Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মধ্যে পার্থক্য কী?

ইংরেজিতে বহুল প্রচলিত দুটি শব্দ Socialism এবং Communism। বাঙালিদের কাছে এদের বাংলা পরিভাষা তথা সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদও সমান জনপ্রিয়। কিন্তু এদের অর্থ নিয়ে অনেকের মনেই জাগে বিভ্রান্তি। সেই বিভ্রান্তিই দূর করার চেষ্টা করা হবে আজ।

এ কথা সত্য যে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ দুটিই কার্যত অর্থনৈতিক দর্শন, যেখানে সম্পদের ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে গণ মালিকানার কথা বলা হয়। এবং এ কথায়ও কোনো ভুল নেই যে উভয়ই মুক্তবাজার পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো, অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণীর উপর পুঁজিপতি শ্রেণীর শোষণ এবং ধনী ও গরিবের মধ্যকার ব্যবধান দূরীকরণের চেষ্টা করে।

কিন্তু সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মধ্যে এই প্রাথমিক সাদৃশ্যগুলো বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও, এদেরকে কখনোই পুরোপুরি এক বলা যাবে না। কেননা এই দুই দর্শনের মধ্যে কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ অমিলও রয়েছে। সেই অমিলগুলো সম্পর্কে যদি আপনি জানেন, তাহলে আর কখনোই আপনার কাছে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদকে এক ধারণা বলে মনে হবে না।

সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ এক মনে হলেও আদতে তারা ভিন্ন; Image Source: This One vs That One

কীভাবে জন্মাল এ বিভ্রান্তি?

সমাজতন্ত্রের উদ্ভব মূলত শিল্প বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। শিল্প বিপ্লবের ফলে অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় কিছু চরম পরিবর্তন এসেছিল, যার প্রাদুর্ভাবের শিকার হচ্ছিল শ্রমিক শ্রেণীরা। দেখা যাচ্ছিল, শিল্প ব্যবস্থার ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পপতি বা পুঁজিপতিরাও বিপুল সম্পদের অধিকারী হচ্ছিল, তাদের কোষাগার ফুলেফেঁপে উঠছিল, কিন্তু সেই একই সমান্তরালে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছিল সাধারণ শ্রমিকরা। সহজ কথায় বলতে গেলে, শিল্পপতিরা যেন রক্ত চুষে খাচ্ছিল শ্রমিকদের।

ঠিক এরকম অবস্থায়, উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে আবির্ভাব ঘটে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক দার্শনিকের। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রণিধানযোগ্য হলেন হেনরি ডি সেইন্ট সাইমন, রবার্ট ওয়েন এবং চার্লস ফুরিয়ার। তারা সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে তাদের নিজস্ব মডেল উপস্থাপন করলেন, যেখানে গুরুত্বারোপ করা হলো সমাজকে নতুন রূপে ঢেলে সাজানোর। এমন একটি সমাজের স্বপ্ন তারা দেখলেন, যেখানে পুঁজিবাদের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা প্রতিযোগিতা নয়, বরং প্রাধান্য পাবে সমাজের সকল মানুষের মধ্যকার সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধতা। সেই সমাজে মুক্ত বাজারই নিয়ন্ত্রণ করবে সকল পণ্যের চাহিদা ও যোগান।

এরপর এলেন কার্ল মার্ক্স। তিনি বিশ্বখ্যাত জার্মান রাজনৈতিক দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ, যাকে আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়া অপ্রয়োজনীয়। ফ্রেডরিক এঙ্গেলসকে সাথে নিয়ে ১৮৪৮ সালে, অর্থাৎ উনবিংশ শতকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে, প্রকাশ করলেন ‘দ্য কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ বইটি। এ বইয়ের একটি বিশেষ অধ্যায়ে তারা তুলোধুনো করলেন ইতিপূর্বের সকল সমাজতান্ত্রিক মডেলকে। তাদের মতে, ওসব মডেল ছিল পুরোপুরি অবাস্তবসম্মত, ইউটোপিয়ান।

