সুইডেন নামটি শুনলেই আমাদের মাথায় একটি জিনিস ঘুরপাক খায়, সেটি হচ্ছে নোবেল পুরস্কার। বাল্টিক সাগরের পশ্চিমে অবস্থিত উত্তর ইউরোপের এই দেশটি পরিচিত শান্তি এবং উদ্ভাবনের জন্য। মাত্র ১০ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশ ভলভো, স্ক্যানিয়া, এরিকসন, IKEA এবং H& M সহ আরো অনেক বড় বড় কোম্পানির উৎপত্তিস্থল। এখানকার পড়াশোনা এবং গবেষণার মানও সুপরিচিত বিশ্বজুড়েই। অনেকেই সুইডেনে পড়তে যেতে চান কিন্তু বুঝতে পারছেন না কীভাবে শুরু করবেন। তাদের জন্যই আজকের এই লেখাটি, মূলত স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে।
সুইডেনে কাগজে কলমে দুটি সেমিস্টারের কথা বলা থাকলেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করায় আগস্ট সেশনে। ২০১৮ সালের আগস্ট সেশনের জন্য ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১৫ অক্টোবর থেকে। তাই এখনই সময় আগস্ট সেশনের জন্য আবেদন করার।
IELTS লাগে কিনা?
সুইডেনের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকোত্তর কোর্সের শর্ত হচ্ছে IELTS এ ৬.৫ বা তার বেশি স্কোর হতে হবে। তবে আপনার স্নাতক ডিগ্রির পড়াশোনা যদি ইংরেজি মাধ্যম হয়ে থাকে, তাহলে IELTS ছাড়াও ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। তবে IELTS ছাড়া সুযোগ থাকলেও ভিসা হওয়ার সম্ভাবনা একটু কম থাকে। তাই IELTS দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
টিউশন ফি কত এবং স্কলারশিপ আছে কিনা?
টিউশান ফি বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। তবে তা বছরে সর্বনিম্ন ৭ লাখ বা তার থেকে বেশি হয়। সুইডেনে দুই ধরনের স্কলারশিপ আছে। একটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিউশান ফি স্কলারশিপ এবং আরেকটি হচ্ছে সুইডিশ সরকার থেকে, যেটি SI স্কলারশিপ নামে পরিচিত। SI স্কলারশিপের জন্য সর্বনিম্ম ৩,০০০ ঘণ্টা কাজের অভিজ্ঞতা লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশান ফি স্কলারশিপের জন্য আপনাকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে। ডেডলাইন শেষ হওয়ার আগেই তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইট থেকে ভালো করে প্রক্রিয়া বুঝে নিয়ে আবেদন করে ফেলুন।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
যদি আপনার কোর্স হয় এক বছরের, তবে আপনাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ লাখ টাকা দেখাতে হবে। দুই বছরের কোর্সের জন্য ১৬ লাখ টাকা দেখাতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট হতে হবে আপনার নামে, মানে, আপনার বাবা-মা পর্যন্ত আপনার স্পন্সর হতে পারবে না। সাধারণত ব্যাংকে এই টাকা ভিসা আবেদন করার ৩ মাস আগে জমা দিলেই হয় এবং রাখতে হবে ভিসা না পাওয়া পর্যন্ত। টাকার উৎস দেখতে চাওয়া হয় না, সুতরাং এটি নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। তবে আপনার সাথে যদি স্বামী/স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যেতে চান, তাহলে ব্যাংকে আরো বেশি টাকা দেখাতে হবে।
পরিবার সহ যাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, সুইডেন এ কারণেই বিবাহিতদের প্রথম পছন্দ। আপনি চাইলে আপনার স্বামী/স্ত্রী এবং বাচ্চাদেরকে নিয়ে যেতে পারবেন। আবেদনকারীর স্বামী/স্ত্রীও চাকরি করতে পারবে, এজন্য আলাদা কোনো অনুমতির দরকার হবে না এখানে। এমনকি স্বামী/স্ত্রী চাইলে পড়াশোনাও করতে পারবে, তা-ও ফ্রি-তে! এজন্য কোনো টিউশন ফি দিতে হবে না।
পড়াশোনা শেষে থাকা যাবে কিনা?
পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি চাকরি খোঁজার উদ্দেশ্যে ভিসা বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ৬ মাসে আপনি যদি ফুলটাইম চাকরি পান, তবে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ২ বছরের ভিসা দেয়া হবে। তাছাড়া আপনি যদি এক সেমিস্টার শেষ করেন মানে ৩০ ক্রেডিট শেষ করার পর ফুল টাইম কাজের অফার পান, তাহলে আপনি শিক্ষার্থী ভিসা থেকে কাজের ভিসায় যেতে পারবেন।
পার্ট টাইম চাকরি
আপনি যদি বড় শহরগুলোর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন, যেমন মালমো, স্টকহোম, গোটেনবার্গ, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি চাকরি পেয়ে যাবেন। মাঝারি শহরগুলোতেও চাকরি পাওয়া যায়, তবে একটু সময় লাগে। পার্ট টাইম চাকরি করার জন্য কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনি চাইলে পড়াশুনার পাশাপাশি ফুল টাইম চাকরিও করতে পারেন।
যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তারিখ
- ১৬ অক্টোবর, ২০১৭- অনলাইনে সার্ভিস খোলা হয়।
- ১৫ জানুয়ারি- আবেদনের শেষ দিন।
- ১ ফেব্রুয়ারি- আবেদন ফি এবং যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
- ৬ এপ্রিল- আপনি নির্বাচিত হয়েছেন কিনা, সেটি এই তারিখে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া
প্রথম ধাপ: একাউন্ট খোলা
ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার সর্বপ্রথম ধাপ হলো সুইডেন ইউনিভার্সিটি এডমিশন সাইটে একাউন্ট করা। একাউন্ট করার জন্য এই ওয়েবসাইটে যান। ডানদিকে উপরে লগ ইন ক্লিক করুন। তারপর বামে নিচে Create একাউন্ট ক্লিক করুন। এরপর If you don’t have a Swedish personal identification number ক্লিক করুন। ফর্ম পূরণ করে Create Account এ ক্লিক করুন। তারপর একই ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন। একাধিক একাউন্ট খুলতে যাবেন না, তাহলে সব একাউন্ট বাতিল হয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয় ধাপ: প্রোগ্রাম খুঁজে বের করা
সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার পছন্দমতো কোর্স খুঁজে নিতে পারেন। অথবা ইউনিভার্সিটি এডমিশন সাইটেই সার্চ অপশন থেকে আপনার পছন্দের বিষয় খুঁজতে পারেন। আপনার বিষয় সংক্রান্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রোগামই দেখার জন্য কোর্স খুঁজতে পারেন এখানে অথবা এখানে। ফিল্টার অপশনে মাস্টার্স নির্বাচন করবেন আর পড়াশোনার ভাষা ইংরেজি এবং পড়াশোনার সময় ডে টাইম নির্বাচন করবেন।
এক সেমিস্টারে আপনি মোট ৪টি বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন, সেটি হোক একই বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনোভাবেই তার চেয়ে বেশি কোর্সে আবেদন করবেন না। তবে আপনাকে ৪টিতেই আবেদন করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। চাইলে আপনি ১, ২ অথবা ৩টি কোর্সেও আবেদন করতে পারেন। কোর্সে আবেদন করার পরে আপনার মেইলে এপ্লিকেশন নিশ্চিত করার জন্য একটি মেইল পাবেন।
৩য় ধাপ: এপ্লিকেশন ফি এবং কাগজপত্র পাঠানো
এপ্লিকেশন ফি ৯০০ সুইডিশ ক্রোনোর, যেটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯,০০০ টাকা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি। এপ্লিকেশন ফি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। কিছু ডকুমেন্ট পাঠাতে হয় আর কিছু ডকুমেন্টের সফট কপি আপলোড করতে হয়। সাধারণত আপনার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্যায়িত করে পাঠাতে হয় এবং IELTS, মোটিভেশান লেটার, পাসপোর্টের কপি ইত্যাদি আপলোড করলেই হয়। আর কী কী ডকুমেন্ট লাগে, সেটি আপনার কোর্সের শর্তাবলী থেকে দেখে নিতে হবে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সিভি, মোটিভেশনাল লেটার ইত্যাদি চায়। বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য কী কী ডকুমেন্ট লাগবে, সেটি দেখে নিতে পারেন এই লিংক থেকে। ডকুমেন্ট পাঠানোর পর ৬ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, আপনি এডমিশন পেয়েছেন কিনা সেটি জানার জন্য। যদি অফার লেটার পান, তাহলে এক সেমিস্টারের টিউশন ফি জমা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে মাইগ্রেশন বোর্ডে।
কিছু দরকারি ওয়েবসাইটের লিংক
- এডমিশন পোর্টাল
- সুইডেনে পড়াশুনা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য অফিশিয়াল সাইট
- ভিসা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য সুইডেন মাইগ্রেশান বোর্ডের সাইট
- সুইডেন ইন্সটিটিউট (SI) স্কলারশিপ সম্পর্কিত তথ্যের জন্য সাইট