যেসব দেশের অধিকাংশ মানুষ উপার্জনশীল হয়, নিজের খরচ নিজে চালাতে পারে, তদুপরি দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে, সেসব দেশে জনসংখ্যা জনশক্তিতে পরিণত হয়। আবার যেসব দেশের একটা বিরাট অংশের কর্মক্ষম মানুষ কাজ পায় না তথা বেকার থাকে, সেসব দেশে বাড়তি জনসংখ্যা একটি বোঝা হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, যেখানে বেকারত্ব এক অভিশাপের নাম।
তবে বাংলাদেশে বেকারের প্রকৃত সংখ্যা যে আসলে কত, তা নিয়ে বরাবরই ধোঁয়াশা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭ সালের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের হিসাব মতে, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ, যার মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। সুতরাং দেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ, এবং মোট বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ।
কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন, আসলেই কি দেশে বেকারের সংখ্যা এত কম? তাহলে চারিদিকে কেন মানুষের এত হাহাকার? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আগে জেনে নিতে হবে বেকারের সংজ্ঞা কী। ধরুন, আপনি সপ্তাহে অন্তত একদিন এক ঘণ্টা কাজ করেন, এবং তার বিনিময়ে যেকোনো অঙ্কের মজুরি পান। এখন ওই মজুরি যত সামান্যই হোক না কেন, তাতে আপনার জীবনধারণ সম্ভব হোক বা না হোক, আপনি আর বেকার থাকবেন না। বেকার নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক প্রণীত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞা এটিই। মূলত এ কারণেই, দেশে বেকারের সংখ্যা এত কম।
তবে আইএলও-র এই সংজ্ঞার বাইরেও, বেকার জনগোষ্ঠী নিরূপনের জন্য বিবিএস আরেকটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। তারা বলছে, সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা যারা কাজের সুযোগ পান না, তারা হলো ‘ছদ্ম বেকার’। তারা সম্ভাবনাময়, কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশে এমন মানুষ আছে প্রায় ৬৬ লাখ, যারা মনমতো কাজ না পেয়ে টিউশনি, বিক্রয়কর্মী, কলসেন্টার কর্মী, রাইড শেয়ারিং প্রভৃতি খণ্ডকালীন কাজ করছেন।
তবে এই সংখ্যার সাথেও হয়তো একমত পোষণ করবেন না অনেকেই। শ্রমজীবী অধিকার নিয়ে কাজ করা বেশ কিছু সংস্থার মতে, দেশে কর্মহীন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ন্যূনতম ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫ কোটির মধ্যে। এছাড়া ডেইলি স্টার দুই অর্থনীতিবিদের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, দেশে কর্মহীনের সংখ্যা আসলে ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখের মধ্যে।
তাছাড়া চলমান করোনাভাইরাস মহামারীও দেশে কর্মসংস্থানের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি করবে, ফলে বেড়ে যাবে বেকারত্বের হার। গত ৮ মার্চ যখন বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্তের ঘোষণা দেয়া হয়, তখন দেশে কর্মসংস্থান ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষের। কিন্তু এরপর থেকে ক্রমাগত মানুষ কাজ হারাতে শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মহামারীর ফলে মোট কর্মহীনতার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হবে দেড় কোটি মানুষ।
এখন নিশ্চয় অনেকের কাছেই মোটামুটি পরিষ্কারভাবে ধরা দিচ্ছে দেশে বেকারত্ব বা কর্মহীনতার প্রকৃত চিত্র। তবে এখন যে প্রশ্নটি খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসবে তা হলো, এই বেকারত্বের পেছনে দায়ী কে বা কী? খুব সাধারণীকরণের মাধ্যমে হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না। কিন্তু তারপরও, ছোটবেলা থেকে একটা লম্বা সময় পর্যন্ত মানুষকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হয় পরবর্তীতে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গঠনের উদ্দেশে, তাই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আদৌ বেকারত্ব দূরীকরণে কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে, সে ব্যাপারে আলোচনার অবকাশ থেকেই যায়।
এ ব্যাপারে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ কিন্তু চমকপ্রদ এক তথ্যই দিচ্ছে। তাদের মতে, দেশে অশিক্ষিত বেকার যেখানে ৩ লাখ, সেখানে শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত বেকারের (যাদের বয়স ১৫ বছর বা তার বেশি) সংখ্যা ২৩ লাখ ৭৭ হাজার। এই শিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিতের মধ্যে আবার প্রাথমিক পাশ বেকারের সংখ্যা ৪ লাখ ২৮ হাজার, মাধ্যমিক পাশ বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৯৭ হাজার, উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেকার ৬ লাখ ৩৮ হাজার, এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেকারের সংখ্যা ৪ লাখ ৫ হাজার। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষিতদের মাঝেই বেকারত্বের হার তুলনামূলক বেশি।
এছাড়া সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অভ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের ৩৩ শতাংশের বেশি পুরোপুরি বেকার। এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার প্রায় ৩৭ শতাংশ। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকার ৩৪ শতাংশ। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা তরুণ-তরুণীর মধ্যে বেকারের হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ শতাংশ।
