২০০০ পরবর্তী সময়কে বলা যেতে পারে টেলিভিশন সিরিজের জন্য স্বর্ণযুগ। এই সময়ে টিভি সিরিজের গেম চেঞ্জার হিসবে আবির্ভূত হয় এইচবিওর ‘দ্য সোপরানোস’। এরই ধারাবাহিকতায় একে একে ‘ব্যান্ড অব ব্রাদার্স, ‘রোম’, ‘সিক্স ফিট আন্ডার’, ‘লস্ট’ কিংবা হালের ক্রেজ ‘ব্রেকিং ব্যাড’, ‘গেম অব থ্রোনস’, ‘শার্লক’ কিংবা ‘চেরনোবিল’ এর মতো টিভি সিরিজ উপহার হিসেবে পেয়েছে দর্শক সমাজ।
বর্তমানে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম স্ট্রিমিং সাইট কিংবা এএমসি, এইচবিওর মতো চ্যানেলের বদৌলতে বিশ্বব্যাপী টিভি সিরিজের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা মোটেই উপেক্ষা করার মতো নয়।
২০০০ পরবর্তী সময়ের টেলিভিশনের যে বিপ্লব ঘটে, তারই ফলাফল হিসেবে এইচবিও নিয়ে আসে আরেক দর্শকনন্দিত টিভি সিরিজ ‘দ্য ওয়্যার’ (The Wire)। ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলা পাঁচ সিজনের এই টিভি সিরিজটি যেমন জয় করে নেয় রুচিশীল দর্শক সমাজের মন, তেমনি সিক্ত হয় সমালোচকদের আকুন্ঠ প্রশংসায়। এর ফলাফল হিসেবে অচিরেই সিরিজটি অধিষ্ঠিত হয় এক কাল্ট ক্লাসিক টিভি সিরিজের মর্যাদায়।
কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অসংখ্য মানুষের কাছে, বিশেষ করে বাংলাদেশী সিরিজপ্রেমী মানুষের নিকট অগোচরেই থেকে গেছে আইএমডিবিতে ৯.৩ এবং রটেন টমেটোসে ৯২ শতাংশ রেটিং পাওয়া এই টিভি সিরিজটি। তাই সমাপ্তির প্রায় একযুগ পর ‘দ্য ওয়্যার’কে নতুন করে দর্শকদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই লেখার অবতারণা।
প্লট
বাল্টিমোর; আমেরিকারে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অন্যতম প্রধান শহর। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে বসবাসকারী সিংহভাগ জনগণই কৃষ্ণাঙ্গ। এই শহরের প্রধানতম সমস্যা হলো মাদক। মাদককে কেন্দ্র করে শহরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অপরাধ ও সন্ত্রাস। খুন-খারাপি, সন্ত্রাস-রাহাজানি সেখানকার নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। শুধু তা-ই নয়, অর্থনৈতিকভাবেও শহরটি হয়ে পড়েছে মেরুদণ্ডহীন। সেই সাথে দুর্নীতি, কালো টাকা এবং রাজনৈতিক প্রভাবে অন্ধকারে ভেঙে পড়েছে শহরের প্রশাসনিক কাঠামো।
বাল্টিমোর পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হোমিসাইড (খুনতদন্ত) বিভাগের এক চৌকষ ডিটেক্টিভ জিমি ম্যাকনাল্টি। তিনি তার কাজকে ভালবাসেন, ডিপার্টমেন্টের অন্য যে কারোও থেকে তার সফলতার হার অনেক বেশি। কিন্তু এত কিছুর পরও তার এক দোষ- তিনি প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক, প্রচন্ড একগুয়ে স্বভাবের। নিজের কেস সমাধান করতে তিনি কোনোপ্রকার রীতিনীতি কিংবা বাধাবিপত্তি মানতে চান না, কেস তার সমাধান করা চাই-ই চাই। এ কারণে প্রায় সময়ই তিনি হয়ে ওঠেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চক্ষুশূল, মাথাব্যথার কারণ।
অপরদিকে, পশ্চিম বাল্টিমোরের মাদক ব্যবসার প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে বার্কসডেল পরিবার। এই সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন এভন বার্কসডেল। তার নির্দেশনায় শহরের আনাচে-কানাচে মাদক ব্যবসা চলছে লাগামহীনভাবে। সেই সাথে তার ডানহাত হিসেবে আছে বিশ্বস্ত বন্ধু রাসেল ‘স্ট্রিঙ্গার’ বেল, যে কি না এভনের ইশারায় রাস্তাঘাটে, অলিতে-গলিতে কলকাঠি নাড়ছে সবকিছুর।
