Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডুয়োলিঙ্গো: খেলতে খেলতে শিখুন নতুন সব ভাষা

ডুয়োলিঙ্গো নিয়ে বলার আগে আমাদের জানতে হবে গেমিফিকেশন সম্পর্কে। ধরুন, আপনাকে সুপার মারিও গেমের একটি লেভেল সম্পূর্ণ করতে বলা হলো। সেক্ষেত্রে আপনি যেভাবে উদ্যমের সাথে নিজের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে লেভেল কমপ্লিট করবেন, ঠিক সেই ধরনের কিছু গেমের উপাদান বা কলাকৌশল শিক্ষাক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে বিরক্তিকর কোনো কিছু আনন্দদায়ক করে শেখানোকেই বলা হচ্ছে গেমিফিকেশন। এর মাধ্যমে কোনো কিছু শেখার জন্য গেমের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে শেখার প্রক্রিয়াকে আরো ফলপ্রসূ করা হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে, গেমিফিকেশন মানে মজায় মজায় কোনো কিছু শেখা। ডুয়োলিঙ্গো গেমিফিকেশনের একটি পরিপূর্ণ উদাহরণ।

Image Source: HCI Games

ডুয়োলিঙ্গো পূর্ববর্তী অবস্থা

আজ থেকে বিশ বছর আগেও কোনো ছাত্র যদি সরাসরি কোনো ভাষা শিক্ষার কার্যক্রমে যুক্ত হতে না পারত, সেক্ষেত্রে তাকে বই অথবা অডিও ক্যাসেটের উপর নির্ভর করতে হত। এখন আমরা প্রযুক্তির কল্যাণে সব কিছু হাতের নাগালে পাচ্ছি, কিন্তু তখনকার সময়গুলো ছিল কঠিন, কারণ মানুষ কোনো কিছু সহজে হাতের নাগালে পেত না। পাশাপাশি কোন কিছু শেখার জন্য পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, প্রয়োজনীয় উৎসাহ, শিক্ষার অগ্রগতি, তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা- এসবের সুযোগও ছিল সীমিত। কিছু কিছু ওয়েবসাইট ভাষাভিত্তিক ব্যাকরণ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকলেও তা ছিল নিতান্তই অপ্রতুল।

১৯৮০ সালে অ্যালেন স্টলয্‌ফাস নামে এক ব্যক্তি রাশিয়ান ভাষা রপ্ত করার চেষ্টা করন, কিন্তু তিনি তার উন্নতি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। গতানুগতিক শ্রেণীকক্ষের চার দেয়ালের মাঝে ভাষা শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তিনি পাচ্ছিলেন না। সেই অভাব থেকেই তার মধ্যে একটি ধারণা সৃষ্টি হলো। তিনি ভাবলেন কীভাবে কম্পিউটার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ছবি এবং শব্দের পারস্পরিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষাকে আরো বেশি মজাদার এবং ফলপ্রসূ করা যায়। সেখান থেকেই জন্ম নিল আজকের রজেটা স্টোন, যা ছিল ভাষা শিক্ষার প্রথম সফটওয়্যার।

Image Source: eventige.com

রজেটা স্টোন সফটওয়্যারটিতে কোনো ধরনের ফোরাম কিংবা গ্রুপভিত্তিক আলোচনার সুবিধা ছিল না। অন্যদিকে লাইভমকা নামে একটি ওয়েবসাইট ছিল যেখানে শিক্ষার্থীরা ফোরাম কিংবা গ্রুপভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে ভাষা শিখতে পারত। ২০১৩ সালে রজেটা স্টোন লাইভমকা নামক সিয়াটলভিত্তিক কোম্পানিটি ৮.৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। এরই সাথে লাইভমকা ওয়েবসাইটটির ১৯৫টি দেশের ১৬ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারও রজেটার সাথে যুক্ত হয়।

রজেটা স্টোন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা অনেকটা ব্যয়বহুল। সফটওয়্যারটি প্রাথমিকভাবে ব্যবহারকারীদের জন্য তিনদিনের ফ্রি সুবিধা দেয়। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তিন মাসের ফ্রি সুবিধাও দিয়ে থাকে।তাদের ভাষা শিক্ষার শুরু হয় ৩৫ ডলার সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজের মাধ্যমে, যেটা ডুওলিঙ্গোর তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল।

ডুয়োলিঙ্গো

Image Source: thelingoworld.com

এক গবেষণায় দেখা যায়, ৯৫.৫% ব্যবহারকারী ডুয়োলিঙ্গো সফটওয়্যারটির ইউজার ইন্টারফেসকে ব্যবহারকারী বান্ধব বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ৯৩.৮% ব্যবহারকারী, যারা ইতিমধ্যে যেকোনো একটি ভাষা শিখে শেষ করেছেন, তারা আবারও এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এখান থেকেই বোঝা যায় সফটওয়্যারটির উপযোগিতা। সফটওয়্যারটি ইতিমধ্যে গুগল প্লে স্টোরে এডিটর্স চয়েজ এর স্বীকৃতি পেয়েছে।

