Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের অদ্ভুত ৫টি খাবার প্রতিযোগিতা

মজার মজার খাবার খেতে কে না ভালোবাসে! আর সেই খাবার খেয়ে যদি বাড়তি কোনো পুরষ্কার পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা এক বসাতেই কয়েক প্লেট খাবার সাবাড় করে দেয়। এরকম খাদক বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা হয়তো নানা সময় নানা জিনিস খেয়েছি। ঠিক এমনই বহু খাবার প্রতিযোগিতা প্রচলিত রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। এসব প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর বহু মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় নানা অদ্ভুত খাবার প্রতিযোগিতা; Source: nydailynews.com

তবে খাবার প্রতিযোগিতায় যে সবসময় ভালো ভালো খাবার খেতে দেওয়া হয়, তা কিন্তু নয়। বিশ্বজুড়ে এমন অনেক অদ্ভুত খাবার প্রতিযোগিতা আছে, যাতে নানারকম উদ্ভট খাবার খেতে দেওয়া হয়। এসব প্রতিযোগিতার পুরষ্কার হিসাবেও থাকে নানারকম অদ্ভুত জিনিস। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হলে জীবনের বাজি রেখে আপনাকে খেতে বসতে হতে পারে। কারণ এসব উদ্ভট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের প্রাণ হারিয়েছেন। চলুন আজকে আমরা জেনে নিই বিশ্ব জুড়ে প্রচলিত এমনই অদ্ভুত ৫টি খাবার প্রতিযোগিতা সম্পর্কে।

রসুন

মশলা হিসাবে রসুন অনেক জনপ্রিয়। এর রয়েছে নানা রকম ঔষধি গুণ। কেউ কেউ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক কোয়া রসুন কাঁচাই খেয়ে নেন। তবে আপনাকে যদি এক বাটি কাঁচা রসুনের কোয়া দিয়ে বলা হয় ১ মিনিটের মধ্যে এগুলো শেষ করতে হবে। আপনি কি পারবেন শেষ করতে?

এক মিনিটের মধ্যে এক বাটি কাঁচা রসুন, পারবেন খেতে? Source: medicalnewstoday.com

হ্যাঁ, এমনই কাঁচা রসুন খাবার প্রতিযোগিতা হয় ইংল্যান্ডের ডরসেটে অবস্থিত চিডিওক নামের এক ছোট্ট গ্রামে। এই গ্রামে রয়েছে একটি রসুনের খামার। এখানেই প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ব রসুন খাওয়ার প্রতিযোগী’। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে এক মিনিটের মধ্যে যতগুলো সম্ভব কাঁচা রসুনের কোয়া চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে হয়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো রসুনের কোয়া না গিলে চিবিয়ে খেতে হবে যাতে এর ঝাঁঝালো স্বাদ সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসে। তবে কাঁচা রসুন খাওয়ার সময় প্রতিযোগীরা পানি পান করতে পারবেন। এর আগে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতাগুলোতে রসুন খাওয়ার জন্য ৫ মিনিট সময় দেওয়া হতো। পরবর্তীতে সেটিকে কমিয়ে ১ মিনিটে নিয়ে আসা হয়।

এক মিনিটে ৩৩ টি রসুনের কোয়া খেয়ে ফেলেছেন গ্রীনম্যান; Source: mirror.co.uk

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব রসুন খাওয়ার প্রতিযোগিতায় ডেভিড গ্রীনম্যান ১ মিনিটে ৩৩টি রসুনের কোয়া খেয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। এর আগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় অলিভার ফার্মার নামের একজন ৫ মিনিটে ৪৯টি রসুনের কোয়া খেয়ে জিতে নেন ১০০ পাউন্ড। তবে যতই পুরষ্কার জেতেন না কেন, এই প্রতিযোগিতার পর তার শরীর থেকে ৩/৪ দিন ধরে শুধু রসুনের গন্ধই পাওয়া যেত, যা দূর করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো তাকে।

বিছুটি

ছোটবেলায় অনেকেই আমরা দুষ্টুমি করে বন্ধুর গায়ে বিছুটি পাতা ঘষে দিয়েছি। বিছুটি গাছ হলো একধরনের খসখসে পাতাযুক্ত উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদের পাতায় প্রচুর ‘হিস্টামিন’ নামক পদার্থ থাকে যা আমাদের চামড়ায় লাগলে সেখানে প্রচুর ব্যথা ও চুলকানির অনুভূতি হয়। ফলে সবাই চেষ্টা করে এই গাছ এড়িয়ে চলতে। তবে সবাই এড়িয়ে চললেও একদল মানুষ এই পাতা খেয়ে জিতে নেওয়ার চেষ্টা করেন পুরষ্কার। হ্যাঁ, প্রতি বছর এই বিছুটি পাতা খাওয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডের ডরসেটে।

