Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বলিউডের দুর্ধর্ষ ৫ ভিলেন পরিচিতি

বলিউডি সিনেমার কথা উঠলেই প্রথমে কাদের কথা আসে? নায়ক-নায়িকা, তাই না? তাদের কত ভক্ত থাকে। বিভিন্ন নায়ক-নায়িকাদের ভক্তকূলের মধ্যে আলোচনা, সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক হয়। কিন্তু ভিলেন? ভিলেন নিয়ে নিয়ে কিন্তু খুব একটা আলোচনা হয় না। তাদের তেমন কোনো ভক্তকূলও চোখে পড়ে না। অথচ সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন নায়কের প্রকৃত হিরোইজম বের করে আনে ভিলেন। নায়ককে একের পর বিপদে ফেলে, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সে নিজের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে। জবাবে নায়ক তাকে পিটিয়ে ন্যায়ের ঝাণ্ডা উড়িয়ে দর্শকদের হাততালি আর শিস বাগিয়ে নেয়। এই লেখাটিতে বলিউডের শক্তিমান ৫ জন ভিলেনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হচ্ছে, যারা নিজেদের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকদের মনে আতঙ্ক, ঘৃণা ও ত্রাসের সৃষ্টি করেছিলেন সেলুলয়েডের পর্দায়, হয়েছিলেন খলনায়ক।

১) অমরেশ পুরি

ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু যদি প্রশ্ন তোলা হয় সেরা ভিলেন অভিনেতা কে? তাহলে খুব সহজেই বিজয়ীর মুকুট যার মাথায় উঠবে তাঁর নাম অমরেশ পুরি। চারশ’রও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। শেখর কাপুরের ‘মি. ইন্ডিয়া’ (১৯৮৭) সিনেমায় তাঁর ভিলেন চরিত্রটির নাম ছিল মোগাম্বো। এই সিনেমায় তাঁর জবানীতে থাকা “মোগাম্বো খুশ হুয়া” সংলাপটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। ‘করণ অর্জুন’, ‘ঘায়েল’, ‘বাদশা’, ‘কয়লা’, ‘গাদ্দার’ সিনেমাগুলোতে তাঁর খল অভিনয় উল্লেখযোগ্য। এই গুণী অভিনেতার দক্ষতা শুধু ভারতের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’ সিনেমায় হেনরি ফোর্ডের সাথে একটি দৃশ্যে অমরেশ পুরি (ডানে); সোর্স: Paramount Pictures

হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’ সিনেমায় অমরেশ পুরিকে প্রধান ভিলেন চরিত্র ‘মোলা রাম’ হিসেবে অভিনয় করান। অমরেশ পুরির দুর্দান্ত অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে স্পিলবার্গ বলেছিলেন, “অমরেশ আমার পছন্দের ভিলেন- পৃথিবীর বুকে ওনার চেয়ে সেরা কেউ ছিল না, হবেও না।” ২০০৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৭২ বছর বয়সে এই গুণী অভিনেতা পরলোক গমন করেন।

২) আমজাদ খান

গাব্বার সিং! রামেশ সিপ্পির সোলে (১৯৭৫) সিনেমায় গাব্বার সিং চরিত্রে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন যিনি, তাঁর নাম আমজাদ খান। সোলেতে অভিনয় করার আগে তিনি আরও চারটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন, যার মধ্যে প্রথম তিনটিতে ছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে। গাব্বার সিং চরিত্রে প্রথমে ড্যানে ডেনজংপাকে নেয়ার কথা থাকলে পরবর্তীতে আমজাদ খান চরিত্রটিতে কাজ করার সুযোগ পান।

