আজকের যুগে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে অনেক শিক্ষার্থী। কেউ চায় দেশের বাইরে গিয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করতে, কেউ পোস্টগ্র্যাজুয়েট, কেউ বা আবার সরাসরি ডক্টরেট। কিন্তু যত শিক্ষার্থী এ স্বপ্ন দেখে, সে তুলনায় স্বপ্ন বাস্তবায়নের হার নিতান্তই কম। আর এর পেছনে প্রধান কারণ হলো সঠিক তথ্য ও যথাযথ দিক-নির্দেশনার অভাব।
যারা সত্যিকার অর্থেই উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে ইচ্ছুক, তাদের উচিৎ অন্তত বছরখানেক আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকে স্বচ্ছ করে নেওয়া, নতুবা শেষ মুহূর্তে শত চেষ্টা করেও কোনো কুল-কিনারা পাওয়া যায় না।
প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে ভাবা প্রয়োজন, তা হলো দেশ নির্বাচন। অর্থাৎ আপনি কোন দেশে যাবেন। বিদেশ গমন নয়, বরং শিক্ষা অর্জনই নিশ্চয়ই আপনার মুখ্য উদ্দেশ্য। সুতরাং আপনাকে জানতে হবে, কোন দেশগুলো উচ্চশিক্ষার মানের দিক থেকে সেরা।
এই মুহূর্তে শিক্ষার গুণগত মান বিচারে যে দেশগুলো সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাই আপনার লক্ষ্য যদি থাকে সম্ভাব্য সেরা শিক্ষালাভের মাধ্যমে নিজের বুদ্ধিমত্তা, মননশীলতা ও দক্ষতাকে শাণিত করা এবং কর্মজীবনে প্রবেশের আগে নিজেকে সুনিপুণভাবে প্রস্তুত করে তোলা, সেক্ষেত্রে আপনিও বেছে নিতে পারেন এই দেশগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটিকে।
তবে উল্লেখিত দেশগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেয়ার ক্ষেত্রেও আপনাকে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। কারণ একেকটি দেশের পড়াশোনা ধরন, খরচ ও ভর্তি চাহিদায় পার্থক্য আছে। আপনার বাজেট, আগ্রহ ও যোগ্যতার সাথে সবদিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে যে দেশটি, সেটিকেই বেছে নিতে হবে আপনার।
দেশ নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ হলো বিষয় নির্বাচন। দেশে আপনি যে বিষয় নিয়ে পড়েছেন, বিদেশে গিয়েও সেটিতেই অটল থাকতে চান, নাকি ভিন্ন কোনো বিষয় বেছে নিতে চান? আবার বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক বিষয়ও রয়েছে, দেশে যেগুলো ছিল না। ফলে সেগুলোর ভবিষ্যৎ চাহিদা, সম্ভাবনা, উন্নতির সুযোগ প্রভৃতি বিবেচনা করেও দেখতে পারেন যে ওই বিষয়গুলো নেয়া যেতে পারে কি না। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, ঝোঁকের মাথায় কোনো বিষয় পছন্দ করলে চলবে না। আপনাকে সেই বিষয়টিই বেছে নিতে হবে যেটির প্রতি আপনার নিজের আগ্রহ রয়েছে, ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে, এবং বিষয়টিতে পড়াশোনা করে পরবর্তীতে ভালো কোনো চাকরির সুযোগও রয়েছে।
বিষয় নির্বাচন শেষে আপনাকে মনোনিবেশ করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনে। আপনি হয়তো খুবই উন্নত কোনো দেশের দারুণ একটি বিষয় পছন্দ করেছেন, কিন্তু আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে, তাহলে কি আপনার বিদেশে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য পূরণ হবে? হবে না। আবার যদি এমন হয় যে আপনার বাছাইকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির টিউশন ফি অনেক বেশি, বৃত্তির সুযোগও তেমন নেই, তাহলেও তো বিপদ। তাই শিক্ষার মান, পরিবেশ, বৈশ্বিক র্যাংকিং, টিউশন ফি, বৃত্তি সুবিধা, আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি সকল বিষয় খতিয়ে দেখে তবেই আপনাকে কোনো একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।
এরপর আপনার প্রধান কাজ হলো নিজেকে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্য করে তোলা। নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে পারলেই কেবল আপনি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন। যেমন আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট অথবা জিআরই পরীক্ষার স্কোর। একেকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এসব চাহিদার পার্থক্য থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়া কিংবা যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএসে ব্যান্ড স্কোর অন্তত ৬ থাকা আবশ্যক। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে বেশিও চাইতে পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কিছু দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে টোফেল, স্যাট বা জিআরই দরকার হতে পারে।
এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার পর আপনাকে লেগে পড়তে হবে নির্ধারিত শর্ত পূরণের লক্ষ্যে। কেননা আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট বা জিআরই’তে নির্ধারিত স্কোর অর্জন করতে না পারলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার যাবতীয় স্বপ্নই যে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
এসবের পাশাপাশি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়জ্ঞান। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বৃত্তির সময়সীমা নির্দিষ্ট। সেই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই আপনাকে প্রয়োজনীয় সকল আবেদন করে ফেলতে হবে। তাই সবসময়ই সিভি, স্টেটমেন্ট অফ পারপাস লেটার, মোটিভেশন লেটার, রিকমেন্ডেশন লেটারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে।
