বাজার কাকে বলে, সে ব্যাপারে আমাদের সকলেরই মোটামুটি ধারণা আছে। যেখানে একজন বিক্রেতা কোনো কিছু বিক্রি করে এবং একজন ক্রেতা টাকার বিনিময়ে সেই জিনিসটি কিনে নেয়, সেটিকেই বলা হয়ে থাকে বাজার।
চোখ বন্ধ করলেই আমরা বাজারের একটি চিত্র কল্পনা করে নিতে পারি: একটি নির্দিষ্ট স্থান, সেখানে বিক্রেতারা তাদের পণ্য সমাহার সাজিয়ে বসে হাঁকডাক করছে, আর আগ্রহী ক্রেতারা দরদাম করে এমন একটি দামে তাদের পছন্দসই জিনিসটি কিনে নিচ্ছে, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনই সন্তুষ্ট থাকছে।
অর্থনীতিতে অবশ্য বাজারের আরো একটু নির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে। সাধারণ অর্থনীতি থেকে বাজারের সংজ্ঞা হিসেবে আমরা জানতে পারি, এটি হলো এমন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো, যেখানে একাধিক ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে, এবং অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে তাদের ভিতর যেকোনো ধরনের পণ্য, কর্মদক্ষতা কিংবা তথ্যের বিনিময় ঘটে।
অর্থাৎ, অর্থনৈতিক সংজ্ঞা অনুযায়ীই, একটি স্বাভাবিক বাজার ব্যবস্থায় একাধিক বিক্রেতা থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সব সময় কি তেমনটা দেখা যায়? যায় না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই, একজন বিক্রেতার আধিপত্যের কারণে অন্য কোনো বিক্রেতা দাঁড়ানোরই সুযোগ পাচ্ছে না, এবং একপর্যায়ে তারা লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে। ফলে অবশিষ্ট থাকছে স্রেফ ওই একজন বিক্রেতাই, যার কাছ থেকে সকল ক্রেতাকে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
এখন যেহেতু বিক্রেতার আর কারো সাথে প্রতিযোগিতা নেই, তাই সে নিজের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম যত খুশি বাড়িয়ে নিতে পারছে, এবং ক্রেতারা উপায়ন্তর না দেখে ওই দামেই পণ্যটি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে বিক্রেতার ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে, এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে ধন-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে।
এই যে প্রতিযোগিতাহীন, একক বিক্রেতার বাজার ব্যবস্থা, একে বলা হয়ে থাকে মনোপলি।
তবে আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু মনোপলি নয়। আজ আমরা কথা বলব অলিগোপলি সম্পর্কে। অনেকেই মনে করে, অলিগোপলি হলো মনোপলির বিপরীত রূপ। আবার অনেকের মতে, এটি মনোপলির ঈষৎ বিকৃত রূপ। তবে আসলে এটি কী, সে ব্যাখ্যা প্রতি ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আলাদা আলাদা হতে পারে। তাই সেই বিতর্কে না যাওয়াই শ্রেয়।
প্রশ্ন হলো, অলিগোপলি কী? এটি হলো এমন একটি বাজার ব্যবস্থা, যেখানে কোনো একটি পণ্যের একাধিক বিক্রেতা থাকবে। কিন্তু হ্যাঁ, বিক্রেতার সংখ্যা খুব বেশিও হবে না, যার ফলে সম্ভাব্য ক্রেতারা অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। বরং বাজারে ঠিক সেই পরিমাণ বিক্রেতাই থাকবে, যার ফলে সকলের লাভের খাতাই ইতিবাচক থাকবে। এবং এই বিক্রেতাদের পণ্য হুবহু এক হবে, কিংবা সেখানে কিঞ্চিত পার্থক্য থাকবে।
অলিগোপলির প্রকারভেদ
সাধারণত দুই ধরনের পণ্যের অলিগোপলি দেখা যায়।
একরূপী পণ্যের অলিগোপলি: শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত কাঁচামালের ক্ষেত্রে, একাধিক বিক্রেতা বা উৎপাদকের কাছে হুবহু এক ও অভিন্ন পণ্য বেশি দেখা যায়। যেমন: ভিন্ন ভিন্ন বিক্রেতার অ্যালুমিনিয়াম, কপার, ইস্পাত, জিংক, লোহা প্রভৃতিতে বিশেষ পার্থক্য দেখা যায় না। তাই এগুলোকে বলা হয় একরূপী পণ্য। আর এ ধরনের পণ্যের বাজারে যখন অলিগোপলি দেখা যায়, তখন সেটিকে বলা হয় বিশুদ্ধ বা যথার্থ অলিগোপলি।