আইএলও-র কর্মসংস্থান নিয়ে সাম্প্রতিক আরেক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছেন, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অপরদিকে ২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রথম আলোর ২০১৯ সালের তারুণ্য জরিপ বলছে, দেশের ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণই কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের এবং অছাত্রদের চেয়ে ছাত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি। এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের প্রায় ৯১ শতাংশ ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। সামগ্রিকভাবে ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণের বিপরীতে স্নাতক পাশ বা এর বেশি শিক্ষিতদের প্রায় ৯৮ শতাংশই মনে করেন, দেশে বেকারত্ব বাড়ছে।
বোঝা যাচ্ছে, এ দেশে উচ্চশিক্ষা কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা তো দিতে পারছেন না, বরং বেকারত্বের হার আরো বৃদ্ধির পেছনে অবদান রাখছে। বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান এ অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকেই। তিনি বলছেন, বাংলাদেশের শিক্ষিত তারুণ্যের একটি বড় অংশ বেকার থাকলেও, ভারতীয়, শ্রীলংকানসহ বিদেশি কর্মীরা কাজ করছেন। কেননা কাজের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, বাংলাদেশি তরুণদের অনেকের মাঝেই তা নেই। অপরদিকে ভারত বা শ্রীলংকার ডিগ্রির মানও বাংলাদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক ভালো।
কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশি তরুণদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে প্রধানত শিক্ষার নিম্নমানকে দায়ী করছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে শীর্ষ ব্যবসায়ী সকলেই। তাদের অভিযোগ, দেশে উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছেছে। মানহীনতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের অভাব, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষা দিতে না পারা ও শিক্ষায় কম বিনিয়োগ ইত্যাদি এর কারণ।
এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মনেও। ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই মনে করে তাদের চাকরি বাজারের জন্য তৈরিতে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তেমন কোনো অবদান নেই অথবা এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নয়। আবার তাদের পাঠ্যসূচি একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটা সহায়ক, এমন প্রশ্নেও ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতামত নেতিবাচক। অধিকাংশেরই অভিযোগ, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই নিজেকে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় সফটওয়ারের ব্যবহার, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, সমস্যা সমাধান, দলীয় কাজ ও সূক্ষ্ম চিন্তাবিষয়ক কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের কিংবা সেখানে টিকে থাকার জন্য তরুণদের যেসব দক্ষতা আবশ্যক, সেগুলোর শিক্ষা তারা পাচ্ছে না প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে।
অর্থনীতিবিদদের ভাষ্যমতে, দক্ষতার অভাব প্রভাব ফেলে চাকরিতে প্রবেশের পর বেতনের ক্ষেত্রে। কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্বে অনেকেরই ধারণা থাকে, শিক্ষাগত পারফরম্যান্স (প্রথম শ্রেণি বা উঁচু সিজিপিএ) তাদেরকে চাকরির বাজারে বেশি বেতন পেতে সাহায্য করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, চাকরিতে ঢোকার সময় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত মেধাবীরা এগিয়ে থাকলেও, পরবর্তীতে তাদের বেতন-বৃদ্ধির নিয়ামক হয়ে যায় চাকরিতে তারা কেমন করছেন, কতটা দক্ষ হয়েছেন তা।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার অধীনেই দেশের তরুণ সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে কারিগরি শিক্ষা। বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ৬৭৫টি কারগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এছাড়া নিম্নমাধ্যমিক থেকেও কারিগরি শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি খুবই ইতিবাচক একটি ব্যাপার।
বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২০ শতাংশ (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে) এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। বর্তমানে এই হার প্রায় ১৬ শতাংশ। যদিও অনেকে এই হারের সাথে একমত নয়। তাদের মতে, বৃত্তিমূলক শিক্ষা আর কারিগরি শিক্ষাকে এক করে এই হার বেশি দেখানো হয়।
তবে সে যা-ই হোক, কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। এ ছাড়া বিএম, ভোকেশনাল, কৃষি ডিপ্লোমা রয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, যারা এসব কোর্স করছে, তাদের সহজেই কর্মসংস্থান হচ্ছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক থাকলেও তাদের বেকার থাকতে হচ্ছে না।
তবে কারিগরি শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলা ও বঞ্চনার বিষয়টিও অনস্বীকার্য। স্থানীয়ভাবে সুপারিশের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে অগ্রাধিকার পায়। কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক।
পরিবর্তন প্রয়োজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানসিকতারও। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে পাশ করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরোনো শিক্ষার্থীদের চেয়ে চাকরি লাভের হার বেশি। কিন্তু তারপরও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মনে করেন, এসব চাকরির সামাজিক মর্যাদা কম। কেননা তারা যে অফিসকেন্দ্রিক চাকরি পেতে বেশি ইচ্ছুক!
