২০২০ সালকে হয়তোবা আমরা সবাই মনে রাখব আতঙ্ক, হতাশা এবং বিষাদের একটি বছর হিসেবে। কারণ পাওয়ার চাইতে এবারের হারানোর পাল্লাটাই যে ভারি। এই বছরেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন রূপালী পর্দার অতি পরিচিত কিছু মুখ, যাদের কাজ আমাদের বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে, আমাদের হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, ভাবিয়েছে। তাই নতুন বছর শুরুর সময়টাতেই স্মরণ করতে চাই প্রিয় সেই মানুষদের।
আলী যাকের (১৯৪৪-২০২০)
সত্তরের দশকে মঞ্চ কাঁপানো বিদ্রোহী নূরুলদীন কিংবা আজ রবিবার নাটকের বড় চাচা হিসেবে পরিচিত আলী যাকের তার অভিনয়ের গুণে জয় করেছিলেন এই দেশের মানুষের মন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের অন্যতম সংগঠক এবং নাট্যনির্দেশক ছিলেন তিনি। নাটকের পাশাপাশি তার শিল্প প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে সাহিত্যকর্মেও। ছিলেন একজন শৌখিন ফটোগ্রাফার। অবদান রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে। জয় করেছেন একুশে পদকসহ বহু পুরষ্কার। আত্যন্ত প্রতিভাবান এই মানুষটি দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে গত ২৭শে নভেম্বর ৭৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৫-২০২০)
সত্যজিত রায়ের সিনেমায় অপু হিসেবে রূপালী পর্দায় প্রথম আগমন। তারপর সেখানে কাটিয়ে দিলেন ৬০ বছরের বেশি সময়। উপহার দিলেন ‘অপুর সংসার’, ‘কোনি’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সহ অসংখ্য চলচ্চিত্র। প্রতিভার ছাপ ফেলে যান আবৃত্তি, নাটক থেকে সাহিত্যকর্মেও। সম্মানিত হয়েছেন পদ্মভূষণ, লিজিয়ন অফ অনার কিংবা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি অসংখ্য পদকে। কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর মাঝে কিছুটা সুস্থ হলেও নানা শারীরিক জটিলতা ক্রমশ বাড়তে থাকায়, ৮৬ বছর বয়সে ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা।
ইরফান খান (১৯৬৭-২০২০)
২০১৮ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পরেও প্রচণ্ড মনোবল নিয়ে ভক্তদের মাঝে ফিরে আসেন লাইফ ইন এ মেট্রো, দ্য লাঞ্চবক্স, পান সিং তোমর, লাইফ অফ পাই, পিকু, স্লামডগ মিলিয়নিয়ার, হিন্দি মিডিয়ামের মতো সিনেমা উপহার দেওয়া ইরফান খান। কিন্তু এপ্রিলের ২৯ তারিখে সেই ক্যান্সারই প্রাণ নিয়ে নিল জনপ্রিয় এই অভিনেতার। ৫৩ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে তিনি তার প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন বলিউড, হলিউড এমনকি আমাদের ঢালিউডেও।
চ্যাডউইক বোসম্যান (১৯৭৬-২০২০):
অভিনেতা হিসেবে সবেমাত্র যখন নিজেকে মেলে ধরছিলেন, তখনই জানতে পারেন শরীরে বাসা বেঁধেছে প্রাণঘাতী ক্যান্সার। তারপর একদিকে পর্দায় যুদ্ধ করেছেন অপশক্তির বিরুদ্ধে, অপরদিকে নীরবে লড়াই করেছেন মরণব্যাধির সাথে। চার বছর লড়াইয়ের পর গত ২৮ আগস্ট হার মানেন তিনি। ৪৩ বছর বয়সে চলে যাওয়ার আগে তিনি রেখে গেছেন ব্ল্যাক প্যান্থার, ৪২, গেট অন আপ, মার্শাল, ২১ ব্রিজেস, দ্য ফাইভ ব্লাডসের মতো সিনেমা।
শন কনারি (১৯৩০-২০২০)