বহুরূপী পণ্যের অলিগোপলি: কাঁচামাল অভিন্ন হলেও, শিল্পক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন উৎপাদকের উৎপাদিত একই রকম পণ্যেও কিছু তফাৎ থাকেই। যেমন: এক কোম্পানির সাবানের সাথে অন্য কোম্পানির সাবানের কিছু পার্থক্য থাকেই। একই কথা অন্যান্য প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক দ্রব্য, যানবাহন, গণমাধ্যম প্রভৃতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই এগুলোকে বলা হয় বহুরূপী পণ্য। আর এ ধরনের পণ্যের অলিগোপলিকে বলা হয় অবিশুদ্ধ বা অযথার্থ অলিগোপলি।
অলিগোপলির বৈশিষ্ট্য
অলিগোপলির ৬টি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
- অল্প কিছু বিক্রেতা: অলিগোপলিতে একের অধিক কিন্তু মোটের উপর সামান্য কিছু বিক্রেতা থাকে। সে তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। এ কারণে অল্প কিছু বিক্রেতাই গোটা বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, এবং পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের সুযোগও তাদের হাতেই থাকে।
- আন্তঃনির্ভরশীলতা: এ ধরনের বাজার ব্যবস্থায় সকল বিক্রেতার মধ্যেই একটি আন্তঃনির্ভরশীলতা বিদ্যমান। অর্থাৎ বাজারের অন্যান্য বিক্রেতার কথা চিন্তা না করে কেউ একাই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যেমন: কোনো একজন বিক্রেতা যদি নিজের পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করে সেটির দাম বাড়িয়ে দেয়, অথচ অন্য বিক্রেতাদের পণ্যের গুণগত মান ও দাম আগের অবস্থাতেই থাকে, তাহলে তার বিক্রি কমে যাবে, এবং তাকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাকে অন্যদের কথাও চিন্তা করে নিতে হয়।
- বিজ্ঞাপন: প্রচারেই প্রসার, এ আপ্তবাক্যটি অলিগোপলি বাজারের ক্ষেত্রে আরো বেশি করে প্রযোজ্য। সকল বিক্রেতারই লক্ষ্য থাকে যত বেশি সম্ভব ক্রেতার কাছে পৌঁছানো, আর এজন্য পণ্যের প্রচারের স্বার্থে তারা নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। মনোপলি বাজারে বিজ্ঞাপন যতটা অপ্রয়োজনীয়, অলিগোপলি বাজারে ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয়। যদি একজন বিক্রেতা বেশি বেশি বিজ্ঞাপন দিতে থাকে, এবং অপর বিক্রেতা নিশ্চুপ থাকে, তাহলে প্রথম বিক্রেতার বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে।
- প্রতিযোগিতা: বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা অল্প থাকায়, তাদের মধ্যে সব সময়ই একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলতে থাকে। এখানে প্রত্যেকেই একেকজন খেলোয়াড়ের মতো। কেউ একটি গুটি চাললে, বাকিদেরকেও সেটি প্রভাবিত করে, যে কারণে সবাই খুব দেখেশুনে, ভেবেচিন্তে পা বাড়ায়। তাছাড়া একজন তার পণের গুণগত মান বা দামে কোনো পরিবর্তন আনলে, অতিসত্বর তার প্রতিযোগীরাও নিজ নিজ পণ্যের ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসে।
- প্রবেশ ও প্রস্থানের প্রতিবন্ধকতা: এ ধরনের প্রতিযোগিতার বাজারে প্রবেশের মানদন্ড অনেক উঁচুতে বাঁধা থাকে। এসব মানদণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হলো সরকারি নিবন্ধন, পেটেন্ট, মূলধন, জটিল প্রযুক্তি ইত্যাদি। তাই যে কারো পক্ষেই সেখানে প্রবেশের সুযোগ হয় না। তবে এ প্রতিযোগিতা থেকে প্রস্থানটা বরং সহজ, এবং সেক্ষেত্রে অন্য বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ভালোই সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। যেমন: কোনো একটি টেলিকম কোম্পানি যদি ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চায়, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা সকলেই আগ্রহী হবে তার কাছ থেকে ব্যবসার মালিকানা কিনে নিতে, যাতে করে ওই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন ভোক্তা বা ব্যবহারকারীরা তাদের অধীনে চলে আসে।
