Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘নাচোস’ এর জন্ম হলো কীভাবে? জানুন মজাদার খাবারটির ইতিহাস!

নাচোস খেতে আমরা কম-বেশি সবাই পছন্দ করি। মচমচে তিনকোণা আকৃতির খাবার, সাথে রসালো মাংস, মেয়োনেজ আর পর্যাপ্ত পরিমাণ মালমশলা মিশিয়ে তারপরেই তৈরি হয় মেক্সিকান এই খাবারটি। মানুষ খাবার রান্না করে খেতে শেখার পর থেকে নানা উপায়ে একে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কখনো সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন কোনো খাবার। আবার কখনোবা ব্যর্থ হয়ে পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে সেগুলো। আর এমন কিছু সফল খাবারের মধ্যে নাচোস অন্যতম। খেতে অসম্ভব মজাদার এই খাবারটি বিভিন্ন দেশ পেরিয়ে চলে এসেছে আমাদের বাংলাদেশেও। কেড়ে নিয়েছে শত মানুষের মন। তবে সবকিছুতেই জানার আছে। জানার আছে নাচোস সম্পর্কেও। আপনি যেই খাবারটি খাচ্ছেন সেটি সম্পর্কে কতটুকু জানেন? বলছিলাম নাচোস সম্পর্কে। চলুন না, আজ জেনে আসা যাক অসম্ভব মজাদার এই খাবারটি নিয়ে।

নাচোস; Source: Campbell’s

নাচোসের জন্ম

মেক্সিকোতে প্রথম জন্ম হয় নাচোস নামের নতুন খাবারটির। আর এটি উদ্ভাবন করেন ইগনাসিও আনায়া। ১৯৪৩ সালে মেক্সিকোর পেদ্রেস নেগ্রেসে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট ভিক্টোরি ক্লাবে যুক্তিরাষ্ট্রের সৈনিকদের স্ত্রীদের জন্য নতুন এক খাবার তৈরি করেন তিনি। সেসময় সৈনিকেরা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আর তাদের স্ত্রীরা অনেক্ষণ ধরে কেনাকাটা করার পর কিছু খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্ট খুঁজছিলেন। একটা সময় তাদের চোখে পড়ে আশেপাশে থাকা এই রেস্টুরেন্টটি। তক্ষুণি কোনো খাবার ছিল না রেস্টুরেন্টে। কিন্তু ক্ষুধার্ত অবস্থায় মানুষকে ছাড়তেও ইচ্ছে করছিল না ইগনাসিওর। তাই রান্নাঘরে বেঁচে যাওয়া খাবারগুলোকে নিয়েই নতুন কিছু একটা তৈরি করার চেষ্টা করেন তিনি। আর তার চেষ্টা সফল হয়। ডানকান দুর্গের ঠিক পাশেই ছিল রেস্টুরেন্টটি। টরটিলা চিপস, জালাপেনো, পনির মিশিয়ে প্রথমবারের মতো খাবারটি তৈরি করেন তিনি। তক্ষুণি কোনো নাম দরকার ছিল খাবারটির জন্য। কী নাম দেওয়া যায়? শেষমেশ অনেক চিন্তার পর নিজের ডাকনাম ব্যবহার করেন এই মানুষটি। খাবারটির নাম দেন ‘নাচোস ইস্পিশিয়ালস’। সেখান থেকে পরবর্তীতে এর নাম হয়ে যায় সংক্ষেপে নাচোস। তারপর? তারপরের ঘটনা তো বলাই বাহুল্য! বর্তমানে সবখানেই নাচোস নামের এই খাবারটি বেশ পরিচিত ও বিখ্যাত।

নাচোসের জন্ম হয় মেক্সিকোতে; Source: Food Channel

আন্তর্জাতিক ‘নাচোস’ দিবস!

ভাবতে পারছেন? নাচোসকে নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি দিবস আছে। আগে থেকেই জানতেন এই দিবসটি সম্পর্কে? না জানলে চলুন জেনে ফেলি। অক্টোবরের ২১ তারিখ আন্তর্জাতিকভাবে এই অসম্ভব মজাদার খাবারটিকে নিয়ে একটি দিন পালন করা হয়। নাচোস দিবস হিসেবে সারা পৃথিবীতে মানুষ একে পালন করেন বটে, তবে তাদের বেশিরভাগই জানেন না যে, নাচোসের জন্মের পেছনেও কোনো ইতিহাস আছে কিংবা ছিল। এটির জন্ম ইগনাসিওর হাতে হলেও একে ধরে রাখতে সাহায্য করে ইগল পাস চার্চ। এই চার্চের রান্নার বইয়েই নাচোস এবং তার উদ্ভাবক ইগনাসিওকে খুঁজে পাওয়া যায়। সেইসাথে এও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় যে, ইগনাসিওই নাচোস প্রথম তৈরি করেন। সেদিন থেকেই নাচোস দেশের এবং পুরো পৃথিবীর খাবার হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে ইগনাসিও আনায়া মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার মৃত্যুর পর ইগল পাসের পাশে তার রেস্টুরেন্টটির হাল ধরেন তার ছেলে ইগনাসিও আনায়া জুনিয়র। সান আন্তোনিয়োর এক্সপ্রেসকে ২০০২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইগনাসিও জুনিয়র জানান যে, তিনি চেষ্টা করেছিলেন নাচোকে তার বাবার সাথে জুড়ে দিতে। বাবার উদ্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। আইনজীবীদের মতে এতগুলো বছর পর এসে এই ব্যাপারে এখন আর তেমন কিছুই করা সম্ভব না। এখন এই খাবারটি সাধারণ সম্পত্তি হয়ে গিয়েছে। ফলে এটি যে যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে। এমনকি নাচোস নিয়ে হওয়া প্রতিযোগিতাতেও বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকেন ইগনাসিও জুনিয়র। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। নাচোসকে সবাই ইগনাসিও আনায়ার তৈরি খাবার জানলেও সেটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। তবে নাচোস নিয়ে যে একটি আলাদা দিন আছে তা নিয়েই যথেষ্ট খুশি ইগনাসিও সন্তান।