এই মাদক ব্যবসার মধ্য দিয়ে বার্কসডেল অর্গানাইজেশন হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি ডলার। কেউ যদি তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাকে পথ থেকে সরিয়ে দেয় বার্কসডেলের পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী। শুধু কি তা-ই? তাদের সংগঠনের হয়ে কাজ করছে মরিস লেভি নামের এক দক্ষ আইনজীবী। যখনই বার্কসডেল সংগঠনের কেউ আইনী সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে, তখনই আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তাকে উদ্ধার করে সেই আইনজীবী। এককথায়, বাল্টিমোর শহরে যেন এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বার্কসডেলের বাহিনী ও তার সংগঠন।
ঘটনার শুরু যখন এভন বার্কসডেলের ভাগ্নে ডি’এঞ্জেলো বার্কসডেল এক হত্যা মামলার আসামী হিসেবে অভিযুক্ত হয়। মামলায় যথেষ্ট প্রমাণ ছিল, এছাড়াও ছিলেন দুই প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু সংগঠনের হুমকির মুখে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। ফলে ছাড়া পেয়ে যায় ডি’এঞ্জেলো।
ওদিকে, পুরো ব্যাপারটা কোর্টে বসে দেখছিলেন ডিটেক্টিভ ম্যাকনাল্টি। তার উপস্থিতি দেখে বিচারসভা শেষে মামলার বিচারক ড্যানিয়েল ফেলান তার এই উপস্থিতির কারণ জানতে চান। একরোখা স্বভাবের ম্যাকনাল্টি এবার কোনো রাখঢাক না রেখেই খুলে বলেন বার্কসডেল সংগঠনের সকল অপকর্মের কথা। একে একে তুলে ধরেন মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধ কর্মকান্ডের ইতিহাস, সেই সাথে কীভাবে প্রতিবারই তারা বেরিয়ে যাচ্ছে আইনের হাত ফসকে।
ব্যাপারটা জানতে পেরে বসে থাকলেন না ফেলান। সরাসরি ফোন করে বসেন পুলিশ কমিশনার আরভিন ব্যুরেলকে, চাপ দেন বার্কসডেল অর্গানাইজেশনকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য।
অতঃপর বিচারকের চাপে ব্যুরেল গঠন করেন এক অপরাধ তদন্তকারী দল। প্রধান হিসেবে রাখা হয় নারকোটিকস (মাদক) বিভাগের লেফট্যানেন্ট সেডরিক ড্যানিয়েলসকে। তার সাথে যোগ দেন একই বিভাগের ডিটেক্টিভ শাকিমা গ্রেগস, শাকিমার অধীনে কাজ করা ডিটেক্টিভ কার্ভার ও ডিটেক্টিভ হার্ক এবং সেই সাথে স্বয়ং জিমি ম্যাকনাল্টি।
ওদিকে, অদ্ভুত হলেও সত্য, এত প্রভাবশালী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও বার্কসডেলদের সম্পর্কে যেন কোনো তথ্যই নেই পুলিশের কাছে। কাজেই, তদন্তের কাজে সাহায্যের জন্য সেডরিক যখন যথেষ্ট লোকবল চেয়ে উপরমহলের কাছে আবেদন জানান, তখন একপ্রকার দায়সারাভাবে পাঠানো হয় সামান্য কিছু লোকবল। ফলশ্রুতিতে তাদের সাথে যোগ দেন ডিটেক্টিভ লেস্টার ফ্রিমন, রোল্যান্ড প্রেজবুলস্কি, লেন্ডার সিডনরসহ বেশ কয়েকজন। শুরু হয় পুলিশ ও বার্কসডেলদের মধ্যে এক ইঁদুর-বিড়াল খেলা, শুরু হয় এক কঠিন মনস্তাত্ত্বিক লড়াই, যা ক্রমেই পূর্ণতা পেতে থাকে পেজার, মোবাইল কিংবা টেলিফোন কল ট্র্যাকিং এবং ওয়্যারটেপ রেকর্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে।
‘দ্য ওয়্যার’ নির্মানের পেছনের কাহিনী
প্রত্যেক শিল্পের পেছনেই থাকে শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া, থাকে কোনো দক্ষ কারিগরের অক্লান্ত পরিশ্রম। ‘দ্য ওয়্যার’ও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। সিরিজটির পেছনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন ডেভিড সাইমন এবং এড বার্নস।
মূলত, সাইমন ও বার্নসের জীবনের পূর্ব অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে ‘দ্য ওয়্যার’ রচনার রসদ যুগিয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮৪ সালে। ডেভিড সাইমন তখন ‘দ্য বাল্টিমোর সান’ পত্রিকার একজন পুলিশ রিপোর্টার। সেই সময়কার বাল্টিমোরের এক প্রভাবশালী ড্রাগ লর্ড ছিলেন মেলভিন উইলিয়ামস, যে কি না সবসময়ই ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অতঃপর, অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পর ওয়্যারটেপ ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয় বাল্টিমোর পুলিশ। আর মেলভিন উইলিয়ামসের এই গ্রেফতারের ঘটনার উপর রিপোর্টের দায়িত্ব পান সাইমন।
