সোনম ওয়াংচুক। এ বছরে জিতেছেন এশিয়ার নোবেল খ্যাত র্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কার। অনেকের মতে, এই ব্যক্তির জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি হয়েছিল রাজকুমার হিরানি পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’। শিক্ষা আর বিজ্ঞান দিয়ে নীরব বিপ্লব করে চলেছেন লাদাখে। পর্দার ফুংসুখ ওয়াংড়ু কি আসলেই সোনম ওয়াংচুকের প্রতিফলন ছিল? কেন এত খ্যাতি, কেন এত অর্জন এই ব্যক্তির? নেপথ্যের সকল গল্প আলোকপাত করা হবে এখানে।
তিব্বতীয় ভাষায় সোনম অর্থ ভাগ্যবান আর ওয়াংচুক অর্থ শিব বা শক্তি। ১৯৬৬ সালের ১ই সেপ্টেম্বর থ্রি ইডিয়টস সিনেমার শেষ দৃশ্যের সেই গাঢ় নীল হ্রদটির কাছেই জন্মেছিলেন সোনম, লেহ জেলার উলেটোকপো গ্রামে। একটু বড় হতেই পড়াশোনা করতে সোনম পাড়ি জমান প্রাদেশিক রাজধানী শ্রীনগরে।
যৌবনে চটকের রঙিন দুনিয়া তার চোখে ঠুলি পরায়নি, বরং বিবর্ণ বাস্তব তার ভ্রুকুঞ্চনই বাড়িয়েছে কেবল। হতাশ হয়ে দেখলেন নিজ প্রদেশে শিক্ষার অধোগতি। দশম শ্রেণির মেট্রিক পরীক্ষায় প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করছে। এরা ঝরে যাচ্ছে। ফলে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাসের হার তো দূরের কথা, অংশগ্রহণের হারই প্রায় শূন্যর কোঠায়। তিনি ভাবলেন, আসলে শিক্ষার্থীরা নয়, ফেল করছে এখানকার অসামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা। ফেল করছে তিব্বতীয়দের স্বাতন্ত্র অস্বীকার করে তাদের জোরপূর্বক হিন্দিতে শিক্ষা ‘গেলানো’। বর্তমানে চোস্ত হিন্দিতে কথা বললেও শিক্ষাজীবনে সোনমও এই ভিন ভাষা শিখতে যথেষ্ট বেগ পেয়েছেন।
কাশ্মীরের এনআইটি শ্রীনগর থেকে যন্ত্রকৌশলে সবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন সোনম। ১৯৮৮ সালের কথা। ভাবলেন, লাদাখের একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার নয়, বরং একটি পরিবর্তিত আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি বড্ড দরকার। এ লক্ষ্যে তিনি নিজের সাথীদের নিয়ে গড়লেন Students Educational and Cultural Movement of Ladakh (SECMOL)। শিক্ষা প্রচারণার সাথে সাথে খুলে ফেললেন সেকমল অল্টারনেটিভ স্কুল নামে চমৎকার এক বিদ্যালয়।
এই উদ্যোগে পাশে পেলেন সরকার ও স্থানীয় জনগণকে। মিলিত প্রজেক্টের নাম দেওয়া হলো ‘অপারেশন নিউ হোপ’। গড়ে উঠল দারুণ এক সামাজিক আন্দোলন। বাবা-মাকে সচেতন করা, বিজ্ঞান ও বইকে ভালোবাসতে শেখানো, পড়াশোনায় উৎসাহী করা ইত্যাদি নিয়ে ক্যাম্পেইন করেছেন তারা। ‘নিউ হোপ’ নামটি যে কতটা সার্থক, সেটি জানা গেলো অল্প দিনেই। ১৯৯৬ সালে লাদাখের পাশের হার ৫% থেকে ২০০৯ সালে গিয়ে ঠেকলো ৭৫% এ। আশা জাগানিয়াই বটে।
