Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বয়স অনুযায়ী নির্ধারণ করুন খাদ্যতালিকা

বয়স যতই বাড়তে থাকে, শরীরে খাবারের চাহিদা, বিভিন্ন আইটেমের প্রতি পছন্দ-অপছন্দও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। আবার এই বিষয়টি কিন্তু এমন নয় যে, একবার চাহিদা বা পছন্দ-অপছন্দে পরিবর্তন আসলে তা বাকিটা সময়ের জন্য একদম একইরকম থাকবে! বয়সের বিভিন্ন ধাপে শরীরের উচ্চতা, ওজন ও অবস্থাভেদে পরিবর্তন আসে। চলুন দেখা যাক কীভাবে নির্ধারণ করতে পারেন বয়স অনুসারে খাবারের তালিকা।

২০-২৯ বছর বয়সীদের জন্য পুষ্টিসম্মত খাবার তালিকা

এই বয়সটা হলো পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘোরাঘুরি, বিয়েশাদি ও নতুন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার! শত ব্যস্ততা ও ছুটোছুটিতে যেন জীবনটা ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘুরতে থাকে আর তাই এই সময়টায় ঠিকঠাকভাবে সব কার্যসিদ্ধির জন্য শরীরে প্রয়োজন সঠিক পুষ্টি। জীবনের এই সময়টাতে শরীরে সঠিক পুষ্টি নিয়ন্ত্রণে যা যা করা দরকার:

ফাস্টফুডকে করুন স্বাস্থ্যসম্মত

ব্রাউন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল কলেজের গবেষকদের মতে, ২০-২৯ বছর বয়সী মানুষেরা তাদের বয়ঃসন্ধিকালের তুলনায় ২৫ শতাংশ অধিক পরিমাণে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। আমেরিকান ডায়েটিক এসোসিয়েশন এর মুখপাত্র বনি টব বলেন, কোনোরকমে রাতের খাবার খেয়ে নেয়ার অভ্যাসের কারণে প্রতিদিন শরীরের চাহিদা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির অনেকটাই পূরণ হয় না। তাই ফাস্টফুড খেলেও তা যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। তাই রাতের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন- গ্রিলড চিকেন, শ্রিম্প ককটেল, স্টিমড ডাম্পলিং বা মমো এবং বিভিন্ন ধরনের সালাদ। এই খাবারগুলো পরিমাণ মতো নিয়ে তার সাথে ঘরের তৈরি খাবারগুলো, যেমন- ভাত, নুডলস বা পাস্তা ও যেকোনো সবজি খেয়ে নিতে পারেন।

মূল যে পুষ্টিগুলো শরীরে চাই-ই চাই

প্রোটিন

পিটস্‌বার্গ মেডিকেল সেন্টারের স্পোর্টস মেডিসিন বিভাগের পরিচালক লেসলি বনকি বলেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনে কম করে হলেও ৬০-৭০ গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য তিনি চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, মটরশুঁটি ও লো-ফ্যাট দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।

দিনে কম করে হলেও ৬০-৭০ গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন; Image Source: nuts.com

পটাশিয়াম

সার্বিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য মাংসপেশি ও হৃদযন্ত্রের যথাযথ কার্যকর থাকা প্রয়োজন। আর তাই শরীরে প্রয়োজন সঠিক মাত্রার পটাশিয়াম। কিন্তু ইউএসডিএ (দ্য ইউনাইটেড স্টেটস্‌ ডিপার্টমেন্ট অব এগরিকালচার)-এর মতে, ২০-২৯ বছর বয়সী অধিকাংশ নারীই সঠিক চাহিদার চাইতে কম পরিমাণে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। দুই কাপ পরিমাণ ফলমূল (একটি আপেল, একটি কলা, টক দই ও স্ট্রবেরি) এবং আড়াই কাপ পরিমাণ সবজি (যেকোনো শাক-সবজি, সাথে ব্রোকলি থাকলে ভালো হয়) খেলে শরীরে প্রতিদিনের পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আপনার শরীরে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। সেরেটোনিন হলো মস্তিষ্কে ভালো লাগার অনুভূতিটি কাজ করানোর এক রাসায়নিক পদার্থ। যেহেতু এই সময়টাতে মেয়েদের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত থাকার প্রবণতা বেশি লক্ষণীয়, তাই তাদের শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের সঠিক চাহিদা পূরণ করা বেশ প্রয়োজন। স্যামন ও টুনা মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের সবচাইতে ভালো উৎস। এছাড়াও আখরোট ও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ থেকেও এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

স্যামন ও টুনা মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের সবচাইতে ভালো উৎস, Image Source: ureadthis.com

স্মার্ট ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বেছে নিন স্ন্যাক্স

  • ১ টেবিল চামচ আখরোট ৬ আউন্স টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খান।
  • ৪ আউন্স কটেজ চীজ বা কিসমিস।
  • ১২টি কাঠবাদাম বা ৬টি শুকনো অ্যাপ্রিকট।
  • আধা কাপ কর্নফ্লেক্সের সাথে পরিমাণ মতো সয়া মিল্ক মিশিয়ে খেয়ে নিন।
  • একটি মাঝারি কমলালেবু বা আপেল।
  • একটি ডিম দিয়ে বানানো যেকোনো আইটেম।

একদিনে মোট যে পরিমাণ পুষ্টি দরকার: ১,৯৪১ ক্যালোরি, ১০০ গ্রাম প্রোটিন, ৪০ গ্রাম ফ্যাট, ২৯৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৩৪ গ্রাম ফাইবার।