এই ইগল পাসের কাছেই প্রথম উদ্ভাবিত হয় নাচোস; Source: Wikimedia commons

নাচোসের বিশ্বজয়

নাচোস কেবল তৈরীই হয়নি, সেটি লাখ লাখ মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। এখন, আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতেই পারে যে, ইগনাসিও প্রচারের ব্যাপারে খুব একটা পরিপক্ব  ছিলেন না। তাহলে নাচোসকে পুরো পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দিল কে? এক্ষেত্রে চলে আসে আরেকজন মানুষের নাম যিনি কিনা নাচোসকে এই শতাব্দীতে সবার কাছে জনপ্রিয় খাবার হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন। আর তার নাম হচ্ছে ফ্রাঙ্ক লিবার্তো। আরলিংটন স্টেডিয়ামের পাশে নাচোস বেচা শুরু করেন এই মানুষটি। ইগনাসিওর সাহায্য নেন নাচোস তৈরির ক্ষেত্রে। তবে তার তৈরি নাচোসে অন্যরকম এক স্বাদের সংযোজন করেন তিনি। শুরুতে নাচোসের মধ্যে কেবল পনির ব্যবহার করা হতো। এবার ফ্রাঙ্ক সেটাকে আরেকটু সামনে এগিয়ে নেন। নাচোসের মধ্যে পনির গলিয়ে ব্যবহার করেন। সাথে কিছু গোপন মশলা তো ছিলই। খুব দ্রুত অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় নাচোস। মাত্র ২০ বছরের মধ্যে ছড়িয়ে যায় পৃথিবীর প্রতিটি দেশে। নিজের এই উদ্যোগের জন্য ফ্রাঙ্ককে নাচোসের জনক বলে ডাকা হয়। ২০১৭ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন নাচোসের সাথে জুড়ে থাকা এই মানুষটিও। ইগনাসিও হয়তো শুরুটা করেছিলেন। তবে তার শেষটা করতে সাহায্য করেছিলেন ফ্রাঙ্ক। বিশেষ করে খেলার মাঠের পাশে তার খানিকটা বাড়তি সুবিধাসমেত নাচোস মানুষকে নাচোসের সাথে পরিচিত হতে এবং নাচোস খেতে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। প্রথমে কেবল বেসবল খেলার মাথে বিক্রি শুরু করা হয় নাচোস। তবে পরবর্তীতে সেটি চলে যায় মুভি থিয়েটার এবং অন্যান্য সব বিনোদনমূলক স্থানেও। বিশেষ কোনো খাবার নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনে খেতে পারা যায় এমন একটি সাধারন নাশতা হিসেবে তৈরি করেন ফ্রাঙ্ক নাচোসকে।

নাচোসের প্রসারে ফ্রাঙ্ক লিবার্তোর অবদান অনেক; Source: Legacy.com

নাচোস এবং খেলা

খেলাধুলার সাথে নাচোসের অসম্ভব গাঢ় একটি সম্পর্ক রয়েছে। নাচোস জন্ম সৈনিকদের জন্য নিলেও এর প্রসার হয় খেলোয়াড়দের বদৌলতেই। ১৯৭৬ সালে নতুন করে নাচোস নিয়ে স্টেডিয়ামে চলে যান ফ্রাঙ্ক। ব্যাপারটি এমন নয় যে, ফ্রাঙ্ক এমনটা না করলে নাচোস হারিয়ে যেত কিংবা জনপ্রিয়তা পেতো না। কিন্তু খেলার সাথে যে নাচোসের জনপ্রিয়তার বেশ গভীর একটি সম্পর্ক আছে, তা কিন্তু মেনে নিতেই হবে। সেসময় বেসবল ছিল বেশ জনপ্রিয় খেলা। আর সেই বেসবলের মাঠের পাশেই নাচোস নিয়ে দেখতে পাওয়া যেত ফ্রাঙ্ককে। মানুষ খেলা দেখতে আসতো প্রচুর পরিমাণে এবং তাদের নাচোস খাওয়ার পরিমাণটাও থাকতো দেখার মতো। তাই খেলা এবং নাচোসের সম্পর্ক বেশ গাঢ় এমনটা বলাই যায়।

নাচোসের সাথে খেলার সম্পর্কটাও অনেক পুরনো; Source: NBC4

নাচোস নানা রকমের হয়। এখন আর আগের স্থানে নেই এই খাবারটি। ইচ্ছেমতো খাবার, উপকরণ আর মশলার মিশ্রণ ঘটায় নাচোসে ইচ্ছেমতো। ফলে, আপনি যেমনটা চান ঠিক তেমন করেই এখন রেস্টুরেন্টে গেলে নাচোস খেতে পারবেন। নিজের ইচ্ছেমতো তৈরি করা নাচোস। কী? ভাবতে বসলেন কখন নাচোস খাবেন?

ফিচার ইমেজ: Campbell’s

Related Articles