Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিদেশী ভাষা শেখার আদর্শ বয়স কখন?

প্রচলিত আছে, ‘একটি বিদেশি ভাষা শেখা আর সেই ভাষাভাষী জাতিকে জয় করা সমান।’ শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটা অনেকটা সত্যও বটে। কেননা, যখন কেউ বিদেশি ভাষায় দক্ষ হয়ে ওঠেন, তখন তিনি খুব সহজেই সেই জাতির সাথে মেলামেশা করতে পারেন। তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। বর্তমান বিশ্বে যার যোগাযোগ দক্ষতা যত বেশি, তার গ্রহণযোগ্যতা বা ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। যেমন- কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে বা জাপানে যেতে চাচ্ছেন। এখন তার যদি জার্মান বা জাপানি ভাষা জানা থাকে, তাহলে তিনি ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

উন্নত দেশগুলো নিজেদের ভাষাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শুধুমাত্র তাদের ভাষা জানা ব্যক্তিদের বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে পড়াশোনা ও চাকরির সুবিধা দিয়ে থাকে। সেই কারণেই আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে মফস্বলেও কোরিয়ান কিংবা চীনা ভাষা শেখানোর অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

একাধিক ভাষায় দক্ষতা থাকা এখন অতীব গুরুত্বপূর্ণ; Image Source: madan.org.il

একসময় বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্তেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল। ব্রিটিশরা তাদের সাম্রাজ্য পরিচালনার সুবিধার্থে স্থানীয় মানুষদের ইংরেজি ভাষা শেখাতো। সেখান থেকেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ইংরেজি ভাষা। যার ফলে সারাবিশ্বে যোগাযোগের ভাষা হিসেবে এখনো ইংরেজি সবার আগে। বর্তমানে কোনো জাতির ব্রিটিশদের মতো প্রশাসনিক সাম্রাজ্য নেই। তবে বেশ কয়েকটি দেশ তাদের পণ্য বা সেবার মাধ্যমে নিজস্ব বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে সবার উপরে আছে চীন।

বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে চীনের পণ্য বিক্রি হয় না। চীন তাদের এই ব্যবসা বাণিজ্যকে আরো সুদূরপ্রসারী করে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশে তাদের ভাষাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি অনেক দেশে ঋণ প্রদানের সময় চীন তাদের ভাষা শেখানোর শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। এছাড়া দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য সংস্কৃতির আদানপ্রদান খুবই জরুরি। আর এক্ষেত্রে ভাষা হলো সবচেয়ে বড় মাধ্যম। সে কারণে প্রতিটি দেশই তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

বিদেশি ভাষা কেন শিখবেন?

বর্তমান বিশ্বকে বলা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। এই বিশাল গ্লোবাল ভিলেজে রয়েছে অসংখ্য দেশের কোটি কোটি মানুষের আনাগোনা। তাদের সাথে মিশতে হলে কিংবা একসাথে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আর এক্ষেত্রে প্রয়োজন একটি সাধারণ ভাষা। এজন্য ইংরেজিকে সবাই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

কিন্তু ইউরোপের অনেক দেশ রয়েছে যেখানে ইংরেজির গুরুত্ব কম বা তারা ইংরেজি জানেন না। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে ইংরেজির মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। আপনি যদি জার্মান ভাষা জানেন তাহলে খুব সহজেই জার্মানদের সাথে ভাবের আদান প্রদান করতে পারবেন। এই বিষয়টি সকলেই জানেন। এছাড়াও রয়েছে আরো কিছু সুবিধা।

শিশুরা খুব সহজে বিদেশি ভাষা শিখতে পারে; Image Source: Getty Images

বর্তমানে বিদেশি ভাষা জানার বড় সুবিধা হলো কর্মক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব লাভ এবং সফল ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ। কোনো ব্যক্তি এক বা একাধিক ভাষায় দক্ষ হলে তাকে যেকোনো প্রতিষ্ঠান লুফে নেবে। ভিনদেশি ভাষা শেখার অন্যতম বড় সু্বিধা হলো এর মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তৈরি হওয়ার সাথে সাথে সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পায়। এর সাথে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য মানসিক দক্ষতার বিকাশ ঘটে। এছাড়া কেউ যদি একটি বিদেশি ভাষা শিখতে পারেন, তাহলে তার জন্য অন্যান্য ভাষা শেখাও সহজ হয়ে যায়।

বিদেশী ভাষা শেখার উপযুক্ত বয়স কোনটি?

অনেক বাবা-মা স্বপ্ন দেখেন তাদের সন্তান একাধিক ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারবে। আবার অনেকে স্বপ্ন দেখেন তাদের ছেলে বা মেয়ে বড় বড় ব্যবসায়িক মিটিংয়ে বিদেশিদের সাথে তাদের ভাষায় আলাপ আলোচনা করবে। এমন স্বপ্ন প্রায় প্রত্যেক শিক্ষিত বাবা-মা দেখেন। বর্তমানে প্রায় সবাই বিদেশি ভাষা শেখার গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন হলো কোন বয়স থেকে সন্তানকে বিদেশি ভাষা শেখানো উচিত? কিংবা কোন বয়সে বিদেশি ভাষা শেখা সবচেয়ে সহজ?

