটনার প্রেক্ষাপটে সে আরও একজন নারীকে হত্যা করে। এক মহিলা এবং তার দুই সন্তানকে হত্যার কথা জ্যাক স্বীকার করে তার চতুর্থ ঘটনায়, যাদেরকে সে একটি নির্জন জায়গায় পিকনিকে নিয়ে যায় এবং তার সাথে থাকা রাইফেল ও শটগান নিয়ে তাদের সাথে বন্য পশুপাখি শিকার সম্বন্ধে আলোচনা করতে থাকে। হঠাৎ করেই তার মধ্যে পুরনো পৈশাচিকতা জেগে উঠলে নির্মমভাবে তাদেরকেও হত্যা করে জ্যাক।
![](https://assets.roar.media/assets/Q0vCM1UGc3ZEC3om_1.jpg)
হত্যার পঞ্চম ঘটনার দৃশ্যটি সম্ভবত সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নির্মম। জ্যাক এমন একজন নারীকে হত্যা করে যার সাথে তার অত্যন্ত দৃঢ় মানসিক সম্বন্ধ তৈরি হয়েছিল। হত্যার দৃশ্যটি এতটাই নিকৃষ্ট ছিলো যে, সেটি ছেটে না ফেলায় পরবর্তীতে সেন্সর বোর্ডকেও সমালচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
সিনেমাটির ঘটনাপ্রবাহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পড়ে অনেকেই হয়তো বিরক্ত হয়ে ভাবছেন, এটা আবার কী ধরনের সিনেমা, যেখানে একজন বিকৃত মানসিকতার মানুষের কথা বলা হয়েছে, যে কি না শুধু হত্যাই করে! আসলে চলচ্চিত্রটির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একজন খুনির হত্যাকান্ডের দৃশ্য প্রদর্শন করাই নয়। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র জ্যাকের মাধ্যমে নির্মাতা মানুষের সভ্য পোশাকের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা পৈশাচিক দিকটি তুলে ধরেছেন।আজকের এই একবিংশ শতাব্দীতে বসে প্রাচীনকালের গুহামানবদের প্রকৃতিতে টিকে থাকার পাশবিক লড়াই হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে না, তবুও কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। এই সভ্য দুনিয়ার মানুষেরা আসলে কতটা পরিপূর্ণ?তারা কি তাদের প্রাচীনকালের পূর্বপুরুষদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে পেরেছে? পারলে সেটা ঠিক কতটা?
![](https://assets.roar.media/assets/fmMBDPPru77FaIPZ_1.jpg)
মধ্যযুগের কথা বাদ দিলেও আধুনিক যুগের জেরুজালেম, মিয়ানমারের নির্যাতিত জনগোষ্ঠী, কিংবা বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আচরণ আমাদের এ সম্পর্কে কী জবাব দেয়? সিনেমায় কাহিনীর শ্রোতা ভার্জ যখন জ্যাককে তার এমন নির্মম আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করেছিলো, সে শান্তভাবে জবাব দিয়েছিলো যে, এটা তার একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মানুষকে খুন করা, তাদের মৃতদেহ নিয়ে পৈশাচিক খেলায় মেতে ওঠাটা তার কাছে ছিলো শখের মতো, যা তাকে আনন্দ দিতো। সে প্রতিবার একজন মানুষকে হত্যা করার পর মৃতদেহের নানা অঙ্গভঙ্গির ছবি তুলত এবং তা সংরক্ষণ করে একধরনের পৈশাচিক আনন্দ লাভ করতো।
চতুর্থ ঘটনায় সে যখন একজন নারীকে তার দুই সন্তানের সাথে হত্যা করলো, সে তাদের মৃতদেহ সাজিয়ে রাখলো পঞ্চাশটি মৃত কাকের সাথে, যাতে সে এই দৃশ্য দেখে আনন্দ লাভ করতে পারে। তন্মধ্যে একটি ছেলেকে সে তার হিমঘরে নিয়ে গিয়ে ‘গ্রাম্পি’ নামক একটি মূর্তিতে রূপ দিলো, যেটি কারো দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে এবং হাত নাড়ছে। নিজের মনের এমন পৈশাচিক বাসনা চরিতার্থ করার উদাহরণ আমরা কি আর এই তথাকথিত ‘সভ্য’ সমাজের মানুষদের মধ্যে দেখিনি? এটা কি শুধুমাত্রই একটি কাল্পনিক ঘটনাশ্রিত চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞ কলাকুশলিদের সৃষ্ট বিনোদনমূলক সৃষ্টি, নাকি মানুষের বাস্তব প্রবৃত্তিরই একটি অনুলিপি?