সোনমের বিদ্যালয়টি সম্পর্কে একটি মজার তথ্য জানিয়ে রাখি। এখানে ভর্তির জন্য আপনাকে মেট্রিকে ফেল হতে হবে। আর পাস হয়েও যদি আবেদন করেন, তবে থাকবেন ওয়েটিং লিস্টে। বিদ্যালয়ের কক্ষগুলো মাটির তৈরি। লাদাখের যে এলাকায় বিদ্যালয়টি অবস্থিত, সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি কোনো পরিষেবা নেই। তাই জীবাশ্ম জ্বালানীর বদলে সৌরশক্তিতে নির্ভরশীল একটি ক্যাম্পাস বানিয়েছেন। প্রযুক্তির কারিকুরিতে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপেও ১৫-২০ ডিগ্রি থাকে সে ক্যাম্পাসের অন্দরমহল। ফ্রান্সের আর্থ আর্কিটেকচার সম্মেলনে ২০১৬ সালে সেরা স্থাপত্যের জন্য আন্তর্জাতিক টেরা অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে সেকমল স্কুল।
লাদাখের শিক্ষামন্ত্রী সেওয়াং রিগজিং (২৭), দেশ-বিদেশে পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রনির্মাতা স্তানজিন দোরজাই ও অল উইমেন্স ট্রাভেল কোর প্রতিষ্ঠাতা, উদ্যোক্তা ও ভারতে নারীদের সর্বোচ্চ বেসামরিক ‘নারী শক্তি’ পুরস্কারপ্রাপ্ত থিনলাস কোরোল এই সেকমলেরই শিক্ষার্থী। এরা ৩-৫ বার করে মেট্রিক ফেল করেছিলেন!
বরফ ব্যবহার করে স্কুলের পাশেই বানানো হয়েছে আইস হকি মাঠ। লাদাখে ৬ দশক ধরে কেবল ছেলেরাই খেলত আইস হকি। সেকমল স্কুলের আইস-টার্ফে মেয়েরাও শুরু করলো এরপর। জাতীয় পর্যায়ে মেয়েদের স্কুল টিম চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এমনকি ২০১৬ সালে এখানকার দলটিই ভারতের জাতীয় মহিলা দল হিসেবে তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যালেঞ্জ কাপে অংশ নেয়। ২০২১ সালের মধ্যে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সোনমের বিদ্যালয়।
শুধু এসব নয়। লাদাখের সর্বপ্রথম প্রিন্ট ম্যাগাজিন ‘লাদাগস মেলং’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ অবধি। ২০০১ সালে সোনম যোগ দেন জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের লাদাখ পার্বত্য এলাকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। ২০০৪ সালে লাদাখের শিক্ষা ও পর্যটনের লক্ষ্যমাত্রার ওপর তিনি প্রণয়ন করেন ‘লাদাখ ২০২৫’ রূপরেখা। অসাধারণ এ কর্মপরিকল্পনার পুরষ্কার আসে ভারতের কেন্দ্র সরকার থেকেও। জনশক্তি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা সম্বন্ধীয় জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে যোগ দেন সোনম। ২০০৭-২০১০ অবধি নেপালেও শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করেছেন একটি ড্যানিশ এনজিওর কর্মী হিসেবে।
এত কিছুর স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৮ সালে সোনম সিএনএন-আইবিএন কর্তৃক ‘রিয়েল হিরোজ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হন। পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্ম-উৎসর্গকারীদের সম্মান জানিয়ে তিনি বললেন-
