Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্যাবু ভাঙছে বিজ্ঞাপন: দারুণ এক প্রচেষ্টা

বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গল্প বলার ট্রেন্ডটা নতুন নয়। বাইরের দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই পণ্য বা সেবার প্রচারণার জন্য বিজ্ঞাপনে ‘স্টোরিটেলিং’কে গুরুত্ব দেয়ার প্রথা তৈরি হয়েছে, দর্শকও স্বল্প সময়ে গল্প বলার সেই ধরনটাকে পছন্দ করেছে। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেও টিভি বিজ্ঞাপনে এই ধারা শুরু হয়েছিল, সফলভাবে চলছে এখনও।

তবে পণ্যের প্রচারণার বাইরে গিয়ে সামাজিক ইস্যুতে বিজ্ঞাপন নির্মাণের ধারণাটা খুব একটা পুরনো নয়। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কর্পোরেট ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন সময়েই সামাজিক নানা ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হয়। মানুষের কাছে সেই বার্তাটা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে বিজ্ঞাপন। টিভিসি-ওভিসির এই যুগে কখনও কখনও বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্যটা পণ্যের প্রচারণা ছাপিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতে পরিণত হচ্ছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ‘ফ্রেশ’ এর জন্য বানানো একটি প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন ভিডিও রিলিজ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী যখন পালন করছে গোটা দেশ, তখন এই প্রমোশনাল ভিডিওতে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ‘ব্লেন্ড’ করে দেখানো হলো আরেকটি যুদ্ধের গল্প, যে যুদ্ধটায় আমরা ক্রমশ হেরে যাচ্ছি, সামান্য একটু সচেতনতার অভাবে। ঘাতকের নাম ব্রেস্ট ক্যান্সার, পৃথিবীর বুকে প্রতিদিন ১৯টি প্রাণ বিলীন হচ্ছে যার থাবায়।

গল্পটির দুটো অংশ। একটি অংশ শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধ চলছে তখন। অষ্টাদশী তরুণী সুফিয়া এবং তার বাবার বসবাস বাংলাদেশের কোনো এক গ্রামে। পাকিস্তানী সেনাদের অত্যাচারে দলে দলে লোকজন তখন সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে, আশ্রয় নিচ্ছে রিফিউজি ক্যাম্পে। গ্রামের অনেকে এসে সুফিয়ার বাবাকেও পরামর্শ দেন ভারতে চলে যাওয়ার। ঘরে যুবতী কন্যা, পাকিস্তানীরা হানা দিলে আর রক্ষা নেই। কিন্তু আদর্শবান মানুষটি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, সবাই দেশ ছেড়ে পালালে দেশটাকে বাঁচাবে কে?

Image Source: Fresh Tissue Facebook Page

একাত্তরে একদল মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য। তারচেয়েও বড় সংখ্যক মানুষ অস্ত্র না ধরেও নানাভাবে সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। কেউ হয়তো ভাত রান্না করে খাইয়েছেন, কেউ অস্ত্রের বাক্স বয়ে নিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন বিপদাপন্ন যোদ্ধাদের, কেউবা গুপ্তচর হয়ে পাকিস্তানী সেনাদের গতিবিধির খবর এনে দিয়েছেন। সুফিয়া আর তার বাবা এভাবেই সাহায্য করতে শুরু করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের বাড়িটা হয়ে উঠলো মুক্তিকামী দামাল ছেলেদের আশ্রয়স্থল। তাদেরই একজন সুফিয়াকে বন্দুক ধরা শিখিয়েছিল। গুলি ছোঁড়া হয়নি, শুধু বন্দুক তাক করে ধরা- ওটুকুই। প্রথমবার বন্দুকটা বুকের সঙ্গে চেপে ধরার পর সুফিয়ার মনে হয়েছিল, সে একাই হয়তো সব হানাদারকে খতম করে দিতে পারবে!

খবরটা চাপা রইলো না বেশিদিন, জেনে গেলো রাজাকারেরা। একদিন পাকিস্তানী সেনাদের নিয়ে তারা হানা দিলো সুফিয়ার বাড়িতে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট একটি দল সেখানে তখন খেতে বসেছে কেবল, সংখ্যায় তারা মাত্র পাঁচজন। কুড়ি-পঁচিশজন প্রশিক্ষিত সেনা আর রাজাকারের বিরুদ্ধে সংখ্যাটা খুবই কম। সুফিয়া বন্দুক চালাতে জানে শুনে তার হাতে একটা রাইফেল ধরিয়ে দিলো মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার।

Image Source: Fresh Tissue Facebook Page

 