বিদেশী বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদন করতে হয় অনলাইনে। ওয়েবসাইটগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে, সেখানে প্রয়োজনে নিজের পড়াশোনার সকল সনদ কাগজপত্র স্ক্যান করে তুলে দিতে হয়। পাশাপাশি সেগুলোর ফটোকপিও কুরিয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় পাঠাতে হতে পারে। আপনি বৃত্তিলাভে ইচ্ছুক কি না, সেটিও আবেদনের সাথেই উল্লেখ করা লাগতে পারে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটেও বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বা সরকারি বৃত্তির নোটিশ পাওয়া যায়। সেখান থেকে অনলাইনেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৃত্তির আবেদন করতে পারেন।
আবেদন করার পর অপেক্ষা শুরু ফলাফলের। তবে এজন্য খুব বেশিদিন আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে না। সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদন গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্ত ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। যদি আপনার আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়, সেক্ষেত্রে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ হলো ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ।
শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অফার লেটার সংযুক্ত করতে হবে। সেই সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো এটি নিশ্চিত করা যে, ওই নির্দিষ্ট দেশে গিয়ে পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার যাবতীয় ব্যয়ভার করার সামর্থ্য আপনার রয়েছে কি না। এজন্য আবেদনকারীর অভিভাবক বা কোনো নিকটাত্মীয়কে ‘স্পন্সর’ বা ‘গ্যারান্টর’ হিসেবে নির্বাচন করতে হবে, এবং দেখাতে হবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সত্যিই পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, স্পন্সর বা গ্যারান্টরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ অর্থ থাকা জরুরি। সাধারণত দেশভেদে টিউশন ফি হিসাবে বছরে ১০-১২ লাখ থেকে শুরু করে ২০-২২ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। সেই পরিমাণ অর্থ অবশ্যই ব্যাংকে থাকতে হবে। তবে আপনি যদি বৃত্তি পান, বৃত্তির শতাংশ এ হিসাব থেকে বাদ রাখতে পারেন। সেই সাথে ওই দেশে গিয়ে পারিপার্শ্বিক যেসব খরচ রয়েছে, যেমন থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, পোশাক, হাতখরচ, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্যও ব্যাংকে সন্তোষজনক অর্থ দেখাতে হবে। সব মিলিয়ে যদি দেখা যায় যে, টিউশন ফি হিসেবে ১০ লাখ টাকা এবং থাকা-খাওয়ার খরচ হিসেবে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে, তাহলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট হিসেবে অন্তত ২৫ লাখ টাকা দেখালেই ভালো হয়।
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা প্রধান যে বিষয়টি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা হলো পার্ট-টাইম চাকরি। নিজের হাতখরচ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অর্থের তাগিদে পার্ট-টাইম চাকরি নেওয়া যায় বটে, কিন্তু দিনের একটা বড় সময় ওই চাকরি করার পর ঠিকমত ক্লাসে যোগদান ও পড়াশোনার পেছনে সময় দিতে ব্যর্থ হয় অনেকেই। এর ফলে বিদেশে পড়তে যাওয়ার যে মুখ্য উদ্দেশ্য, সেটি ব্যাহত হয়।
তাই বিদেশে গিয়ে এ ধরনের কোনো সমস্যায় যেন পড়তে না হয়, সেজন্যও দেশে থাকতেই অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। বিশেষত বিদেশে গিয়ে আপনি নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কী জাতীয় পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারেন, সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকাটা দরকার।
আসলে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ যতটা কঠিন, দেশে থাকতে সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নেয়াও কোনো অংশে কম কঠিন নয়। বরং দেশে বসে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোই নির্ধারণ করে দেবে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে কাটানো সময়টুকু আপনার জন্য ফলপ্রসূ হবে কি না। এই সিদ্ধান্তগুলো সঠিকভাবে নেয়ার জন্য শুধু বিভিন্ন অনলাইনে খোঁজাখুঁজিই হয়তো আপনার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনি প্রয়োজনবোধ করতে পারেন কোনো দক্ষ কনসালট্যান্টের সাথে পরামর্শেরও।
আপনার সেই দক্ষ কনসালট্যান্টের চাহিদা পূরণ করতে পারে ফরচুন এডুকেশনস। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার যে দীর্ঘ পথ, সেই পথের একদম প্রাথমিক পর্যায় থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি পদে পদে আপনাকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে, এবং যেকোনো প্রয়োজনে সরাসরি আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই শিক্ষা উপদেষ্টা সংস্থা। বিদেশের মাটিতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ও দেশের পরিচিতি উজ্জ্বল করতে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে প্রয়াস, তা যেন সফল হয় সেই চেষ্টাই করে চলেছে এই অভিজ্ঞ কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানটি। তাই যদি আপনার নিজের বা পরিচিত কারো বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথকে মসৃণ ও বিভ্রান্তিহীন করতে চান, তাহলে নির্দ্বিধায় সাহায্য নিতে পারেন ফরচুন এডুকেশনসের।