বিদেশি টিভি সিরিজগুলোর মাঝে গেম অব থ্রোনস বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই সিরিজের সাতটি সিজন শেষ হয়েছে। প্রতি বছরই একটি করে সিজন আসলেও অষ্টম ও চূড়ান্ত সিজনটি সপ্তম সিজনের প্রায় দুই বছর পরে ২০১৯ সালে মুক্তি পাবে। এর মাধ্যমেই শেষ হয়ে যাবে এই তুমুল জনপ্রিয় টিভি সিরিজটি। তবে এতে ভক্তদের হতাশ হবার কিছু নেই। কেননা এইচবিও এর মধ্যেই গেম অব থ্রোনস এর চারটি প্রিকুয়েল বা পূর্বকাহিনীর একটি স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ শুরুর কথা বলেছে। লেখক জর্জ আর আর মার্টিনের এ সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার ফ্যান্টাসি মহাবিশ্বের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী এই সিরিজটি তৈরি করার দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রিটিশ লেখিকা ও প্রযোজক জেন গোল্ডম্যান।
কী নিয়ে হতে যাচ্ছে এই প্রিকুয়েল ?
এই সিরিজের কাহিনী আবর্তিত হবে এজ অব হিরোজের পতনের সময় থেকে। মার্টিনের ধারাবাহিক উপন্যাস ও এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সাহিত্যের ভক্তরা এই যুগকে কিংবদন্তি লং নাইট হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে। এ যুগেই দীর্ঘ শীতকালের সূচনা ঘটে। এই দীর্ঘস্থায়ী শীতের কারণে ওয়েস্টেরসের বাসিন্দাদের অনেক কষ্ট ও ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এ সময়েই মূলত হোয়াইট ওয়াকার্স ও তাদের মৃত সৈন্যদলের সাথে জীবিত মানুষদের প্রচণ্ড এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এই সিরিজে গেম অব থ্রোনসের কাহিনীর সময় থেকে হাজার হাজার বছর আগে সংঘটিত হওয়া ঘটনাবলী দেখা যাবে। ওয়েস্টেরসে এজ অব হিরোজ বা বীরদের সেই সুবর্ণ যুগ থেকে শুরু করে অন্ধকারতম যুগের অবতারণা কীভাবে হয় তা তুলে ধরা হবে এতে। ওয়েস্টেরসের ইতিহাসের ভয়ানক রহস্য থেকে হোয়াইট ওয়াকারের প্রকৃত উত্স, ওয়েস্টেরসের পূর্বদিকের রহস্য, কিংবদন্তি স্টার্কদের উত্থান এসবই থাকবে এখানে।
এটি কখন মুক্তি পাবে ?
এইচবিও জানিয়েছে, গেম অব থ্রোনস শেষ হওয়ার পর অন্তত একটি বছর পর্যন্ত এর সাথে সম্পর্কিত কোনো নতুন সিরিজ প্রিমিয়ার হবে না। গেম অব থ্রোনস সিরিজের অষ্টম এবং চূড়ান্ত সিজন আগামী বছর গ্রীষ্মে প্রচারিত হবে। সেই অর্থে এই প্রিকুয়েলটি ২০২০ সালের আগে দেখতে পারছে না দর্শকগণ।
সিরিজটির দায়িত্বে কে থাকছেন?
সিরিজটি নির্মাণ করবেন মার্টিন ও গোল্ডম্যান। গোল্ডম্যান স্টারডাস্ট, কিক-অ্যাস, এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস, দ্য ওম্যান ইন ব্ল্যাক, কিংসমেন: দ্য সিক্রেট সার্ভিস এবং আসন্ন দ্য লিটল মারমেইডের মতো চলচ্চিত্রের জন্য পরিচিত। ১০টি চলচ্চিত্রে তার টমেটমিটার গড় ৭৩%। গোল্ডম্যানই প্রধানত সিরিজটির দায়িত্বে থাকবেন।
মার্টিন তার ব্লগে লিখেছেন, “আমি পরবর্তীকালের সব অনুষ্ঠানের সমস্ত লেখকের সাথে পরামর্শ করেছি এবং তাদের বেশ কয়েকজন দীর্ঘ আলোচনার জন্য সান্তা ফেতে আমার সাথে দেখা করেছেন। আমরা ইমেইল, পাঠ্য এবং টেলিফোনেও যোগাযোগ করেছি, তাই বলা যায় আমি স্পষ্টভাবেই জড়িত ছিলাম… কিন্তু সত্যিই, এখানে প্রশংসাগুলো জেনের পক্ষেই যাওয়া উচিত। তার সাথে কাজ করায় একটি পরম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে …ঈশ্বর, কী দারুণ প্রতিভা। “
একজন নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে ওয়েস্টেরসের দুনিয়া নিয়ে একটি নতুন সিরিজ তৈরির ফলে গুঞ্জন সৃষ্টি হতে পারে। কেননা গেম অব থ্রোনসের নারীদের চরিত্রায়ন নিয়ে এর আগে বেশ কিছু সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল, যদিও এটি মধ্যযুগীয় ইউরোপের ঐতিহাসিক নিষ্ঠুরতার দ্বারাই অনুপ্রাণিত।
কাহিনীতে কী থাকছে?
এয়গন টারগারিয়ানের ওয়েস্টেরস অভিযানের ১০ হাজার বছর আগে চিলড্রেন অব দ্য ফরেস্ট এবং ফার্স্ট মেন একটি চুক্তিতে সম্মত হয়। এটি একটি শান্তি চুক্তি ছিল। এসময় স্টার্কসহ অন্যান্য অনেক পুরনো হাউজ তাদের উত্তরসূরীদের খোঁজ শুরু করে।
বর্তমানে গেম অব থ্রোনসের যে ঘটনাবলী দেখানো হচ্ছে, তা ওয়েস্টেরসে টারগারিয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এয়গনের বিজয়ের প্রায় ৩০০ বছর পরে সংঘটিত হয়। তবে এই টিভি সিরিজের কাহিনী বইগুলোর কাহিনীর সাথে সম্পূর্ণ মেলে না। টিভি সিরিজের পর্বের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে নির্মাতারা কাহিনীর কিছুটা পরিবর্তন করেছেন।
প্রথম সিরিজেই ওল্ড ন্যান ব্র্যানকে লং নাইটের যুগের গল্প শোনায়। এটি এয়গনের অভিযানের ৮ থেকে ৬ হাজার বছর পূর্বে সংঘটিত হয়। তাই প্রিকুয়েল সম্পর্কে অল্প যে তথ্য পাওয়া যায়, তা থেকে ধারণা করা যায় জনে কিং ইন দ্য নর্থ হওয়া ও ড্রাগন নিয়ে ডেনেরিসের ওয়েস্টেরসে ফিরে আসার ৯ হাজার থেকে ৬ হাজার বছর আগের কাহিনী নিয়ে এটি তৈরি হবে। অর্থাৎ এখন ভক্তরা যা দেখছে, তার থেকেও অনেক আদিম যুগের কাহিনী দেখা যাবে এই প্রিকুয়েলে।
প্রিমিয়াম ক্যাবল নেটওয়ার্ক ও টাইম ওয়ার্নারের কাছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির গুরুত্ব বলে বোঝানো কঠিন। গেম অব থ্রোনস এইচবিওর সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ। গত সিজনে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ২ কোটি ৩০ লক্ষের বেশি দর্শক ছিল এটির। এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বেশি অ্যামি অ্যাওয়ার্ড-বিজয়ী নাটক। এর ঝুলিতে বর্তমানে ৩৮টি অ্যামি অ্যাওয়ার্ড রয়েছে।
দিন দিন খরচ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও গেম অব থ্রোনস আর্থিকভাবে অনেক লাভ করেছে। বিপণনের আগে প্রতি পর্বের জন্য প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের বেশি খরচ হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী এটি বিক্রি করে এইচবিও প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।
আশা করা যাচ্ছে গেম অব থ্রোনসের মতো এর প্রিকুয়েলটিও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে। তবে ভক্তরা আপাতত প্রহর গুণছে গেম অব থ্রোনসেরই অষ্টম সিজনের জন্য।
Featured Image Source: Pinterest