যারা কম্পিউটার এক্সপার্ট কিংবা যারা টেকনোলজি কোম্পানিগুলোর খোঁজখবর রাখেন, তাদের সবার কাছেই ‘সিলিকন ভ্যালি’ একটি পরিচিত নাম। সিলিকন ভ্যালি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্র্যান্সিস্কো বে অঞ্চলের একটি অংশ। এ অংশের সবচেয়ে বড় শহরটির নাম স্যান জোসে। এই সিলিকন ভ্যালিতেই রয়েছে অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল এবং আরো অনেক বড় বড় কোম্পানির প্রধান অফিস।
এই লেখাটিতে আমরা সিলিকন ভ্যালির ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে কোনো বিষদ আলোচনা করবো না। আলোচনা করবো একই শিরোনামের একটি টিভি সিরিজ নিয়ে, যা এই সিলিকন ভ্যালিরই বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও তাদের কোম্পানিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল এই কমেডি সিরিজটি এইচবিও স্ট্রিমিং সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথম যাত্রা শুরু করে। এখন পর্যন্ত এর মোট পাঁচটি সিজন সম্প্রচারিত হয়েছে। প্রত্যেকটি সিজনের জন্যই এই সিরিজটি টানা পাঁচবার টিভি সিরিজের অস্কারখ্যাত প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ডসে আউটস্ট্যান্ডিং কমেডি সিরিজ বিভাগে মনোনীত হয় এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে। এটি বর্তমানে টেলিভিশনের অন্যতম ব্যবসাসফল কমেডি সিরিজ।
কয়েকজন অচেনা মুখের অসাধারণ অভিনয়
সিলিকন ভ্যালি সিরিজের মূল চরিত্রগুলো হলো রিচার্ড হেন্ড্রিক্স, বারট্রাম গিলফয়েল, দীনেশ চুগতেই, জেরাড ডান এবং আরলিখ বাকম্যান। প্রত্যেক চরিত্রেরই রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব এবং প্রত্যেকের মধ্যেই কিছুটা ভিন্ন ধরনের পাগলাটে ভাব রয়েছে। এই সিরিজের নির্মাতা মাইক জাজ, জন অল্টশুলার এবং ডেভ ক্রিন্সকির অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল যে, তারা এমন একটি সিরিজ বানাতে যাচ্ছেন, যার মূল চরিত্রগুলো দিনের ১৬ ঘণ্টাই কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে থাকে। সুতরাং এরকম পটভূমি নিয়ে কমেডি সিরিজ বানানো আসলেই কঠিন কাজ। কিন্তু চমৎকার চিত্রনাট্য ও অসাধারণ অভিনয়ের কারণেই এটি প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছে।
রিচার্ড হেন্ড্রিক্স চরিত্রে অভিনয় করেছেন থমাস মিডেলডিচ। রিচার্ড একজন কলেজ ড্রপ আউট এবং হুলি নামের এক বিখ্যাত ইন্টারনেট কোম্পানির সফটওয়্যার ডেভেলপার। নিজের একটি সাড়া জাগানো ডাটা কম্প্রেশন এলগোরিদম তৈরির পর সে হুলি ছেড়ে পাইড পাইপার নামে নিজের একটি কোম্পানি দাঁড়া করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নিজের লাজুক, হীনম্মন্য ও ভীতু স্বভাবের জন্য নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে নানা কঠিন এবং হাস্যকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
দীনেশ চরিত্রে অভিনয় করা কুমার নানজিয়ানি একজন পাকিস্তানি-আমেরিকান অভিনেতা, যিনি তার ক্যারিয়ারের শুরু করেছেন একজন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে। এরপর তিনি সিলিকন ভ্যালি সিরিজে অভিনয় করার সুযোগ পান। দীনেশ একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার, যে মূলত জাভা ল্যাঙ্গুয়েজে এক্সপার্ট। সিরিজের আরেক চরিত্র গিলফয়েলের সাথে তার চরম দ্বৈরথ। একে অপরকে কীভাবে বিভিন্ন বিষয়ে টেক্কা দেওয়া যায় তা নিয়ে তারা সবসময় লড়াই করে আর তর্কে ব্যস্ত থাকে, যা এই সিরিজের অন্যতম মজার দিক।
