কুরবানির ঈদ চলে গেল বেশ অনেকদিন হয়ে গেলো। তবু অনেকেরই ফ্রিজে থেকে গেছে ঈদের মাংস। মাংসের ঝোল-ঝাল তো অনেক খাওয়া হলো, নিহারি আর হাড়- হাড্ডিও তো কম খাওয়া হলো না। কিন্তু এই একই রকম মাংসের রান্না আর কতই বা খাওয়া যায়? অনেক সময় তো এরকম হয় যে, কুরবানির কয়েকদিন টানা মাংস খাওয়ার পর অনেকে ইচ্ছা করেই সবজি আর মাছের দিকে ঝুঁকে স্বাদের পরিবর্তনের জন্য। আবার স্বাদে একঘেয়েমি ধরে গেলে অনেকে কুরবানির মাংস রেখে দেয় মেহমান আসলে রান্নার জন্য। এমন সময়ে তরকারির পরিবর্তে মাংসের অনন্য সব নাস্তা আর হালকা খাবার কিন্তু দারুণ সমাধান হয়ে উঠতে পারে গৃহিণীদের, আবার স্বাদেও আসবে নতুনত্ব। সেজন্যই আজ আপনাদের জন্য থাকছে গরুর মাংসের সুস্বাদু কয়েকটি নাস্তার অন্যরকম কিছু রেসিপি।
মাংসের ঝাল প্যানকেক
উপকরণ
- এক কাপ সিদ্ধ আলু
- আধা কাপ সিদ্ধ করে ঝুরি করে নেওয়া মাংস
- একটি ডিম
- আধা কাপ ময়দা
- তিনটি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ কুঁচি
- চার/পাঁচটি কাঁচা মরিচ কুঁচি
- ধনে পাতা কুঁচি এক টেবিল চামচ
- এক চা চামচ আদা বাটা
- আধা চা চামচ জিরা বাটা
- স্বাদমতো লবণ
- সামান্য টেস্টিং সল্ট
- এক টেবিল চামচ সয়াসস
- পরিমাণমতো তেল বা ঘি
- এক কাপ পানি।
প্রণালি
সিদ্ধ আলু চটকে ভালোভাবে ভর্তা করে নিয়ে তার সাথে ডিম গুলিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন আলু মসৃণভাবে ভর্তা হয়। এবার তেল বা ঘি বাদে বাকি সমস্ত উপকরণ একে একে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণটি তৈরির সময় পানি আস্তে আস্তে যোগ করতে ও মাখাতে হবে।
এই মিশ্রণ যেন ঘন হয় সেটা খেয়াল রেখেই পানি মেশাতে হবে। আবার একবারে বেশি পানি দিলেও কিন্তু মিশ্রণটি ভালো হবে না। এবার একটি ননস্টিক ফ্রাইপ্যানে অল্প পরিমাণে তেল বা ঘি নিয়ে গরম করে তাতে পছন্দ মতো আকারের প্যানকেকের জন্য প্রস্তুতকৃত মিশ্রণটি ঢালতে হবে। তবে মাঝারি আকৃতির প্যানকেক তৈরি করলেই ভালো হয়। মাঝারি আঁচে দু’পাশ লালচে করে ভেজে তুললেই প্রস্তুত মাংসের ঝালের প্যানকেক।
আলু-কিমার রাজা চপ
উপকরণ
- তিনটা মাঝারি আকারের সিদ্ধ আলু
- এক কাপ রান্না করে ঝুরি করে নেওয়া মাংস
- এক চা চামচ শুকনো মরিচের গুঁড়ো
- আধা কাপ পেঁয়াজ কুঁচি
- এক টেবিল চামচ ধনিয়াপাতা কুঁচি
- স্বাদমতো লবণ।
বেসনের মিশ্রণ প্রস্তুতির জন্য
- এক কাপ বেসন
- আধা চা চামচ হলুদ
- আধা চা চামচ শুকনো মরিচ গুঁড়ো
- আধা চা চামচ বেকিং সোডা
- স্বাদমতো লবণ।
প্রণালি
লবণ দিয়ে আলুগুলো সিদ্ধ করে নিয়ে পানি থেকে তুলে ঠান্ডা করে নিতে হবে যেন আলুর ভর্তাটা স্যাঁতসেঁতে না হয়। এবার আলুগুলো খুব ভালোভাবে পিষে নিতে হবে। তাতে বেসনের মসলা আর ঝুরা মাংস বাদে সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এখান থেকে ছোট ছোট চপের মতো আকৃতি বল তৈরি করে মাঝখানে গরুর ঝুরা মাংস পুর হিসাবে দিয়ে চপ বানাতে হবে। রান্না করা মাংস ঝুরি বানিয়ে একটু পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে ভেজে নিলে আরো বেশি সুস্বাদু হয়।
এবার ভাজার জন্য বেসনের মিশ্রণ তৈরির উদ্দেশ্যে এক কাপ বেসন, লবণ, সোডা, হলুদ ও মরিচের গুঁড়ো এবং পানি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন মিশ্রণটি বেশি পাতলা না হয়।
এবার কিমাভর্তি আলুর চপ বেসনের মিশ্রণে ডুবিয়ে তেলে ভাজলেই প্রস্তুত আলু-কিমার রাজা চপ। সাধারণ আলুর চপের চেয়ে আলাদা এই চপটি খেতেও অসাধারণ।