ইস দেশকে লিয়ে আব জান নেহি, জিন্দেগি দেনে কি জরুরত হ্যায়।
তাই তো। এখন রক্ত নয়, দেশ বরং চায় সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত চলচ্চিত্র-সংলাপের কিংবদন্তি শব্দ-জাদুকর জাভেদ আখতার স্বয়ং মুগ্ধ হয়েছিলেন সোনমের জান আর জিন্দেগির সে ব্যাখ্যায়। সে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বলিউডের দ্য পারফেকশনিস্ট আমির খান। সোনমের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হলো তার। সোনম তাকে বললেন–
এপারে লাদাখ আর ওপারে (পাকিস্তান) বালতিস্তান। মাঝখানে এক টুকরো বরফের ভূমি সিয়াচেন। এই নিয়ে দুই সীমান্তে এত লড়াই, এত বিবাদ, রোজ ৫-৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ এই পরিমাণ টাকা যদি এই স্থানদ্বয়ের শিক্ষাখাতে ঢালা হতো, কী চমৎকার পরিবর্তনই না আমরা দেখতে পেতাম! শিক্ষার চেয়ে বড় সুরক্ষা আর কী হতে পারে? এটা নিয়ে একটা সিনেমা বানান।
আমির খান মনযোগ দিয়ে সব কথা শুনলেন। আগ্রহভরে সোনমের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টরিও দেখলেন যেটি সেদিন প্রদর্শিত হয়েছিল। এরপর সোনম চলে যান ফ্রান্সে, আর্থ আর্কিটেকচার নিয়ে পড়তে।
হঠাৎ ২০০৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ তার কাছে অনেক ইমেইল, ফোন-কল আসতে থাকে। সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ীরা সকলের মুখে একটাই কথা- আপনাকে নিয়ে সিনেমা হয়েছে, আপনার স্কুল দেখানো হয়েছে, ইত্যাদি। সোনম স্কুলে ফোন করে জানতে পারলেন, ২০০৮ এর এপ্রিলে একটা শুটিং ইউনিট নাকি এসেছিল সেকমল স্কুলে। কিন্তু মালসামান রাখবার জায়গা না পেয়ে অন্য স্কুলে শুট করে তারা।
ওদিকে বারবার যোগাযোগ করেও নির্মাতাপক্ষ থেকে খুব একটা সাড়া পাচ্ছিলেন না সোনম। তিনিও আশা ছেড়ে দিলেন। কিন্তু ২ বছর মুখ খোলেননি। সে সময় লেখক চেতন ভগতের সাথে নির্মাতাপক্ষের এমনিতেই একটা বচসা চলছিল। তিনি তাই এই কদর্য লড়াই থেকে নিজেকে দূরেই রাখলেন সে সময়। এরপর ২০১২ সালে মুখ খুললেন তিনি। জানালেন, হ্যাঁ, আমির খানের সাথে এমন একদিন কথা হয়েছিল, তবে এর বাইরে সিনেমার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেনও না, এমনকি এটি তার জীবনকে আশ্রয় করে বানানো কিনা, সে প্রশ্নেও তার বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। সোনমের মতে,
আমরা ভারতে ক্রিকেট ও বলিউডের একটু বেশিই গুরুত্ব দিই। আমরা খেলার জিতও চাই সিনেমায়, আমরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও করতে চাই কেবল সিনেমায়। কিন্তু আমাদের সিনেমার চেয়ে সত্যিকার জীবনে এগোনোর দরকারটা বেশি।
তার জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে থ্রি ইডিয়টস, এমনটা মনে না করলেও তার দ্বারা মুখ্য চরিত্রটি যে কিছুটা হলেও প্রভাবিত, এটা মানেন তিনি। কোনো একটি অর্জন তখনই স্বীকৃত হবে, যখন একটা সিনেমা তৈরি হবে সেটির ওপর– ভারতীয়দের নাকি এমন একটা মানসিকতা আছে বলে ভাবেন সোনম। তিনি চান দ্রুতই দূর হোক এটি।