সৃষ্টিজগতের অন্য জীবদের চেয়ে নিজেকে আলাদা করে রাখতেই হয়তো মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ নামক একটি জিনিস কাজ করে, যা তাকে ভালো-মন্দ সম্পর্কিত জ্ঞান দেয়। সেজন্যেই হয়তো জ্যাকের মনে খানিকটা হলেও আত্মগ্লানি কাজ করতো। তার ভাষায় তার জীবন একটি রাস্তার মতো, যার কিছু দূর পরপর একটি করে ল্যাম্পপোস্ট বসানো রয়েছে। সে জীবনের পথে চলতে চলতে যখনই একটি ল্যাম্পপোস্টের নীচে আসে, সে একটি খুন করে। খুন করার পর, অর্থাৎ সেই ল্যাম্পপোস্ট ছেড়ে সামনে এগোনোর পর তার সামনে পূর্ববর্তী ল্যাম্পপোস্টের যে বড় ছায়া পড়ে, সেটা হলো খুন করার পর তার আত্মতৃপ্তি। আস্তে আস্তে যখন সে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে তখন এই ছায়া ছোট হতে থাকে এবং একসময় বিলীন হয়ে যায়। এরপর পরবর্তী ল্যাম্পপোস্ট থেকে আসা আলো তার পেছন দিকে একটি ছায়া তৈরি করে। এই ছায়াটি হলো তার বিষণ্নতা বা আত্মগ্লানি। আস্তে আস্তে সে যখন পরবর্তী ল্যাম্পপোস্টের দিকে এগিয়ে যায়, তখন পেছনের ছায়াটিও আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে এবং একসময় সেটাও মিলিয়ে যায় এবং একপর্যায়ে পরবর্তী ল্যাম্পপোস্টের নীচে পৌঁছালে সে আরেকটি খুন করে। এভাবেই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। জ্যাকের মনোজগতের ব্যাখ্যাটি সাধারণ মানুষের প্রবৃত্তির সাথে তুলনা করা হলে খুব একটা পার্থক্য পাওয়া যায় না।
![](https://assets.roar.media/assets/kHn7pT0ZMx585G2J_1.jpg)
আমরা কম-বেশি যারাই একটু আধটু মন্দ কাজ করেছি, তারা সবাই বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। এ ধরনের কাজগুলো আমরা মূলত কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্যই করে থাকি। যখনই সেটা সম্পন্ন হয়, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে উৎফুল্ল হয়ে আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগি। তবে খুব দ্রুতই সেটা হ্রাস পেতে থাকে এবং পরবর্তীতে এমন কাজ করার জন্য আমরা অনুতপ্ত হই। হয়তো আমাদের মধ্যে থাকা বিবেকের জন্যই এমন হয়ে থাকে। তবে তার প্রভাব যখন কমে যেতে থাকে, তখন পুনরায় কোনো মন্দ কাজ করতে আমরা দ্বিধাবোধ করি না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,আমাদের এই বিবেকের সামনে আমাদের পৈশাচিক প্রবৃত্তি আসলে কতটা শক্তিশালী?
