পাঠক-দর্শকদের ভালোবাসায় সফলতার ৫ বছর পেরিয়ে রোর বাংলা পা রেখেছে অগ্রযাত্রার ৬ বছরে। অর্ধ-দশকের এই যাত্রাকালে ১৩ সহস্রাধিক কন্টেন্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আমরা, পেয়েছি সকলের কাছ থেকে ভালবাসা, ও গঠনমূলক নানা সমালোচনা, যেগুলো আমাদের ক্রমোন্নতিতে অবদান রেখেছে নিঃসন্দেহে।
এই উপলক্ষে আমরা রোর বাংলার প্রতিটি বিভাগের সেরা ৫টি করে লেখা প্রকাশ করতে চলেছি পুরো অক্টোবর মাসজুড়েই। আজ থাকছে ‘অর্থনীতি’ বিভাগের লেখাগুলো।
১
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ। রবিবার সকাল, আনুমানিক ১০টা কি ১১টা বাজে। পরিচালক মহোদয় এসেছেন একটা ছোটখাটো সমস্যার কথা শুনে। শুধুমাত্র অল্প কিছু মানুষের জন্য উন্মুক্ত ব্যাংকের যে ‘অ্যাকাউন্টস ও বাজেটিং’ বিভাগ, তার প্রিন্টারটা কাজ করছে না। যে প্রিন্টারে দিনরাত ব্যাংকের লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি প্রিন্ট হয় সয়ংক্রিয়ভাবে, সেটিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত দুই কার্যদিবস যাবত কিছু কারিগরি ত্রুটির পর সেদিন কাজ করা একেবারেই বন্ধ করে দিল। টেকনিশিয়ান ডেকে ঠিক করতে করতে চলে গেল কিছু সময়। এরপর এক সময় প্রিন্টার চালুও হলো। দেখা গেল, অকার্যকর হওয়ার আগে প্রিন্টারে যে যে নথি প্রিন্ট করার কমান্ড দেওয়া হয়েছিল, তা এক এক করে প্রিন্ট হয়ে বের হচ্ছে। কিন্তু, কি যেন ঠিক নেই।
কর্মকর্তারা যখন ব্যাংক ট্রান্সফার সংক্রান্ত নথিগুলো দেখছিলেন, একটা অস্বাভাবিক বিষয় তাদের নজরে আসে যা দেখে রীতিমত গা শিরশির হওয়ার জোগাড়। কিছু আর্থিক লেনদেনের নথি পাওয়া গিয়েছে যেগুলো ব্যংকের কর্মকর্তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তার উপর লেনদেনগুলো হয়েছেও বিভিন্ন দেশের ব্যংক অ্যাকাউন্টে। এরকম আর্থিক লেনদেনের সংখ্যা ৩৫টি। সব মিলিয়ে অর্থের পরিমাণও নেহাত কম নয়। ৯৫১ মিলিয়ন ইউ এস ডলার, মানে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যা বর্তমান হিসেবে (৮৪ টাকা ধরে) প্রায় ৮০০০ কোটি বাংলাদেশি টাকার সমমূল্যের অর্থ।
আরও জানতে পড়ুন:
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ ডাকাতি: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক জালিয়াতির অন্তরালে
২
২০০৪ সালের আগ অবধি গ্রিস এক কৃত্রিম সমৃদ্ধির বুদবুদের উপর ভাসছিল। গ্রিসের রাজপথে ছিল নতুন গাড়ির ছড়াছড়ি। ক্রেডিট কার্ড আর সহজ শর্তের ঋণের কারণে গ্রিকরা হয়ে উঠেছিল অতিমাত্রায় বিলাসী। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে গ্রিসের ব্যাঙ্কগুলো অবসর বিনোদনের জন্যও যে কাউকে ঋণ দিতে শুরু করে।
তবে এই অনুৎপাদনশীল ব্যয়ের দরুন যে মুদ্রাস্ফীতির জন্ম হয়, তা অবকাঠামো উন্নয়ন, গণমাধ্যম, পর্যটন ও অন্যান্য অনেক খাতের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে গ্রিসের অভ্যন্তরীণ মূল্য সূচকে যে আকস্মিক জোয়ার তৈরি হয় তা-ই পরবর্তীতে আরও বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্টক মার্কেটের সূচকের মাত্রা খুব দ্রুতই ১২০০ থেকে ৬৫০০ পয়েন্টে উঠে যায় এবং এক বছরের মাঝেই আবার ৬৬৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ইয়ান্নোস পাপান্তোনিউ দাবি করেন, গ্রিক স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্য সূচকের শক্তি খুবই ভাল। এটি পৃথিবীর বড় বড় বাজারের মূল্য সূচকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা রাখে। তবে কয়েক বছরের ভেতর গ্রিক স্টক মার্কেট থেকে ১৩৬ বিলিয়ন ইউরো (১৫২ বিলিয়ন ডলার) উধাও হয়ে যায়।