২০১৩ প্রায় শেষের পথে তখন। সোনম ওয়াংচুকের সবচেয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কারের অধ্যায় এলো এবার। ‘বরফ-স্তুপা’। শীতে লাদাখের জমাটবাঁধা বরফগুলোই গ্রীষ্মে গলে গিয়ে কৃষকদের চাষাবাদের পানির যোগান দেয়। কিন্তু সেই বরফ গলতে গলতে পেরিয়ে যায় জুন-জুলাই মাস, বন্যাও হয় তাতে। তার আগে কৃষিকাজের মূল দুই মাস এপ্রিল-মে মাস জুড়ে তৈরি হয় তীব্র পানির সংকট। এ সংকট মাথায় রেখে সোনম ভাবলেন নতুন কিছু করার। শীতের বরফ অপচয় না করে গ্রীষ্ম পর্যন্ত সংরক্ষণ করবার কথা ভাবলেন তিনি।
বিজ্ঞানের অত্যন্ত সাধারণ একটি পদ্ধতিকে কাজে লাগালেন। একটি হেলানো পাইপ দিয়ে উৎস থেকে পানি চালনা করতে হবে। পাইপ বেয়ে পানি যখন শেষ মুহূর্তে বের হবে, তখন আভ্যন্তরীণ চাপের দরুন তা একটি ফোয়ারার মতো করে বের হবে। যেহেতু বাইরের তাপমাত্রা শীতকালে -২০/-৫০ ডিগ্রি, সেহেতু বের হতেই পানি বরফ হতে শুরু করবে। এভাবে ফোয়ারার আকারে পানি বাড়তে বাড়তে ওপরের দিকে উঠতে থাকবে এবং সমগ্র বরফের স্তুপটি একটি কোনক আকার ধারণ করবে। এভাবে স্তুপীকৃত বরফের মধ্যে পানি অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মিত হয় বরফের প্রথম আধার। দোতলা বাড়ির সমান সেই আধারে পানি ধরত প্রায় দেড় লাখ লিটার। তিব্বতীয় বৌদ্ধ মঠগুলোর বৃত্তাকার পিরামিড ঘরানার আকারের জন্য সেগুলোকে ‘মন্দির’ না বলে বলা হয় ‘স্তুপা’। সোনম ওয়াংচুকও তার বরফের আধারের নাম দিলেন Ice-stupa বা ‘বরফ-স্তুপা’।
২০১৫ সালে লাদাখের ফুগটাল নদীর অববাহিকায় এলো নতুন দুর্বিপাক। নতুন ভূ-ভাগের আবির্ভাবে নদীর আকস্মিক গতিরোধ হলো। সৃষ্টি হয়ে গেল ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ হ্রদ। স্বাভাবিকভাবেই নদীর প্রবাহ নষ্টকারী সে হ্রদের জন্য কৃষিকাজ যেমন ব্যহত হচ্ছিল, তেমনি বন্যার ঝুঁকিও বাড়ছিল। আবারও ত্রাতার ভূমিকায় সোনম। কর্তৃপক্ষকে বললেন গাড়ি থেকে পেট্রোল চোরানোর পুরনো ‘সাইফোন’ পদ্ধতি অনুসরণ করতে। ঐ উপায়ে হ্রদের পানি নিষ্কাশন করে ফুটগালের অপর প্রান্তে ফেলতে বললেন তিনি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সোনমের কথা রাখেননি, রাখলেন অন্য কোনো ভুট্টো সাহেবের কথা। মাইন বিস্ফোরণ দিয়ে হ্রদ খালি করা হলো। যা করতে গিয়ে প্লাবিত হলো গোটা এলাকা, আর ধ্বংস হলো এক ডজন সেতু।
নিজের এলাকার লোকেরা রত্ন চিনতে ভুল করলেও সবাই নিশ্চয়ই এক ভুল করবে না। সিকিম সরকার ডেকে নিল সোনমকে। অনাকাঙ্ক্ষিত ‘হ্রদ-সমস্যা’ যে তাদেরই বেশি। সাইফোন পদ্ধতিতে সে এলাকার সুন্দর পথ্য লিখে দিলেন পরিবেশের চিকিৎসক সোনম।