Image Source: Medium

ডুয়োলিঙ্গোর সহকারি প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “কোনো কলেজের একটি সেমিস্টার এ আপনাকে যতটুকু ভাষা শিক্ষা দেবে, ডুয়োলিঙ্গো তা আপনাকে শেখাবে মাত্র ৩৪ ঘন্টায়।” ভাষা শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎসাহ প্রদানের ক্ষেত্রও ডুয়োলিঙ্গো ভূমিকা রাখে।

নিচে MCSER (Mediterranean Center of Social and Educational Research) এর একটি গবেষণার ফলাফল দেখানো হলো। গবেষণায় দুটি দল ছিল। এক্সপেরিমেন্টাল দলের সদস্যরা ডুয়োলিঙ্গো ব্যবহার করে এবং কন্ট্রোল গ্রুপের সদস্যরা অ্যাপটি ব্যবহার করে না। উপস্থিতির পরিমাণ এবং কাজ সম্পাদনা, উভয় ক্ষেত্রেই ডুয়োলিঙ্গো ব্যবহারকারীরা এগিয়ে ছিল।

Image Source: Medium

এটি একটি ফ্রি অনলাইন সফটওয়্যার। উইন্ডোজ, আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড তিনটি প্লাটফর্মেই ব্যবহারের জন্য সফটওয়্যারটি রয়েছে, যার মূল প্রতিপাদ্য “Learn a language for free, Forever“। তবে কেউ চাইলে ৬.৯৯ ডলারের বিনিময়ে প্রিমিয়াম ভার্সনের ‘ডুয়োলিঙ্গো প্লাস‘ ব্যবহার করতে পারেন। যদিও অফলাইনে অধ্যায় ডাউনলোড করে রাখার সুবিধা, বিজ্ঞাপন না দেখানো ছাড়া প্রিমিয়াম ভার্সনের সাথে ফ্রি ভার্সনের খুব বেশি পার্থক্য নেই। সেই হিসেবে ফ্রি ভার্সন ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। যদি আপনি এমন কোনো জায়গায় যান যেখানে ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা আছে, সেক্ষেত্রেই প্রিমিয়াম ভার্সন সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে।

Image Source: thelingoworld.com

সফটওয়্যারটির মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা খুবই মজার। এখানে একজন ব্যবহারকারী তার অগ্রগতির উপর বিভিন্ন ব্যাজ পেয়ে থাকেন। পয়েন্ট অর্জন করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজেকে লিডার বোর্ডে উপরে নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়াও সুন্দরভাবে অধ্যায়গুলো শেষ করার উপর রয়েছে লিঙ্গটস (ডুয়োলিঙ্গো মুদ্রা)। তবে সবচেয়ে কার্যকারী বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে কাউন্ট স্ট্রিক। একটি আগুন চিহ্ন নির্দেশক আইকন আপনাকে জানাবে আপনি কতদিন সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার অধ্যায়গুলো সম্পন্ন করেছেন। আপনাকে সব সময় নোটিফিকেশন পাঠাবে যাতে করে আপনার ধারাবাহিকতা নষ্ট না হয়। যেকোনো ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সফটওয়্যারটির এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহারকারীকে সব সময় ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করবে।

Image Source: Medium

ঘাটতির বিষয়টি আসলে বলতে হয়, যদি আপনি কোনো ভাষায় সাহিত্য রচনা কিংবা গবেষণা কাজ করতে চান, সেক্ষেত্রে সফটওয়ারটি সে ধরনের ভাষাগত দক্ষতা আপনাকে দেবে না। এতে ব্যাকরণগত বিশ্লেষণজনিত ঘাটতি রয়েছে‌। সামান্য এই ঘাটতিগুলো একপাশে রাখলে উপকারিতাগুলোর উপস্থিতিই বেশি প্রতীয়মান হয়, যা নিঃসন্দেহে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যারকে অন্যান্য সফটওয়্যার থেকে এগিয়ে রাখবে।

নতুন ভাষা শিখতে আগ্রহী ব্যক্তিদের অন্তত একবার হলেও এই সফটওয়্যারটির উপযোগিতা পরখ করে দেখা উচিত। যেখান থেকে ৩০ কোটি মানুষ নিত্যনতুন ভাষা শিখছে, সেখানে আপনিই বা কেন পিছিয়ে থাকবেন?

Related Articles