চতুর্থ বর্ষের শুরুতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগতে হয় তা হল তারা থিসিস করবে নাকি প্রজেক্ট? এবং স্বভাবতই এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপর:
১) কে আপনার রিসার্চ সুপারভাইজার হবেন?
২) আপনি আসলে পাস করার পর কী করতে চান?
আপনি যদি পাস করার পর উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করেন তাহলে চোখ বন্ধ করে আপনার থিসিস করতে নেমে যাওয়া উচিত। যদিও আন্ডারগ্র্যাডের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে কেউ মৌলিক গবেষণা আশা করে না, এমনকি বাইরের দেশগুলোতেও আন্ডারগ্র্যাডের ছেলেমেয়েরা সাধারণত প্রজেক্টই করে। কিন্তু আপনি যদি থিসিস করেন এবং তা যদি কোনোভাবে কোনো জার্নাল কিংবা ভালো কনফারেন্সে পাবলিশ করতে পারেন তাহলে তা উচ্চ শিক্ষার জন্য আপনার যাত্রাকে অনেকখানি সহজ করে দিবে। তবে এর মানে এই না যারা প্রজেক্ট করেন তারা খুব সহজেই পার পেয়ে যান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার প্রজেক্টের কাজটিও যথেষ্ট জটিল এবং বড় হতে পারে।
সহজ বাংলায় থিসিস আর রিসার্চ এর পার্থক্য বুঝিয়ে দেই। ধরা যাক, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে বই নেয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে লাইব্রেরিতে গিয়ে অনেক সময় লাগিয়ে সেলফ থেকে বইটি খুঁজে বের করতে হয়, তারপর তা নিয়ে কাউন্টারে জমা দিতে হয় এবং অতঃপর একজন রেজিস্টার বইতে আপনার বইয়ের নাম, আপনার নাম, কবে নিলেন এবং কবে ফেরত দিবেন ইত্যাদি এন্ট্রি করে আপনাকে সবশেষে বইটি হাতে তুলে দিলেন। অত্থচ এই পুরো ব্যাপারটা কিন্তু এক ক্লিকেই হয়ে যেতে পারত। আপনার মোবাইলে লাইব্রেরির একটা অ্যাপ থাকবে, যেখানে আপনি বইয়ের নাম লিখে সার্চ দিলে আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত বইটি লাইব্রেরি থেকে নেয়া যাবে কিনা তা দেখাল। এরপর আপনি বইটি যে নিতে চান তা অ্যাপের কোনো নির্দিষ্ট অপশনে গিয়ে জানিয়ে দিলে সাথে সাথেই লাইব্রেরিয়ানের কাছে নোটিফিকেশন চলে গেল যে, অমুক শিক্ষার্থী বইটি নিতে আসবে। তৎক্ষণাৎ লাইব্রেরিয়ান বইটি আপনার নামে রেজিস্টার করে সামনের কাউন্টারে দিয়ে রাখলেন যাতে আপনি আসা মাত্রই বইটি পেয়ে যেতে পারেন। এই অ্যাপ ডিজাইনের যে কাজ- এটাই একটা প্রজেক্ট।
আরেকজন ছাত্র চিন্তা করল, সামনের বছর থেকে যেহেতু সম্মিলিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে তাই প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর জন্য সে নতুন ধরনের একটি এনক্রিপশন সিস্টেম উদ্ভাবন করতে চায়। সে টেক্সট এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার না করে প্রথমে প্রশ্নপত্রগুলাকে ইমেজ হিসেবে স্ক্যান করবে এবং তারপর সেই ইমেজ ফাইলকে সে এনক্রিপ্ট করবে। এই যে কোনো টেক্সট ফাইলকে ইমেজ হিসেবে স্ক্যান করে তা এনক্রিপ্ট করার যেই নতুন ধারণা এবং তার সম্ভাব্য সমাধান– এই কাজটিই হলো থিসিস।
যদিও থিসিসের উদাহরণটি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটু কঠিন হয়ে গেল, তবে সাধারণত তাদের কাছ থেকে কোনো যুগান্তকারী সমাধান আশা করা হয় না। সাধারণত কোনো একটি ছোট সমস্যা দিয়ে তাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট থিওরির উপর ভিত্তি করে সমাধান করতে বলা হয়। তবে থিসিস কিংবা প্রজেক্ট যে কাজই আপনিই করুন না কেন, দেখা হয় আপনার মাঝে অনুসন্ধানমূলক চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা আছে কিনা এবং কোনো সমস্যা সমাধান করার যে ধাপগুলো আছে তা আপনি শিখতে পারছেন কিনা।