সিস্টেম আর্কিটেকচার এবং নেটওয়ার্ক ও সিকিউরিটি এক্সপার্ট বারট্রাম গিলফয়েল অনেক দর্শকের প্রিয় চরিত্র তার ডার্ক হিউমার আর নীরব কিন্তু খানিকটা রূঢ় ব্যক্তিত্বের কারণে। কানাডা থেকে আমেরিকায় অনৈতিক অভিবাসী হিসেবে বসবাসকারী এই লোকটিকে আধুনিক ভাষায় স্যাভেজ বলা যেতে পারে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মারটিন স্টার।
গ্রুপের সবচেয়ে শান্ত ও সুস্থ স্বভাবের মানুষ জেরাড ডান। তার আসল নাম ডোনাল্ড থাকলেও নিজের কর্মসংস্থান হুলির প্রধান নির্বাহী বিলিয়নিয়ার গ্যাভিন বেলসন তাকে নিয়োগের প্রথম দিন থেকেই জেরাড নামে ডাকা শুরু করে এবং এটাই তার নাম হয়ে যায়। পরে সে হুলির অনেক ভালো পোস্ট ছেড়ে রিচার্ডের কোম্পানির জন্য প্রধান ব্যবসায়িক বিশ্লেষক হিসেবে যোগ দেয়। এ চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন জ্যাক উডস।
সিরিজের সবথেকে পাগলাটে এবং উন্মাদ চরিত্র আরলিখ বাকম্যান। অন্যদের মতো এই চরিত্রের কোনো পেশাদারী দক্ষতা নেই। কিন্তু সে নিজেকে স্টিভ জবসের মতো আদর্শবাদী ও সংস্কারক হিসেবে পরিচয় দেয়। উপরের মূল চরিত্রগুলো তার বাসাতেই ইনকিউবেটর বানিয়ে রুমমেট হিসেবে থাকে। চুক্তি অনুযায়ী আরলিখের ইনকিউবেটরে তৈরি হওয়া যেকোনো প্রোডাক্টের ১০% মালিকানা সে পাবে। তাই রিচার্ড কখনো আরলিখের পিছু ছাড়তে পারে না।
এছাড়াও অন্য পার্শ্বচরিত্রগুলোও অনেক মজার এবং দর্শকপ্রিয়।
একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
রিচার্ড হেন্ড্রিক্স হুলি নামের এক বিখ্যাত ইন্টারনেট কোম্পানির একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার। সে আরলিখ বাকম্যান নামের এক লোকের বাসায় আরো তিনজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সাবলেট হিসেবে থাকে। এখানে সাবলেট থাকা অবস্থায় সে পাইড পাইপার নামে এক মিউজিক ওয়েবসাইট তৈরি করে। এই ওয়েবসাইটের কাজ হলো, কোনো নতুন লেখা গান আগেই প্রকাশিত পুরনো গানের কপিরাইট লঙ্ঘন করছে কি না তা খুঁজে দেখা। লাজুক এবং সবসময় হীনম্মন্যতায় ভোগা রিচার্ড তার হুলির সহকর্মীদের এই ওয়েবসাইটের ডেমো সংস্করণ দেখাতে চাইলে তারা তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে। এরপর সে সিলিকন ভ্যালির অন্যতম সফল ড্রপআউট এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট পিটার গ্রেগরিকে তার ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানায় এবং তার সহকারীকে ওয়েবসাইটের ডেমো লিংক পাঠায়।
ওয়েবসাইটটি চেক করার সময় পিটার গ্রেগরির সহকারী ও রিচার্ডের সহকর্মীরা খেয়াল করে যে, অনেক প্রসেসিং ক্ষমতার দরকার হলেও রিচার্ডের পাইড পাইপার অ্যাপ্লিকেশনের সাইজ তুলনামূলক কম। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে সে বলে, ওয়েবসাইটটির জন্য সে নিজে একটি কম্প্রেশন এলগরিদম তৈরি করেছে।