- ঐক্যের অভাব: এ ধরনের বাজারে সাধারণ অবস্থায় সকল বিক্রেতার মধ্যেই ঐক্যের বড় অভাব দেখা যায়। পারস্পরিক প্রতিযোগিতা কখনো কখনো এতটাই অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে যে, তারা একে অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং শত্রু বলে মনে করতে থাকে। এবং শত্রুকে নির্মূল বা নিশ্চিহ্ন করে, নিজেদের লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে তুলতে তারা যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
অলিগোপলির উদাহরণ
অনেকেই হয়তো অবাক হতে পারেন জেনে যে বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল পণ্যের বাজার ব্যবস্থাতেই অলিগোপলি বিদ্যমান। চলুন, দেখে নিই তেমন কিছু উদাহরণ।
- অলিগোপলির সবচেয়ে বড় উদাহরণ বলা যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমকে। সেখানকার ৯০ শতাংশ গণমাধ্যমের মালিকানাই রয়েছে মাত্র ছয়টি মিডিয়া হাউজের হাতে — ওয়াল্ট ডিজনি, টাইম ওয়ার্নার, সিবিএস কর্পোরেশন, ভায়াকম, এনবিসি ইউনিভার্সাল এবং নিউজ কর্পোরেশন।
- স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের বাজারও অলিগোপলি বিদ্যমান। যেমন: স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে অ্যাপলের আইওএস এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড। ওদিকে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে বাকিদের থেকে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে অ্যাপল ও মাইক্রোসফট উইন্ডোজ। দুই ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রতিযোগিতা কেবল দুটি কোম্পানির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। তাই একে অলিগোপলির পাশাপাশি ডুয়োপলিও বলা যেতে পারে।
- বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতেও ছড়ি ঘোরাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু প্রযোজনা সংস্থা – ডিজনি, সনি পিকচার্স, ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওজ, ইউনিভার্সাল পিউকচার্স, টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স এবং প্যারামাউন্ট পিকচার্স।
অলিগোপলির ভালো-খারাপ
জগতে সবকিছুরই ভালো-খারাপ উভয় দিকই বিদ্যমান। সুতরাং, অলিগোপলিকেও কি আর আলাদা করা যায়! শুরুতে চলুন জেনে নিই অলিগোপলির ইতিবাচক বিষয়গুলো সম্পর্কে।
- অলিগোপলি বাজারে প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে ক্রেতাদের পক্ষেও পছন্দের পণ্যটি বেছে নেয়া অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক হয়। এ কথা হয়তো ঠিক যে অনেক বিক্রেতার কাছে একই ধরনের পণ্য থাকলেও সেগুলোর মধ্যে ছোটখাট পার্থক্য বিদ্যমান, তবে তা নিয়ে ক্রেতাকে খুব বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। যেমন: আপনি স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে আইওএস নেবেন নাকি অ্যান্ড্রয়েড, এ নিয়ে ভাবতে আপনাকে খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না।
- এ ধরনের বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগীর সংখ্যা কম থাকায় বিক্রেতা বা কোম্পানিগুলোর পক্ষে বেশি লাভ করা সহজ হয়। তাই অনেক সময়ই দেখা যায় যে, আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়া সত্ত্বেও, বছর শেষে অনেক বিক্রেতা ঠিকই লাভের খাতায় কিছু না কিছু তুলতে পারছে। আবার যারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে, তারা একাধারে পণ্য সংক্রান্ত গবেষণায় বেশি ব্যয় করতে পারছে, এবং সরকারও তাদের কাছ থেকে অনেক বেশি হারে কর লাভ করতে পারছে।
- প্রতিযোগী কম থাকায়, কিংবা প্রতিযোগী পরিচিত হওয়ায়, বিক্রেতা বা উৎপাদককে বিকল্প পণ্য তৈরি নিয়ে ভাবিত হতে হচ্ছে না, বরং তারা বিদ্যমান পণ্যকেই আরো উন্নত করার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হচ্ছে। যেমন: অ্যাপল ও স্যামসাং উভয়ই স্মার্টফোন ব্যবসা থেকে লাভবান হয়েছে বলে, তাদেরকে এখন বিকল্প কোনো ডিভাইস তৈরি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছে না, বরং তারা এখন স্মার্টফোনেরই আরো উন্নত সব মডেল বাজারে আনতে পারছে।