‘সোলে’ সিনেমার গাব্বার সিং চরিত্রে আমজাদ খান; সোর্স: Sippy Films

দুর্ধর্ষ অভিনয় করে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা ক্যাটাগরিতে ফিল্মফেয়ার মনোয়নও পেয়েছিলেন। গাব্বার সিং চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চ্যাম্বাল ডেকোয়েটস নামের একটি বই পড়েছিলেন, যেটার লেখক ছিলেন তরুণ কুমার ভাদুড়ী। সোলে সিনেমায় আমজাদ খানের বলা বেশ কয়েকটি সংলাপ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এর মাঝে রয়েছে “কিতনে আদমি থে”, “ইয়ে হাত হামকো দেদে ঠাকুর”, “ইহা ছে পাছাঁস পাছাঁস কোস দূর গাও মে জাব বাচ্চা রাত কো রোতা হ্যায় তো মা ক্যাহতি হ্যায় বেটা ছো যা, ছো যা নেহি তো গাব্বার সিং আ যায়েগা” প্রভৃতি। সোলে ছাড়াও আমজাদ খান অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘খুন পাসিনা’, ‘পারভারিস’, ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’, ‘সুহাগ’, ‘কালিয়া’, ‘লাওয়ারিশ’ ইত্যাদি। মজার ব্যাপারে হলো, তাঁকে অমিতাভ বচ্চনের সাথে বেশি অভিনয় করতে দেখা গেছে। মাত্র ৫১ বছর বয়সে ১৯৯২ সালের ২৭ জুলাই আমজাদ খান ইন্তেকাল করেন।

৩) ড্যানি ডেনজংপা

পদ্ম শ্রী সম্মাননা পাওয়া শক্তিমান অভিনেতা ড্যানি ডেনজংপা। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘অগ্নিপথ’ (১৯৯০) সিনেমার খলচরিত্র কাঞ্চা চিন্না তাঁর অন্যতম সেরা কাজ। এছাড়া ‘হাম’ (১৯৯২), ‘ক্রান্তিবীর’ (১৯৯৫), ‘বিজয়পথ’ (১৯৯৫), ‘বারসাত’ (১৯৯৬), ‘ঘাতক’ (১৯৯৭) সিনেমায় তাঁর ত্রাস জাগানিয়া অভিনয় উল্লেখযোগ্য।

দুর্ধর্ষ ড্যানি ডেনজংপা; সোর্স: Zee News

অগ্নিপথের জন্য তিনি সেরা পার্শ্বচরিত্র ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আর উল্লেখিত অন্যান্য সিনেমাগুলোর জন্য পেয়েছিলেন সেরা খলনায়কের মনোনয়ন। ভারত ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন ড্যানি। ‘সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত’ সিনেমায় তিনি হলিউডের জনপ্রিয় অভিনতো ব্রাড পিটের সাথে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতি সময়ে ‘রোবট’, ‘বস’, ‘ব্যাং ব্যাং’ চলচ্চিত্রে ভিলেন চরিত্রে তাঁর অভিনয় উল্লেখযোগ্য। ৬৯ বছর বয়সে এখনও তিনি অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘পদ্মাবতী’ চলচ্চিত্রেও তাকে দেখা যাবে।

৪) প্রেম চোপড়া

“প্রেম নাম হ্যায় মেরা, প্রেম চোপড়া।” খুব কম সংখ্যক অভিনেতা আছে যারা একইসাথে ভিলেন রূপে আবির্ভূত হয়ে দর্শকের বুকে কাঁপন ধরাতে পারেন আবার কৌতূক করে দর্শক হাসিয়ে পেটে খিলও ধরাতে পারেন। প্রেম চোপড়া সেই কম সংখ্যাক অভিনেতার মধ্যে অন্যতম। “নাঙ্গা নায়েঙ্গে ক্যায়া অর নিছোরেঙ্গে ক্যায়া” সংলাপটি যেন তাঁর জন্যই তৈরি হয়েছে।

প্রেম চোপড়া; সোর্স: Rediff.com

খলঅভিনেতা প্রাণ যখন নেতিবাচক চরিত্র ছেড়ে দিয়ে একটু পরিপক্ক ও ইতিবাচক চরিত্রে কাজ করার দিকে ঝুঁকছিলেন সেই সুযোগে প্রেম চোপড়া বিচক্ষণ খলচরিত্রে নিজের অবস্থান শক্ত করে নেন। তিসরি মাঞ্জিল, ও কৌন থি, দো রাস্তে, কাটি পাতাঙ্গ সিনমাগুলো ভিলেন রূপে হাজির হয়ে তিনি নিজের সক্ষমতা জানান দেন। প্রেম চোপড়া এমন একজন বিরল শ্রেণির খলনায়ক যিনি কয়েক যুগব্যাপী বিভিন্ন নামকরা নায়কদেরকে সিনেমার রূপোলী পর্দায় বিপদে ফেলেছেন। মনোজ কুমার (ক্রান্তি), রাজেশ খান্না (কাটি পাতাঙ্গ, দো রাস্তে), জিতেন্দ্র (মাওয়ালি, মাকসাদ, মাজাল), সানি দেওল (বেতাব, অর্জুন, মাঞ্জিল মাঞ্জিল), সালমান খান (জাগৃতি), অক্ষয় কুমার (খিলাড়ি, আলফাতুন), শাহরুখ খান (জামানা দিওয়ানা), গোবিন্দ (রাজা বাবু, আনাড়ি নং. ১, দুলহে রাজা), অজয় দেবগন (হিন্দুস্থান কি কাসাম) প্রমুখ নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। তার বর্তমান বয়স ৮২ বছর। এখনও তাঁকে বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়।