বিফ ফিঙ্গার
উপকরণ
- এক কাপ মাংসের কিমা
- দেড় চা চামচ আদা ও রসুনের পেস্ট
- এক টেবিল চামচ গরম মসলার গুঁড়ো
- এক চা চামচ শুকনো মরিচের গুঁড়ো
- এক চা চামচ জিরা বাটা
- এক টেবিল চামচ লেবুর রস
- এক টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুঁচি
- স্বাদমতো লবণ
- একটি ডিম
- প্রয়োজনমত ব্রেডক্রাম্ব
- ভাজার জন্য তেল।
প্রণালি
পেঁয়াজ বাদে অন্যান্য সব মসলা, লবণ ও লেবুর রসের সাথে কিমা খুব ভালোভাবে মাখিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ১৫ মিনিট পরে পেঁয়াজ কুঁচি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত যে, কোনো মসলা মেশাতে হাত ব্যবহার করলে মেশানোটা সবচেয়ে ভালো হয়। এবার এই মিশ্রণটা আঙুলের মতো আকৃতিতে ডো তৈরি করতে হবে।
ভাজার জন্য অন্য একটি বাটিতে ফাটানো ডিম ও আরেকটি বাটিতে ব্রেডক্রাম্ব মিশিয়ে পরপর ডোগুলো এই দুই উপাদানে মাখিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে হবে। লালচে হয়ে গেলেই প্রস্তুত হয়ে গেল মজাদার বিফ ফিঙ্গার। সসের সাথে এটা খেতে খুবই সুস্বাদু।
গরুর মাংসের ভাজা পিঠা
উপকরণ
- এক কাপ রান্না করা মাংসের ঝুরি
- এক কাপ ময়দা
- একটা সিদ্ধ করা আলু
- আধা কাপ মটরশুঁটি
- এক টেবিল চামচ কাঁচা মরিচ কুঁচি
- দুই টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুঁচি
- স্বাদমতো লবণ
- প্রয়োজনীয় গরম পানি।
প্রণালি
ময়দার সাথে লবণ ও অল্প পরিমাণে গরম পানি মিশিয়ে রুটির মতো ডো তৈরি করে রেখে দিতে হবে বিশ মিনিট থেকে আধা ঘন্টা। অন্যদিকে রান্না করা গরুর মাংসের ঝুরির সাথে সিদ্ধ আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, মটরশুঁটি ও সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে হবে ভালো করে। আগে থেকে তৈরি করে রাখা ডো সামান্য ময়দাতে মেখে মাঝারি আকারের কয়েকটা রুটি তৈরি করে নিতে হবে। রুটিগুলোর মাঝখানে কিমার মিশ্রণটি রেখে চারপাশের রুটি দিয়ে তা মুড়িয়ে দিয়ে হাতের সাহায্যে চাপ দিয়ে দিয়ে অনেকটা তেলে ভাজা পিঠার মতো আকৃতি প্রদান করতে হবে।
এই পিঠা দেখতে অনেকটা ডালপুরির মতো হয়, ভেতরে ডালের বদলে থাকে মাংসের মজাদার কিমার পুর। এবার এই পিঠা কড়াইতে গরম তেলে এপিঠ-ওপিঠ লাল করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরি হয়ে গেলো মজাদার গরুর মাংসের ভাজা পিঠা। সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে যেমন মজাদার হয় এটি, তেমনি অন্যরকম সুস্বাদু একটি মাংসের খাবার হয় সকালের নাস্তার টেবিলেও।
এরকম আরো অনেক মজাদার খাবার তৈরি করা যায় গরুর মাংস দিয়ে। মাংসের সচরাচর রেসিপিগুলো থেকে এই হালকা খাবারগুলো হয় একদম অন্যরকম ও স্বাস্থ্যকর। তাছাড়া দুই ঈদে আমাদের দেশে ঘরে ঘরে তো থাকেই মাংসের নানা খাবার, খাওয়াও হয় প্রচুর। তবে ত্রিশ বছর বয়সের পর থেকে মাংস খাওয়ার ব্যপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। উৎসবের সময় হোক আর অন্য সময়, মাংস ও ভারী খাবার পরিমিত খাওয়াই শ্রেয়। একই কথা প্রযোজ্য মাংসের তৈরি পিঠা, কাবাব ও অন্যান্য হালকা নাস্তার ক্ষেত্রেও। আর এসব খাবারের সাথে সকল বয়সী মানুষেরই অবশ্যই খেতে হবে প্রচুর পানি, শাকসবজি ও ফলমূল। এভাবে প্রকৃতির সকল উপাদানের মধ্যে তাল মিলিয়ে খাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সুস্বাস্থ্যের প্রকৃত রহস্য।