থিসিসের পূর্বপ্রস্তুতি
ভাল থিসিস করার পূর্বশর্ত হল রিসার্চ পেপার পড়ার অভ্যাস করা আর সেই সাথে তত্ত্বীয় বিষয়গুলো নিয়ে নিজের ধারণা ঠিক করে নেয়া। থিসিস টপিক ঠিক হওয়ার পর অন্তত তিন মাস টপিক রিলেটেড রিসার্চ পেপারগুলো খুঁজে বের করে পড়া উচিত। শুরুর দিকে হয়ত কোনো কিছু বোধগম্য হবে না, কিন্তু এই তিন মাসে অন্তত যেসব পেপার পরবর্তীতে আপনার থিসিস লিখতে আপনাকে সাহায্য করবে তা চিহ্নিত করা যায়। কাউকে যদি ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং করতে হয়, তাহলে তার উচিত পুরনো পেপার খুঁজে বের করা। এ ধরনের পেপারগুলোতে ম্যাথমেটিক্যাল ইক্যুয়েশন এবং তার সল্যুশনগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়। এজন্য পেপার পড়ার সময় রেফারেন্সগুলো চেক করা উচিত। সাধারণত একই ধরনের ইক্যুয়েশন ব্যবহার করলে তা আগের কোন প্রকাশিত হওয়া কাজ থেকে নেয়া হয়েছে তা সবাই উল্লেখ করে। এবং যেসব রিসার্চার এসব ম্যাথমেটিক্যাল ইক্যুয়েশন ডেভেলপ করেছিলেন, তাদের পুরনো পেপারগুলোতে খুবই বিস্তারিতভাবে তা দেয়া থাকে।
সেইসাথে জানতে হবে ম্যাটল্যাব কিংবা পাইথনের বেসিক প্রোগ্রামিংয়ের খুটিনাটি। বর্তমান সময়ে প্রোগ্রামিং জানাটা ইংরেজি জানার মতোই অত্যাবশ্যকীয়। আপনি যদি ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং কিংবা সিমুলেশন ভিত্তিক কাজ করেন, তাহলে আপনাকে ম্যাটল্যাব কিংবা পাইথন ব্যবহার করে সেই কাজ করতেই হবে। আর যদি এক্সপেরিমেন্টাল কাজও করেন, সেখানেও কোনো ইক্যুয়েশন দিয়ে আপনার এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্টের ডাটা ফিটিং করার পদ্ধতিও আপনাকে জানতে হবে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক রাইটিংয়ের উপর তেমন একটা কোর্সওয়ার্ক করানো হয় না। তাই একাডেমিক রাইটিংয়ের বেশিরভাগ নিয়মকানুনই আমাদের জানার বাইরে থেকে যায়। এজন্য ইউটিউব হতে পারে সবচেয়ে আদর্শ মাধ্যম, শুধু একাডেমিক রাইটিং লিখে সার্চ দিলেই অনেক ভিডিও আপনি পাবেন। এরপর যেসব ভিডিওর ভিউ অনেক বেশি কিংবা যেসব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার অনেক বেশি, সেগুলো আপনি ফলো করতে পারেন। আর coursera.org কিংবা edx.org এর মতো সাইটেও একাডেমিক রাইটিংয়ের উপর অনলাইন কোর্স পাওয়া যায়- আপনি চাইলেই যেকোনো একটি কোর্স শেষ করে ফেলতে পারেন।
কীভাবে ডাউনলোড করবেন রিসার্চ পেপার
রিসার্চ পেপার ডাউনলোড করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল সাই-হাব (Sci-hub) থেকে নামানো। সাই-হাব মূলত শুরু হয় আলেক্সান্দ্রা এলবাকিয়ান এর হাত ধরে। তিনি একজন রাশিয়ান সফটওয়ার ডেভেলপার এবং নিউরোটেকনোলজি গবেষক, যিনি কিনা একাডেমিয়ার দস্যু রানী হিসেবে পরিচতি। কেননা তার নিজ হাতে তৈরি সাই-হাব থেকে বিনামূল্যে ৬৪.৫ মিলিয়নের অধিক একাডেমিক পেপার এবং আর্টিকেল সরাসরি ডাউনলোড করা যায়, যা তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের ছাত্র-ছাত্রী এবং গবেষকদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। যেহেতু এ সাইট থেকে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট মেথডকে এড়িয়ে গিয়ে সরাসরি যেকোনো একাডেমিক পেপার এবং আর্টিকেল নামানো যায়, তাই বিভিন্ন সময়েই এর ডোমেইনকে ব্লক করে রাখা হয়।
তবে আপনি যদি কোনোভাবেই সাই-হাবের কার্যকরী ডোমেইনটি খুঁজে না পান, তাহলে সেক্ষেত্রে libgen.io এই সাইটে গিয়ে Scientific Articles সিলেক্ট করে সার্চ বারে যেই পেপারটি নামাতে চান তার শিরোনাম লিখে দিয়ে সার্চ করলেই তা আপনাকে সাই-হাবে নিয়ে যাবে, এবং সেখান থেকে আপনি পেপারটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