আগস্টেই নিজের ৯০ তম জন্মদিন পালন করেছিলেন সিনেমা জগতের প্রথম জেমস বন্ড শন কনারি। অভিনয় জগতে লম্বা সময় পার করেছেন আর ভক্তদের জন্য রেখে যান সাতটি বন্ড মুভি- দ্য আনটাচেবলস, দ্য হান্ট ফর রেড অক্টোবর, ইন্ডিয়ানা জোন্স এন্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড এবং দ্য রকের মতো সিনেমা। তার ঝুড়িতে আছে একটি অস্কার, দুইটি বাফটা পুরষ্কার ও তিনটি গোল্ডেন গ্লোব পুরষ্কার। ২০০০ সালে ইংল্যান্ডের রানির কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন নাইট উপাধি। গত ৩১ অক্টোবর ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যু হয় স্কটিশ এই অভিনেতার।
কার্ক ডগলাস (১৯১৬-২০২০)
গহলিউডের সোনালী যুগের প্রতিনিধি কার্ক ডগলাস মৃত্যুবরণ করেন ৫ ফেব্রুয়ারি। শতবর্ষী এই অভিনেতা নিজের ব্যক্তিজীবন এবং অভিনয় দুই জায়গাতেই ছিলেন দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে রেখে গেছেন এইস ইন দ্য হোল, পাথস অভ গ্লোরি, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য বিউটিফুল, অ্যাক্ট অব লাভ, টু থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি, চ্যাম্পিয়ন, লাস্ট ফর লাইফ ও স্পার্টাকাসের মতো সিনেমা আর অর্জন করেন অস্কারসহ অজস্র পুরষ্কার ও সম্মাননা।
অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড (১৯১৬-২০২০)
প্রায় সমবয়সী হলেও রূপালীপর্দায় অলিভিয়ার আগমন কার্ক ডগলাসেরও দশ বছর আগে। ক্যাপ্টেন ব্লাড এবং দ্য অ্যাডভেঞ্চার অভ রবিন হুড সিনেমায় দূর্দান্ত অভিনয়ের পর গন উইথ দ্য উইন্ড চলচ্চিত্রটি তাকে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এছাড়াও তিনি আলোচিত ছিলেন ওয়ার্নার ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে একটি মামলায় জয়ের কারণে। দুইবারের অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী ১০৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ২৬ জুলাই।
ম্যাক্স ভন সিডো (১৯২৯-২০২০)
দ্য সেভেন্থ সিল চলচ্চিত্রে মৃত্যুকে দাবা খেলায় হারিয়ে দিলেও এবার তিনি পরাজিত হয়েছেন। বড় পর্দায় ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ, দ্য এক্সরসিস্ট, ফ্ল্যাশ গর্ডন, মাইনরিটি রিপোর্ট, স্টার ওয়ার্স: ফোর্স আওয়েইকেন্স ইত্যাদির পাশাপাশি ছোট পর্দায় বিশেষ করে গেম অফ থ্রোনসেও অভিনয় করেন তিনি। তিনি ইংমার বার্গম্যানের ১১ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কালজয়ী এই অভিনেতা ৮ মার্চ ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হন।
ডেভিড প্রাউস (১৯৩৫-২০২০)
আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ সিনেমায় ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ান বডিবিল্ডার ডেভিড প্রাউসকে দেখে স্টার ওয়ার্সে অভিনয়ের সূযোগ দেন জর্জ লুকাস। চিউবাকা এবং ডার্থ ভেডারের মধ্যে তিনি ডার্থ ভেডারই বেছে নেন। মাথায় সেই বিখ্যাত হেলমেট পরে স্টার ওয়ার্সের অরজিনাল ট্রিলজিতে মহাজগতের ত্রাস হিসেবে ডার্থ ভেডার রূপে আগমন ঘটে তার। গত ২৮ নভেম্বর ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ঋষি কাপুর (১৯৫২-২০২০)
রাজ কাপুর ও কৃষ্ণা রাজ কাপুরের দ্বিতীয় পুত্র ঋষি রাজ কাপুরের সিনেমায় হাতেখড়ি মাত্র তিন বছর বয়সে। সত্তর ও আশির যুগে লায়লা মজনু, কর্জ, প্রেমরোগ, নাগিনা, চাঁদনি, হীনা, বোল রাধে বোল মুভিগুলো বক্স অফিসে দারুণ সফলতা পেয়েছিল। তিনিও ক্যান্সারের থাবায় ৭৩ বছর বয়সে ৩০ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আর্ল ক্যামেরুন (১৯১৭-২০২০)
১৯৫১ সালের চলচ্চিত্র পুল অভ লন্ডনে অভিনয়ের মাধ্যমে আর্ল ক্যামেরুন বৃটিশ চলচ্চিত্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা হিসেবে নিজের নাম লেখান। তারপর তিনি হয়ে উঠেন বৃটিশ সিনেমা এবং টিভি শোগুলোর জনপ্রিয় মুখ। বারমুডায় জন্মগ্রহণ করা এই অভিনেতা ৯৩টি মুভি এবং টিভি শোতে অভিনয় করেছেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩ জুলাই ১০২ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতাদের অগ্রদূত।
অনার ব্ল্যাকম্যান (১৯২৫-২০২০)
বন্ড সিরিজের তৃতীয় সিনেমা গোল্ডফিঙ্গারে পুসি পুসি গ্যালোর চরিত্রে অভিনয় করেন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন অনার ব্ল্যাকম্যান। মার্শাল আর্টে দক্ষ ব্ল্যাকম্যান বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল বিশেষ করে দ্য অ্যাভেঞ্জার্রে ড. ক্যাথেরিন গেইল চরিত্রে ছিলেন দূর্দান্ত। ৫ এপ্রিল, ৯৪ বছর বয়সে মারা যান এই বৃটিশ অভিনেত্রী।
কার্ল রেইনার (১৯২২-২০২০)
কার্ল রেইনার, যিনি একাধারে লেখক, প্রযোজক, পরিচালক এবং এক কিংবদন্তি কৌতুকাভিনেতা, তিনি নির্মাণ করেছিলেন জনপ্রিয় ডিক ভ্যান ডাইন শো এবং উপহার দিয়েছেন ওশানস ইলেভেন, অল অভ মি সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা। তিনি নয়বার অ্যামি অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি অর্জন করেছেন অনেক পুরষ্কার এবং সম্মাননা। ২৯ জুন মৃত্যুর পূর্বে তার বয়স ছিল ৯৮ বছর।
আবদুস সাত্তার (১৯৫৮-২০২০)
সত্তর-আশি দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেতা আমির সওদাগর ভেলুয়া সুন্দরী সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় পা রাখেন। এরপর রঙ্গিন রূপবান চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সবার মন জয় করেছিলেন তিনি। গত ৩ আগস্ট মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। রঙ্গিন রূপবান সিনেমায় অভিনয় করে সবার মন জয় করেছিলেন চিত্রনায়ক সাত্তার। সাত ভাই চম্পা, মধুমালা মদন কুমার, অরুণ বরুণ কিরণ মালা, সাগরকন্যা সহ দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
আব্দুল কাদের (১৯৫১-২০২০)
বাংলাদেশের শোবিজের অন্যতম পরিচিত মুখ আব্দুল কাদের ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬ ডিসেম্বর। তিনি হুমায়ুন আহমেদের কোথাও কেউ নেই নাটকে বদি চরিত্রে অভিনয় করে বেশ পরিচিতি অর্জন করেন। নাটক ছাড়াও বিজ্ঞাপন, সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। থিয়েটারের হয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেন।
স্যার ইয়ান হোম (১৯৩১-২০২০)
লর্ড অভ দ্য রিংস ট্রিলজিতে অভিনয়ের কারণে বিলবো ব্যাগিন্স নামেই পরিচিত ছিলেন বৃটিশ এই অভিনেতা। অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন ক্যারিয়টস অভ ফায়ার সিনেমায় স্যাম মুসাবিনি এবং এলিয়েন সিনেমায় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাশ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। ১৯৯৮ সালে ড্রামায় ভূমিকা রাখার জন্য তিনি নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন। অসাধারণ গুণী এই অভিনেতা পার্কিনসন রোগে ভূগছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই। সে রোগেই ৮৮ বছর বয়সে ১৯ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ফ্রেড উইলার্ড (১৯৩৩-২০২০)
অ্যামি অ্যাওয়ার্ডে দুইবার মনোনিত এই মার্কিন কৌতুকাভিনেতা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ক্রিস্টোফার গেস্টের সিনেমা বেস্ট ইন শো, ওয়েটিং ফর গাফম্যান এবং মডার্ন ফ্যামেলি বা এভরিবডি লাভস রেমন্ড সিটকমে তার অভিনয়ের মাধ্যমে। ৮৬ বছর বয়সে ১৫ মে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
রোন্ডা ফ্লেমিং (১৯২৩-২০২০)
‘কুইন অব টেকনিকালার’খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোন্ডা ফ্লেমিং স্পেলবাউন্ড, আউট অব দ্য পাস্ট, দ্য স্পাইরাল স্টেয়ারকেস, হোয়াইল দ্য সিটি স্লিপস, পনি এক্সপ্রেস’ ও দ্য বিগ সার্কাসসহ ৪০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি একজন কন্ঠশিল্পী হিসেবেও বেশ সমাদৃত ছিলেন তিনি। কাজ করেছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের জন্য। ১৪ অক্টোবর ৯৭ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ডায়ানা রিগ (১৯৩৮-২০২০)
ষাটের দশকে জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল দ্য এভেঞ্জারসে এমা পিলের চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এমা রিগ। আবার বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন গেম অব থ্রোনস–এ ওলেনা টাইরেল চরিত্রে অভিনয় করে। পর্দার বাইরে মঞ্চেও তিনি দূর্দান্ত ছিলেন। অ্যামি অ্যাওয়ার্ড জয়ী এই অভিনেত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে ১০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
জন হুইটলি (১৯৪৫-২০২০)
১৬ মে ৭৫ বছর বয়সে একজন আর্ট হিস্টোরিয়ান হিসেবে মারাও গেলেও জন হুইটলি ১১ বছর বয়সে দ্য কিডন্যাপারস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অর্জন করেছিলেন সম্মানসূচক অস্কার। এরপরে আর মাত্র ৪ টি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে বিদায় জানিয়েছিলেন রূপালী পর্দাকে।
জেরি স্টিলার (১৯২৭-২০২০)
২০২০ সালে প্রয়াণ ঘটে আরেক জনপ্রিয় কমেডিয়ান অভিনেতা জেরি স্টিলারের। তিনি সবচাইতে বেশি পরিচিত ছিলেন জনপ্রিয় সিটকম সাইনফিল্ডে ফ্রাঙ্ক কোস্তাঞ্জার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। এছাড়াও বাস্তব জীবন এবং পর্দা দুই জায়গাতেই স্ত্রীর সাথে তার জুটি ছিল সর্বত্র প্রশংসনীয়। ছেলে বেন স্টিলারের সাথেও জুল্যান্ডার, দ্য হার্টব্রেক কিড মুভিতে অভিনয় করেন তিনি। বার্ধক্যজনিত কারণে এই অভিনেতা ১১ মে, ৯২ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
লুসিয়া বোসে (১৯৩১-২০২০)
ইতালিয়ান অভিনেত্রী লুসিয়া বোসে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ২৩ মার্চ ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৭ সালে মিস ইতালি হবার পর দ্রুতই সিনেমায় নাম লেখান। ইতালিয়ান নিওরিয়ালজমের সময়ে তিনি আন্তোনিয়োনি, লুইস ব্রুনেলের সাথে কাজ করেন দ্য লেডি উইথআউট ক্যামেলিয়াস, স্টোরি অভ আ লাভ অ্যাফেয়ার, ডেথ অভ আ সাইক্লিস্ট চলচ্চিত্রে যা তাকে এনে দেয় তারকাখ্যাতি।
অ্যান্ড্রু জ্যাক (১৯৪৪-২০২০)
অ্যান্ড্রু জ্যাক স্টার ওয়ার্স ফোর্স আওয়েইকেন্স এবং লাস্ট জেডাই-এ অভিনয়ের পাশাপাশি ডায়ালেক্ট কোচ ছিলেন মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স, নোলানের ব্যাটম্যান ট্রিলজি, আসন্ন ব্যাটম্যান মুভি, ট্রয়, লর্ড অফ দ্যা রিংস-সহ আরো অনেক সিনেমায়। তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৭৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উইলফোর্ড ব্রিমলে (১৯-২০২০)
অভিনয়ে পা রাখার আগে তিনি প্রথমে ছিলেন একজন কামার, রোডিও রাইডার এবং হাওয়ার্ড হিউজের দেহরক্ষী। দ্য চায়না সিন্ড্রোম, কোকুন, দ্য থিং, দ্য ন্যাচারাল এবং এবসেন্স অফ ম্যালিস সিনেমায় অভিনয় তাকে খ্যাতি এনে দেয়। বিখ্যাত গোঁফের অধিকারী এই মানুষটি ৮৩ বছর বয়সে ১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
ইউকো তাকাচি (১৯৮০-২০২০)
জাপানিজ এই অভিনেত্রী মিস শার্লক টিভি সিরিজে মিস শার্লক হিসেবে এবং জনপ্রিয় হরর মুভি দ্য রিংয়ে অভিনয় করেন। ২০০৪ থেকে টানা তিনবার তিনি জাপানিজ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে নিজ বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
কেলি প্রিস্টন (১৯৬২-২০২০)
আশির দশকের টিনেজ রোমান্টিক সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচিত পান আমেরিকান এই অভিনেত্রী। স্পেসক্যাম্প, জেরি ম্যাগুয়ের, ফর লাভ অভ দ্য গেম এবং স্বামী জন ট্রাভোল্টার সাথে গোটি চলচ্চিত্র বাদেও ৬০টিরও বেশি টিভি সিরিজে অভিনয় করেন। ব্রেস্ট ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে অবশেষে ১২ জুলাই ৫৭ বছর বয়সে বিদায় নেন তিনি।
সুশান্ত সিং রাজপুত (১৯৮৬-২০২০)
বলিউডের উদীয়মান তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের অকাল মৃত্যু কাপিয়ে দেয় পুরো ভারতকে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বিদায় নেওয়া এই অভিনেতা উপহার দিয়েছিলেন এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি, ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি, কাই পো ছের মতো সিনেমা। অল্পদিনেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
কে এস ফিরোজ (১৯৪৪-২০২০)
সেনাবাহিনীর মেজর থেকে অবসর নেয়া খন্দকার শহীদ উদ্দিন ফিরোজ নাট্যদল থিয়েটারের হয় অভিনয়ে পথচলা শুরু করেন। থিয়েটার (সাত ঘাটের কানাকড়ি, কিং লিয়ার, রাক্ষসী), নাটক (দীপ তবুও জ্বলে), চলচ্চিত্র (শঙ্খনাদ, বাঁশি, লাওয়ারিশ) সর্বত্রই তার পদচারণা ছিল। করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৯ সেপ্টেম্বর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
সাদেক বাচ্চু (১৯৫৫-২০২০)
১৪ সেপ্টেম্বর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অনবদ্য এই অভিনেতা। তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক রচয়িতা এবং নাট্য-নির্দেশকও ছিলেন। তার শ্রেষ্ঠ অর্জন ছিল ‘শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনেতা’ ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন।
তাপস পাল (১৯৫৮-২০২০)
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় মুখ তাপস পাল ৬১ বছর বয়সে মারা যান। তার অভিনীত ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘পারাবত প্রিয়া’, ‘মায়া মমতা- সহ আরো অনেক সিনেমা এখনো দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে।
স্টুয়ার্ট হুইটম্যান (১৯২৮-২০২০)
দ্য মার্ক সিনেমায় দূর্দান্ত অভিনয়ের জন্য অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেতা স্টুয়ার্ট হুইটম্যান ৯২ বছর বয়সে ১৬ মার্চ মারা যান। টেলিভিশন ধারাবাহিক সিমারন স্ট্রিপ (১৯৬৭)-এ মার্শাল জিম ক্রাউন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
জুয়েল শুমাখার (১৯৩৯-২০২০)