তারপর যেটা ঘটলো, সেটা অবিশ্বাস্য। পাকিস্তানী সেনাদের দলটাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলো মুক্তিযোদ্ধারা, যে দলে দুজন কিনা জীবনে প্রথমবারের মতো গুলি চালিয়েছিল সেদিন! সেই ঘটনার পর সুফিয়া বুঝতে পেরেছিল, ট্রেনিং করা বা না করাটা বড় ব্যাপার নয়। বড় ব্যাপার হচ্ছে দেশপ্রেম, দেশের প্রতি ভালোবাসা। দেশকে ভালোবেসে যে যুদ্ধে নামে, তাকে কেউ হারাতে পারে না।

গল্পের পরের অংশটা মন খারাপ করে দেয়ার মতো। না, সুফিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হননি। দেশকে স্বাধীন করে ঘরে ফিরেছিলেন এই বীর নারী। পাকিস্তানী সেনাদের কাছে যিনি হার মানেননি, তিনি হেরে গেছেন একটা রোগের কাছে। সেই রোগের নাম ব্রেস্ট ক্যান্সার।

পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় ১৯ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, পুরুষরাও মারা যাচ্ছেন এই রোগের কবলে পড়ে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি’র হিসেবে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, মারা যান ৬,৭৮৩ জন। এই মরণব্যাধি নিয়ে কথা বলা, সচেতন হওয়াটা সময়ের দাবি। কিন্তু সেই সচেতনতা নেই কোথাও, স্তন ক্যান্সারকে ট্যাবু বানিয়ে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে।

Image Source: Fresh Tissue Facebook Page

স্তন নারীর সংবেদনশীল অঙ্গ হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা কুণ্ঠাবোধ করেন এই রোগের ব্যাপারে কথা বলতে। কাজেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা থাকে না। চিকিৎসকের সঙ্গে এই রোগের ব্যাপারে কথা বলতেও তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। ক্যান্সারের চিকিৎসা এমনিতেই ব্যয়বহুল। কিন্তু দেখা গেছে, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল যারা, তারাও শুধুমাত্র রোগ শনাক্তে দেরি হবার কারণে শেষ স্টেজে গিয়ে জানতে পারেন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার কথা। যুদ্ধটায় তখন অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

অথচ আমাদের সচেতনতা কিন্তু পারে এই মরণঘাতককে রুখে দিতে। ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা, লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা নেয়া, নিয়মিত চেকআপ, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া; সর্বোপরি জড়তা ভেঙে এই রোগকে আর পাঁচটা অসুখের মতো করে গুরুত্ব দেওয়াটাই পারে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিকে বহুলাংশে কমিয়ে আনতে। সেজন্য ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে যে ট্যাবুটা আমাদের সমাজে বিরাজ করছে, সেটা ভাঙা খুব বেশি জরুরি। ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে ফ্রেশের এই প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন সেই ট্যাবু ভাঙার কাজটাই করার চেষ্টা করছে, বিজয় দিবসের বাতাবরণে ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা জিতে আসার বার্তা ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে।

সিনেমার মতো বিজ্ঞাপনও সমাজের দর্পন হিসেবে কাজ করে। ক্ষেত্রবিশেষে সিনেমা বা বইয়ের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারেরও সুযোগ থাকে বিজ্ঞাপনের সামনে। কারণ, অল্প সময়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়া যায়, তাছাড়া বিজ্ঞাপন একদমই ফ্রি মিডিয়াম, দর্শককে সরাসরি টাকা খরচ করতে হচ্ছে না এটি উপভোগের জন্য। সেই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে যে বিজ্ঞাপনকে প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে মাধ্যমে ট্যাবু ভাঙার প্রচেষ্টা চলছে, পণ্য বা সেবার প্রচারণাকে প্রাধান্য না দিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে- এই বিষয়টি সাধুবাদ পাবার মতো অবশ্যই। 

ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে এই সচেতনতামূলক ভিডিওটি নির্মাণ করেছেন তানভীর মাহমুদ দীপ। বিজ্ঞাপনটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত পুরো টিমই একটা হাততালি পাবে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যান্সারকে কানেক্ট করে গল্প বলার এই অসামান্য প্রচেষ্টার জন্য। দারুণ স্টোরিটেলিংয়ের মাধ্যমে ‘সেন্সেটিভ’ একটি ইস্যুকে মানুষের সামনে তুলে ধরার এই যাত্রায় অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোও এভাবে শামিল হবে, এমন প্রত্যাশা করাই যায় এখন থেকে। মরণব্যাধির বিরুদ্ধে বিজয় আমাদের হবেই!

This article is on an advertisement by Fresh Tissue, which is creating awareness to prevent breast cancer. 

Featured Image Source: Fresh Tissue

Related Articles