Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টাইটানিক সিনেমার অজানা যত দিক

পৃথিবীর বিখ্যাত সকল জাহাজ নিয়ে আলাপে বসলে অবধারিতভাবেই উঠে আসবে টাইটানিকের নাম। ‘টাইটানিক’ শব্দটা জুড়েই ছেয়ে আছে যেন অপার বিস্ময়ের হাতছানি। সেই বিস্ময়কেই রূপালী পর্দায় ১৯৯৭ সালে বিশ্ববাসীর কাছে নতুনভাবে প্রদর্শন করেছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন। বিশালাকৃতির জাহাজে জ্যাক আর রোজের প্রেমোপাখ্যান এবং বরফরুপী যমদূতের কাছে সহসা হার মেনে যাওয়া টাইটানিক সিনেমার করুণ পরিণতির কাহিনি কে না জানে? সায়েন্স ফিকশন ঘরানা থেকে বের হয়ে রোমান্স ও ট্র‍্যাজিডির সমন্বয়ে নির্মিত কাজ দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন জেমস ক্যামেরন। কাল্ট ক্লাসিক খ্যাতি জোটানো এই টাইটানিক সিনেমার অজানা কিছু দিক নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

টাইটানিক সিনেমার পোস্টার; Image Source: IMDb.

১.

ছেলেবেলা থেকেই জাহাজের প্রতি ভীষণ ঝোঁক ছিল টাইটানিক সিনেমার পরিচালক জেমস ক্যামেরনের। ১৯১২ সালে সমুদ্রের অতল গহীনে ডুবে যাওয়া টাইটানিক নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত ছিল না। আইম্যাক্স ক্যামেরা দিয়ে ধারণকৃত টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘টাইটানিকা’ (১৯৯২) দেখার পর সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে টাইটানিক দেখার ভূত চাপে ক্যামেরনের মাথায়। কিন্তু এর জন্য পকেট থেকে খোয়াতে হবে বড় অংকের অর্থ। ভাবলেন এমন পন্থা অবলম্বন করা দরকার, যেখানে রথও দেখা যাবে, কলাও বেচা যাবে।

টাইটানিকা; Image Source: IMDb.

তাই, তিনি টাইটানিক নিয়ে এক চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা আঁটলেন। এরপর তা প্রযোজনা সংস্থা টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সের কাছে পেশ করলেন। জেমস ক্যামেরনের পরিচালনায় সায়েন্স ফিকশন মুভি ‘টার্মিনেটর ২’ সফল হবার কারণে টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স এই ঝুঁকি নিতে রাজি হয়েছিল। ফলে টাইটানিক সিনেমা তো নির্মিত হয়েছিলই, সেই সাথে গবেষণার অজুহাতে সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে বাস্তবে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার সাধও পূরণ হয়েছিল তার।

জেমস ক্যামেরন; Image Source: Alamy

২.

আসা যাক সিনেমার কুশীলবদের আলোচনায়। মূল চরিত্র জ্যাক ডসনের জন্য ক্রিশ্চিয়ান বেলসহ মোট শ’খানেক অভিনেতা অডিশন দিয়েছিলেন। শুরুর দিকে জনি ডেপ, টম ক্রুজ, ম্যাককোলি ক্যালকিন, ব্র‍্যাড পিটের মতো জনপ্রিয় অভিনেতাদের কথা ভাবা হয়েছিল। তবে, জেমস ক্যামেরনের প্রথম পছন্দ ছিল ওয়াকিন ফিনিক্সের বড় ভাই রিভার ফিনিক্স। কিন্তু এই সিনেমার কাজ শুরু করার আগেই মারা যান তিনি। তাই, ঝামেলা এড়াতে জেমস তখন ম্যাথিউ ম্যাককোনাগেহেইকে এই রোলের জন্য নিয়েছিলেন।

টম ক্রুজ, ব্র্যাড পিট, ম্যাককোলি ক্যালকিন, ক্রিশ্চিয়ান বেল, রিভার ফিনিক্স, ম্যাথিউ ম্যাককোনাগে; Image Source: IMDb.

রোজ চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন ড্রিউ ব্যারিমোর, জেনিফার অ্যানিস্টোন, ক্যামেরন ডিয়াজ, ম্যাডোনা, অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো প্রখ্যাত অভিনেত্রীরা। সবশেষে এই চরিত্রে নিজের জায়গা নিশ্চিত করেন গুইনিথ পাল্টারো। কিন্তু নির্বাচিত এই দুই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একজনকেও সিনেমায় দেখা যায়নি। এর কারণ হলো, কেট উইন্সলেট এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সবসময় জেমসের পিছনে জোঁকের মতো লেগে থাকতেন। এভাবে একসময় তিনি জেমসের মন গলিয়ে ফেলেন। এই উইন্সলেটই জেমসের কাছে ডিক্যাপ্রিওর নাম সুপারিশ করেছিল।

ড্রিউ ব্যারিমোর, জেনিফার অ্যানিস্টোন, ক্যামেরন ডিয়াজ, ম্যাডোনা, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, গুইনিথ পাল্টারো; Image Source: IMDb.