জ্যাকের ক্ষেত্রে সেটা ছিলো প্রচন্ড শক্তিধর এবং এই প্রবৃত্তির কাছে তার বিবেক বেশি সময় টিকতে পারতো না। সেজন্যই সে প্রতিবার তার শিকারকে হাতের কাছে পেলেই ছটফট করতে থাকতো, তার বিবেক তাকে কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারতো না। তৃতীয় ঘটনায় সে সেই রাতেই খুন করা মহিলাটিকে যখন গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন অন্ধকার রাস্তায় আরেকটি মহিলাকে একা হেঁটে যেতে দেখে তাই সে নিজের প্রবৃত্তিকে থামাতে পারেনি। তাকে একই রাতে দুটো খুন করতে হয়েছিলো। আবার চতুর্থ ঘটনা বর্ণনা করার সময় সে বলেছিলো, সে সেই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট মহিলা এবং তার দুই সন্তানদের মধ্যে পরিবারের আবেশ খুঁজে পেয়েছিলো এবং নিজেকেও তাদের একজন মনে করতে আরম্ভ করেছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত তার এই মনোভাব থাকেনি। পঞ্চম এবং শেষ ঘটনার বর্ণনায় সে বলেছিলো যে, সে এমন একটি মেয়েকে খুন করেছিলো, যার সাথে তার খুব ভালো মানসিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো এবং সে ভেবেছিলো তাকে নিয়েই সে খুব ভাল একটা জীবন কাটাতে পারবে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা হয়ে ওঠেনি।
![](https://assets.roar.media/assets/TVzCP6gUElDN3o3c_1.png)
একই বিষয় পরিলক্ষিত হয় মানবসৃষ্ট কোনো শোচনীয় ঘটনায়। কোনো পাপ করার পূর্বে মানুষের বিবেক মানুষকে বাধা দেয় এবং সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলার একটা প্রবণতা দেখা যায়। তবে মানুষের কু-প্রবৃত্তি তা হতে দেয় না।সেজন্যই শান্তির মধ্যেই হঠাৎ বিশৃঙ্খলা নেমে আসে। এরপরেও কি আমরা জ্যাককে শুধুমাত্র বিশ্রী মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত একটি কাল্পনিক চরিত্র বলতে পারি? জ্যাকের মধ্যে থাকা মানসিক ব্যাধি আমাদের মধ্যেও অনুপস্থিত নয়। মানবসভ্যতার ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়েই প্রভাবশালী শ্রেণী দুর্বলদের নির্যাতন করে গিয়েছে। যারা যত বেশি দুর্বল, তারা তত বেশি নির্যাতিত হয়েছে। জ্যাকের হত্যার ঘটনাগুলো একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, সে নারী এবং শিশুদেরই হত্যা করেছে বেশি। এর কারণ হিসেবে সে বলেছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা তুলনামূলকভাবে সহজ। তাই মানবসভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে শোষক এবং শোষিতদের মধ্যে জ্যাক এবং তার শিকারদেরই খুঁজে পাওয়া যায়।
