ছবি আঁকতে ভালোবাসেন না এমন কেউ আছেন? ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে শেষ বয়সের মানুষকে পর্যন্ত হাতে তুলে নিতে দেখা যায় বিভিন্ন রং-বেরঙের পেন্সিল। যারা ছবি আঁকতে ভালোবাসেন কিন্তু কিছু ভুল করে ফেলছেন বারবারই অথবা মনে হচ্ছে শুধুমাত্র আপনার ছবিটাই হয়ত ঠিকভাবে আঁকা হচ্ছে না, তাদের জন্যেই আজকের এই আয়োজন। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কিছু ভুলের প্রতিকার করে আপনিও দুই-এক স্ট্রোকে এঁকে ফেলুন বিভিন্ন ছবি।
শুরু করার আগে যা যা প্রয়োজন:
১. বিভিন্ন শিষের পেন্সিল (এইচবি, ২বি, ৪বি হলেই যথেষ্ট)। পেন্সিলের এই মাপগুলো পেন্সিলের গায়েই লিখা থাকে।
২. ইরেজার।
৩. ব্লেড।
৪. শার্পনার।
৫. ছবি আঁকার কাগজ।
৬. জ্যামিতি বক্স।
এবার শুরু করা যাক সেসব সমস্যা নিয়ে যেগুলো আপনার মনোবল বারবার ভেঙে ফেলছে।
সমস্যা ১. আপনার আঁকা লাইন সোজা হচ্ছে না
সত্যিকার অর্থে ‘সোজা লাইন‘ বলতে বাস্তবে কিছু নেই। অবাক লাগলেও সত্য কথা হলো ‘সোজা লাইন’ শুধুমাত্র ভেক্টরেই পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় দুটি বিন্দুর মধ্যে সংযোগকারী রেখা। তাই লাইন সোজা না হলে মন খারাপের কিছুই নেই। সেক্ষেত্রে টিপস হলো যেটাই আঁকার চেষ্টা করছেন সেগুলোকে ছোটো ছোটো বিন্দু দিয়ে হালকা করে এঁকে নিন। তারপর বিন্দুগুলো জুড়ে দিন। সম্পূর্ণ সঠিক না হলেও অনেকটাই কাঙ্ক্ষিত আকার পেয়ে যাবেন।
সমস্যা ২. কোনো কিছুই ঠিকমতো আঁকা হচ্ছে না
প্রথমে আপনি চাইলেই চমৎকার একটি দৃশ্য কিংবা একটি সুন্দর গোলাপ এঁকে ফেলতে পারবেন না। অধ্যাবসায় করুন। চোখের সামনে যা পান তা আঁকার চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে একটি কলম, একটি বই অথবা আপনার পছন্দের কফি মগ। হুবহু হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। যা আঁকতে পারবেন সেটাই উপভোগ করুন।
সমস্যা ৩. পরিমাপ ঠিক না হওয়া
এটা ছবি আঁকার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। একটি সুন্দর বাড়ি আঁকার পর যদি দেখেন একটি জানালা দরজা থেকেও বড় লাগছে, তাহলে বেশ বেখাপ্পা হয়ে যাবে ব্যাপারটা। মন খারাপ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সেজন্য মাপ ঠিক রাখুন। সত্যিকার বাড়িগুলোর কথা চিন্তা করতে পারেন। হতে পারে দরজার মাপ জানালার তিনগুণ হয়। এমন কিছু আইডিয়া টুকে রাখুন আপনার ছবি আঁকার খাতার প্রথম পাতায়। এরপর পরিবর্তন নিজের চোখেই দেখুন।
সমস্যা ৪. ছবি আঁকা শিক্ষকের মতো হচ্ছে না
অনেকেই এখন কারো কাছে গিয়ে ছবি আঁকা শেখার সময় করতে পারেন না। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইউটিউবের বা অনলাইনে শিক্ষকের সাহায্যে ছবি আঁকা শিখে থাকেন। তাদের একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে ইন্সট্রাকটরের মতো আঁকতে না পারা। তাদের জন্য প্রথম সমাধান হচ্ছে হাত খুলে দেয়া। অর্থাৎ মনের মতো করে দাগ কাটুন। একেবারে হুবহু করতে চাইলে পেন্সিলে গাঢ় করে চেপে ধরা, পৃষ্ঠা ছিঁড়ে যাওয়া, কালি পড়ে যাওয়া- এগুলো বেশি হয়। তাই হালকা করে পছন্দমত দাগ কাটুন। একবার, দু’বার, তিনবার- কতবার আর ঐটুকু পেন্সিল আপনাকে হার মানাবে?