কস্টিউম ডিজাইনার থেকে তিনি সেন্ট এলমোজ ফায়ার পরিচালনার মাধ্যমে সবার নজরে আসেন। এরপর দ্য লস্ট বয়েজ ফ্ল্যাটলাইনারস ছাড়াও নির্মাণ করেন দুটি ব্যাটম্যান মুভি। ২৩ আগস্ট লেখক-পরিচালক শুমাখার ৮০ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে বেশ কয়েকবছর ধরেই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিলেন।
কিম কি দুক (১৯৬০-২০২০)
করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫৯ বছর বয়সে মারা যান কোরিয়ান অন্যতম জনপ্রিয় পরিচালক কিম কি দুক। কান, ভেনিস ও বার্লিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছিল তার সিনেমা। স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার… অ্যান্ড স্প্রিং, পিয়েতা, থ্রি আয়রন, ওয়ান অন ওয়ান, স্টপ, মেড ইন চায়না, হিউম্যান, স্পেস, টাইম অ্যান্ড হিউম্যান তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা। ১১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন এই মেধাবী পরিচালক।
নবুহিকো ওবায়াশি (১৯৩৮-২০২০)
স্বকীয় এই জাপানিজ চলচ্চিত্র নির্মাতা জনপ্রিয় ছিলেন ভিন্নধর্মী হরর-ফ্যান্টাসি ঘরানার মুভি নির্মানের জন্য। হাউজ, টার্নিং পয়েন্ট, দ্য ডিসকারনেটস ছিল তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা। চার বছর ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ১০ এপ্রিল ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বাসু চট্টোপাধ্যায় (১৯৩০-২০২০)
সত্তরের দশকে বাণিজ্যিক সিনেমার পরিবর্তে ভিন্নধারার চলচ্চিত্রে বাস্তব জীবনকে তুলে ধরেছিলেন এই পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে তিনি ৮ জুন ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সারা আকাশ’, ‘পিয়া কে ঘর’, ‘খাট্টা মিঠা’, ‘চক্রব্যুহ’, ‘বাতো বাতো মে’, ‘জিনা ইহা’, ‘আপনে পেয়ারে’। এছাড়াও জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ এবং ‘রজনি’ তারই পরিচালনা।
বেনি চ্যান (১৯৬১-২০২০)
হংকংয়ের পরিচালক বেনি চ্যান খ্যাতি অর্জন করেছিলেন নিউ পুলিশ স্টোরি, হু এম আই এর মতো একশন চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে। তার নতুন সিনেমা রেজিং ফায়ার এর কাজ চলমান অবস্থাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সেখানেই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
জিরি ম্যাঞ্জেল (১৯৩৮-২০২০)
অস্কারজয়ী জিরি ম্যাঞ্জেল চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশপাশি প্রায় ৮০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং থিয়েটারে একজন নাট্য-নির্দেশকও ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তার নির্মিত ক্লোজলি ওয়াচড ট্রেনস ১৯৬৮ সালে সেরা বিদেশি চলচ্চিত্রে অস্কার জয় করে। তার পরিচালিত মাই সুইট লিটল ভিলেইজ ১৯৮৭ সালে অস্কারে মনোনিত হয়েছিল। ৫ সেপ্টেম্বর ৮২ বছর বয়সে বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে তিনি মারা যান।
বেন ক্রস (১৯৪৭-২০২০)
বৃটিশ এই অভিনেতা অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ক্যারিয়েটস অভ ফায়ারে অলিম্পিক স্প্রিন্টার হ্যারল্ড অ্যাব্রাহামসের চরিত্রে অভিনয় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি স্টার ট্রেক রিবুট এবং ডার্ক শ্যাডোজেও অভিনয় করেন। ১৮ আগস্ট ৭২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