৩.

টাইটানিক সিনেমায় সবার প্রথমে শুট করা হয়েছিল মুভির বিখ্যাত সেই পেইন্টিং এর দৃশ্যকে, যেখানে নগ্ন রোজের ছবি এঁকেছিল জ্যাক। শুরুতে এই দৃশ্য নেওয়ার কারণ হলো, বাকি সকল শুটিং সেট তখনও নির্মাণাধীন। মুভিতে চিত্রাঙ্কনের সময় জ্যাকের যে হাত দেখা গিয়েছিল, তা মূলত জেমস ক্যামেরনের। সিনেমায় জ্যাকের যতগুলো স্কেচ দেখানো হয়েছে, সবগুলো তিনি নিজ হাতে এঁকেছিলেন। পরিচালনার পাশাপাশি জেমসের স্কেচের হাতও ছিল পাক্কা। রোজের বিখ্যাত সেই স্কেচ ২০১২ সালে ১৬ হাজার ডলারে বিক্রি হয়।

সিনেমায় জ্যাকের স্কেচগুলো নিজ হাতে এঁকেছিলেন ক্যামেরন; Image Source: Screen Rant.

৪.

সিনেমায় জ্যাক, রোজসহ প্রায় দশটি কাল্পনিক চরিত্রের উপস্থিতি ছিল। তবে অনেক চরিত্র নির্মাণ করা হয়েছিল ইতিহাসের পাতা থেকে। কারণ, জেমস ক্যামেরন এই ফিকশনকে ইতিহাসের এক বাস্তব অংশ বানাতে চেয়েছিলেন। ইতিহাসকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছেন।
চরিত্রগুলো হলো:

  • ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ
  • মার্গারেট মলি ব্রাউন
  • জন জ্যাকব অ্যাস্টন
  • থমাস আন্দ্রে
  • ব্রুস ইসমে
  • অফিসার উইলিয়াম মারডল
  • চার্লস লাইটলার
  • জোসেফ বক্সহল
  • হ্যারোল্ড লোয়ে প্রমুখ
টাইটানিক জাহাজে থাকা কিছু বাস্তব চরিত্র ছিল সিনেমায়; Image Source: History V Hollywood.

৫.

মুভির ভিতরের টাইটানিককে পর্দায় দেখানোর জন্য জেমস ক্যামেরন আসল টাইটানিকের আকারে প্র‍্যাক্টিক্যাল মডেল সেট বানিয়েছিলেন। তবে চলচ্চিত্রে অনেক কিছুর আকার হেরফের করা হয়েছিল। লাইফ বোট, স্মোক ফানেলকে আসল টাইটানিকের থেকে ১০% ছোট করে বানানো হয়েছিল। সিঁড়ি করা হয়েছিল ৩০% বেশি চওড়া। সিনেমার ইন্টেরিয়র সেট নির্মাণ করা হয়েছিল মেক্সিকোর বাজা স্টুডিওতে। আর সেলুলয়েডের টাইটানিককে ডিজাইন করার জন্য টাইটানিক নির্মাতা কোম্পানি ‘Harland and Wolff‘ থেকে আসল টাইটানিক জাহাজের সকল আর্কাইভ, নকশা এবং রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছিল।

সিনেমায় দেখানো টাইটানিকের সিঁড়ি ছিল মূল টাইটানিকের সিঁড়ি থেকে ৩০% বেশি চওড়া; Image Source: 20th Century Fox.

এছাড়াও, এই টাইটানিক ইতিহাসের আদলে তৈরি হচ্ছে কি-না, তা দেখভাল করার জন্য টাইটানিকের ইতিহাসবিদ ডন লিঞ্চ এবং ক্যান মার্শালকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বহু প্রপ্স, আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য মেক্সিকো এবং আমেরিকা থেকে কারুশিল্পী ভাড়া করে আনা হয়েছিল। এমন একজন ইতিহাসবিদকেও রাখা হয়েছিল ওখানে, যিনি সিনেমার কুশীলবদের ১৯১২ সালের আচার-আচরণ বোঝাবেন।

টাইটানিকের শুটিং সেট; Image Source: Hollywood Reporter.

৬.

শেষের অংকে দুই টুকরো হওয়া জাহাজের এক অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধারণা করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। ক্লাইম্যাক্স সিনের জন্য ৪৫ ফুট লম্বা মডেল শিপ ব্যবহার করা হয়েছিল। জাহাজ ডুবার দৃশ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৩ লাখ লিটার পানি। ওই সময় শুটিং সেটে অতিরিক্ত ১৫০ কাস্ট এবং এবং ১০০ স্টান্টম্যান উপস্থিত ছিল। পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে করতে অনেকের সর্দি-কাশি, ফ্লু ছাড়াও কিডনি ইনফেকশন পর্যন্ত হয়েছিল। অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট পড়েছিলেন হাইপোথার্মিয়ার কবলে। পুরো জাহাজের ভেতরের অংশ ডোবাতে দরকার হয়েছিল মোট ১ কোটি ৯০ লক্ষ লিটার পানি ।

টাইটানিকের শুটিং সেট; Image Source: Hollywood Reporter.