মার্ক্স ও এঙ্গেলস; Image Source: marxists.org

মার্ক্স জনপ্রিয় করলেন নতুন দুটি পরিভাষাকে। তিনি বললেন, শ্রমিক শ্রেণী প্রলেতারিয়েত, আর পুঁজিপতি শ্রেণী হলো বুর্জোয়া। তিনি ঘোষণা দিলেন, মানব সমাজের ইতিহাস মূলত শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস।

মার্ক্সের মতে, শ্রেণী সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, এবং পূর্বের সমাজব্যবস্থাগুলোর মতো পুঁজিবাদও তার অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও শ্রেণী সংগ্রামের ফলস্বরূপ ভেঙে পড়বে। তখন জন্ম হবে সমাজতন্ত্রের। এর কারণ, অস্থিতিশীল ও সংকটপ্রবণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যে শ্রেণী সংগ্রাম ঘটবে, তা শোষিত ও উৎপীড়িত প্রলেতারিতদের মাঝে শ্রেণীচেতনার জন্ম দেবে। ফলে প্রলেতারিয়েতদের মাঝে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠবে। ঐক্যবদ্ধ প্রলেতারিয়েতরা তখন এক শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবে। তবে মার্ক্স এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেন যে বুর্জোয়াদের আধিপত্য বিলীন করে দিয়ে শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রলেতারিয়েতদের ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র ও সহিংস বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে সাম্যবাদ, যাকে অনেক সময় অভিহিত করা হয় বৈপ্লবিক সমাজতন্ত্র হিসেবে, সেটিও জন্ম নিয়েছে শিল্প বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই। মার্ক্সের তত্ত্ব অনুসারে, এটি শ্রেণী সংগ্রামের একটি চরম পরিণতি। মার্ক্সবাদীরা অনেক সময়ই সমাজতন্ত্রকে দাবি করে থাকে পুঁজিবাদ থেকে সাম্যবাদে উত্তরণের পথে প্রথম ধাপ বা সোপান হিসেবে। তবে মার্ক্স ও এঙ্গেলস নিজেরা কখনো সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যগুলো নির্দিষ্ট করে দেননি। আর এ কারণেই সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মধ্যে এক চিরন্তন বিভ্রান্তির জন্ম নিয়েছে।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পিরামিড; Image Source: Industrial Worker/Wikimedia Commons

সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মধ্যে পার্থক্য

সাম্যবাদে ব্যক্তি মালিকানা বলে কোনো ধারণার অস্তিত্ব নেই। সেখানে যাবতীয় সম্পদ সমাজ, সম্প্রদায় বা রাষ্ট্রের মালিকানাধীন। একজন মানুষ সেখান থেকে একটি অংশ পাবে, যেটুকু তার প্রয়োজন হবে। এ দর্শন অনুযায়ী একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার, যেটি হতে পারে রাষ্ট্র, অর্থনৈতিক উৎপাদনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। রাষ্ট্রই তার নাগরিকদেরকে তাদের সকল প্রয়োজন, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতি সরবরাহ করবে।

কিন্তু সমাজতন্ত্রের পার্থক্য হলো, এটিও গণ মালিকানার কথা বলে বটে, তারপরও এখানে একজন ব্যক্তিবিশেষ ব্যক্তিগত সম্পদেরও মালিক হতে পারবে। অবশ্য শিল্প উৎপাদন, কিংবা সম্পদ সৃষ্টির প্রধান যে উপাদান, সেগুলো সাম্প্রদায়িক মালিকানার অধীনেই থাকবে, এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার সেগুলোর দেখভাল ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে।

এখান থেকেই শ্রেণীর বিষয়টিও আঁচ করা যায়। যেহেতু সাম্যবাদে কোনো ব্যক্তি মালিকানার জায়গা নেই, তাই শ্রেণী ব্যবধানেরও কোনো অস্তিত্ব নেই। একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তির চেয়ে বেশি আয় করবে বা সম্পদের মালিক হবে, সে সুযোগ নেই। কিন্তু সমাজতন্ত্রে শ্রেণীর অস্তিত্ব অবশ্যই থাকবে, যদিও ‘ব্যবধান’ ধারণাটি উহ্য থাকবে। তারপরও একজন ব্যক্তির পক্ষে আরেকজন ব্যক্তির চেয়ে বেশি আয় করা বা সম্পদের মালিক হওয়া অসম্ভব কিছু হবে না।

সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে কে কতটুকু ভাগ পাবে, সেখানেও কিন্তু সাম্যবাদ আর সমাজতন্ত্রে পার্থক্য রয়েছে। ১৮৭৫ সালে মার্ক্স তার ‘ক্রিটিক অভ দ্য গোথা প্রোগ্রাম’ বইয়ে সাম্যবাদকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন এভাবে, “From each according to his ability, to each according to his needs.” অর্থাৎ একটি আদর্শ সাম্যবাদী সমাজে জনগণের যা যা প্রয়োজন, সেগুলো সবই জোগান দেবে সরকার। কিন্তু সমাজতন্ত্রে ‘ন্যায্য পাওয়া’ ধারণাটি বিদ্যমান। একজন ব্যক্তি ঠিক ততটুকুই পাবে, যতটুকু অবদান সে অর্থনীতিতে রেখেছে। অর্থাৎ সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিবিশেষের শ্রম, প্রয়াস ও উদ্ভাবনকে পুরস্কৃত করা হয়।

সহিংস বিপ্লব; Image Source: Eugène Delacroix – La liberté guidant le peuple

সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবধান তাদের অর্জন পদ্ধতিতে। সাম্যবাদ বলছে, যদি একটি খাঁটি সাম্যবাদী সমাজ বা রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হয়, তাহলে মধ্যবিত্ত বা উচ্চ শ্রেণীর বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র ও সহিংস বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সমাজতন্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি এতটা কঠোর নয়। বরং এটি অনেকটাই নমনীয় একটি আদর্শ। এটিও পরিবর্তন ও সংস্কার প্রত্যাশী ঠিকই, কিন্তু তাই বলে এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর পুরোপুরি উৎখাত চায় না। এটি চায় বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে থেকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিবর্তন ও সংস্কারগুলো করতে।

ধর্ম প্রশ্নেও সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে মোটা দাগে পার্থক্য রয়েছে। সাম্যবাদে ধর্মকে পুরোপুরি বিলুপ্ত মনে করা হয়। কেননা মনে করায় হয় সাম্যবাদ ও ধর্মের সহাবস্থান সম্ভব নয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও সমাজতন্ত্র অনেক নমনীয়। সমাজতন্ত্র কারো উপর কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম চাপিয়ে দেয় না, বরং জনগণকে স্বাধীনতা দেয়া হয় কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম পালন কিংবা না পালনের।

সাম্যবাদী দেশ

ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা মার্ক্সবাদী তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছিল ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবে, যার মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছিল বিশ্বের প্রথম সাম্যবাদী সরকারব্যবস্থা। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগ পর্যন্ত সেখানে সাম্যবাদের অস্তিত্ব ছিল। বর্তমান পৃথিবীতে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দেশ, যেমন চীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে সাম্যবাদের আংশিক অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সাম্যবাদ কোনো দেশেই বিদ্যমান নেই, এবং কখনো তা ছিলও না।

এখন আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করব চীন, কিউবা ও উত্তর কোরিয়া এই তিনটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র সম্পর্কে। এদেরকে সাম্যবাদী বলার প্রধান কারণ এদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

চীন

চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি দেশটির সব ধরনের শিল্পের মালিক, এবং কঠোরভাবে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই সকল শিল্পের একমাত্র লক্ষ্য হলো ভোগ্যপণ্যের সফল উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে সরকারের লাভ সৃষ্টি করা। দেশটিতে স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষা জনগণকে বিনামূল্যে দেয়া হয়। তবে দেশটিতে আবাসন ও সম্পদ উন্নয়ন উচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রিত হয়, যা সাম্যবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক।