হিলারি হিথ (১৯৪৫-২০২০)
বৃটিশ এই অভিনেত্রী ভিন্সেন্ট প্রাইসের সাথে হরর ফিল্ম উইচফাইন্ডার জেনারেল, দ্য অবলং বক্স, ক্রাই ফর বানশিতে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি প্রযোজনা করেন এন অফুল বিগ অ্যাডভেঞ্চার এবং নিল দ্য মাউথ যা পরিচালনা করেছিলেন গ্যারি ওল্ডম্যান। তিনি ৭৪ বছর বয়সে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩০ মার্চ।
মাইকেল চ্যাপম্যান (১৯৩৫-২০২০)
সিনেম্যাটোগ্রাফার মাইকেল চ্যাপম্যান মার্টিন স্করসেজির টেক্সি ড্রাইভার, রেজিং বুল, দ্য লাস্ট ওয়াল্টজ, ফিলিপ কউফম্যানের ইনভেশন অভ দ্য বডি স্ন্যাচারস এবং ফিলিপ কউফম্যানের দ্য ফিউজিটিভশ আরো অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় কাজ করেছিলেন। তিনি ২০ সেপ্টেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
অ্যালেন পার্কার (১৯৪৪-২০২০)
বৃটিশ এই পরিচালক বিজ্ঞাপন জগৎ থেকে উঠে এসে নির্মাণ করেছিলেন মিডনাইট এক্সপ্রেস, মিসিসিপি বার্নিং যা তাকে দুইবারের জন্য অস্কারে সেরা পরিচালকের মনোনয়ন এনে দেয়। এছাড়াও তিনি বৃটিশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচাইতে সম্মানজনক দ্য অ্যাকেডেমি ফেলোশিপ অর্জন করেন ২০১৩ সালে। ৩১ জুলাই তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
জোসেফ ভিলসমেয়ার (১৯৩৯-২০২০)
প্রথমে তিনি ছিলেন জার্মান এক টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান। সেখান থেকে তিনি যখন তার প্রথম সিনেমা অটাম মিল্ক নির্মাণ করেন তখন তার বয়স ৫০ ছুই ছুই! তার প্রথম সিনেমা জার্মান বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। তিনি যদিও বিখ্যাত ছিলেন স্তালিনগার্ড এবং কমেডিয়ান হারমোনিস্টের মতো ইতিহাস নিয়ে নির্মিত মুভির জন্য। তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ফারনান্দো সোলানাস (১৯৩৬-২০২০)
আর্জেনটাইন এই পরিচালক নিওকলোনিয়ালিজম এবং রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে ডকুমেন্টারি দ্য আওয়ার অফ দ্য ফারনেসেস নির্মাণ করে বেশ আলোচিত হন। তার পরিচালিত সিনেমা সাউথ, ১৯৮৮ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাকে সেরা পরিচালকের পুরষ্কার এনে দেয়। তিনি কোভিড আক্রান্ত হয়ে ৬ নভেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মারা যান।
নেলি ক্যাপলান (১৯৩১-২০২০)
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ নভেম্বর মারা যান এই আর্জেন্টাইন-ফ্রেঞ্চ পরিচালক। তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র আ ভেরি কিউরিয়াস গার্ল-এর মাধ্যমে অনেক সাড়া ফেলেন। তার চলচ্চিত্রে তিনি নারী ক্ষমতায়নকে প্রাধান্য দিতেন।
ইভান পাসার (১৯৩৩-২০২০)
চেক প্রজাতন্ত্রের এই পরিচালক কাটারস ওয়ে, ইন্টিমিট লাইটিং, বর্ন টু উইনসহ বেশ কিছু সিনেমা নির্মান করেছিলেন। তিনি ফুসফুসের জটিলতায় ৩ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
জেরেমি বুলক (১৯৪৫-২০২০)
স্টার ওয়ার্স এপিসোড ফাইভ এবং সিক্সে জেরেমি বুলক এই গ্যালাক্সির সবচাইতে বিখ্যাত এবং ভয়ানক বাউন্টি হান্টার বোবা ফেটের চরিত্র অভিনয় করেন। বৃটিশ এই অভিনেতা তার দীর্ঘ কর্মজীবনে কাজ করেছেন অসংখ্য মুভি এবং সিরিজে যার মধ্যে ডক্টর হু এবং রবিন অভ শেরউড অন্যতম। তিনি বেশ কয়েকবছর পার্কিসন রোগে ভুগছিলেন। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।