৭.

ফিল্মিংয়ের মাঝামাঝি সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৮০ জন ক্রু মেম্বার। পরে জানা গিয়েছিল কেউ একজন চক্রান্ত করে মধ্যাহ্নভোজনে পিসিপি (শক্তিশালী চেতনানাশক) মিশিয়ে দিয়েছিল। প্রথমে সেটাকে শেলফিশ পয়জনিং ভাবলেও, পরে ভুল ভাঙে সবার। তবে আজ পর্যন্ত এই কালপ্রিটকে ধরা সম্ভব হয়নি। জেমসের মতে, এই লোক হতে পারে সাবেক এক ক্রু মেম্বার (খাদ্য সরবরাহকারী), যাকে কথা-কাটাকাটির জন্য দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

টাইটানিক সিনেমায় জ্যাক ও রোজ; Image Source: 20th Century Fox.

৮.

টাইটানিকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ‘My heart will go on’ গানটির সুর। অথচ তুমুল জনপ্রিয় এই গানটির সিনেমাতে ঠাঁই পাওয়ারই কথা নয়। জেমস ক্যামেরন শুরু থেকেই টাইটানিকের মিউজিক কম্পোজার জেমস হর্নারকে বলেছিলেন, সিনেমায় কোনো গান থাকবে না। তাই, হর্নার ক্যামেরনের অগোচরে গোপনে সেলেন ডিয়নকে নিয়ে এই গান কম্পোজ করেছিলেন। সব কাজ শেষে যখন জেমসের সামনে এই গান পরিবেশন করা হয়েছিল, ক্যামেরন তখন বিমোহিত হয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, এই গানটি অস্কারও বাগিয়ে নিয়েছিল।

সেলেন ডিয়ন; Image Source: IMDb.

৯.

সিনেমার শেষাঙ্কে, রোজ এবং জ্যাককে একটি পাটাতনের উপর ভেসে থাকতে দেখা যায়। ওই পাটাতনের ধারণা পরিচালক নিয়েছিলেন আসল টাইটানিকের এক ওডেন প্যানেলিংয়ের মডেল থেকে, যেটার খোঁজ মিলেছিল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে। বর্তমানে এটি কানাডার নোভা স্কোটিয়ার ম্যারিটাইম মিউজিয়াম অভ দ্য আটলান্টিক এ সংরক্ষিত আছে

সিনেমার শেষে একটি পাটাতনের উপর রোজ এবং জ্যাক; Image Source: 20th Century Fox.

১০.

শুরুতে ক্যামেরন প্রোডাকশন হাউজকে বলেছিলেন, ৮০ মিলিয়ন ডলার বাজেটেই তিনি এই সিনেমার কাজ সারতে পারবেন। যেহেতু জেমস কোয়ান্টিটি থেকে কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দেন, সবকিছুর সম্পাদনা একেবারে নিখুঁতভাবে চান, তাই এই বাজেটে পড়েছিল টান। তখন আরেক প্রোডাকশন কোম্পানি প্যারামাউন্ট পিকচার্স থেকে জেমসকে দেওয়া হয় আরও ৬৫ মিলিয়ন ডলার। তবে মার্কেটিং, প্রমোশনসহ টুকটাক বিভিন্ন খরচে দেখতে দেখতে এর বাজেট ২০০ মিলিয়নের ঘরে পৌঁছায়, যা ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা। অতিরিক্ত অর্থ ঢালায় প্রোডাকশন কোম্পানি এই সিনেমা নিয়ে কিছুটা ভয়ে ছিল। সেজন্য ক্যামেরনকে বলা হয়েছিল, যদি মুভি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে তার পারিশ্রমিক ৮ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে না। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পুরো বিশ্ব থেকে ২.১ বিলিয়ন ডলার থলেতে পুরে নেওয়ার পর থামে টাইটানিকের জয়যাত্রা। এটিই বিশ্বের প্রথম সিনেমা, যা বক্স অফিসে ১ বিলিয়নের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। ২০১২ সালে থ্রিডিতে মুক্তি দেওয়ার পর, সিনেমাটি আয় করেছিল ৩৪৩ মিলিয়ন ডলার।

টাইটানিক সিনেমায় জ্যাক ও রোজ; Image Source: 20th Century Fox.

১১.

অস্কারে দুর্দান্ত চমক দেখায় টাইটানিক। একসাথে অস্কারের ১৪টি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পায় মুভিটি। টক্কর দেয় ১৯৫০ সালের ‘All About Eve’ সিনেমাকে। সবাইকে অবাক করে ১৪টি মনোনয়নের মধ্যে ১১টি ক্যাটাগরিতে অস্কার বাগিয়ে নেয় বিশ্বের অন্যতম সেরা কাল্ট ক্লাসিক টাইটানিক।

This is a Bengali article about unknown facts about Titanic movie.
Feature Image: 20th Century Fox.

Related Articles