রিচার্ডের তৈরি করা এই এলগরিদম ছিল বিপ্লব সৃষ্টিকারী। কিন্তু তা সে নিজে টের পায়নি। এই এলগরিদম দিয়ে সকল ইন্টারনেট সার্ভারের সাইজ অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে হুলির প্রধান নির্বাহী গেভিন বেলসন পাইড পাইপার ক্রয় করার জন্য রিচার্ডকে প্রথমে ৪ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করে। অপরদিকে প্রিটার গ্রেগরি তাকে এই এলগরিদম দিয়ে একটি ক্লাউডভিত্তিক কোম্পানি খোলার পরামর্শ দেন এবং ২ লক্ষ ডলার ফান্ডিং ও ৫% মালিকানার প্রস্তাব করে। নিজের প্রতিপক্ষের এই প্রস্তাব শুনে গেভিন বেলসন ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে পাইড পাইপার ক্রয় করার প্রস্তাব করে।
হঠাৎ এত বড় বড় প্রস্তাব শুনে রিচার্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। আরলিখ বাকম্যানের ইনকিউবেটরে এই ওয়েবসাইট তৈরি হওয়ায় সে চুক্তিমতে পাইড পাইপারের ১০% মালিকানার অধিকারী। তার পরামর্শ নিয়ে সে পিটার গ্রেগরির প্রস্তাবে রাজি হয়। নিজের রুমমেটদের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শুরু হয় টেক জগতে পাইড পাইপার নামে এক নতুন কোম্পানির যাত্রা।
উঠতি কোম্পানির যত ধকল
শুধু কোনো নতুন ধারণা বা নতুন উদ্ভাবন দিয়েই একটি কোম্পানি শুরু করা যায় না। এর পেছনে থাকতে হয় পরিশ্রম, পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনা, দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতা এবং সর্বোপরি ভাগ্য। পাইড পাইপারের মতো উঠতি কোম্পানিটি শুরুর দিকে হুলির মতো বড় একটি কোম্পানির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েই সরাসরি তাদের প্রতিপক্ষে পরিণত হয়। হুলির কর্মচারীরা রিচার্ড হেন্ড্রিক্সের পাঠানো ডেমো ওয়েবসাইটের কম্প্রেশন এলগরিদম রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে নিজেদের মতো করে পাইড পাইপারের নকল প্রোডাক্ট নিউক্লিয়াস তৈরি করে। এছাড়া কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করার পরই তারা জানতে পারে যে, ইতিমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাইড পাইপার নামে ট্রেডমার্ক করা একটি কোম্পানি রয়েছে। এদের কাছ থেকে পরে বিরাট অংকের টাকা দিয়ে পরে নামের স্বত্ত্ব ক্রয় করা লাগে।
এছাড়া শুরুর দিকে হুলিতে কাজ করা অবস্থায়ই হুলির অফিসের ডিভাইস দিয়ে রিচার্ড হেন্ড্রিক্স তার ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে অভিযোগ আনা হয়। আর এই অভিযোগ সাপেক্ষে হুলি পাইড পাইপারকে নিজেদের প্রোডাক্ট দাবি করে আদালতে মামলা করে। এই মামলার কথা খবরে আসার পর কেউ আর পাইড পাইপারের ফান্ডিং করতে চায় না। এরকম আরো নতুন নতুন সমস্যার মাঝ দিয়ে কোম্পানিটিকে যেতে হয়, যা সিরিজটি দেখলে বোঝা যাবে।
যেকোনো তাক লাগিয়ে দেওয়া উদ্ভাবন হলেই তা সাফল্যের মুখ দেখে না। এই উদ্ভাবন কতটা যুগোপযোগী তা মানুষের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হয়। ভালো উপস্থাপন ক্ষমতা তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব বহন করে। নিজের প্রোডাক্টের ভালো ও লাভজনক দিকগুলো যদি পুঁজিবাদী সংস্থাগুলোর কাছে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা না হয়, তাহলে তারা কখনো ফান্ডিং করতে উৎসাহী হবে না। তাছাড়া যদি নিজের কোম্পানি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী দর্শন ঠিক না থাকে, তাহলে কোনো সংস্থাই ঐ কোম্পানির প্রোডাক্টের উপর অর্থ বিনিয়োগ করতে আত্মবিশ্বাসী হবে না। সিরিজে রিচার্ডের খারাপ উপস্থাপন দক্ষতা ও ব্যবসায়িক দূরদর্শিতার অভাবের কারণে ফান্ডিংয়ের জন্য তার অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।
এসব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে একজন উদ্যোক্তার কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত-
১) যেকোনো আইডিয়া খোলাখুলি কারো সাথে আলোচনা করা উচিত নয়। এতে আপনার আইডিয়াটি চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং এটি অহরহই ঘটে।
২) সকল প্রকার চুক্তি অবশ্যই কাগজে-কলমে করতে হবে। সামান্য হাত মেলানো ও মৌখিক চুক্তির উপর ভরসা করে সামনে আগানো নির্বুদ্ধিতার পরিচয়।
৩) নিজের টিমের সদস্যরা যে আইপি ব্যবহার করছে তা যেন অবশ্যই আপনার কোম্পানির হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।
বাস্তব জগতে টেকনোলজির কৌতুকময় ও ভয়ংকর দুই দিক
সিলিকন ভ্যালি একটি বিদ্রুপাত্মক ধারাবাহিক। দিনে ১৬ ঘণ্টা কোডিং করা মানুষগুলোর জীবনও যে অনেক মজাদার হতে পারে তা এই সিরিজ না দেখলে বোঝা যাবে না। এখানে অনেক বড় বড় কোম্পানি, যেমন- অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল ইত্যাদিকে নিয়ে কৌতুক করা হয়েছে।বড় বড় বিলিয়নিয়াররা নিজেদের কোম্পানিকে উপরে তোলার জন্য ও কোম্পানির খ্যাতি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কত ধরনের পাগলামি করতে পারে তা এখানে দেখানো হয়েছে।
বাস্তব কিছু প্রযুক্তিগত বিষয়ের ভিতরের দিক এখানে উঠে এসেছে। যেমন- স্মার্টফোন কীভাবে হুট করে বিস্ফোরিত হয়। হুলি কোম্পানি যখন পাইড পাইপারকে নকল করে বানানো নিউক্লিয়াস দিয়ে একটি ফোর-কে ভিডিও স্ট্রিমিং কোম্পানির সাথে মিলে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন হুলির স্মার্টফোনগুলো চাপ নিতে না পেরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিস্ফারিত হতে থাকে। এটি গেলো একটি উদাহরণ।
যখন অনেক বড় ফান্ডিং নিয়েও একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় পরিমাণে ব্যবহারকারী বাড়াতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্লিক ফার্মের দ্বারস্থ হয়। এ ফার্মগুলো স্বল্পমূল্যে প্রচুর পরিমাণে নকল একাউন্ট তৈরি করে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ফান্ডিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করে। এই সিরিজে ক্লিক ফার্ম হিসেবে বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সস্তা শ্রমিক খরচ নিয়েও এখানে অনেকবার কৌতুক করা হয়, যা আদতে শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য ঘটনা।
স্মার্টফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র তৈরির বড় বড় কারখানা রয়েছে চীনে। এখানে যেমন নামকরা কোম্পানির উৎপাদন কারখানা রয়েছে, তেমনি রয়েছে সস্তা ও নকল যন্ত্রাংশের কারখানা। কীভাবে চীনা ছোট কোম্পানিগুলো বড় বড় কোম্পানির যন্ত্রাংশের বৈশিষ্ট্য হুবুহু নকল করে মান কমিয়ে দিয়ে বাজারে ছাড়ে তার হাস্যকর কিছু ঘটনা এখানে দেখতে পাওয়া যাবে।
