Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাজেটের আদ্যোপান্ত

সবাই আমরা কম-বেশি জাতীয় বাজেট নিয়ে আগ্রহী এবং বাজেটের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে থাকি। যেমন আমরা অনেকেই সাধারণত ‘বাজেট ঘাটতি’ শুনলেই ভেবে থাকি, দেশের অধঃপতন বুঝি হয়েই গেল। এত অর্থের যোগান আসবে কোথা থেকে? কিংবা ঘাটতি বাজেটই কেন হয় প্রতি বছর? কেন প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আয় ও ব্যয় সমান হয় না? বাজেট ঘাটতি আসলেই অর্থনীতি সহায়ক কি না, সেই প্রশ্নও আসে। চলুন প্রথম থেকে ভাবা যাক।

কেমন বাজেট ভালো? Image Source: Share-Net Bangladesh

বাজেট কী?

বাজেট হচ্ছে একটি  দেশের আগামী এক বছরের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়ের হিসাব। ব্যক্তি-বিশেষে বাজেট হয়ে থাকে আয়নির্ভর। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত বাজেটে আমরা সাধারণত আয় অনুযায়ী ব্যয়ের ক্ষেত্র নির্ধারণ করে থাকি। কিন্তু জাতীয় বাজেট এর থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। জাতীয় বাজেটে সরকার মূলত ব্যয়ের ক্ষেত্র এবং লক্ষ্যমাত্রা প্রথমে নির্ধারণ করে এবং পরে সেই পরিমাণ আয় কীভাবে আসবে তা নির্ধারণ করে। তবে এ ধরনের অবস্থা  উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বেশি বিদ্যমান।

স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে একটি অর্থনীতি খুব সুনির্দিষ্টভাবে একটি পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে যাবে, এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। কেননা, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি, যেমন- দুর্যোগের ফলে বছর শেষে আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়া খুব বেশি অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই সামঞ্জস্য কিংবা অসামঞ্জস্যের ভিত্তিতে বাজেট সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে।

১. উদ্বৃত্ত বাজেট

কোনো অর্থবছরের বাজেটের মোট আনুমানিক আয় যদি মোট আনুমানিক ব্যয় অপেক্ষা বেশি আসে, তাহলে তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলা হয়ে থাকে। সাধারণত উন্নত দেশ এই বাজেটের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত, যাদের মাথাপিছু আয় ভালো এবং কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত। কারণ, উদ্বৃত্ত বাজেটের কারণে কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস করার লক্ষ্যে উদ্বৃত্ত বাজেট অনুসরণ করা হয়। উল্লেখ্য, মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে কোনো দেশে যখন পণ্যসেবার মূল্য বেড়ে যায়।

মুদ্রাস্ফীতি বা মূল্যস্ফীটি- দুটোতেই বিপদ; Image Source: The Financial Express

অর্থাৎ, যখন কোথাও একই পরিমাণ পণ্য কিনতে পূর্বের চেয়ে বেশি মুদ্রা ব্যয় করতে হয় কিংবা পূর্বের সমপরিমাণ মুদ্রা দ্বারা পূর্বের চেয়ে কম পণ্য পাওয়া যায়, তা হলো মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতির কিছু কারণের মধ্যে একটি হলো- কোনো দেশে নগদ অর্থাৎ তরল অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এই বাজেটের মাধ্যমে মূলত অর্থের অতিরিক্ত পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়ও মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী। উদ্বৃত্ত বাজেট এই অতিরিক্ত ব্যয়কে কমিয়ে আনার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা পালন করে।

২. সুষম বাজেট

যে বাজেটে সরকারের আনুমানিক আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামঞ্জস্য থাকে, তাকে সুষম বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিছু অর্থনীতিবিদের মতে, বাস্তবিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে আনুমানিক আয় ও আনুমানিক ব্যয়ের এই ধরনের সামঞ্জস্য ধরে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। এই বাজেটের সুবিধা হলো, এটি সরকারের অতিরিক্ত অপচয় হ্রাস করে। কিন্তু অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধা হচ্ছে আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য ধরে রাখতে গিয়ে এটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্পসমূহে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দার সময় এই বাজেট কার্যকরী নয়।

৩. ঘাটতি বাজেট

উদ্বৃত্ত বাজেটের বিপরীত ব্যাপার ঘটে ঘাটতি বাজেটে। অর্থাৎ, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ধরা হলে তাকে ঘাটতি বাজেট হিসেবে অভিহিত করা হয়। মুদ্রা সংকোচন দেখা দিলে এই বাজেট অনুসরণ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কারণ এ ধরনের বাজেট একটি দেশের সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং এই বাজেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটি কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক। যার ফলে বেকারত্ব সমস্যা কিছুটা হলেও মোচন হয়। ঘাটতি বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের হাতে অর্থ পৌঁছানো, যা মুদ্রা সংকোচন সমস্যা সমাধানে কাজ করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নিয়মানুযায়ী বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকাকে আদর্শ ধরা হয়।

তাছাড়া, দুর্যোগকালে বাজেট ঘাটতি স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়ে থাকে। যেকোনো দেশের জন্য একটি সহনীয় মাত্রার ঘাটতি বাজেট দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। ঘাটতি বাজেটের অসুবিধা হচ্ছে, এতে করে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাবার সম্ভাবনা থাকে। এর কারণ হিসেবে ব্যাংক হতে সরকারের উচ্চহারে ঋণগ্রহণকে উল্লেখ করা যায়। তবে ক্রমবর্ধমান ঋণের ভারে জর্জরিত হলে তা স্বাভাবিকভাবেই সুফল বয়ে আনবে না। এমনকি তা মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি করতে পারে। তবে বার্ষিক বাজেট ঘাটতি জিডিপির যত শতাংশ, তার চেয়ে এডিপি, অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম বেশি হলে সে বাজেট অর্থনীতির জন্য সহায়ক বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করে করেন।

ঘাটতি পূরণের জন্য ঋণের দ্বারস্থ হতে হয়; Image Source: Time.com

এবার আসা যাক ঘাটতি পূরণের কথায়। বাজেট ঘাটতি মেটানোর উৎস দুটি- অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস। বৈদেশিক উৎস বলতে বিভিন্ন দেশ অথবা বিশ্বব্যাংক কর্তৃক দেওয়া ঋণকে বোঝায়। বৈদেশিক ঋণের সুবিধা হলো, পরিশোধের জন্য সময় বেশি পাওয়া যায়। তবে ঋণ শোধ না করে সময় বাড়াতে থাকলে দায় বেড়ে যায়। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস হলো সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক ব্যবস্থা। বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ কম নেওয়া হয়, কেননা এতে সুদ অপেক্ষাকৃত বেশি হয় বলে রাজস্ব ব্যয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। ব্যাংকিং খাতে এই সুদের হার অপেক্ষাকৃত কম বলে ঋণ নেবার ক্ষেত্রে এ খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এভাবে সরকার বাজেটে উল্লিখিত অতিরিক্ত ব্যয়ের যোগান দিয়ে থাকে।

Related Articles