আরও জানতে পড়ে নিন এই লেখাটি:
গ্রিস অর্থনীতি: এক খামখেয়ালী ও দেউলিয়াপনার ইতিহাস
৩
আইপিএল মানেই যে অর্থের ছড়াছড়ি, এমন বলাটা মোটেই অত্যুক্তি হবে না। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যেন টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হয় নিলাম অনুষ্ঠানে। কোটি কোটি রুপিতে তারা দলে ভেড়ায় একেকজন তারকা ক্রিকেটারকে। এমনকি নিতান্তই অখ্যাত, অপরিচিত ক্রিকেটারকে দলে নেয়ার জন্যও অনেক সময় যে বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা ব্যয় করে, তা দেখে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে সাধারণ ক্রিকেট সমর্থকদের। পাশাপাশি একটি প্রশ্নও কমবেশি সবার মনের কোণেই উঁকি দিয়ে যায়: ক্রিকেটারদের পেছনে এত অর্থ কীভাবে খরচ করে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো? এত এত অর্থ খরচের পর আদৌ কি তাদের হাতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে? কীসের আশায় তারা প্রতিবছর আইপিএলকে কেন্দ্র করে এতটা মেতে ওঠে? জানতে পড়ে নিন এই লেখাটি:
আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কীভাবে লাভ করে?
৪
একটি দেশের সরকার কি চাইলেই ইচ্ছেমতো টাকা ছাপাতে পারে? আমাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে- সরকার কেন টাকা ছাপিয়ে দেশের মানুষদের হাতে হাতে দিয়ে দিচ্ছে না, বা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলো আরও সচল করছে না, অথবা দেশের বড় বড় মেগা প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কেন নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছে না!
কিন্তু মন চাইলেই কি এত এত টাকা তৈরি করা সম্ভব? আর সেই টাকা দিয়ে কি দেশের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব? এই ব্যাপারে জানতে চাইলে পড়ে নিন এই লেখাটি:
সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না?
৫
একটি দৃশ্যপট কল্পনা করুন। আপনি আবারো একটি সমুদ্রে নেমেছেন। এবারের সমুদ্রটি আগের সমুদ্রটির চেয়ে অনেক বড়। এর গভীরতাও অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, এই সমুদ্র পার হওয়ার পথ আপনার জানা নেই। হতে পারে আগের সমুদ্রটি পার হতে যে সময় আপনার লেগেছিল, এই সমুদ্রটি পার হতে তার দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময়ও লাগতে পারে।
তারপরও আশার ব্যাপার হলো, এই সমুদ্রে সাঁতার কাটছেন কেবল আপনি একা। আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তার মানে হলো, আপনাকে সবসময় তটস্থ থাকতে হচ্ছে না, এই বুঝি কেউ আপনাকে আক্রমণ করল। কিংবা আপনাকেও বাধ্য হয়ে অন্য কারো উপর আক্রমণ চালাতে হচ্ছে না।
আপনি আপনার নিজের মতো করে, কাউকে পরোয়া না করে সাঁতরে যেতে থাকবেন। কয়েকবার হয়তো ভুল পথে চলে যাবেন। কিন্তু তাতে কী! যেহেতু আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তাই আপনার হাতে অঢেল সময়।
ব্লু ওশান স্ট্রাটেজি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এই লেখাটি:
ব্লু ওশান স্ট্রাটেজি: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বোচ্চ সাফল্যের কৌশল