আধুনিক প্রযুক্তিসেবা, যেমন- ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট ইত্যাদি আমরা ব্যবহার করি। এদের বিভিন্ন সুবিধা আমরা দৈনন্দিন ব্যবহার করছি। কিন্তু এরা কি আসলেই আমাদের তথ্যের সঠিক নিরাপত্তা দিচ্ছে? প্রতিদিন ফোনে ইনস্টল দেওয়া বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন আমাদের গ্যালারি, ভয়েস রেকর্ডিংয়ে প্রবেশাধিকার চায়, আর আমরা খুব একটা চিন্তা না করে স্ক্রিনের ‘ওকে’ অংশে চাপ দেই। এসব কোম্পানির ইন্টারনেট বট এবং আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স আমাদের দিকে কঠোর নজর রাখে। অনেক সময় কিছু কোম্পানি এক ধাপ বেশি এগিয়ে তাদের ইন্টারনেট সংযোগবিশিষ্ট যন্ত্রে রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রাখে। এতে ঐ যন্ত্রগুলোর সামনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে করা অনেক আলাপ সার্ভারে রেকর্ড হয়ে যায়। নিরাপত্তার নামে এভাবে অনেক কোম্পানি তথ্য চুরি করে, যা এই সিরিজ দেখাতে পিছপা হয়নি।
প্রযুক্তিবিদদের সহায়তা
বাস্তবের সিলিকন ভ্যালির ভেতরের খবর বের করতে লেখকদের প্রথমে একটু দুর্ভোগ পোহাতে হলেও প্রথম সিজন সম্প্রচারিত হওয়ার পর ব্যাপারটি একটু সহজ হয়ে যায়। সিরিজটি প্রথম সিজনের পর ব্যাপক পরিচিতি ও দর্শকপ্রিয়তা পায়। এরপর বাস্তবের অনেক পরিচিত টেক গুরু সিলিকন ভ্যালির টেবিলে বসে এই জগতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন টুইটারের সাবেক প্রধান নির্বাহী ডিক কসটোলো। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই সিরিজটির ভক্ত এবং নিজ থেকেই লেখদের সাথে দেখা করেছেন। এছাড়া দ্য হলিউড রিপোর্টারের মতে, ফেসবুকের বর্তমান চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ, লিংকড ইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান এবং ইয়েল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেরেমি স্টপলম্যান বিভিন্ন সময়ে লেখকদের সাথে বসে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
সব শেষে জানিয়ে দেওয়া উচিত, এই টিভি সিরিজটি দেখার জন্য বা বোঝার জন্য আপনার কোনো কম্পিউটার কিংবা প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতি সিজনে ৮-১০টির মতো এপিসোড বের হয়, যার সম্প্রচারকাল মাত্র ৩০ মিনিট। নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে দেখার পাশাপাশি অনেক কিছু শেখারও রয়েছে এর মাধ্যমে। লেখাটি শেষ করা যাক এই সিরিজেরই দুটি জনপ্রিয় উক্তি দিয়ে।
“গেটস, বেল, জবস, এলিসন এরা সবাই কলেজ ড্রপ আউট। সিলিকন ভ্যালি নতুন উদ্ভাবনের মূল ভিত্তি হয়েছে এসকল ড্রপ আউটদের জন্য। কলেজ গরীব এবং মধ্যবিত্তদের জন্য কেবল একটি ব্যয়বহুল তামাশায় পরিণত হয়েছে, যেখান থেকে শুধু এর সংগঠকরা লাভ করে; এর মেদবহুল প্রশাসকগণ।” -পিটার গ্রেগরি
“আমি তোমাদের ব্যাপারে জানি না। কিন্তু আমি এমন কোনো পৃথিবীতে বাস করতে চাই না যেখানে মানুষের জীবনকে অন্য কেউ আমাদের থেকে বেশি ভালোভাবে ও সহজ করে কাটানোর সুযোগ করে দেবে।“ -গ্যাভিন বেলসন
“এই প্রোগ্রামার দলগুলো অনেক অদ্ভুত। এরা সবসময় পাঁচজনের গ্রুপে থাকে। যাদের মধ্যে একজন অনেক লম্বা, একজন হাড্ডিসার সাদা আমেরিকান, একজন বেশ খাটো, একজন চিকন এশিয়ান এবং একজন চুলে বেনীওয়ালা মোটাসোটা ও বিদঘুটে দাড়িওয়ালা লোক থাকে। দেখে এমন মনে হয় যেন গ্রুপগুলো পরস্পরের মাঝে নিজেদের বিনিময় করে একটা পরিপূর্ণ দল না হওয়া পর্যন্ত।” -গ্যাভিন বেলসন