সমস্যা ৫. কল্পনা থেকে আঁকতে না পারা
মাঝে মাঝে এমন কিছু আঁকতে ইচ্ছা করে যা হয়ত এখন চোখের সামনে নেই। তবুও বসে পড়লেন খাতা পেন্সিল নিয়ে এবং ফলাফল দেখে নিজেই আঁতকে উঠলেন। এটা শুধু আপনার সমস্যা নয়। অনেক পেশাদার শিল্পীকেও এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কল্পনাশক্তি বাড়ানোর জন্য আগে সেই জিনিস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি সূর্যাস্তের দৃশ্য আঁকতে চাচ্ছেন। প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে সূর্যাস্তের দৃশ্যে সূর্য পূরোপুরি দেখা যায় না, আকাশ পুরোপুরি আলোকিত থাকে না, আবার অন্ধকারও থাকে না, আকাশ আর মাটির সুন্দর একটি মিলনে দিগন্ত সৃষ্টি হয় ইত্যাদি। এটুকু ধারণা থাকলেই আপনি মোটামুটিভাবে একটি সুন্দর সূর্যাস্তের ছবি এঁকে ফেলতে পারবেন। বিশ্বাস হচ্ছে না? এখনই এঁকে দেখুন!
সমস্যা ৬. রঙ বাছাই
অনেক সময় দেখা যায় সুন্দর একটি ছবি এঁকে শুধুমাত্র রঙ বাছাইয়ের ভুলে পুরো চমকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্যাপার আছে।
- কে বলেছে গাছের রঙ গাঢ় সবুজ হতেই হবে। আপনি রঙ্গিন গাছ আঁকলেও সমস্যা হবার কথা নয়।
- যদি একদম ঠিকঠাক রঙ ব্যবহার করতেই চান, তাহলে ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে বেশি নজর দিন। গাঢ় রঙে হালকা এবং হালকা রঙে গাঢ় বস্তু ফুটবে অনেক বেশি। যেমন আপনি যদি রাতের ছবি আঁকার জন্য কালো আকাশ এঁকে থাকেন, তাহলে বাড়ির খুঁটিনাটি বেশি রঙ্গিন না করে হালকা হলুদ বা কমলা রঙের কিছু বাতি এঁকে দিলেই বেশ ফুটে উঠবে।
- রঙের মিশেল শিখুন। সবুজের সাথে লাল, কমলা, হলুদ যেমন মিশবে, তেমনটা নীল, আকাশী বা ধূসর মিশবে না। প্রতিটা রঙের একটু করে আঁচড় কাগজে দিয়ে দেখতে পারেন। পাশাপাশি রঙের মিশেল আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
যা যা খুব বেশি করে অনুশীলন করতে হবে
- যেকোনো ছবিকে আগে ছোট ছোট বিন্দুতে ভাগ করে নিন। জিনিসটির আকার যত বাঁকা হবে, বিন্দুর সংখ্যা তত বেশি হবে।
- যা দেখবেন তার খুঁটিনাটি লক্ষ্য করুন। ছায়া, আকার, পরিমাপ ঠিক করতে পারলে একটি ছবি অনেকাংশে পরিবর্তন করা সম্ভব।
- স্কেচ সবচেয়ে বেশি জরুরি। রঙের চেয়ে স্কেচ করা ছবিকে বাস্তবিক করা বেশি সহজ। ফলাফল নিয়ে ভাববেন না। শুধু স্কেচ করে যান।
- পরিমাপ শিখুন। নিজের আশেপাশের জিনিস থেকেই শেখা চেষ্টা করুন। যেমন আপনার এক হাতে পাঁচ আঙুলের পরিমাপ তালু অনুপাতে কতটুকু অথবা একটি গাছের পাতা আরেকটি পাতা থেকে খুব বেশি ছোট বা বড় হয় কিনা- এরকম প্রশ্নের উত্তরে আপনার ছবিতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
- বিভিন্ন আকৃতি আঁকুন। বৃত্ত, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, কোণক, মোচক, সরলরেখা, বক্ররেখা এসব আঁকুন। যা যা পারেন অথবা খুব ছোটোবেলায় করেছেন সেগুলোকেও গুরুত্ব দিন। মনে রাখবেন, এসব আকৃতির সমন্বয়েই একটি সুন্দর ছবির সৃষ্টি হয়।
- চেষ্টা ছাড়বেন না। পাশাপাশি দুটি বৃত্ত হয়ত একই রকম হচ্ছে না। হয়ত দুটি জানালার আকার একইরকম হচ্ছে না। ততক্ষণ চেষ্টা করুন যতক্ষণ না মন শান্ত হচ্ছে। দেখবেন, একবার না একবার হবেই। আর একবার হলেই আপনি আর তা আঁকা ভুলতে পারবেন না।
- ছবি মুছবেন না। কিছু আঁকা খারাপ হলে সেটা পাশে রেখেই আরেকটা আঁকুন। এতে করে আপনার নিজেরই তুলনা করতে সহজ হবে।
ছবি আঁকা শিল্পীমনের পরিচায়ক। মন খুলে আঁকুন। এটা কোনো প্রতিযোগিতামূলক বিষয় নয়। যা-ই আঁকবেন, তা-ই সুন্দর করে আঁকুন। সময় নিয়ে আঁকুন এবং প্রচুর পরিমাণে চর্চা করুন। বলা যায় না, হয়ত আগামীতে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন আরেকজন জয়নুল আবেদিন! আর দেরি না করে শুরু করে দিন আঁকিবুঁকি। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।
ফিচার ইমেজ- artbymichelle.com