ওদিকে নিজের এলাকা লাদাখে থেমে নেই স্তুপার জয়যাত্রা। ২০১৫ সালে তারা তৈরি করলেন ৬৪ ফুটের স্তুপা। চাইলেই গিনেজ বুকে নাম লেখাতে পারতেন এই উচ্চতা নিয়েই। কিন্তু তারা তা করেননি। তাদের স্বপ্ন ১০০ ফুটের স্তুপা বানানোর এবং সেই পানি দিয়ে ৫০০০ গাছ লাগানোর।
২০১৬ সালে তিনি নিলেন আরো বড় পদক্ষেপ। কৃষির চেয়েও বৃহৎ কর্মপরিকল্পনার অংশ করলেন বরফ-স্তুপাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, মেরু অঞ্চলসহ হিমালয়ের বরফ অবধি গলছে। ফলে শুধু উষ্ণতা বৃদ্ধিই নয়, প্লাবিত হবার ঝুঁকিতে আছে বিশ্ব। এমন অবস্থায় বরফ-স্তুপার প্রযুক্তিকেই কাজে লাগাতে চাইলেন সোনম। কৃত্রিম বনায়নের কায়দায় কৃত্রিম হিমবাহ প্রস্তুতকরণ।
লাদাখের উঁচু পাহাড়ি ঢালে যে নদী আর হ্রদগুলো আছে, সেগুলোর পানি দিয়ে স্তুপা তৈরি করে প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়াল বানাতে চাইলেন। পানির প্রাচুর্যের কারণে এখানকার স্তুপাগুলো এতটাই বড় আর টেকসই করা সম্ভব যে, বিগলন ছাড়াই মোটামুটি স্থায়ীভাবে সেগুলো টিকে যেতে পারে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যুগে যেখানে বিশ্বমোড়লেরা কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে হিমবাহ হত্যা করছেন, সেখানে ‘ফুংসুখ ওয়াংড়ু’ ভাবছেন হিমালয় এলাকাকে নতুন হিমবাহ উপহার দেবার কথা। অথচ প্রাকৃতিকভাবে হিমবাহ তৈরি শেষ হয়েছে সেই ১০ হাজার বছর আগে। সোনমের এই পরিকল্পনা মনে ধরেছে সুইজারল্যান্ডের সরকারেরও। তারাও সুইস আল্পসে চালু করতে চাচ্ছে এই প্রযুক্তি। তত্ত্বাবধানে থাকবেন সোনমই। এসব করে ২০১৬-তেই ইউনেস্কোর সম্মানজনক আর্থেন আর্কিটেকচার চেয়ার-এও ভূষিত হয়েছেন এই কৃতি।
ভালো একটা তথ্য জানিয়ে রাখি। আপনিও কিন্তু হতে পারেন সেকমল অল্টারনেটিভ স্কুলের ছাত্র। না, তিব্বতীয় ভাষাতেও পড়তে হবে না, মেট্রিকে ফেলও করতে হবে না, এমনকি ভারতীয়ও হতে হবে না। চাইলেই সৌর নকশা, প্রাকৃতিক স্থাপত্যকলা, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় করতে পারেন এক-দুই সপ্তাহ মেয়াদী স্বল্পকালীন কোর্স। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.secmol.org। আর হ্যাঁ, চোখ কান খোলা রাখুন। লাদাখে ৬৫ একর জায়গা নিয়ে শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সোনমের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। পার্বত্য ও শীতল মরু এলাকার ভূপ্রকৃতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চাইলে সেটি গন্তব্য হতে পারে আপনারও।
পাঠক, এবার বলুন। সোনমকে মহিমান্বিত করবার জন্য কি তার সত্যিকারের ‘ফুংসুখ ওয়াংড়ু’ হবার প্রয়োজন আছে? নাকি সোনম ওয়াংচুকের কৃতিত্বগুলোই যথেষ্ট তার পরিচিতির জন্য? বরং আমির খান অভিনীত ‘ফুংসুখ ওয়াংড়ু’ চরিত্রটিই শ্লাঘা অনুভব করতে পারে, যেহেতু তার নাম জুড়েছে সোনম ওয়াংচুকের মত এক ব্যক্তির জীবনের সাথে।
Featured Image Source: csrmandate.org