যে পাতা গায়ে লাগলেই চুলকানো শুরু হয়, সে পাতাই খেতে হবে এখানে; Source: theherbalacademy.com

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের সামনে রাখা হয় ২ ফুট লম্বা বিছুটি গাছের এক একটি ডাল। প্রতিটি প্রতিযোগীকে এই গাছের ডাল থেকে মুখ দিয়ে প্রত্যেকটি পাতা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে সম্পূর্ণ ডালটি পরিষ্কার করে খেতে হয়। আর এই বিছুটি পাতার মজা ভালোভাবে বোঝানোর জন্য তাদেরকে দেওয়া হয় ১ ঘন্টা সময়। এই এক ঘন্টায় যে যত বেশি বিছুটি পাতা খেতে পারে, তার গলাতেই যায় বিজয়ীর মালা।

১ ঘন্টায় যে সবচেয়ে বেশি বিছুটি পাতা খাবে, সে হবে বিজয়ী; Source: bridportnews.co.uk

২০১৬ সালে যিনি বিজয়ী হন তিনি ২ ফুট করে মোট ৮৬ ফুট বিছুটি পাতা খেয়ে সাবাড় করেছিলেন। জিতে নিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নের শিরোপা। তার মতে, “আপনি যতটা ভাবছেন, ঠিক ততটা বেশি ব্যথা লাগে না এটা খেতে। শুধু মুখের মধ্যে একটু শিরশির করে, এই যা!”

তেলাপোকা

তেলাপোকা অনেকের কাছেই ভয়ের একটি জিনিস। তেলাপোকা উড়ে এসে গায়ে বসলেই অনেকে আবার দুই হাত লাফিয়ে ওঠেন। সেই তেলাপোকা যদি আপনাকে খেতে বলা হয়, তা-ও আবার জ্বলজ্যান্ত কচকচ করে চিবিয়ে, তাহলে কী করবেন আপনি? হ্যাঁ, দুঃস্বপ্নেও আপনি যা ভাবেন না, সেই তেলাপোকা খাওয়ার প্রতিযোগিতাও বিশ্বে অনুষ্ঠিত হয়।

জলজ্যান্ত তেলাপোকা খাওয়ারও প্রতিযোগিতা হয় বিশ্বে; Source: tqn.com

ফ্লোরিডার এক পোষা প্রাণীর দোকানের দোকানদার আয়োজন করেন এমনই এক তেলাপোকা খাওয়ার প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পাবেন একটি মূল্যবান পোষা অজগর! কী? ভয় পেয়ে গেলেন? আপনি ভয় পেলেও বহু প্রতিযোগীই অংশ নেন এতে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী এক প্রতিযোগী প্রায় ৬০ গ্রাম কেঁচো জাতীয় পোকার লার্ভা, ৩৫টি বড়সড় কেঁচো ও এক বালতি জ্যান্ত তেলাপোকা খেয়ে বিজয়ী হন। কিন্তু বিধিবাম! জেতার ঠিক কয়েক মিনিট পরেই দোকানের বাইরে অজ্ঞান হয়ে উল্টে পড়েন এডওয়ার্ড আর্কবল্ড নামের এই ব্যক্তি এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

তেলাপোকা খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল প্রতিযোগিতার বিজয়ীয়; Source: youtube.com

মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে প্রথমে অনেকে ভাবেছিলো হয়তো পোকার প্রতি অ্যালার্জির কারণের তার এই করুণ পরিণতি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে লাশের ময়না তদন্তে জানা যায়, তিনি দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। আসলে প্রতিযোগিতায় খাওয়ার সময় ভদ্রলোক তেলাপোকাগুলোকে ভালোভাবে না চিবিয়ে অতি দ্রুত গিলে ফেলেছিলেন। ফলে জ্যান্ত থেকে গিয়েছিল অনেক তেলাপোকাই। পরে এই জ্যান্ত তেলাপোকাগুলো উপরের দিকে উঠে আসার চেষ্টা করতেই শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আর্কবল্ড ছাড়া আর কেউ অবশ্য এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কোনো শারীরিক সমস্যায় পড়েননি।