- মনোপলির ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিক্রেতা পণ্যের দাম যথেচ্ছ বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু অলিগোপলিতে যেহেতু একজন দাম বাড়িয়ে দিলে অন্যের বিক্রিবাট্টা বেড়ে যাবে, তাই সকল বিক্রেতাই চায় পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের ভিতর রাখতে। অনেক সময় এমনও হয় যে কে কার চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করবে, এ নিয়ে প্রতিযোগিতাও শুরু হয়। তবে দিন শেষে পণ্যের গুণগত মানই যেহেতু প্রধান, এবং পণ্যের গুণগত মান নিম্নগামী হলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেবে, বিক্রেতারা তাদের পণ্যের গুণগত মান স্থিতিশীল রাখতে কিংবা উন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট থাকে।
এ তো গেল অলিগোপলির ভালো দিকগুলো। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না এ বাজার ব্যবস্থায় খারাপ কিছু নেই। অনেকে তো এর ভালোর চেয়ে খারাপই দেখতে পায় বেশি। চলুন, জেনে নিই তেমনই কিছু নেতিবাচক দিক সম্পর্কে।
- পছন্দ করার কম অপশন কি সবসময়ই একটি ভালো জিনিস? সম্ভবত না। কারণ এর ফলে ক্রেতার জন্য বৈচিত্র্যময় পণ্যের স্বাদ আস্বাদন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, এবং তাদের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। যেমন: অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারীর কাছেই প্রথম পছন্দ অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইওএস। তবে এমন অনেকেও তো ছিল যাদের রুচি আলাদা, ফলে তাদের কাছে সিম্বিয়ানই বেশি ভালো লাগত। কিন্তু অলিগোপলি বাজার ব্যবস্থায় প্রথম দুইটির সাথে প্রতিযোগিতা করে পেরে ওঠেনি সিম্বিয়ান, হার মেনে বিদায় নিতে হয়েছে প্রযুক্তি দুনিয়া থেকে। এতে খুব বেশি মানুষের হয়তো ক্ষতি হয়নি, কিন্তু যারা সিম্বিয়ানের গুণগ্রাহী ছিল, তাদের জন্য বিষয়টি অবশ্যই হতাশার।
- সিম্বিয়ানের ফলাফল থেকেই আরো একটি বিষয় দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায় যে, অলিগোপলি বাজার ব্যবস্থায় নতুন উদ্ভাবনের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। যেমন: সকল ডেভেলপারই এখন জেনে গেছে ঠিক কী পরিণতি বরণ করে নিতে হয়েছে সিম্বিয়ানকে। তাই তাদের কাছে যদি মনেও হয় যে তারা আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েডের চেয়েও ভালো অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে সক্ষম, বাস্তবে সে কাজ করার দুঃসাহস কি তারা দেখাবে? সেরকম পৃষ্ঠপোষকই বা তারা কই পাবে, যে কিনা সিম্বিয়ানের পরিণতির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হওয়া সত্ত্বেও আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডের সাথে টেক্কা দেয়ার ঝুঁকি নেবে?
- অলিগোপলির ফলে বিক্রেতারা পণ্যের দাম কম রাখতে চেষ্টা করে, এ কথা ঠিক। কিন্তু যখন তাদের নিজেদের একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়ে যায়, তখন আর তারা ক্রেতাদের ধরে রাখার জন্য পণ্যের দাম কমানোর কথা চিন্তা করে না।
- অলিগোপলি বাজার ব্যবস্থা অনেক সময় গুটিকতক শীর্ষস্থানীয় বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীকে এত বেশি অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি দিয়ে দেয় যে, সেই সূত্র ধরে পরবর্তীতে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিও প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো কিংবা বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো, সর্বত্রই এখন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে ধাবিত হচ্ছে। এর পরোক্ষ কারণ অবশ্যই অলিগোপলি। অর্থাৎ অলিগোপলির কারণেই, একসময় যারা মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে শাসন করত, তারা পরবর্তীতে মানুষকে প্রশাসনিকভাবে শাসনেরও সুযোগ পেয়ে যায়। এর এক জ্বলন্ত উদাহরণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/