ডিমের বৈচিত্র্যময় সব রেসিপি 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রোজ সেই একই রকম ডিম সিদ্ধ, পোচ আর ভাজা আর কত? সকালে অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙা, হাত- মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসা, তারপর যার যার কাজে দৌড়- ঘরে ঘরে এভাবেই হয় দিনের শুরু। সকাল মানেই নাস্তার টেবিল, আর নাস্তার টেবিল মানেই রুটি, পরোটা বা খিচুড়ির সাথে ডিম। কারো জন্য ডিম সিদ্ধ, কারো জন্য পোচ, আবার কারো জন্য ভাজা। গৎবাঁধা জীবনের মতো সকালের নাস্তাটাও যেন আমাদের হয়ে গেছে গৎবাঁধা। বিশেষ করে বাঙালিদের সকালের নাস্তার টেবিলে বৈচিত্র্য দিন দিন যেন আরো কমে আসছে- তা সে স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য হোক বা ব্যস্ততার জন্য।

ডিমও তাই এই তিন পদের মধ্যেই ধরাবাঁধা থাকে। আবার ডিমকে বাদও তো দেওয়া যায় না, বিশেষ করে পরিবারের বাচ্চা আর পরিশ্রমী সদস্যদের কথা চিন্তা করে। কিন্তু এই ডিমকেই যদি একটু অন্যরকম করে তোলা যায় তবে কেমন হয় ব্যাপারটা? খাওয়ার রুচি তো বাড়বেই, নাস্তার টেবিলও সবার কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তাই আজ পাঠকদের জন্য আমরা নিয়ে এলাম সকালের নাস্তায় অন্যরকম কয়েকটা ডিমের রেসিপি।

ডিম- মুরগীর বিস্কুট স্যান্ডউইচ

উপকরণ

বিস্কুটের জন্য: চার টেবিল চামচ ছোট ছোট টুকরো করে কাটা মাখন, বিস্কুটের ছাঁচে মাখানোর জন্য আলাদা করে রাখা এক টেবিল চামচ মাখন, আড়াই কাপ ময়দা, চার টেবিল চামচ বেকিং পাউডার, এক চা চামচ লবণ, এক চা চামচ মাখনতোলা দুধ।

স্যান্ডউইচের জন্য: ১২টি বিস্কুট, ১২টি পাতলা করে কাটা পনিরের টুকরা, ৬টি সিদ্ধ ডিমের গোল টুকরা, দুই কাপ রান্না করা হাড়ছাড়া মুরগীর মাংস কুচি।

প্রণালি: প্রথমে ওভেনকে ৪৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইটে উত্তপ্ত করে নিতে হবে। একটা বড় বাটিতে ময়দা, বেকিং পাউডার ও লবণ একসাথে চেলে নিয়ে মাখনের টুকরোগুলো দিয়ে মাখাতে হবে যেন মাখন গলে যায়। এখন এতে মাখন তোলা দুধটুকু দিয়ে আবার মেশাতে হবে। বিস্কুটের মসৃণ মিশ্রণ না হওয়া পর্যন্ত মেশাতে হবে। চাইলে এতে সামান্য চিনিও যোগ করা যায়। বিস্কুটের ছাঁচে মাখনের প্রলেপ লাগিয়ে তাতে এই মিশ্রণ ঢেলে ১৫ মিনিট ওভেনে বেক করতে হবে। বাদামী রঙ ধারণ করে বিস্কুট সম্পূর্ণ বেক হয়ে যাবে। বিস্কুটের ছাঁচ চারকোণা এবং নিচের তল সমতল হলে ভালো হয়।

মজাদার ডিম- মুরগীর বিস্কুট স্যান্ডউইচ; source: foodiecrush.com

স্যান্ডউইচ তৈরি: একটি বিস্কুটের সমতল পৃষ্ঠে এক টুকরো পনির, স্বাদমতো মুরগীর মাংস ও সিদ্ধ ডিমের কয়েকটা গোল টুকরা রাখতে হবে। বার্গারের পাউরুটির মতো অন্য একটি বিস্কুট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যদি বিস্কুট আগের তৈরী বা ঠান্ডা হয় এবং পনির গলতে শুরু না করে তাহলে ওভেনে ৩০ সেকেন্ড গরম করে নিলেই হবে। ব্যস, তৈরী হয়ে গেলো একদম অন্যরকম আর অত্যন্ত মজাদার ডিম- মুরগীর বিস্কুট স্যান্ডউইচ। বাচ্চাদের জন্য কিন্তু দারুণ জমবে এটি।

আদায় ঘাঁটা ডিম

উপকরণ

(দুই থেকে তিনজনের জন্য) চারটি ডিম, দুটি কাঁচা মরিচ কুচি, দেড় চা চামচ আদা কুচি, মাঝারি একটি পেঁয়াজ কুচি, ছোট একটি টমেটো কুচি, আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া, এক চামচ শুকনা লঙ্কা গুঁড়ো, এক চা চামচ জিরা ও ধনে গুঁড়ো, এক চা চামচ গরম মসলা গুঁড়ো, তেল ও লবণ পরিমাণমতো।