অপরদিকে, মেলভিন উইলিয়ামসের এই গ্রেফতারের পেছনে কাজ করা গোয়েন্দা কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ডিটেক্টিভ এড বার্নস। সুতরাং, কাজের খাতিরে পরিচয় হয় সাইমন ও বার্নসের। একসাথে কাজ কাজ করার দরুন অল্প সময়ের মধ্যেই তারা হয়ে ওঠেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
এই ঘটনাকে ভিত্তি করে ১৯৯১ সালে ডেভিড সাইমন প্রকাশ করেন তার বই ‘Homicide: A Year in the Killing Streets’ । পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় বইটি, সেই সাথে পায় সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা। বইটির উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় সাত সিজন ধরে চলা এনবিসির টিভি সিরিজ ‘Homicide: Life on the Streets’ । দর্শকদের কাছেও সমাদৃত হয় সিরিজটি।
অবসরের পর সাইমন ও বার্নস যুগপৎভাবে লেখেন ‘The Corner: A Year in the Life of An Inner-City Neighborhood’ নামে আরেকটি বই, যা প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। এর উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় এইচবিওর মিনি টিভি-সিরিজ ’The Corner’। মূলত, এই মিনি-সিরিজটিই ‘দ্য ওয়্যার’ নির্মাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় সাইমনের সামনে।
‘The Corner’ এর সাফল্যের পর এইচবিওর তৎকালীন সিইও ক্রিস আলরেখট এবং বিনোদন বিভাগের প্রেসিডেন্ট ক্যারোলিন স্ট্রসের কাছে তার পরবর্তী প্রজেক্ট নিয়ে ধর্ণা দেন সাইমন। অনেক পরিশ্রমের পর আলোর মুখ দেখতে পায় তার প্রজেক্ট ‘দ্য ওয়্যার’।
‘দ্য ওয়্যার’কে আপাতদৃষ্টিতে চিরচারিত ‘কপ-ড্রামা’ তথা পুলিশভিত্তিক টিভি সিরিজ মনে হলেও এর মূল দৃষ্টি শুধুমাত্র পুলিশী কার্যক্রমের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরঞ্চ সমান গুরুত্ব সহকারে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে অপরাধীদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং পারিবারিক জীবনের উপর। দেখানো হয়েছে, দিনশেষে তারাও মানুষ, তাদেরও রয়েছে এক আলাদা জীবন। এ কারণে ডেভিড সাইমন এই সিরিজকে আখ্যায়িত করেছেন ‘আধুনিক যুগের গ্রিক ট্রাজেডি’ হিসেবে। এক্ষেত্রে সাইমন সখেদেই বলেন,
আমরা সিরিজটি দর্শকদের কাছে বিক্রি করেছি এক পুলিশ ড্রামার নাম দিয়ে, কিন্তু দিনশেষে এটি শুধুমাত্র পুলিশের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
মৌলিক বিষয়সমূহ
দ্য ওয়্যারের মৌলিকতার মাত্রা অনেকগুলো। এতগুলো মাত্রাকে এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মাঝে হয়তো বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কাজেই আলোচনার সুবিধার্থে সিরিজের মৌলিকতার মাত্রাকে প্রধান পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হলো।
১) বাস্তবসম্মত কাহিনী
দ্য ওয়্যারের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশটি হলো, সিরিজটি প্রচন্ড রকমের বাস্তবসম্মত। পূর্বের আলোচনা অনুযায়ী, সিরিজের রচয়িতা ডেভিড সাইমন একজন সাংবাদিক এবং এড বার্নস একজন পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় বাল্টিমোর শহরের হালচাল সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ছিল নখদর্পণে। তারা জানতেন সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পরিসর, জানতেন মাদক ব্যবসার করাল গ্রাস এবং মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশের অসহায়ত্বের কথা। কাজেই, তাদের জীবনের এই বাস্তব অভিজ্ঞতা সিরিজকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে বহুগুনে।
২) শক্তিশালী চরিত্রায়ণ