৫) গুলশান গ্রোভার

“ব্যাড ম্যান” বলিউড সিনেমাপ্রেমীদের জন্য গুলশান গ্রোভারকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য এই দুটো শব্দই যথেষ্ট। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য খলচরিত্রের নাম ও সিনেমার নাম ধারাবাহিকভাবে দেয়া হলো: কেসারিয়া ভিল্যায়াটি/’ব্যাড ম্যান’ (রাম লক্ষণ), নাটওয়ার শাহ (আঁখে), তাপসী গুঞ্জাল (বিশ্বাত্মা), ছাপ্পান ‘জিমি’ টিকল (স্যার), বানকে (রাজা বাবু), টাইসন (মহড়া), শক্তি (বিজয়পথ), কাবিরা (হেরা ফেরি সিরিজ), জামওয়াল (দাস) ইত্যাদি। গুলশান গ্রোভার হচ্ছেন প্রথম বলিউড অভিনেতা যিনি হলিউডে গিয়েও নিজের কৃতিত্বের সাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন।

গুলশান গ্রোভার; সোর্স: NDTV Movies

২০০১ সালে বিবিসি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন তিনি। ভারতের সবচেয়ে বড় অ্যাকশন সিনেমা সিরিজ ‘খিলাড়ি’র ৮টি সিনেমার মধ্যে ৫ টিতেই খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন গুলশান। সাবছে বাড়া খিলাড়ি (১৯৯৫), খিলাড়িও কা খিলাড়ি (১৯৯৬), মি. অ্যান্ড মিসেস খিলাড়ি (১৯৯৭), ইন্টারন্যাশনাল খিলাড়ি (১৯৯৯) এবং খিলাড়ি ৪২০ (২০০০) সিনেমাগুলোতে তাঁকে দেখা গেছে। হলিউডের ‘নেফিলিম অ্যান্ড প্রিজনারস অব দ্য সান’ চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন। চারশ’রও বেশি সিনেমায় অভিনয় করা গুলশান গ্রোভারের বর্তমান বয়স ৬২ বছর। এখনও তিনি বিভিন্ন সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন।

উল্লেখিত ৫ জন ছাড়াও বলিউডে আরও বেশ কয়েকজন দাপুটে অভিনেতা খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রাণ, জীবন, অজিৎ, কুলভূষণ খারবান্দা, শক্তি কাপুর, কাদের খান, অনুপম খের, ওম পুরি, নানা পাটেকার এবং মুকেশ ঋষি তাদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া সুপারস্টার নায়কদেরও বিভিন্ন সময় খলচরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করতে দেখা গেছে। যেমন: শাহরুখ খান (ডার, বাজিগার, আনজাম), সঞ্জয় দত্ত (খলনায়ক, অগ্নিপথ (২০১২), অক্ষয় কুমার (আজনাবি), জন আব্রাহাম (ধুম), হৃত্বিক রোশন (ধুম ২), আমির খান (ধুম ৩) ইত্যাদি।

‘ধুম ২’ সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে হৃত্বিক রোশন; সোর্স: Yash Raj Films

সময়ের সাথে সাথে বলিউডে টিপিক্যাল ভিলেন চরিত্রের উপস্থিতি হ্রাস পাচ্ছে। তারপরও বর্তমানে বেশ কয়েকজন অভিনেতা নিয়মিত বিভিন্ন খলচরিত্রে সুনামের সাথে অভিনয় করে চলেছেন তাদের মধ্যে প্রকাশ রাজ (খাকে, ওয়ান্টেড, সিংহাম, দাবাং ২, গোলমান এগেইন) এবং বোমান ইরানি (ডন সিরিজ, ৩ ইডিয়টস, মুন্না ভাই সিরিজ) উল্লেখযোগ্য।

Related Articles