কীভাবে শুরু করবেন থিসিস পেপার লেখা
ধরে নিলাম, আপনার থিসিস সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ প্রায় শেষের দিকে, আপনি এখন থিসিস লেখায় পুরাপুরি মনোনিবেশ করতে চান। তাই শুরুতেই কোনো কিছু লেখার আগে একটি স্ট্রাকচার সাজিয়ে নেয়া ভাল। আন্ডারগ্র্যাডের থিসিসের কাজ যেহেতু খুব ছোট পরিসরে হয়, সেক্ষেত্রে আপনার থিসিসের স্ট্রাকচারটি হতে পারে এরকম।
১) অ্যাবস্ট্রাক্ট (Abstract)
অ্যাবস্ট্রাকটকে বলা হয় আপনার পুরো গবেষণা কাজের সারমর্ম, এবং যেটা ৩০০-৩৫০ শব্দের মধ্যে হলেই ভাল। যদিও এটি সবার শুরুতে থাকে, কিন্তু এটি সবার শেষে লেখাই উত্তম। সাধারণত একজন পাঠক আপনার থিসিস পেপার পড়বে কিনা তা নির্ভর করে আপনার লেখা অ্যাবস্ট্রাক্টে সে নিম্নোক্ত পাঁচ প্রশ্নের উত্তর সে পাচ্ছে কিনা তার উপর।
– আপনি আপনার এই গবেষণায় কী ধরনের কাজ করেছেন?
– আপনার এই গবেষণার কাজের পিছনে কী কী কারণ ছিল? অন্যকথায়, আপনি কী ধরনের সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছেন?
– আপনি কোন প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধান করেছেন?
– আপনার গবেষণার কাজের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো কী ছিল?
– আপনার গবেষণালব্ধ ফলাফল কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আপনি যদি চান মানুষ আপনার গবেষণাটি সম্পর্কে জানুক, তাহলে আপনার উচিত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অ্যাবস্ট্রাক্টে গল্পাকারে লিখা।
২) ইন্ট্রোডাকশন (Introduction)
সাধারণত এটি অ্যাবস্ট্রাক্টের তুলনায় বেশ বড় হয় এবং তাতে অবশ্যই আপনার থিসিসের ব্যাকগ্রাউন্ড, কী ধরনের কাজ এ পর্যন্ত হয়েছে তার আলোচনা, কোন কোন সমস্যার এখনও সমাধান করা হয়নি, আপনি কোন সমস্যাটি নিয়ে কাজ করবেন, কীভাবে কাজ করবেন তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে ইন্ট্রোডাকশন শেষ করতে পারেন।
৩) লিটারেচার রিভিউ (Literature Review)
মূলত এই সেকশনে আপনি যে টপিক এর উপর কাজ করছেন তা নিয়ে পূর্বে বিভিন্ন সময়ে যেসকল উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা এবং কী ধরনের সমস্যার সমাধান করা এখনও বাকী আছে এবং আপনি কোন সমস্যাটি নিয়ে কাজ করবেন তার বর্ণনা থাকা উচিত। আপনি চাইলে এই সেকশনটি আলাদাভাবে লিখতে পারেন, আর যদি আপনার হাতে লেখার সময় কম থাকে, তাহলে একটু সংক্ষিপ্ত আকারে তা ইন্ট্রোডাকশনের সাথে জুড়ে দিতে পারেন। তবে সেই সাথে যেসকল একাডেমিক পেপার কিংবা বই থেকে তথ্য নিয়েছেন তা অবশ্যই বিস্তারিত রেফারেন্স সহকারে উল্লেখ করতে হবে।
৪) মেথড (Method)
এই সেকশনে মূলত আপনি কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনার গবেষণার সমস্যাটির সমাধান করেছেন তার বর্ণনা থাকবে। আপনার যদি এক্সপেরিমেন্টাল কাজ হয় তাহলে এক্সপেরিমেন্টের বিশদ বর্ণনা, থিওরিটিক্যাল মডেলিংয়ের কাজ হলে আপনি যেসব ইকুয়েশন সমাধান করে আপনার কাজটি করেছেন তার বিশদ ব্যাখ্যা থাকা চাই।
৫) রেজাল্ট (Result)
এই সেকশনে মূলত আপনি আপনার গবেষণা থেকে কী কী উত্তর খুঁজে পেলেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকা উচিত। আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো গ্রাফ আকারে রিপ্রেজেন্ট করতে। এতে করে যিনি ফলাফলগুলো দেখবেন তিনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হল একটি টেবিল থেকে ডাটা পড়ার চেয়ে একটি গ্রাফ পড়া এবং বোঝা অনেক সহজ।