শক্তিশালী ও সাহসী চরিত্রায়ণের ক্ষেত্রে ‘দ্য ওয়্যার’ এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। পাঁচটি সিজনব্যাপী প্রধান প্রধান ইতিবাচক ও নেতিবাচক চরিত্রগুলোকে যেভাবে চিত্রায়ণ করা হয়েছে, তাতে করে যেকোনো দর্শক শুধুমাত্র চরিত্রগুলোকে মূল্যায়নই করতে পারবে না, বরং চরিত্রগুলোকে অনুধাবন করতে পারবে তাদের বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে। চরিত্রগুলো নির্মাণে নেওয়া হয়েছে যথেষ্ট সময়, করা হয়নি কোনো প্রকার হুলস্থুল। শুধুমাত্র প্রধান চরিত্রগুলোই নয়, পার্শ্বচরিত্রগুলোর চারিত্রিক রুপায়ণেও নির্মাতার যত্নের ছাপ ছিল চোখে পড়ার মতো।
৩) ঘটনাপ্রবাহের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ
দ্য ওয়্যারের ঘটনাপ্রবাহের প্রতিটি মূহুর্তই গুরুত্বপূর্ণ। কাহিনীর প্রয়োজনে বেশ কিছু জায়গায় দর্শকদের নিয়ে যাওয়া হলেও এর কারণ ও ফলাফল পাওয়া যায় কিছু সময় পরই। সোজা ভাষায় বললে, দ্য ওয়্যার আপনার মনোযোগ আদায় করে নেবে না, কিন্তু আপনি যদি মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে দারুণ কিছু!
৪) প্রশাসনিক সংস্থা এবং অপরাধী সংগঠনের কাঠামোগত সাদৃশ্য
প্রশাসন এবং সন্ত্রাসী সংগঠন পরস্পর ভিন্ন মেরুর হলেও তাদের মাঝে যে এক অস্বস্তিকর কাঠামোগত সাদৃশ্য রয়েছে, দ্য ওয়্যার তা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে অত্যন্ত সুচারুরূপে। সিরিজে দেখানো হয় কীভাবে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক মারপ্যাচের কারণে বার বার ব্যর্থ হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা, কীভাবে নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে অচল হয়ে পড়ে পুলিশব্যবস্থা, কীভাবে কালো টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায় উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা, কীভাবে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বেড়াজালে পড়ে জনগণের আশা পূরণে ব্যর্থ হয় যোগ্য রাজনৈতিক নেতারা। আবার, মুদ্রার অপর পিঠে দেখা যায় উন্নয়নের নামে কীভাবে জনগণের টাকা লুটেপূটে খাচ্ছে অসৎ রাজনীতিবিদেরা, কীভাবে অপরাধী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে অপরাধ ও অপরাধী সংগঠনগুলোকে মৌন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তারা। শুধু তা-ই নয়, কেউ যখন অপরাধ জগত থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তখন তাকে কী কী বাধা ও পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়, সেই বিষয়টির উপরও গুরুত্ব সহকারে আলোকপাত করা হয়েছে সিরিজটিতে।
৫) শক্তিশালী সামাজিক বার্তা
শুধু রাজনীতি, পুলিশ কাঠামো কিংবা অপরাধ জগতই নয়, দিনশেষে দ্য ওয়্যার বহন করে এক শক্তিশালী সামাজিক বার্তা। এর মাধ্যমে দেখানো হয়, কেউই বস্তুত ইচ্ছাকৃতভাবে অন্ধকার জগতে পা বাড়ায় না, আসক্ত হয়ে পড়ে না মাদকে। বরং প্রত্যেক অপরাধী কিংবা মাদকসেবীরই রয়েছে এক ব্যক্তিগত ইতিহাস, যে ইতিহাস হতাশার, অবহেলার, নয়তো ব্যর্থতার। শুধু তা-ই নয়, যে আজ সমাজের চোখে ঘৃণার পাত্র, সামান্য সুযোগ পেলে হয়তো সে নিজেকে গড়ে তুলতে পারতো সমাজের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে। এককথায় বলা যেতে পারে, কোনো অপরাধীই স্বপ্রণোদিত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে না, বরং সকল অপরাধীই এক ভেঙে পড়া সমাজব্যবস্থার ফসল।
পরিশেষে, ‘দ্য ওয়্যার’-এ নেই কোনো নির্দিষ্ট মূল চরিত্র, বরঞ্চ পুরো বাল্টিমোর শহরটিই আবির্ভূত হয়েছে সিরিজের মূল চরিত্র হিসেবে। দিনশেষে, ডেভিড সাইমন ও এড বার্নস দর্শকদের যে অমূল্য ক্লাসিক মাস্টারপিসটি উপহার দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে টেলিভিশনের ইতিহাসে তা এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।