চীন একটি ‘প্রায়’ সাম্যবাদী রাষ্ট্র; Image Source: Dave Simonds/The Economist

কিউবা

কিউবার কম্যুনিস্ট পার্টি দেশটির প্রায় সকল শিল্পের মালিক ও নিয়ন্ত্রক, এবং অধিকাংশ মানুষই রাষ্ট্রের অধীনে কাজ করে। সরকার নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা জনগণকে বিনামূল্যে দেয়া হয়। আবাসন বিনামূল্যেও দেয়া হয়, আবার অনেকক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চমাত্রার ভর্তুকির মাধ্যমেও দেয়া হয়।

উত্তর কোরিয়া

১৯৪৬ সাল পর্যন্ত দেশটিকে শাসন করেছে কম্যুনিস্ট পার্টি। এখন অবশ্য দেশটি পরিচালিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার ‘সমাজতান্ত্রিক সংবিধান’ অনুসারে। তবে এখনো দেশটির সরকার সকল কৃষিজমি, শ্রমিক শ্রেণী এবং যাবতীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার মালিকানা নিজের দখলে রেখেছে, এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া দেশটির সরকার ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা’-র ব্যবস্থাও করছে সকল নাগরিকের জন্য। সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা নিষিদ্ধ। তার পরিবর্তে সরকার জনগণকে সরকারি-মালিকানাধীন ও নির্ধারিত আবাসন মঞ্জুর করে।

নর্ডিক দেশগুলো বিবেচিত হয় সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে; Image Source: The Masculene Traveler

সমাজতান্ত্রিক দেশ

একইভাবে, কোনো দেশও কখনো খাঁটি সমাজতন্ত্রের দেখা পায়নি। এমনকি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্কেও বিভিন্ন সফল পুঁজিবাদী ক্ষেত্র রয়েছে। তাছাড়া দেশগুলোতে এমন সব নীতি অনুসরণ করা হয়, যার সাথে সামাজিক গণতন্ত্রেরই মিল রয়েছে বেশি। অনেক ইউরোপিয়ান ও লাতিন আমেরিকান দেশেই সমাজতান্ত্রিক প্রকল্প (যেমন বিনামূল্যে কলেজ শিক্ষা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা, ভর্তুকিপ্রাপ্ত সন্তান সুরক্ষা) হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক নেতাও নির্বাচন করা হয়।

তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে আবার আরেকটি মজার ব্যাপারও দেখা যায়। মৌলিক চাহিদার বেশিরভাগই সরকার কর্তৃক পাওয়া যায় বলে, সাধারণ মানুষ সম্পদ অর্জন বা বৃদ্ধির খুব একটা প্রয়োজন বোধ করে না। তাই দেশগুলোর মাত্র ১০ শতাংশ জনগণই মোট সম্পদের ৬৫ শতাংশেরও বেশি নিজেদের কুক্ষিগত রাখে।

বার্নি স্যান্ডার্স একজন স্বঘোষিত গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী; Image Source: AP

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র

গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র হলো এমন একটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ যেখানে বলা হয়: সমাজ ও অর্থনীতি গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হলেও, তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে সামষ্টিকভাবে জনগণের চাহিদা মেটানো, পুঁজিবাদের ন্যায় ব্যক্তি ব্যক্তিবিশেষের উন্নতি নয়। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীরা চান সমাজের পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে রূপান্তর যেন মৌলিক মার্কবাদীদের বলা বিপ্লবের পরিবর্তে বিদ্যমান অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই সম্পন্ন হয়। এ ধরনের দর্শন একাধারে যেমন বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত চাহিদাগুলো যেমন আবাসন, পরিবহণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতির সরকারি নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করে, ঠিক তেমনই ভোগ্যপণ্যসমূহের সরবরাহ পুঁজিবাদী মুক্তিবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে হওয়াকেই শ্রেয় বলে মনে করে। সাম্প্রতিক অতীতে এই মতাদর্শটি যুক্তরাষ্ট্রে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘শিক্ষা’ বিভাগে এখন থেকে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about the basic difference between Communism and Socialism. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Science ABC

Related Articles