৬) ডিসকাশন (Discussion)
এই সেকশনে মূলত আপনার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সম্পর্কে আপনার মতামত, ফলাফল থেকে আমরা কী সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি, আপনার গবেষণার ফলাফলে কোনো অপ্রত্যাশিত ফলাফল আছে কিনা, থাকলে কী কী কারণে তা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। সেই সাথে আপনার কাজের সীমাবদ্ধতা কী ছিল, ভবিষ্যতে কী ধরনের কাজ করা যেতে পারে এবং সেই সাথে আপনি যে টপিকের উপর কাজ করছেন সেই টপিকে কী ধরনের কাজ করা যেতে পারে তা নিয়ে আপনার মতামত দিতে পারেন।
৭) কনক্লুশন (Conclusion)
এই সেকশনটিতে মূলত আপনি বলবেন আপনার গবেষণার কাজের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল কী ছিল এবং তা থেকে আপনি সমস্যাটির সমাধানের যাবতীয় সকল প্রকার উত্তর পেয়ে গিয়েছেন; আর সেই সাথে আপনার কাজটি কেন এবং কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা পুনরায় সংক্ষেপে বলে লেখা শেষ করতে পারেন। আর সবশেষে থাকবে রেফারেন্স সেকশন, যেখানে আপনি আপনার থিসিস লেখার সময় যেসকল একাডেমিক পেপার থেকে তথ্য কিংবা উপাত্ত নিয়েছেন ক্রমানুসারে সেই সকল পেপার এর বিস্তারিত শিরোনাম উল্লেখ থাকবে, যাতে কেউ চাইলে সহজেই সেই পেপারটি খুঁজে পায়।
থিসিস লেখার সহজীয়া তরীকা (ব্যক্তিগত মতামত)
থিসিস লেখার সময় অনেকেই ইন্ট্রোডাকশন লেখা দিয়ে শুরু করেন। কিন্তু আমার মতে শুরুতে আসলে মেথড, রেজাল্ট এবং ডিসকাশন এই তিনটি সেকশন লিখে ফেলা উচিত। কারণ আপনি কী কাজ করেছেন এবং আপনার গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে আপনার চাইতে ভাল আর কেউ জানে না। এই তিনটি সেকশনে পুরোটাই আপনার নিজের কাজের বর্ণনা থাকে। তাই এই তিনটি সেকশন লিখে ফেলা খুব সহজ হয়। আর যেহেতু সময় অনেক বেশি পাওয়া যায়, কাজেই এক্সপেরিমেন্টাল ডাটা এবং গ্রাফগুলো ভালভাবে প্রেজেন্ট করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।
যদি পাবলিকেশন কোয়ালিটির ফিগার চান, তাহলে Origin Pro কিংবা KaleidaGraph ব্যবহার করতে পারেন। আমরা যদিও সবাই MATLAB ব্যবহার করি, কিন্তু উপরের দুটি সফটওয়্যার আমার ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ ভাল ইমেজ কোয়ালিটির জন্য। অনেকেই থিসিসের সবশেষে Appendix সেকশনে নিজেদের ম্যাটল্যাবের কোড দিয়ে থাকেন (যদি কাজের প্রয়োজনে লাগে)। কখনো কখনো এতে আপনার কাজ চুরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনার কোডটিকে চাইলে কেউ একটু উন্নত করে আরও ভাল রেজাল্ট জেনারেট করে দেখা যাবে আপনার আগেই কোনো জার্নাল কিংবা কনফারেন্সে পেপার পাবলিশ করে ফেলেছে।
এই তিন সেকশন লেখা শেষ হলে আপনি ইন্ট্রোডাকশন এবং লিটারেচার রিভিউ লেখা শুরু করতে পারেন। এই দুই সেকশন নতুনদের জন্য লেখা বেশ কষ্টসাধ্য এবং বিভিন্ন সোর্স থেকে প্রচুর তথ্য ধার করে তা নিজের ভাষায় গুছিয়ে লিখতে হয়। এই দুটো সেকশন শুরুর দিকে লিখতে গেলে হয়ত দেখা যাবে আপনার বেশিরভাগ সময়ই চলে যাচ্ছে এবং বাদবাকী গুরুত্বপূর্ণ সেকশনগুলো লেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না। তাই এই দুই সেকশন শেষেই লিখুন, এবং খুব বেশি সময় না পেলে সংক্ষেপে শেষ করে দিন। আর সবশেষে লিখে ফেলুন কনক্লুশন।
এই হলো থিসিস লেখার খুটিনাটি। দ্বিতীয় পর্বে আপনার থিসিসটি কীভাবে জার্নালে কিংবা কনফারেন্সে পাবলিশ করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে।
ফিচার ইমেজ: brennholz-paderborn_de