মাতৃভাষায় দক্ষ হওয়ার আগে বাচ্চাদের বিদেশি ভাষা শেখানো উচিত নয়; Image Source: Getty Images

বাচ্চাদের বয়স যখন ৩-৪ বছর, তখন তারা খুব সহজে একাধিক ভাষা শিখতে পারে। এর পেছনে বড় কারণ তখন বাচ্চারা নতুন কিছু শেখার জন্য বেশ আগ্রহী হয়ে থাকে। যেটা বড় হওয়ার সাথে সাথে কমতে থাকে। অধিকাংশ গবেষকের মতে, বাচ্চাদের দ্বিতীয় কোনো ভাষা শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বয়স ৬-৭ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী সময়। তবে কোনো কোনো গবেষকের মতে, এটি বয়ঃসন্ধির পূর্ব পর্যন্ত হতে পারে।

কিন্তু অনেকের কাছে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটি শিশুর আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনা করার দক্ষতা, শেখার ক্ষমতা ও সৃজনশীলতার ভিত্তি রচিত হয় ৬-৭ বছর বয়সের মধ্যে। শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, সে কারণে তারা আশেপাশের বিভিন্ন বিষয় থেকে শিখে থাকে। তবে ভাষা শেখার হারটা সবচেয়ে বেশি ৩-৪ বছর বয়সে। এই সময়ে তারা খুব সহজে নতুন নতুন শব্দ শিখতে পারে। সেই কারণে এই সময়টা বাচ্চাদের ভাষা শেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুরা ৬-৭ বছরের মধ্যেই একাধিক ভাষা শিখতে সক্ষম। কারণ তারা এই বয়সটা পার করে বিভিন্ন বিষয় শেখার মধ্য দিয়ে। তাদের পূর্ণ মনোযোগ থাকে আশেপাশের পরিবেশ থেকে বিভিন্ন কিছু শেখার প্রতি। সেক্ষেত্রে কেউ যদি তাদের একসাথে একাধিক ভাষা শেখায়, তাহলেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

তবে শিশুদের দ্বিতীয় কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রে তার আশেপাশের পরিবেশ কিংবা পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, কোনো বাচ্চার মা ব্রিটিশ এবং বাবা ইতালিয়ান। তারা থাকেন যুুুুক্তরাজ্যে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাটি জন্য একইসাথে ইংরেজি ও ইতালিয়ান শিখতে পারবে। আবার ধরুন, কোনো বাচ্চার বাবা-মা দুজনেই জার্মান এবং ৬-৭ বছর বয়সে কোনো কারণে পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে চলে এসেছে। এখন যুক্তরাজ্যে থাকার জন্য তাকে বাধ্য হয়ে দ্রুত ইংরেজি শিখতে হবে। এক্ষেত্রে সেই বাচ্চার ইংরেজি শিখতে অনেক দেরি হবে। কারণ তাকে জোর করে শিখতে হচ্ছে।

বিদেশি ভাষা শেখার উপযুক্ত বয়স ১২-১৩ বছর; Image Source: Getty Images

শিশুরা ৬-৭ বছরের মধ্যে যেকোনো বিষয় ভালোভাবে শিখতে পারে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বাচ্চাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোনো ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে সে তার মাতৃভাষায় কতটুকু দক্ষ হয়েছে। একটি শিশু মাতৃভাষায় দক্ষ হওয়ার পূর্বেই যদি তাকে দ্বিতীয় কোনো ভাষা শেখানো হয়, তাহলে তার মাতৃভাষায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

এ কারণে শিশুদের বিদেশি ভাষা শেখানোর জন্য উপযুক্ত বয়স হলো ১২-১৩ বছর। কেননা এই বয়সের মধ্যে তারা মাতৃভাষায় বেশ দক্ষ হয়ে ওঠে। এরপর তারা দ্বিতীয় কোনো ভাষাকেও ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে। গবেষণাও ঠিক তেমনই বলছে। যুক্তরাজ্যে ১৭,০০০ শিশুর উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু ১১ বছর বয়সে ফরাসি ভাষা শেখা শুরু করেছে, তারা অন্যদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে।

শিশুদের বিদেশি ভাষা শেখানোর সহজ উপায়

শিশুদের সহজে বিদেশি ভাষা শেখানোর জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এর জন্য প্রথমে যে ভাষাটি শেখাবেন, সেই ভাষার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে মা-বাবা হিসেবে আপনি সেই ভাষাটি না-ও জানতে পারেন। তখন শুধুমাত্র সেই ভাষাটির মূল বিষয়গুলো নিজে শিখে বাচ্চাদের শেখাতে পারেন। এছাড়া যেসব মাধ্যম থেকে আপনার বাছাই করা বিদেশি ভাষা শেখা সম্ভব, তার সবগুলোই ব্যবহার করবেন। যেমন- ভাষা শেখার বই, অ্যাপস, অনলাইন ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম ও বিভিন্ন গেমস। চাইলে সন্তানকে কার্টুন বা মুভি দেখানোর মাধ্যমেও বিদেশি ভাষা শেখাতে পারেন। আপনার চারপাশে অনেক শিশুকে দেখবেন যারা অনর্গল হিন্দি বলছে এবং বুঝতে পারছে। তাদের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন হিন্দি কার্টুন দেখার মাধ্যমে। এছাড়া ভাষা শেখার বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনেও সন্তানকে বিদেশি ভাষা রপ্ত করানো সম্ভব। তবে শুধুমাত্র শিখলেই হবে না, এর সাথে প্রয়োজন সঠিক অনুশীলন বা পরীক্ষা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট বা সেই ভাষাভাষী মানুষের সহায়তা নিতে পারেন।

This Bangla article is about 'The best age to learn a foreign language. Necessary references have been hyperlinked. 

Featured Image: lingualearn.co.uk

Related Articles