এই মুহূর্তে এক উত্তাল সময় পার করছে বলিউড। জনমত এখন এই ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে। কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে, বিতর্কিত বিষয়গুলোতে মুখ খুলছেন কেবল গুটিকতক তারকা। বলিউডের মহাতারকারা এসব বিতর্ক নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করছেন না। এর কারণ কী? এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাফপোস্ট ইন্ডিয়া। এখানে তুলে ধরা হচ্ছে সেই প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ।
এ বছরের ৭ জানুয়ারি দীপিকা পাড়ুকোন হাজির হন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এর মাত্র দুদিন আগেই, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় মুখোশধারী একদল নারী ও পুরুষ- যাদের অনেকেই পরবর্তীতে চিহ্নিত হন ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডানপন্থী দলের সদস্য হিসেবে।
জেএনইউতে দীপিকা দাঁড়ান এক ক্ষত-বিক্ষত অথচ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আইশে ঘোষের পাশে। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, যার কপাল সেদিন ঢাকা ছিল সাদা রঙের ড্রেসিংয়ে। হামলার শিকার হওয়ার পর সেই কপালে মোট ১৫টি সেলাই পড়েছিল।
আর ক্যাম্পাসের বাইরে, গোটা দেশ তখন আন্দোলনে ফেটে পড়ছে। হাজার হাজার ভারতীয় রাস্তায় নেমে এসেছে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)-র বিরুদ্ধে।
সেটি ছিল খুবই শক্তিশালী একটি দৃশ্য। বড় মাপের একজন তারকা এসেছেন এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, যেটি একটি তীব্র রাজনৈতিক মুহূর্তে আক্রান্ত হয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার কর্তৃক।
কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল যেন অবশেষে ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি অবশেষে জেগে উঠবে, এবং তারা মুখ খুলবে সেসব ব্যাপারে, যা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই ফিসফাস করে আসছে- ভারতীয় জনতা পার্টি গলা টিপে মারতে চাইছে ভারতীয় গণতন্ত্রকে। কিন্তু না, সেটি বাস্তবে হয়নি।
দীপিকার কয়েকজন তথাকথিত নিরপেক্ষ সহকর্মী টুইটারে #রেসপেক্ট লিখে পোস্ট করেছে বটে, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় তারকাদের মধ্যে আর কেউই টুঁ শব্দটি করেনি। রাজকুমার রাও এবং আয়ুষ্মান খুরানা, আলিয়া ভাট এবং ভিকি কৌশাল, রনবীর সিং, রনবীর কাপুর, হৃত্বিক রোশান, বলিউডের তরুণ ও বেপরোয়া যারা, তারা সবাই হঠাৎ করেই যেন উধাও হয়ে যান। স্রেফ লোকদেখানো কিছু টুইট করা ছাড়া আর কোনোভাবেই তারা দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি। আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থনও জানাননি।
শাহরুখ, সালমান, আমির— যে খানরা একসময় বক্স অফিসে রাজত্ব করতেন, তাদের অনুপস্থিতি খুব সহজেই চোখে পড়ছিল। এমনকি অমিতাভ বচ্চনেরও, যিনি ১৯৭০ ও ৮০-র দশকের ‘অ্যাংরি ইয়ং আইকনক্লাস্ট’, এবং যিনি গত এক দশক ধরে গুজরাট ট্যুরিজমের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
এদিকে ইন্ডাস্ট্রির একদল উঁচু বর্ণের হিন্দু নর-নারী যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাথে। (হ্যালো অক্ষয় কুমার, আপনার কথা হচ্ছে!)
সেই তথাকথিত নিরপেক্ষরা এই সেপ্টেম্বরে এসেও নিজেদের নিরপেক্ষতা বজার রেখে চলেছেন। এই মুহূর্তে কারণটা রিয়া চক্রবর্তী, যিনি মাসব্যাপী গণমাধ্যমের প্রচারণার পর গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেভাবে একাট্টা হয়েছিল, তাতে এটি খুব সহজেই বোঝা যায় যে গোটা ব্যাপারটি ছিল পরিকল্পিত ও সুসংঘবদ্ধ।
রিয়ার প্রেমিক সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেন গত ১৪ জুন। সেই থেকেই বিজেপির প্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এমনভাবে বলিউডের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছে যে, প্রোডিউসার্স গিল্ড বাধ্য হয়েছে একটি বিবৃতি দিতে। তবে সেই বিবৃতিও নিছকই আত্মপক্ষ সমর্থনের তাগিদে।
গত কয়েক মাস ধরে ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। একজন সম্ভাবনাময় তরুণ অভিনেতার মর্মান্তিক মৃত্যুকে ঢাল করে কেউ কেউ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ও এর সদস্যদের মানহানির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি দৃশ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে যেন এই ইন্ডাস্ট্রিটি আউটসাইডারদের জন্য খুবই বাজে একটি জায়গা, এখানে বাইরে থেকে আসা শিল্পীদের কেবল অবজ্ঞা আর উপহাসই করা হয়, এবং এটি সন্ত্রাস ও অপরাধের আখড়া। এসব মুখরোচক সংবাদের মাধ্যমে গণমাধ্যম নিজেদের রেটিং, রিডারশিপ আর পেইজ ভিউ বাড়িয়ে চলেছে।
এদিকে বলিউডের সেলফি গ্যাং – করন জোহর, আলিয়া ভাট, ভিকি কৌশাল এবং ইন্ডাস্ট্রির আরো বেশ কয়েকজন ইনসাইডাররা – বুঝতে পেরেছেন যে নির্বাচনের আগে স্বৈরাচারী রাজনীতিবিদদের সাথে যতই ছবি তোলা হোক না কেন, ভোটের ফলাফল আসার পর তারাও আর নিরাপদ নন।
এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন- জেএনইউতে দীপিকা কিন্তু একটি কথাও বলেননি। তাকে ঘিরে যখন শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছিল, তিনি তখন নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এবং তারপর তিনি উপস্থিত ক্যামেরার সামনে কোনো কথা না বলেই ঐ স্থান ত্যাগ করেন।
তাই মুখ খোলার দায়ভারটা শেষ পর্যন্ত বর্তায় ওই পুরনো পাপীদেরই কাঁধে। বলছি স্বরা ভাস্কর, রিচি চাড্ডা, জোয়া আখতার, তাপসী পান্নু, অনুভব সিনহা, অনুরাগ কাশ্যপ, হানসাল মেহতা, আলি ফজল, কঙ্কণা সেন শর্মা, নন্দিতা দাশদের কথা। এই কাজটি তারা নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই করে আসছেন।
এই তালিকায় আরও নেয়া যায় দিয়া মির্জা, মোহাম্মদ জিশান আইয়ুব, সুশান্ত সিং, শশাঙ্ক অরোরা, সায়নী গুপ্ত এবং নির্মাতা অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব, অনিরের নাম।
‘স্টার কিড’ যারা, তাদের মধ্যে কেবল সোনম কাপুরই নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করে থাকেন। আর এজন্য তাকে সিস্টেমেটিক ট্রলের শিকারও হতে হয়।
মজার ব্যাপার হলো, উল্লিখিত শিল্পীদের মধ্যে একটি বড় অংশই কিন্তু বলিউডের সত্যিকারের আউটসাইডার। তারাই হলেন সেসব সংগ্রামী, কঠোর পরিশ্রমী শিল্পী, #জাস্টিসফরসুশান্ত এর মাধ্যমে সকলে যাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের কথা বলছে।
এই শিল্পীদের বাবা-মায়ের কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নেই, তাদের ভাইপোরা কেউ মুভি স্টুডিও চালায় না, তাদের ভাইবোনেরা স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতাও নয়। তাছাড়া এদের প্রায় কেউই ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা অভিনেতা নন, এবং তাদের সেই সক্ষমতাও নেই যে তারা আইনি লড়াই চালাতে পারবেন, বডিগার্ড রাখতে পারবেন, কিংবা শীর্ষস্থানীয় পাবলিসিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ইনস্ট্রাগ্রাম বা টুইটার ফিডের হেট কমেন্টগুলো মুছে দিতে পারবেন।
তারাই হলেন সেই শিল্পী, যারা একের পর এক হারিয়ে চলেছেন চলচ্চিত্রে নিজেদের রোল, পৃষ্ঠপোষক কিংবা চুক্তি। কারণ তাদের অপরাধ, তারা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ্যে বলছেন, অথচ তারা সংখ্যায় নিতান্তই নগণ্য। হাফপোস্ট ইন্ডিয়ার সাথে কথা বলে বেশ কয়েকজন অভিনেতাই জানিয়েছেন যে ইন্ডাস্ট্রির সকলে মিলে যদি একসাথে মুখ খুলত, অন্যায়ের প্রতিবাদ করত, তাহলে গোটা চিত্রটা একেবারে ভিন্ন হতো।
স্বরা ভাস্কর, যিনি সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনার একজন কট্টর সমালোচক, জানিয়েছেন যে নিজের সাহসী মন্তব্যের জন্য তাকে একটি স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ডের চুক্তি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তার টার্মিনেশন লেটারে বলা হয়েছে, সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নাকি তিনি ঐ ব্র্যান্ডের সম্মান নষ্ট করেছেন।
এই অভিনেতা আরো জানান, অনেকবারই নাকি তাকে কোনো রোলে বিবেচনা করার আগে তার তথাকথিত সমস্যাজনক মূল্যবোধের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
শেষ যে ছবিটি (ভিরে দি ওয়েডিং) আমি করেছি, সেটি বক্স অফিসে ১০০ কোটি আয় করেছে। কিন্তু সেই থেকে আমি আর বড় কোনো ছবিতে কাজ পাইনি। ২০১৯ সালে আমার কোনো ছবিই মুক্তি পায়নি। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোই এখন আমাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায়, কিন্তু আমি জানি যে বেশ কিছু স্টুডিও মিটিং থেকেই আমার নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেননা আমি নাকি খুব বেশি রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাই।
স্বরা বলেন, বলিউডের এই নীরবতার সংস্কৃতি অনেকটাই ভারতীয় পুরুষতান্ত্রিক পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে, যারা যেকোনো বিরোধিতা এড়িয়ে চলে নিজেদের পুরুষতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য।
আমাদের পরিবার কাঠামোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যে নীরবতাই হলো ভদ্রতা। এটি কেবল রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিশোধের ভয়েই নয়। সেটি তো অবশ্যই আছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবেও, আমাদের সংস্কৃতি হলো এড়িয়ে চলার সংস্কৃতি। এখানে কোনো বিতর্কে শামিল না হওয়াটাকে সম্মানের বিষয় বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আর কতদিন? এই মুহুর্তে আমরা অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছি। আপনিই যদি আপনার নিজের স্বার্থে উঠে না দাঁড়ান, তাহলে কে দাঁড়াবে?
বিজেপির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সূর্যপাল আমু যখন সঞ্জয়লীলা বানসালীর ‘পদ্মাবত’-এ অভিনয়ের জন্য আক্ষরিক অর্থেই দীপিকার মাথার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, তখন স্বরা কথা বলেছিলেন দীপিকার পক্ষে।
যখন আমি পদ্মাবতের ক্লাইম্যাক্স নিয়ে আমার নিজের সমস্যার কথা বলেছিলাম, অনেক অভিনেতাই আমাকে বলেছিলেন তারা আমার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত, কিন্তু আমার কথাগুলো প্রকাশ্যে বলা উচিত হয়নি। এ থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন, কেন অনেকেই কোনো একটি পক্ষে অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে চুপ থাকতে পছন্দ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন অভিনেতা বলেন, কিছু শীর্ষস্থানীয় তারকা কয়েক স্তরের নিরাপত্তার সুবিধা পেয়ে থাকেন, যেখানে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী আউটসাইডারদেরকেই বেশিরভাগ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তারপরও ওই শীর্ষস্থানীয় তারকারা মুখ খুলতে চান না।
আমি জানি বরুণ ধাওয়ান নিজে খুবই লিবারেল একটি ছেলে। সে এই বিষয়গুলো খুব ভালোভাবেই বোঝে। সে যদি এসব ব্যাপারে কোনো একটি অবস্থান নেয়, তাতে তার কী-ই বা হারাবার আছে? তোমার বাবার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আছে, তোমার ভাই একজন পরিচালক, তুমি করন জোহরের চোখের মণি। তারপরও তোমার কী এত হারানোর ভয়?
অনুরাগ কাশ্যপ অবশ্য কিছুটা ভিন্নভাবে ভাবেন। তিনি বলেন,
এই ইন্ডাস্ট্রি খুবই ভীত। এর কারণ, সরকারের বর্তমান যে অবস্থা, এবং যে আচরণ তারা বিরুদ্ধচারণকারীদের সাথে করে। আমি তো মাঝেমধ্যে ভাবি, এমনকি হলিউডের সবচেয়ে সাহসী তারকারাও মুখ খুলতেন কি না, যদি তারা ভারতে বসবাসরত ভারতীয় হতেন। বহু বছর ধরে আমাদেরকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে যেন আমরা ক্ষমতার বিরুদ্ধে কিছু না বলি। এই নিয়ে আমি প্রতিদিনই আমার বন্ধু ও পরিবারের কাছ থেকে লেকচার শুনি।
গত ছয় বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বলিউড স্টুডিওগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহীতা এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর ক্রিয়েটিভ লিডরা খুবই নির্দিষ্ট একধরনের রাজনীতির বিরোধিতা করেন। শুধু তাদের নামের পাশেই ‘পলিটিক্যাল’ খেতাব জুড়ে দেয়া হয়, যারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, কিংবা এটি বোঝাতে চায় যে দিন আসলেই খুব ‘আচ্ছে’ নয়। এদিকে যারা সবসময় প্রধানমন্ত্রীর গুণগান গাইতে থাকে, তাদেরকে খুবই নির্ভরযোগ্য তারকা বলে মনে করা হয়। (আবারো হ্যালো, অক্ষয়!)
দেশের সবচেয়ে বড় দুজন তারকা শাহরুখ খান ও আমির খান, যারা মুসলিম ধর্মাবলম্বী। ২০১৫ সালে তারা বর্ধিষ্ণু অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, যার ফলে অনেকেই তাদের বিপক্ষে চলে যায়। তাই এরপর থেকে তারা একেবারেই চুপ মেরে গেছেন।
“আমি যেসব বিষয়কে দুর্ভাগ্যজনক বলে স্বীকার করি, সেগুলো নিয়ে মন্তব্য করা ছেড়ে দিয়েছি।”
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন শাহরুখ। তার আগের বছর ডিসেম্বরেই মুক্তি পেয়েছিল তার ছবি ‘দিলওয়ালে’, যেটি নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছিল, এবং অনেকে ছবিটি বয়কটের ডাকও দিয়েছিল।
এদিকে আমির খান যখন মুখ খুলেছিলেন, তার কিছুদিনের মধ্যেই তাকে ই-কমার্স কোম্পানি স্ন্যাপডিলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের চুক্তি খোয়াতে হয়।
তবে একজন ব্যক্তি বার বার মুখ খোলার পরেও জনরোষের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। তিনি তাপসী পান্নু। অথচ বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি ডানপন্থী ট্রলের প্রতিবাদ করছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে অকপটে নিজের মনের কথা বলছেন, এমনকি মুম্বাইয়ে বিভিন্ন সিএএ/এনআরসি বিরোধী আন্দোলনেও তিনি উপস্থিত থেকেছেন।
অনেক মানুষই আমাকে বলে থাকেন যে আমি নাকি কিছু কথা প্রকাশ্যে বলার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছি। কিন্তু আমার মনে হয়, আমি যেসব বিষয়ে খুব গভীরভাবে অনুভব করি সেগুলো নিয়ে যদি মুখ না খুলি, তাহলে বিষয়টি খুব অদ্ভুত দেখাবে। বরং আমি এটি বলতে পারি যে আমি বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামত দিই এবং আমি একজন শক্ত মনের অধিকারী নারী দেখেই কিছু ব্র্যান্ড আমার কাছে এসেছে। আমি আমার এই ভাবমূর্তি নিয়ে মোটেই লজ্জিত নই। বরং আমি চাই আমার দর্শকরা আমার চিন্তাভাবনার ব্যাপারে অবগত হোক।
তবে তাপসীর মতে, তিনি যেভাবে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন, তা তাকে জনরোষের কবল থেকে অনেকটাই বাঁচিয়ে দেয়।
সম্ভবত আমার মতের বহিঃপ্রকাশ একই ধরনের মতাদর্শী অন্য অনেকের মতো চরমপন্থী ঘরানার নয়। আমি যেকোনো সমস্যা বা অপরাধকে সেই সমস্যা বা অপরাধের জায়গা থেকে দেখি। আমি পাপের বিরোধিতা করি, পাপীর নয়। এজন্যই আমার মনে হয় যে জনসাধারণ আমার বিরুদ্ধে চলে যায় না।।
তাপসীর আরো মনে হয় যেকোনো বিষয়ে মুখ খোলার দায়ভার অল্প কিছু মানুষের উপরই বর্তায় হয়তো এ কারণে যে বলিউড একটি বিশাল ইন্ডাস্ট্রি, যার সব সদস্য পৃথিবীকে একইভাবে দেখে না, এবং সেটি একটি খুব বড় সমস্যা।
একটি গোষ্ঠী হিসেবে, আমাদের যদি আরো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান থাকত, তাহলে হয়তো আমাদেরকে আজকের অবস্থায় পৌঁছাতে হতো না যখন ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে ক্রমাগত বাজে কথা হয়ে চলেছে। আমার মনে হয় না আমাদের আজকের এই জায়গায় এসে দাঁড়ানোর কথা। ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে অনেকেই লড়াই করে, কিন্তু আমরা যদি সম্মিলিতভাবে লড়াই করতাম, তাহলে আমাদের শক্তি আরো অনেক বৃদ্ধি পেত।
তাপসী বিশ্বাস করেন, সবার উচিত তাদের নিজ নিজ ক্ষোভগুলোকে পেছনে ফেলে একতাবদ্ধ হয়ে ওঠা।
মনে রাখবেন, যদি এই ইন্ডাস্ট্রিটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে শুরু করে, তাহলে অন্তর্দ্বন্দ্ব-অন্তর্কলহতেও কিন্তু আর কিছু যাবে আসবে না। একক তারকা হিসেবে কেউই টিকে থাকতে পারবে না। যদি আপনারা নির্দিষ্ট কাউকে টেনে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন, তাহলে একসময় সবাইকেই নিচে আছড়ে পড়তে হবে।
হাফপোস্ট ইন্ডিয়া বলিউডের কয়েকজন তরুণ তারকা ভিকি কৌশাল, রাজকুমার রাও, আয়ুষ্মান খুরানার কাছে বিস্তারিত মেসেজ পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিল কেন তারা এমন নির্বিকার নীরবতা পালন করে চলেছেন।
বিস্ময়কর ব্যাপার, তাদের কারো কাছ থেকেই কোনো জবাব মেলেনি।