মরিচ

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা মরিচ খেতে ভালোবাসেন। ঝাল ঝাল ফুচকা কিংবা চোখের জল নাকের জল এক করা নাগা বার্গার, এসব এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে। এই ঝালপ্রেমীদের জন্যই বিশ্বে অনুষ্ঠিত হয় বহু মরিচ খাওয়ার প্রতিযোগিতা। কে কার চেয়ে বেশি ঝালযুক্ত মরিচ খেতে পারে, তা-ই দেখা হয় এসব প্রতিযোগিতায়।

বিশ্বের অন্যতম ঝাল মরিচ ‘ঘোস্ট পেপার’; Source: pinterest.com

ঝাল পরিমাপের এককের নাম হলো স্কোভিল। একটি মরিচ ঠিক কী পরিমাণ ঝাল হবে, তা এই স্কোভিল ইউনিট দিয়ে বোঝা যায়। যেখানে ‘সুইট পিপার’ এ স্কোভিলের পরিমাণ ০, সেখানে একটি জালাপিনো মরিচে থাকে প্রায় ৫,০০০ ইউনিট স্কোভিল! তেমনি বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচটিতে স্কোভিলের পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন ইউনিট।

চীনের একটি ঝাল খাওয়ার প্রতিযোগিতা; Source: facebook.com

২০১৬ সালে একটি মেডিকেল জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে এক ব্যক্তির কথা বলা হয়, যিনি একটি প্রতিযোগিতায় বিশ্বের অন্যতম ঝাল মরিচ ‘ঘোস্ট পিপার’ খেয়েছিলেন। ঘোস্ট পিপারে স্কোভিলের পরিমাণ ১ মিলিয়নেরও বেশি! এই মরিচ খাওয়ার পর তিনি ক্রমাগত বমি করা শুরু করেন এবং একসময় তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখতে পান অতিরিক্ত বমি করার ফলে তার অন্ননালীতে ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। এই ছিদ্রের ফলে মারাও যেতে পারতেন তিনি। তবে সে যাত্রায় ভাগ্যগুণে বেঁচে যান সেই ব্যক্তি।

পানি

অনেকেই ভাবতে পারেন পানি পান করা এ আর এমন কি কঠিন কাজ! এ তো পানির মতোই সহজ। কিন্তু এক নাগাড়ে কয়েক লিটার পানি পান করতে গেলে বিপদে পড়তে হতে পারে আপনাকে।

অতিরিক্ত পানি পান হতে পারে মৃত্যু কারণও; Source: allure.com

হ্যাঁ, ২০০৭ সালে এক রেডিও স্টেশন এমনই এক পানি পান করার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে দেওয়া হবে একটি ‘নিন্টেন্ডো উই (Nintendo Wii)’ ভিডিও গেমিং কনসোল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর ৮ আউন্স (প্রায় ১ কাপ) পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ যদি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে টয়লেটে যেতে চায়, সে হেরে যাবে। প্রতিযোগিতা শুরু হলে বড় বড় পানির বোতল দেওয়া হয় প্রতিযোগীদের। জেনিফার স্ট্রেঞ্জ নামের এক প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। কিন্তু পানি পান করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মাথাব্যথা শুরু হয় এবং পরবর্তীতে বাসায় ফিরে ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের’ ফলে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশন’ বা ‘হাইপোনাট্রেমিয়া’ হলো এমন একটি অবস্থা যখন অতিরিক্ত পানি পান করার ফলে শরীরের লবণের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে শুরু হয় মাথাব্যথা ও বমিবমি ভাব। এ সময় মস্তিষ্ক ফুলে যায় ও ফুসফুসে তরল জমে। মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় আক্রান্ত ব্যক্তি।

পানি পান করার প্রতিযোগিতা কেড়ে নিয়েছিলো বিজয়ীর প্রাণ; Source: flicker.com

প্রতিযোগিতায় সিলভার স্ট্রেঞ্জ ৭.৬ লিটার (২ গ্যালন) পানি পান করেছিলেন। অন্যান্য প্রতিযোগীরা জানান, তিনি এত বেশি পানি পান করেছিলেন যে তার পেট প্রচন্ড ফুলে গিয়েছিলো। স্ট্রেঞ্জের স্বামী পরবর্তীতে আয়োজকদের বিরুদ্ধে মামলা করে ১৬ মিলিয়ন ডলার জিতে নেন। তবে এক্ষেত্রে এত টাকা পেলেও তিনি হারিয়ে ফেলেন তার প্রিয় স্ত্রীকে।

ফিচার ইমেজ – static9.net.au

Related Articles