Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যান্টি এজিং ফুড: খাবার করবে দীর্ঘজীবী!

“বয়েস আমার মুখের রেখায় শেখায় আজো ত্রিকোণমিতি,
কমতে থাকা চুলের ফাঁকে মাঝবয়সের সংস্কৃতি!
হাঁটুতে আজ টান লেগেছে, টান লেগেছে গাঁটে গাঁটে,
মধ্যবিত্ত শরীরে আজ সময় শুধু ফন্দি আঁটে!”

কবীর সুমনের গানটিতে স্পষ্ট খুব পরিচিত একটি ভয়, একটি অনিবার্য আশঙ্কা যা কোনোভাবেই এড়ানো যায় না। বয়স বাড়ছে, বাড়িয়ে দিচ্ছে মুখের বলিরেখাও। প্রতিদিন আয়নায় যে আপনাকে দেখেন, তা প্রতিদিন নতুন করেই পুরনো হচ্ছে। ত্বকের বর্ধিষ্ণু মলিনতা, ঝুলে পড়া চামড়া, দেহের আকৃতিতে ঢিলেভাব আসা, নড়নে চড়নে বাড়তে থাকা অসুবিধা- আপনাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে ক্রমশ। আপনার মনের গোপন ইচ্ছেটিও ধরা দিচ্ছে, দীর্ঘজীবী হবার, একটু দেরিতে বুড়ো হবার!

কে না দীর্ঘজীবী হতে চায়? কিছু দার্শনিক “হ্যাঁ”/ “না”/ “হয়তো বা”- এসব উত্তরের ভিড়ে সবচেয়ে বেশি পাওয়া উত্তরটি হবে ইতিবাচক। দীর্ঘজীবন মানেই সুস্থতার পাল্লাটা আরেকটু বেশি ধরে রাখা। তবে এজন্য খেয়াল রাখতে হবে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের এবং সেইসাথে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানেরও।

বিভিন্ন কসমেটিক কোম্পানি কিংবা অন্যান্য নানা বিজ্ঞাপন আপনাকে প্রতিনিয়ত প্রতিজ্ঞা করে দিচ্ছে বয়স কমিয়ে দেবার, সর্বস্ব তারুণ্যের জোয়ার ধরে রাখার বিভিন্ন স্কিমে আপনার চোখ চকচকে করে তুলছে! কিন্তু এসবে বোধহয় শুধু কিছু মিথ্যে আশ্বাসেই ভারি হচ্ছে আপনার জীবনযাত্রা, এর চেয়ে অনেক সহজেই আপনি নিজের সুস্থতা ধরে রাখতে পারেন নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে। সুস্থ শরীরেই যথাযথ সতেজতা ও প্রত্যাশিত তারুণ্য পাবেন।

তাই সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় এবং দীর্ঘজীবনে সাহায্যকারী কিছু পরিচিত খাবারের সন্ধান নিয়ে হাজির হয়েছি আজ।

গাজর

গাজরের হালুয়া কার না পছন্দ! Source: youtube

গাজর সন্দেহাতীতভাবেই সুস্বাদু একটি খাবার এবং এ থেকে তৈরি হওয়া গাজরের হালুয়া অনেকেরই প্রিয় একটি ডেজার্ট। স্বাস্থ্যসচেতন লোকেদের ডায়েট চার্টে গাজরের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। কিন্তু আপনি জানেন কি, গাজর খাবার ফলে আপনার জীবনে যুক্ত হতে আরো বেশি কিছু সময়? গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, গাজরে থাকা ক্যারোটিনয়েড (যা কিনা এর কমলা রংয়ের জন্য দায়ী) অ্যান্টি-এজিং একটি পদার্থ। শুধু তা-ই নয়, গাজর খাবার ফলে চেহারাও হয়ে ওঠে আরেকটু আকর্ষণীয়!

শামুক

হ্যাঁ, ঠিক, শামুক! যদিও কিছু বিশেষায়িত রেস্তোরাঁ ছাড়া সার্বজনীনভাবে আমাদের দেশে এটি খাওয়ার প্রচলন হয়নি, তবু শামুক এই অ্যান্টি-এজিং খাবারের তালিকায় অন্যতম একটি উপাদান। নাইজেরিয়ান গবেষকদের মতে, শামুক আয়রনের অন্যতম সুস্বাদু ও প্রাকৃতিক একটি উৎস। এতে বিদ্যমান ছোট ছোট গ্যাস্ট্রোপডে থাকে প্রায় ৪ মিলিগ্রাম আয়রন, যা রেড মিটের চেয়েও বেশি। শামুক অনেকাংশেই অ্যানিমিয়া দূর করে এবং জীবনসীমা বাড়াতে সাহায্য করে।

নারকেল

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারকেলে প্রাপ্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ডিএনএকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এবং মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে কিছুটা ধীরগতির করে দেয়। এই পরীক্ষাটি ইঁদুর দিয়ে করা হয়েছিলো। কিন্তু গবেষকেরা বলেন যে মানুষের ক্ষেত্রেও নারকেল খাওয়ার প্রভাব এভাবেই লক্ষণীয় হবে।

ডালিম

ডালিমের রসালো লাল দানাগুলোতে অমরত্বের না হলেও জমা রয়েছে দীর্ঘজীবীতার সূত্র। একটি নতুন ফ্রেঞ্চ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জেনেছেন, ডালিমে পাওয়া ইউরোথিলিন পাকস্থলীতে গিয়ে মাইক্রোবস দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে পেশীকোষের বয়স বাড়া রোধ করে। দীর্ঘজীবীতা বাড়াতে এমন সুস্বাদু পথ সত্যিই সৌভাগ্যজনক!

ডালিমের রসালো দানায় লুকানো আছে বয়সের রহস্য! source: jagonews24

টমেটো

টমেটোর স্বাদে যেকোনো খাবারই পায় অন্য এক মাত্রা; Source: Rodalesorganiclife.com

কাঁচা কিংবা রন্ধনকৃত, যেভাবেই হোক টমেটো খান নিয়মিত। কারণ অন্য যেকোনো ফল বা সবজির চাইতে টমেটোতে পাওয়া যায় অনেক বেশি পরিমাণে ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান লাইকোপেন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিজনিত বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে লাইকোপেন। এছাড়াও শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উৎপন্নকারী প্রক্রিয়ারও গতি বাড়িয়ে দেয় টমেটো গ্রহণ। অলিভ ওয়েলের মতো চর্বিজাতীয় কিছুর সাথে টমেটো খেলে আরেকটু বেশি কাজে আসবে, কারণ লাইকোপেন চর্বিতে দ্রবণীয় উপাদান। আমাদের শরীর এমনি টমেটোর চাইতে টমেটো পেস্ট থেকে বেশি সহজে লাইকোপেন গ্রহণ করতে পারে। কেচাপ কিংবা সস খেলে অর্গানিক উপায়ে তৈরিটি খাওয়াই ভালো। এতে ৫৭% পর্যন্ত লাইকোপেন পাওয়া গেছে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি কেচাপ কিংবা সসের চাইতে।

বাঁধাকপি

শীতকালে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় থাকা এই সবজিটিও রয়েছে এই তালিকায়। বেশি সেদ্ধ না করে, কম আঁচে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে এবং কাঁচাও খাওয়া যায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, প্রদাহরোধকারী খাদ্য উপাদানে ভরপুর বাঁধাকপি। তাই স্বাস্থ্য ধরে রাখতে বেশ তাৎপর্য রাখতে পারে।

কফির চুমুকও বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার তারুণ্য; Source: banglanews24

কফি

কী, একটু অবাক হলেন? ক্যাফেইনের অন্যতম এই উৎসের নেতিবাচকতাই হয়তো দেখে এসেছেন বেশি। অতিরিক্ত চিনি, কৃত্রিম মিষ্টিবর্ধক যোগ করা বা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ এর নেতিবাচক প্রভাবই বেশি দেখাবে। কিন্তু পরিমিত পরিমাণে কফি গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস, পার্কিনসন’স ডিজিজ, ডিমেনশিয়া, স্ট্রোক এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এছাড়া কফি ডাই-ইউরেটিক পদার্থ হওয়ায় বিপাক প্রক্রিয়ার গতিবৃদ্ধিও সম্ভব কফিপানের মাধ্যমে।

বাদাম

বাদামের বিভিন্নতার স্বাদে আছে আরো কিছু উপকারী দিক; banglamoon.blogspot.com

পিস্টাশিও, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি সব বাদামই বহন করে উচ্চ মাত্রায় স্বাস্থ্যকর চর্বি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-‘ই’ এবং আমিষ। রক্তচাপ, হাড়ের দৃঢ়তা, টিস্যুর ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি এবং হরমোনাল ভারসাম্য রক্ষায় তাই খাদ্যতালিকায় বাদাম গ্রহণের জুড়ি নেই! সুস্বাদু ও ঝামেলামুক্ত এই খাদ্য উপাদানটি ব্যবহৃত হয় খাদ্যের আনুষঙ্গিক উপাদানে, এ থেকে তৈরি মাখন, তেল কিংবা আইসক্রিম অনেকেরই প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে। একমুঠো বাদাম আপনাকে খুব সহজেই ধরে রাখতে সাহায্য করবে আপনার তারুণ্য!

আদা

হাড়ের সন্ধিস্থানে ব্যথা কিংবা চলাফেরা করতে জড়তা- খুবই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বয়স বাড়ার। আদা এই সমস্যাটিরই সবচেয়ে বেশি সমাধান দিয়ে থাকে। আদায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো ব্যথা দূর করে এবং এ সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী অসুখের ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

পেঁয়াজ-রসুন

অ্যালিয়াম গোত্রের এই সদস্যরা বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার জীবনের কিছু দিন! source: thetruthaboutcancer.com

এগুলোতে আছে অ্যান্টিডায়াবেটিক ও অ্যান্টিক্যান্সার উপাদান। গ্যাস্ট্রিক ও প্রোস্টেট ক্যান্সার রোধেও অ্যালিয়াম গোত্রের এই সদস্যেরা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অ্যাঞ্জিওজেনেসিস রোধ, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রহিত করা, কার্সিনোজেন নষ্ট করা ইত্যাদি ভূমিকায়ও দেখা যায় এদের। রসুন থেকে প্রাপ্ত অ্যালিসিন নামক উপাদানটি আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয়তর করে, দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে, প্রদাহ রোধ করে, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল পদার্থ হিসেবেও ভূমিকা রাখে এই অ্যালিসিন। তাই সবকিছু মিলিয়ে অ্যালিসিনের প্রবল উপস্থিতির কারণেই রসুন যুক্ত হওয়া উচিত আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। সাধারণত বিভিন্ন তরকারিতে আনুষঙ্গিক উপাদান হিসেবে এদের নিয়মিত ব্যবহার হয়ে থাকে ভারতীয় উপমহাদেশে।

মাশরুম

রান্না করা মাশরুম, স্বাদে ও সুস্থতায়; source: finecooking.com

খাদ্যতালিকায় মাশরুমের নিয়মিত উপস্থিতি কমিয়ে দেবে ক্যান্সারের আশঙ্কা। অনিয়ন্ত্রিত ক্যান্সার কোষ বিভাজনের হারও কমে যায় মাশরুম গ্রহণে। বিশেষত সাদা ও পোর্টবেলো মাশরুম গ্রহণে হ্রাস পাবে স্তন ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা। কারণ এতে আছে এস্ট্রোজেনের উৎপাদন হ্রাসকারী কিছু উপাদান। মাশরুম প্রদাহ রোধ করে, বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। মাশরুম খেলে ডিএনএ ক্ষয় হ্রাস পায়। তবে মাশরুম সবসময় রান্না করে খাওয়া উচিত। কাঁচা মাশরুমে অ্যাগারিটিন নামক কার্সিনোজেন রয়েছে যা রান্না করলে দূর হয়।  সাদা মাশরুমের সাথে সাথে শিট্যাক, ওয়েস্টার, মাইটেক, রেইশি- এসব মাশরুমও খাওয়া চলে।

ফিচার ইমেজ- healthjade.com

Related Articles