৩০-৩৯ বছর বয়সীদের জন্য পুষ্টিসম্মত খাদ্যতালিকা

ক্যারিয়ার, সংসারের কাজ, সামাজিক ও পারিবারিক দায়দায়িত্ব পালন করতে করতে নিজের দিকে যত্ন নেয়াটা ভুলে যাচ্ছেন না তো? ভুলে গেলে কিন্তু ক্ষতি সবার! কারণ আপনি ভালো থাকলেই আর সবাইকে ভালো রাখতে পারবেন। শরীরে সঠিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে এই সময়ে যা যা করা দরকার:

মূল যে পুষ্টিগুলো শরীরে চাই-ই চাই

ফোলেট

এই সময়ে বিশেষ করে মেয়েদের গর্ভধারণ, গর্ভে থাকা শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে শরীরে যথাযথ পুষ্টির প্রয়োজন হয়। তাই এ সময়ে ফোলেট সম্পন্ন খাবার খাওয়া জরুরি। এছাড়াও ফোলেট হৃদরোগেরও ঝুঁকি কমায়। তাই ফোলেট সম্পন্ন খাবার হিসেবে ছোলা, পালং শাক, ব্রোকলি, কমলার জুস খেলে প্রতিদিনের ফোলেটের চাহিদার ৪০০ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ পূরণ করা সম্ভব।

ফোলেট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, Image Source: Health Ambition

ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস

লেসলি বনকি বলেন, ‘এই যৌগটি মূলত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন, যা বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ধীরগতি আনে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ডিএনএ’র নানা পরিবর্তন প্রতিরোধ করে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সম্পন্ন খাবার হিসেবে খেতে পারেন ডার্ক চকোলেট, কফি এবং নানা ধরনের শাক-সবজি। এসব খাবারে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের পরিমাণ থাকে বেশি।

এই যৌগটি মূলত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন, যা বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ধীরগতি আনে, Image Source: Healing Gourmet

আয়রন

পেস স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, যেসব তরুণী ও নারীদের শরীরে মিনারেলের অভাব রয়েছে এবং শরীরে আয়রনের মাত্রা কম, তারা বুদ্ধি-বিবেচনামূলক প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় বেশি নেয় এবং বুদ্ধিদীপ্ততা নেই বললেই চলে। শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- চর্বিহীন গরুর মাংস, সয়াবিন, মিষ্টি কুমড়ার বীচি, চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, ব্রোকলি, ডিমের কুসুম, শুকনো ফলমূল, গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি, বিভিন্ন রকম ডাল ও শস্য জাতীয় খাবার খেতে পারেন।

স্ন্যাক্স হিসেবে যা যা খেতে পারেন

  • টুনা সালাদ: ৩ আউন্স টুনা মাছের সাথে ১টি কুচি করা টমেটো, অর্ধেকটি কুচি করা শশা, ১ কাপ মটরশুঁটি ও ২ টেবিল চামচ সালাদ ড্রেসিং মিশিয়ে নিন।
  • আলমন্ড বাটার স্যান্ডউইচ: ২ পিস পাউরুটিতে ১ টেবিল চামচ আলমন্ড বাটার ও ১ চা-চামচ মধু মেখে খেয়ে নিন। সাথে খেতে পারেন ননী ছাড়া এক গ্লাস দুধ।
  • এক আউন্স ডার্ক চকোলেট।

একদিনে মোট যে পরিমাণ পুষ্টি দরকার: ১,৮৬৮ ক্যালোরি, ৯৪ গ্রাম প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম ফ্যাট, ২৪৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৩৪ গ্রাম ফাইবার।

৪০-৪৯ বছর বয়সীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য তালিকা

জীবনের এই সময়টাতে এসে আপনি নিজের জন্য কিছুটা সময় খুব সহজেই কিন্তু বের করে নিতে পারেন। চলুন দেখা যাক এই সময়ে আপনার শরীরে কী ধরনের পুষ্টির চাহিদা থাকে।

মূল যেসব পুষ্টি এ সময়ে আপনার শরীরে চাই-ই চাই

ক্যালসিয়াম

এই সময়টাতে শরীরের আয়রন শোষণ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ঠিক যে পরিমাণ এসিড পাকস্থলীতে তৈরি হওয়া প্রয়োজন, সে পরিমাণ হয় না। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ১,০০০ মিলিগ্রাম পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখুন। দুধ, বরবটি, কাজুবাদাম, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়শ ও পালং শাক থেকে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ১,০০০ মিলিগ্রাম পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখুন, Image Source: Nutritional supplements

ভিটামিন ডি

এই ভিটামিন শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছাতেই শরীরে ভিটামিন ডি এর কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। লেসলি বনকি বলেন যে, ভিটামিন ডি-এর উৎস খুব কমই আছে বলা চলে।

ফাইবার

ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়, শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দেয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। ফলমূল, শাক-সবজি, ওটস্‌, পাউরুটি, কাজুবাদাম, ফুলকপি, স্ট্রবেরি ও মটরশুঁটি থেকে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায়।

ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, Image Source: Weight Loss Resources

একদিনে মোট যে পরিমাণ পুষ্টি দরকার: ১,৬৫৬ ক্যালোরি, ৯২ গ্রাম প্রোটিন, ৪৮ গ্রাম ফ্যাট, ২২৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৩৯ গ্রাম ফাইবার।

ফিচার ইমেজ- Healthy Diet Advisor

Related Articles