টোস্ট বা রুটির সাথে খাওয়া যায় ডিমের এই পদ; source: youtube.com

প্রণালী: কড়াইতে অল্প পরিমাণে তেল গরম করে নিয়ে এতে আদা, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে নাড়তে হবে। রঙ একটু পরিবর্তন হতে শুরু করলে এতে টমেটো কুচি দিয়ে দুই মিনিট নাড়ার পর বাকি মসলাগুলো দিয়ে দিতে হবে। এর পরপরই ডিম দিয়ে তা একটু শক্ত হতে শুরু করলে নুডুলসের ডিমের মতো একে ঝুরি বানিয়ে ফেলতে হবে। এখন চুলা থেকে নামিয়ে পটেটো ম্যাশার বা শিল দিয়ে একে ওপরাপর ভর্তা করে নিলেই হয়ে যাবে আদায় ডিমের ঘাঁটা। চাইলে আরেকটু চুলায় নেড়ে নিতে পারেন। আদার সুন্দর ঘ্রাণে পাউরুটির টোস্ট, রুটি বা পরোটার সাথে খেতে কিন্তু দারুণ লাগবে।

ডিম-সবজির ওমলেট

উপকরণ

চারটি ডিম, মৌসুমি সবজি (ইচ্ছামতো), ১/৪ কাপ দুধ, পরিমাণমতো তেল, স্বাদমতো লবণ ও মরিচ।

প্রণালি: প্রথমে সব সবজি ছোট করে কেটে কড়াইতে তেল দিয়ে লবণ ও মরিচ দিয়ে প্রায় সিদ্ধ করে নিতে হবে। অন্য একটা বাটিতে ডিম আর দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে ফ্রাইপ্যানে সামান্য তেল ছিটিয়ে দিয়ে তা গরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবার ডিমের মিশ্রণ তাতে ঢেলে ছড়িয়ে দিতে হবে। ওপরে স্বাদমতো লবণ ও মরিচগুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়ে ডিমের কাঁচাভাবটা যাওয়া পর্যন্ত অল্প আঁচে অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু লালচে হতে দেওয়া যাবে না। এবার ডিমের ওপর অংশ মাঝ বরাবর ভাগ করে একদিকে পনির কুচি ও সেদ্ধ সবজিগুলো দিয়ে অপর অংশ সাবধানে ভাঁজ করে নিয়ে এসে সবজি ও পনির ঢেকে দিতে হবে। সতর্কতার সাথে উল্টে দিতে পারলে ভালো হয়। পনির গলতে শুরু করা মাত্রই নামিয়ে ফেলুন।

অত্যন্ত সস্বাস্থ্যকর ডিম-সবজি ওমলেট; source: tellwut.com

রুটি বা পরোটা ছাড়াও পরিবেশন করা যায় মজাদার ও স্বাস্থ্যকর এই ওমলেট। সবজি ও ডিমের মিশ্রণে তৈরী দিন শুরু করার জন্য নি:সন্দেহে অত্যন্ত পুষ্টিকর ও কম তেলে প্রস্তুত খাবার এটা। হাতে যদি কোনদিন সময় না থাকে আর মনও যদি একটু আলাদা কিছু খেতে চায়, তখনকার জন্য ঝটপট কিছু নেই? কিংবা বাচ্চাটাকে টেবিলে হঠাৎ অবাক করে দিতে ইচ্ছা করলে? তাহলে শুনি ডিমের মেঘের কথা।

ডিমের মেঘ

সাধারণ ডিম পোচটাই যদি নিমেষেই একদম অসাধারণ হয়ে ওঠে অবাক হবেন না তো? আর সময় ও শ্রম কোনোটাই নেই এতে। নেই উপকরণের সমাহারও।

শুধু দুটি ডিম, এক চিমটি লবণ আর এক টেবিল চামচ কুচানো পনিরই হয়ে উঠবে ডিমের মেঘ।

প্রণালি: প্রথমে দুটি ডিমের কুসুম সাবধানে আলাদা করে নিতে হবে এবং ওভেন ৪৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইটে প্রি-হিট করে নিতে হবে। রোস্ট প্লেটে বেকিং পেপার পেতে নিতে হবে। এবার ডিমের সাদা অংশ এক চিমটি লবণসহ শুকনো কোনো বাটিতে নিয়ে আস্তে আস্তে মেশাতে হবে। ধীরে ধীরে মেশানোর গতি বাড়িয়ে দ্রুত করতে হবে, এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক বিটার বেশ ভালো কাজ করবে। মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে এতে অল্প অল্প করে কুচানো মিহি পনির যোগ করে আবার মেশাতে হবে। বেকিং পেপারের ওপর ঘন সাদা মিশ্রণটি দুটি আলাদা মেঘের আকৃতিতে সাজিয়ে ওভেনে তিন মিনিট বেক করে নিয়ে প্রত্যেকটি মেঘের মাঝে একটা করে কুসুম রেখে আবার ওভেনে তিন মিনিট বেক করলেই হয়ে গেল অবাক করা ডিমের মেঘ বা মেঘের ডিম। সকালের নাস্তার প্লেটে ডিমের এই পদ মন ভরিয়ে দেবে সহজেই।

ডিমের মেঘ বা মেঘের ডিম; source: mirrors.co.uk

নাস্তার টেবিলে স্বাদে- গন্ধে অন্যরকম ডিমের মজাদার পদগুলোর মতো আপনার সারাদিনও যাক দারুণ অন্যরকম আর প্রাণবন্ত।

ফিচার ইমেজ: alwayseatdessert.com

Related Articles

Exit mobile version