কখনো কখনো প্রকৃতিই সত্যের সাথে অন্যায় আচরণ করে। সেজন্যই মানবেতিহাসের কালো অধ্যায়গুলো ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়, নির্মম সত্যগুলো সবসময় উন্মোচিত হয় না। এই বিষয়টিই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে বারবার অপরাধ করেও জ্যাকের বেঁচে যাওয়ার মাধ্যমে। দ্বিতীয় ঘটনায় খুন করার পর সে যখন পালাতে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও একটুর জন্য সে বেঁচে যায়। তারপর যখন সে লাশটিকে গাড়ির সাথে বেঁধে নিয়ে পুরো রাস্তা গাড়ি চালিয়ে এসেছিলো এবং এতে করে তার আসার পুরো রাস্তায় রক্তের চিহ্ন আঁকা হয়ে যায়। সে গাড়ি থামানোর পর যখন বিষয়টি বুঝতে পারলো, সে ভাবলো যে সে ধরা পড়ে যাবে। তবে ঠিক সেই মূহূর্তেই বৃষ্টি আরম্ভ হলো এবং রাস্তা থেকে সমস্ত রক্তের দাগ মুছে গেলো। পঞ্চম এবং শেষ ঘটনাটিতে জ্যাক তার খুনের কথা একজন পুলিশ অফিসারের কাছে স্বীকার করলেও তিনি তাকে মাতাল বলে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে তাকে ছেড়ে দিলেন।
ছবিটি শেষ হয় জ্যাকের অন্তিম পরিণতি বর্ণণা করার মাধ্যমে। জ্যাক তার শেষ খুনটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি, তার আগেই পুলিশ তাকে ধরে ফেলে এবং তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তার দেখা হয় ভার্জ নামক সেই আগন্তুকের সাথে। ভার্জ ছিলো মূলত মৃত্যুর দূত। আগেই বলা হয়েছে, জ্যাক একজন ব্যর্থ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, যে তার সারাজীবনে প্রচুর চেষ্টার পরও ঠিকমতো একটা ঘর বানাতে পারেনি। অবশেষে সেই ভার্জের পরামর্শেই জ্যাক তার সংরক্ষণ করা মৃতদেহগুলো দিয়ে জীবনের শেষ মূহূর্তে একটি ছোট ঘর বানাতে সক্ষম হয়। এ বিষয়টি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, পাপী ব্যক্তিরা কখনোই যা চায় তা পুরোপুরিভাবে পায় না। তারা জীবনে কখনোই মূল অর্থে সফল হতে পারে না, যদিও তারা সফলভাবেই নিজেদের পাপের একটি বড় নিদর্শন রেখে যায়।
![](https://assets.roar.media/assets/25KD3u7ecLM9Xh69_1.jpg)
জ্যাকের মৃত্যুর পর ভার্জ তাকে পাতালপুরিতে নিয়ে যায় এবং সেখানেই জ্যাক তার সমস্ত ঘটনা ভার্জের কাছে বর্ণণা করে, যা সিনেমায় দেখানো হয়েছিলো। ভার্জ তাকে পাতালপুরি দিয়ে নরকের নয়টি স্তরের মধ্যে দিয়ে মূল নরকে নিয়ে যায়। মূলত ভার্জ হচ্ছে ভার্জিলের সংক্ষিপ্ত রুপ। চতুর্দশ শতকের ইতালিয়ান কবি দান্তে আলিগিয়েরি রচিত ডিভাইন কমেডি শীর্ষক কাব্যগ্রন্থের প্রথম অধ্যায় ইনফার্নোর বর্ণনানুসারে জ্যাকের পাতালপুরি ভ্রমণের দৃশ্যটি দেখানো হয়েছে। কবিতায় কবি দান্তে রোমান কবি ভার্জিলের আত্মার সাথে পাতালে ভ্রমন করেন এবং নরকের নয়টি স্তরের মধ্য দিয়ে গিয়ে মূল স্তরে পৌঁছে পাপীদের শাস্তির দৃশ্য অবলোকন করেন। সিনেমায় জ্যাকও মৃত্যুর দূত ভার্জের সাথে নরকের মূল স্তরে যায়। সেখান থেকে একটি বড় বাঁধা অতিক্রম করে তবেই তাকে নরক থেকে মুক্ত হতে হবে। জ্যাক আশা করে যে, সে খুব সহজেই সেই বাঁধা পেরোতে পারবে। তবে শেষ পর্যন্ত তার সেই সৌভাগ্য হয় না। সে চিরকালের জন্য নরকে পতিত হয়।
সিনেমার ভিলেন জ্যাক যদি মানুষের পৈশাচিক আচরণ বা মন্দ প্রবৃত্তির একটি প্রতিচ্ছবি হয়, তাহলে মানবতার অন্তিম পরিণতি কী হবে সেটা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি?