যদি বলা হয়, ২০২০ সালের সেরা ধারণা কী? তবে নিঃসন্দেহে সবার প্রথমে মাথায় আসে একটাই শব্দ- বাস্তবতা। কেননা, করোনা মহামারি বাস্তবতার ঝলক দেখিয়ে গিয়েছে পুরো বিশ্বকে। আর এসব বাস্তবতাই চলচ্চিত্রের পর্দায় ফুটে ওঠে ডকুমেন্টারি বা তথ্যচিত্র নামে।
খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ডকুমেন্টসের বর্ধিত রূপ হচ্ছে ডকুমেন্টারি। ডকুমেন্টসের চিত্রিত রূপ, যেখানে নন-ফিকশন বা বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। ডকুমেন্টারি ফিল্মে উঠে আসে অজানা বা অদেখা এক বাস্তবতার রূপ কিংবা খুব অপ্রিয় কোনো সত্য।
২০২০ সালেও প্রচুর পরিমাণে ডকুমেন্টারি নির্মাণ হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এত এত ডকুমেন্টারির ভিড়ে আন্ডাররেটেড রয়ে যায় অনেকগুলোই। তাই, বাছাইকৃত কিছু ডকুমেন্টার উঠে আসে দর্শক আর সমালোচকদের জরিপে, যেগুলো না দেখলেই নয়। এমনই সেরা ১০টি ডকুমেন্টারির তালিকা তৈরি করেছে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা, ইন্ডি ওয়্যার এবং রোলিং স্টোনস। আজকের আয়োজনটা এই সেরা দশ নিয়েই।
কালেক্টিভ
২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর। রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেভের একটি রক ক্লাব, নাম কালেক্টিভ। ভয়ংকর এক অগ্নিকাণ্ডে সাথে সাথে মারা যায় ২৭ জন এবং আহত হয় ১৮০ জন। ঘটনাতে রোমানিয়ার জনগণ বেশ ক্ষুব্ধ হয়। এতটাই জনরোষ হয় যে তা বিক্ষোভে পরিণত হয়। তা রোমানিয়ান সরকারেও ব্যাপক পরিবর্তন আনে। তারপর এক ক্রীড়া সংবাদপত্রের সাংবাদিকের কানে আসে হাসপাতালে সুস্থতার পথে থাকা মারা যাওয়া কিছু রোগীর খবর। তিনি এবং তার তদন্তকারী দল সিদ্ধান্ত নেন, এ ঘটনা নিয়ে আরো খানিকটা তদন্ত করা উচিত। যে-ই ভাবনা, সে-ই কাজ।
কথায় আছে, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসে। তেমনই কেবল একটি রক ক্লাবের অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে একটি জাতীয় কেলেংকারি উঠে আসে জনসম্মুখে। তা প্রকাশের সাথে সাথেই বিধ্বংসী রূপ নেয়। দু’ ঘণ্টার এই ডকুফিল্ম কোনো অংশেই থ্রিলার সিনেমা থেকে কম কিছু না। এর মাধ্যমে একজন ক্রীড়া সাংবাদিক রোমানিয়ান সরকার আর রোমানিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে একদম তুলোধুনা করে ছাড়ে।
রোমানিয়ান পরিচালক আলেক্সান্ডার নানাউ নির্মিত এই ডকুফিল্ম সাংবাদিকতার ইতিহাসের এক মাইলফলক হিসেবে ইতোমধ্যেই বিবেচিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ১৮টিতে জয়ী এবং ২৮টি নমিনেশন এবং প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে এটি। এর মধ্যে বোস্টন সোসাইটি অভ ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ডস, শিকাগো ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, ইউরোপিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন এবং জুরিখ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মতো প্রখ্যাত আর বিখ্যাত ফেস্টিভ্যালেও ঘুরে এসেছে এই ডকুসিনেমা।
৭৬ ডেইজ
২৩ জানুয়ারি, ২০২০। উহান, চায়না। ডিস্টোপিয়ান যুগের একটি হাসপাতালের প্রতিচ্ছবি। একনজর তাকিয়ে কেমন যেন এলিয়েন জোন মনে হয়। হ্যাজমেট শ্যুট পরা দু’জন ডাক্তারকে দেখা যায় দেয়ালে মাথা রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তারা অনুভূতিশূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কি না, তাও বোঝা যাচ্ছে না তাদের পিপিই’র কারণে। দু’জনের মধ্যে একজন ডুকরে কেঁদে ওঠেন। মৃত্যুশয্যায় থাকা বাবাকে শেষবারের মতো একবার বিদায়ও জানাতে পারছেন না। স্ক্রিন জুড়ে এক অস্বাভাবিক রকমের আতঙ্ক আর বিষণ্ণতা।
চীনে উহানে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল অবধি লকডাউনের নিত্যদিনের জীবনযাপন নিয়েই এই ডকুমেন্টারি। প্রথম চীনের উহানেই এই রোগ শনাক্ত হয়েছিল। সে শহরেরই চারটে আলাদা হাসপাতালকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে এটি। গল্পটি মুহুর্তেই দর্শকদের নিয়ে উপস্থিত হয় লকডাউনে থাকা এক ফাঁকা শহরের মধ্যিখানে; শূন্য করিডোর ধরে হেঁটে চলে দর্শক; হাসপাতালে থাকা রোগীদের আতঙ্কিত চেহারায় ঘুরেফিরে ক্যামেরা। আবার, যখন সুস্থতার খবরে নার্স বেলুন ওড়ায় আকাশে, তখন হেসে ওঠে দর্শক, নিজের অজান্তেই।
ওয়েক্সি চেন এবং হাও উ- এই পরিচালকদ্বয় ‘৭৬ ডেইজ’ দিয়ে করোনার মহামারিকে আজীবনের জন্য স্মরণে রেখে দিলেন। এএফআই ফেস্টে ডকুমেন্টারি ফিচার এবং হার্টল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ফিচার ডকুমেন্টারি ক্যাটাগরিতে ইতোমধ্যেই পুরস্কার জিতে নিয়েছে এটি।
দ্য পেইন্টার অ্যান্ড দ্য থিফ
গল্পের শুরুটা যদিও অপরাধ থেকে, কিন্তু গল্পটা মূলত অদ্ভুত এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের। চেক শিল্পী বার্বোরা ক্যাসিলকোভা নরওয়ের অসলোর এক মিউজিয়ামে তার চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সবকিছু বেশ ভালো চলছিল। সমালোচক আর দর্শকরাও বেশ বাহবা দিচ্ছিল ক্যাসিলকোভার শিল্পকর্মের। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে, যখন তিনি জানতে পারেন, তার করা দুটো চিত্রকর্ম পাওয়া যাচ্ছে না। সোজা কথায়, খোয়া গেছে বা চুরি হয়েছে। অবশ্য চোরকে খুঁজে পেতে খুব একটা সময় লাগে না। লোকটার নাম কার্ল বার্টিল ন্যুল্যান্ড, যে কিনা আগে নার্কোটিক ডিলার ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কার্ল খুব সুন্দর একটা উত্তর দেয়। সে উত্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যারপরনাই বিরক্ত আর অসন্তুষ্ট হলেও, বেশ মুগ্ধ হন স্বয়ং শিল্পী ক্যাসিলকোভা। কেননা, প্রশ্নের উত্তরে কার্ল বলেছিল-
“ওগুলো এতটাই সুন্দর যে আমাকে মুগ্ধ করেছে, তাই চুরি করেছি।”
আরো অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ক্যানভাস থেকে পেইন্টিংটা খুলে নিতে প্রায় ২০০ স্ট্যাপল খুলতে হয়েছিল কার্লকে। একজন দক্ষ আর্টের লোকের ক্ষেত্রে ঘণ্টা দেড়েকের কাজ এটি। তাই ক্যাসিলকোভা বেশ উৎসুক হন এমন শিল্পমনা চোরের সঙ্গে একটি সাক্ষাতের জন্য। পাশাপাশি চোরের, অর্থাৎ কার্লের একটা পোর্ট্রেট করার অনুমতিও চেয়ে বসেন এই শিল্পী।
এরপরের গল্পটুকু তোলাই থাক দর্শকদের জন্য। দু’জন মানুষের অদ্ভুত অবস্থায় গড়ে ওঠা এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই নরওয়েজিয়ান ফিল্মমেকার বেঞ্জামিন রি অদ্ভুত এক গল্প চিত্রিত করেন নিজের নির্মিত ডকুমেন্টারি ফিল্মে। এটি প্রদর্শনের পরপরই সানডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ক্রিয়েটিভ স্টোরিটেলিং এবং ওয়ার্ল্ড সিনেমা- ডকুমেন্টারি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নেয়। এছাড়াও, নরওয়েজিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, হংকং ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং জুরিখ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ বিশ্বের নামীদামী সব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে হয় সেরা ডকুমেন্টারি, নাহয় অনানারী মেনশন, বা ফিচার ডকুমেন্টারি। মোদ্দাকথা, প্রশংসার ঝুলি পূর্ণই ছিল ‘দ্য পেইন্টার অ্যান্ড দ্য থিফ’ নামক এই ডকুমেন্টারির।
দ্য স্কিম
ক্রিশ্চিয়ান ডকিন্স একজন প্রযোজক, মধ্যস্থতাকারী কিংবা একজন প্রতারক। ছোটবেলায় তার স্কুলের পাশেই বাস্কেটবল জোন ছিল; যেখান থেকে অনেক নামীদামী তারকা বের হয়েছেন। এমনকি তার ভাইয়েরই পরবর্তী এনবিএ স্টার হবার কথা; কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে তার মৃত্যু হয় অকালে। অবশ্য তার বাবারও বেশ সুনাম ছিল স্থানীয় একজন বাস্কেটবল কোচ হিসেবে। ফলস্বরূপ, ডকিন্স না চাইতেও বাস্কেটবলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু পরে দেখা যায়, ডকিন্সের খেলার চাইতে বাস্কেটবলের ব্যবসাতেই আগ্রহ আর বুদ্ধিমত্তা বেশি কাজ করে।
হাইস্কুলের ছেলেদের স্কাউট করে সেগুলোর ফলাফল পৌঁছে দিতেন কলেজের বাস্কেটবল কোচের কাছে। তিনি যে পরবর্তীকালে খেলোয়াড়দের এজেন্ট হবেন, তা আর বলার অপেক্ষার রাখত না। তা-ই হয়েছিল। ডকিন্স কিছু পুঁজি জমিয়ে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। সেখানে তিনি খেলোয়াড়দের এজেন্ট ও কোচদের গাইড হিসেবে কাজ করেন। যদিও এসবের কিছুই অবৈধ ছিল না। তবুও সরকারের কাছে মনে হলো, হয়তো ডকিন্স দুর্নীতির আখড়া খুলে বসবেন আজ অথবা কাল। তাই তারা আন্ডারকভার এফবিআই এজেন্ট পাঠালেন।
ডকিন্স তার নতুন বিনিয়োগকারীদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কোচদের ঘুষ দেয়া তার কাজ নয় এবং এমনটা তার ইচ্ছেও নেই করার। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কলেজের কোচরা এক অর্থে সরকারি কর্মকর্তা। আর সরকারি লোককে কিছু বুঝ দেয়াও যেন ঘুষের শামিল- এমনটাই ভাবনা অনেকের।
ক্রিশ্চিয়ান ডকিন্স কি আসলেই একজন প্রতারক? নাকি কেউ তার পেছনে লেগেছে ষড়যন্ত্র করে? অথবা সরকার বা প্রশাসনের কোথাও মারাত্মক রকমের ভুল হচ্ছে? এসব কিছুই জানা যাবে এইচবিওর এই ‘দ্য স্কিম’ ডকুমেন্টারি সিরিজে। ইতোমধ্যেই বিবিসি স্কটল্যান্ডের বাফটা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে নিয়েছে সিরিজটি।
ক্রিপ ক্যাম্প
ক্রিপ ক্যাম্প, যে শিবিরে বিপ্লব শুরু হয়েছিল। নেটফ্লিক্সের এ সিরিজ নিউ ইয়র্কের জেনেড ক্যাম্পগ্রাউন্ডের, যে ক্যাম্প সংরক্ষিত ছিল বিশেষভাবে সক্ষ্ম মানুষদের জন্যে। গল্পটা দুর্দান্ত, কেননা কেউই কোনোদিন বুঝতে কিংবা জানতে পারে না, একদল তরুণ যখন নিজের সমাজের মানুষের কাছেই অবহেলিত হয়, তখন তাদের হতাশার সাগরে ডুব দেওয়া ব্যতীত আর কোনো উপায়ই অবশিষ্ট থাকে না। মৃত্যুকামনাই তাদের নিত্যদিনকার প্রার্থনায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু তারপরও তারা আশা পায়, ভরসা পায় বাঁচার। নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ ভাবার সুযোগ পায়। একটা জায়গা পায়, অবশেষে যেখানটাতে তাদের দুঃখ দূরে কোথাও হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ক্রিপ ক্যাম্প তেমনই এক জায়গার কথা বলে।
পরিচালক নিকোল নিউনহ্যাম ও জেমস লেব্রেট সেই জেনেড ক্যাম্পের অবিস্মরণীয় ফুটেজ তুলে ধরেন আমাদের কাছে এবং বেঁচে থাকা অংশগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে দর্শককে নিমজ্জিত করেন ক্রিপ ক্যাম্পের গহীনে। জেমস লেব্রেট একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এবং ফিল্মমেকার। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক নিকোল নিউনহ্যামের সঙ্গে বেশ কিছু ডকুমেন্টারিতে ইতোমধ্যেই কাজ করেছেন তিনি। তার আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী। তিনি নিজেও শারীরিকভাবে প্রতিকূলতার সম্মুখীন।
১৯৭১ সালে তিনি ক্যাম্প গ্রেনেডে ছিলেন। তখন তার বয়স ১৫। সত্তরের দশকে আমেরিকার ইতিহাসে প্রতিবন্ধীদের অধিকারের লক্ষ্যে যে বিপ্লব বা আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, এবং তা ১৯৭৭ সালের পুনর্বাসনে আইনে দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছিল- সে সময়টাকেই দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এ ডকুমেন্টারি। ইতোমধ্যেই সানডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ও গ্র্যান্ড জুরি অ্যাওয়ার্ড ফর ডকুমেন্টারি, মিয়ামি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেস্ট ডকুমেন্টারি হিসেবে নমিনেশন, ইন্টারন্যাশনালে ডকুমেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনে সিলেকশন এবং ক্রিটিকস চয়েস ডকুমেন্টারি অ্যাওয়ার্ডে সেরা ডকুমেন্টারির পুরস্কার জিতেছে এই সিরিজ।
বয়েজ স্টেট
আপনি যখন টেক্সাস রাজ্যের রাজধানী থেকে দ্বি-দলীয় স্বশাসন নিয়ে বিচ্ছিন্ন প্রায় হাজার খানেক ছাত্রদের সাথে কাজ করবেন, তখন কী হবে? সেই ১৯৩৫ সাল থেকে আমেরিকান সেনাবাহিনী বয়েজ স্টেট পরিচালনা করে আসছে। যা রাজ্য সরকার পর্যায়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে স্বশাসনে এক সপ্তাহব্যাপী মহড়া দেয় ছাত্রদের দিয়ে। মূলত হাইস্কুলের ছাত্রদেরই এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের নিমিত্তে নিয়ে আসা হয়। তারা দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে গর্ভনরের পদসহ কয়েকটি শীর্ষ স্থানের পদ নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা চালায়।
যুবকরা (এখানে শুধুমাত্র যুবকরাই থাকে, যদিও গার্লস স্টেট নামে মেয়েদের জন্য একটি স্টেটও রয়েছে) দু’টি দলে বিভক্ত থাকে- ফেডারালিস্ট ও ন্যাশনালিস্ট। দলগুলোর পূর্ব-নির্ধারিত কোনো অবস্থান বা পদবি দেওয়া নেই; বরং শূন্যস্থানগুলো দল এবং নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ হবে। বয়েজ স্টেট মূলত রাজ্যজেলার সভাপতি এবং রাজ্যপালের প্রার্থীদেরই অনুসরণ করে। ফিল্মমেকার জেসি মস এবং অ্যামেন্ডা ম্যাকবেইন টেক্সাসের এই কিশোরদের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন, তুলে ধরেছেন আধুনিক রাজনীতির অন্তর্নিহিত আর খুঁটিনাটি সব। বয়েজ স্টেট মূলত আধুনিক বিশ্বের রাজনীতির একটি ক্ষুদ্র জগত মাত্র।
সিনেমা আই অনার অ্যাওয়ার্ড, কলম্বাস ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন, ক্রিটিকস চয়েস ডকুমেন্টারি অ্যাওয়ার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন, মিয়ামি ও ওকলোহামা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং সানডেন্সে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং বেশ কিছু পুরস্কার জিতে নিয়েছে অ্যাপল প্লাসের এই ডকুমেন্টারি।
টাইম
১৯৯৭ সালে সিবিল ফক্স রিচ এবং তার স্বামী, রবার্ট, লুসিয়ানার একটি ব্যাংক ডাকাতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় অপরাধের দিকে ধাবিত হন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই। ফলে এ অপরাধের দায়ভারও নিতে হয় তাদেরকেই। সিবিল আত্মপক্ষ সমর্থন করে আবেদন করেন। তাকে কেবল সাড়ে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী রবার্ট চুক্তিটি গ্রহণ করতে রাজি হননি। তাই তাকে কোনো সুযোগ না দিয়েই ৬০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এরপর থেকেই ফক্স রিচ ডায়েরি রাখা শুরু করেন। তবে সেটা কাগজে-কলমে নয়, বরং সাদা-কালো ভিডিও ফুটেজে। তার ছেলের বয়স তখন চার, যখন তিনি আবারো যমজ শিশু গর্ভে ধারণ করছিলেন। পরের দুই দশক ধরে ফক্স তার বাচ্চাদের অসাধারণভাবে বড় করে তোলেন এবং নিজেকে একজন জেল-সংস্কার কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মুক্তি দিতে অক্লান্ত পরিশ্রমও করেন তিনি।
গ্যারেট ব্র্যাডলি ফক্স রিচের পূর্ণ জীবনটাকে তুলে ধরেছেন নিজের ডকু ফিল্মে। সাদা-কালো ফুটেজে সুখ আর দুঃখ একইভাবে পাশাপাশি চিত্রিত হয়েছে নির্মাণ দক্ষতায়। জুরিখ, সানডেন্স এবং মিয়ামি ফেস্টিভ্যালের প্রথম দু’টি সেরা ডকুমেন্টার এবং পরেরটিতে সেরা ডকুমেন্টারির নমিনেশন পেয়েছে। এছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন, ক্রিটিকস চয়েস ডকুমেন্টারি অ্যাওয়ার্ডসহ আরো নামীদামী সব ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত এবং প্রশংসা কামিয়েছে।
সিটি হল
শহরের মেয়র বা সরকার আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি বিষয়কেই স্পর্শ করে কিংবা প্রভাব বিস্তার করে। তবে এমন অনেক বিষয়ই আছে, যেগুলো নিত্যদিন আমরা খোঁজ রাখি না কিংবা খোঁজ রাখার দরকারও পড়ে না। তবে সরকারের প্রতিটি দিন সেসব বিষয়বস্তুকে খোঁজ রাখতে হয়। কেননা, জনগণের সেবাই সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন- পুলিশ ও প্রশাসন, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধান, বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ, প্রবীণদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা, জন্ম, বিবাহ এবং মৃত্যুর রেকর্ড রাখা।
সিটি হল নামক এ ডকুমেন্টারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের অন্তর্গত বোস্টন শহরের নগর সরকারের নিত্যদিনের এসব পরিসেবাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত। বোস্টনের অধিবাসীদের এবং তাদের বক্তব্যের সঙ্গে কীভাবে নগর প্রশাসন মিলে গিয়ে কার্য সম্পাদন করে, সেসবই ফুটে উঠেছে এতে। মেয়র কর্তৃক পরিচালিত প্রশাসনের অন্তর্গত শ্রেণিবৈষম্যের অবসান, সকল বর্ণের মানুষের সমান অধিকার ও ন্যায়বিচার, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন ব্যবস্থা, জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা ও কার্যকলাপ এবং গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনসহ সবকিছুই বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরা হয়েছে।
পরিচালক ফ্রেডরিক ওয়াইজম্যান সিটি হলের জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। কেননা, তিনি স্টেজ বানিয়ে বা লোকেদের বুঝিয়ে অভিনয় করাননি। বরং নিত্যদিনকার ফুটেজ জুড়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছেন। আর তাই ভেনিস ফিম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার জিততে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া, গোথাম অ্যাওয়ার্ডস, সিনেমা আই অনারস অ্যাওয়ার্ড এবং সেইন্ট লুইস ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু ফেস্টিভ্যালে নমিনেশনের পাশাপাশি দারুণভাবে প্রশংসিতও হয়েছেন।
দ্য সোশ্যাল ডিলেমা
সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিশ্বব্যাপী এই মিডিয়া বর্তমানে এতটাই জনপ্রিয় যে এটি অনেকের কাছে নেশা বা আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে। আবার ধরুন আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজফিড ঘাঁটছেন। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনি ইতোমধ্যেই একটি পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছেন, আপনারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাছে? আবার অন্যভাবে, ফেসবুকে লাইক বাটন তৈরির পেছনে কারণ ছিল মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা, কিংবা মানুষের চেষ্টাকে সম্মান ও সাপোর্ট দেয়ার একটা প্রচেষ্টার লক্ষ্যে। কিন্তু কে জানত, এই লাইক বাটন নিয়েও চলবে অসুস্থ মানসিকতা আর প্রতিযোগিতা- কার লাইক বেশি!
শুরুতে মনে হয়, এ মাধ্যম হয়তো আমাদের জীবনটাকে অনেক সহজ করে তুলেছে। কিন্তু কখনো কি আমরা এভাবে ভেবে দেখেছি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণে আমাদের জীবন আরো বেশি অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে প্রতিদিন? আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতেই একটি অ্যাপে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে অসংখ্য কর্মী। যেখানে আপনার নিজের মনে হয় যে আপনি ব্যবহার করছেন এ মাধ্যমকে। অথচ প্রকৃতপক্ষে মুনাফা লাভের আশায় আপনি ব্যবহৃত হচ্ছেন। ঠিক এমনই একটা দ্বিধান্বিত আর উভয়সংকটের গল্প দেখানো হয়েছে ‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’য়।
জেফ অরোলোস্কি নির্মিত এ ডকুমেন্টারি ফিল্ম ইতোমধ্যেই দর্শক এবং সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। সান ডিয়েগো ও সেইন্ট লুইস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ক্রিটিকস চয়েস ডকুমেন্টারি অ্যাওয়ার্ডস এবং শিকাগো ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডে বেস্ট ডকুমেন্টারি হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে এটি।
ডিসক্লোজার
বর্তমানে ২০২০ সালে টিভি, ফিল্ম এবং সর্বোপরি মিডিয়ার সর্বক্ষেত্রেই ট্রান্সজেন্ডার লোকজনের আগমন বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশি। বিগত ১০০ বছর ধরে চলে আসা মানুষজনদের উপেক্ষা, ঠাট্টা-তামাশা এবং টিটকারি বা অবহেলা কি বিন্দুমাত্রও কমেছে? মোটেই না। আর ঠিক এ বিষয়টাই খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে স্যাম ফেডেরার ডকুমেন্টারি ফিল্মে।
স্যাম ফেডেরার এই ডকুমেন্টারি ফিল্ম শুধু ফিল্মই নয়, বরং ট্রান্সজেন্ডারদের বক্তব্য। তাদের অবর্ণনীয় আর হৃদয়ে গহীনে থাকা অব্যক্ত কথাগুলোই উঠে এসেছে ‘ডিসক্লোজার’ ডকুফিল্মে। ফ্রেমলাইন সান ফ্রান্সিসকো ইন্টারন্যাশনাল এলজিবিটিকিউ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা ডকুমেন্টারি খেতাব জিতে নিয়েছে এটি। এছাড়া, ইন্ডিয়ানা ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ইউএস এবং ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনে নমিনেশন পেয়েছে এই ডকুফিল্ম।