এ কারণেই, চাকরির বাজারে ব্যাপক মন্দা জানা সত্ত্বেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী সেটির আশাতেই বসে থাকে, আর চাকরি না পেয়ে অর্ধবেকার বা ছদ্মবেকারে পরিণত হয়। যেমন ৪১তম বিসিএসে আবেদন জমা পড়েছে মোট ৪ লাখ ৭৫ হাজার, যেখানে পদসংখ্যা ২,১৩৫। অর্থাৎ প্রতিটি পদের জন্য ২০০-এর বেশি প্রার্থী প্রতিযোগিতা করবে, এবং শেষপর্যন্ত প্রতি ১০০ জনে সাড়ে ৯৯ জনেরও বেশি ব্যর্থ হবে! কিন্তু তারপরও, স্রেফ মানসিকতাজনিত কারণে প্রতি বছর অজস্র শিক্ষার্থী যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, নির্দিষ্ট দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে সাধারণ শিক্ষার দিকেই ঝুঁকছে, যার ভবিষ্যৎ একেবারেই অনিশ্চিত।
এদিকে তরুণদের মাঝে নতুন একটি প্রবণতা দেখা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে উদ্যোক্তা হওয়ার। বিদেশে উদ্যোক্তাদের অর্থসংস্থানের একটা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সরকারি বা বেসরকারি খাত থেকে সেভাবে তারা অর্থ পাওয়া যায় না। পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে কেউ কিছু শুরু করলে সেটা থেকে লাভ আসতে কয়েক বছর লেগে যায়। সেই পর্যন্ত এই উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। যারা একটু বেশি টাকা নিয়ে, এবং যথেষ্ট দক্ষ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন, তারা হয়তো টিকে যান। কিন্তু একে তো উঠতি উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত টাকার অভাব, সেই সাথে চাহিদানুযায়ী দক্ষ কর্মীও পান না বেশিরভাগই। দিনশেষে তাই ব্যর্থতার পাল্লাই হয় ভারি।
সুতরাং এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে আধুনিক বিশ্বে, বৈজ্ঞানিক যুগে, দক্ষতানির্ভর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা। সাধারণ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আজো হয়তো কিছু শিক্ষার্থী ভালো চাকরি পায়, কিন্তু তাদের পরিমাণ নেহাতই সামান্য। সিংহভাগ শিক্ষার্থীকেই ঝরে পড়তে হয়, কিংবা কাঙ্ক্ষিত সাফল্যবঞ্চিত হতে হয় সঠিক দক্ষতার অভাবে। তাই একাধারে যেমন দেশের সরকারকে আন্তরিক হতে হবে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে সেখানে দক্ষতাভিত্তিক ও পেশাগত শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করার, তেমনই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকেও এ সত্য উপলব্ধি করে মেনে নিতে হবে যে বর্তমান সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে দক্ষতা ছাড়া কোনোভাবেই টিকে থাকা যাবে না।
সর্বমহল যদি একই সাথে শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষতার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে নিতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার করে, কেবল তখনই ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা অর্জন করতে পারবে। পাশাপাশি দেশেও গড়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি, ফলে ঘুচে যাবে উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্বের অভিশাপ।