Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

খাবার কি মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে?

খাবার কি শুধু আমাদের শারিরিকভাবেই প্রভাবিত করে? একদম নয়। শরীরের পাশাপাশি খাবারের দ্বারা আমরা মানসিকভাবেও প্রভাবিত হই। খাবার আমাদের মস্তিষ্কের ধূসর অংশকে কতটা প্রভাবিত করে তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। খাবার যে আমাদের আলঝেইমার্স সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করে দিতে পারে, সেটা সহজে বিশ্বাস করে নেওয়ার কিছু নেই। ঠিক একইভাবে, খাবার যে আমাদের মস্তিষ্কের গঠন, স্বাস্থ্য ও কাজে একেবারেই কোনো প্রভাব ফেলে না, তা-ও বলা যায় না।

খাবার আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে সত্যিই প্রভাবিত করে। আমরা কতটা পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছি তার উপরে ভিত্তি করে আমাদের মস্তিষ্ক নিজের সেরা কাজটি করে। এই যেমন, আপনি যদি প্রচুর পরিমাণ সবজি ও ফল গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন, যেটি আপনার মস্তিষ্ককে পুষ্টির যোগান দেবে এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখবে। আর মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকলে আপনার মস্তিষ্কের কোষ দ্রুত নষ্ট হবে না। সুস্থ থাকবেন আপনি।

আপনি যদি প্রচুর পরিমাণ সবজি ও ফল গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন; Image Source: cdn-img.health.com

সুস্থ থাকার জন্য তাই স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রভাবকে একমাত্র কারণ বলে না মানলেও, একে অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে- ফল, সবজি, বাদাম, শস্য এবং স্বাস্থ্যকর তেল ও চর্বি গ্রহণ করাকে। এভাবে খুব সহজেই আপনি আপনার স্মৃতিশক্তিকে সতেজ রাখতে পারবেন।

প্রতিদিনের খাবারে তো আমরা অনেক উপাদানই গ্রহণ করি। শর্করা, চর্বি, তেল, আমিষ, ক্যাফেইন- এদের একটিও কি না খেয়ে থাকা হয়? নিশ্চয়ই না! আজ খাবারের থালায় থাকা এই খাবারগুলো আপনার মস্তিষ্ককে কীভাবে প্রভাবিত করবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক!

শর্করা মস্তিষ্ককে কীভাবে প্রভাবিত করে?

সঠিক পরিমাণ গ্লুকোজ না পেলে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়; Image Source: i.dietdoctor.com

আমাদের পুরো শরীরের ওজনের মাত্র ২ শতাংশ ওজন মস্তিষ্কের। তবে মজার ব্যাপার হলো, অনেক কম অংশ ধারণ করলেও এই মস্তিষ্কই আমাদের গ্লুকোজ থেকে প্রায় ২০ শতাংশ শক্তি গ্রহণ করে। ব্যাপারটা খুব সহজ। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পুষ্টির দরকার পড়ে। গ্লুকোজ শর্করার একটি বড় অংশ শরীরে তৈরি করে এবং মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপন্ন করে। আমাদের মন কেমন থাকবে, আমরা কততা উদ্বিগ্ন হবো কোনো ব্যাপারে- এই সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে সেরোটোনিন।

আমাদের শরীর মোট দুটো উপায়ে গ্লুকোজ পায়। একটি শর্করা থেকে, আর অন্যটি ফ্যাট থেকে। শর্করা থেকে প্রাপ্ত গ্লুকোজ সহজে ভাঙা সম্ভব বিধায় শরীর সেটাই প্রথমে ব্যবহার করে। নানারকম শর্করা, এই যেমন- শস্য, ফল, ভাত, আলু এবং চিনি ও দুধের মতো ল্যাক্টোজ আমাদের শরীরের শক্তির সবচাইতে বড় উৎস হিসেবে কাজ করে। এই শর্করাগুলোকে ইতিবাচক ও উপকারী শর্করা বলে মনে করা হয়, যেগুলো ভাঙার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে কাজ করতে সাহায্য করে। সঠিক পরিমাণ গ্লুকোজ না পেলে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় বা ঠিক করে কাজ করতে পারে না। এমনকি, অনেক বিজ্ঞানীই পরিশোধিত চিনি আমাদের শরীরে যে নেশাদ্রব্যের মতো কাজ করে এবং আমার আচরণ ও ঘুমকে প্রভাবিত করে তা বলেছেন। যদিও, এই তথ্যের পুরোপুরি প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রোবায়োটিক কীভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে?

গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট ও সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ভেতরে বায়োক্যামিকাল সিগনালিংয়ের মাধ্যমে হওয়া সংযোগের মোট দুটি রাস্তা আছে। এই সংযোগকে অনেকসময় গাট-ব্রেইন এক্সিস বলা হয়। এই পুরো ব্যাপারটিই আমাদের অন্ত্রের সাথে আমাদের মস্তিষ্কের আবেগীয় অংশকে জুড়ে দেয়। সম্প্রতি অন্ত্র, প্রোবায়োটিকস এবং মস্তিষ্ক নিয়ে প্রচুর কাজ করা হয়েছে। এতে দেখা গিয়েছে যে, প্রোবায়োটিকস আমাদের অন্ত্রে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপারটিকে প্রভাবিত করে। এতে করে আমাদের উদ্বিগ্নতা এবং হতাশা প্রভাবিত হয়।

এক পরীক্ষায় দেখা যায় যে, যেসব মানুষ প্রোবায়োটিক ফুড সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা ও মন খারাপভাব কম দেখা যায়। এছাড়া, আরেকটি পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রোবায়োটিক সম্পূর্ণ দই খেয়েছেন এমন একজন নারীর মধ্যে অন্যদের চাইতে তুলনামূলকভাবে কম আবেগীয় প্রকাশ দেখা দেয়। এই ব্যাপারগুলো যেমন পরীক্ষিত, তেমনি খানিকটা সন্দেহযুক্তও। কারণ, এই পরীক্ষাগুলো খুব বড় আকারে কখনো করা হয়নি।

আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০ শতাংশ ওমেগা-৩ দিয়ে তৈরি; Image Source: d3idks24kkd2lv.cloudfront.net

ফ্যাট কীভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে?

নির্দিষ্ট কিছু ফ্যাট আমাদের মস্তিষ্কের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মূল কারণ হলো, এরা কোষের মেমব্রেন তৈরিতে এবং স্নায়ুর গঠন ও কার্যক্রম নির্ধারণে সাহায্য করে। আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০ শতাংশ ওমেগা-৩ দিয়ে তৈরি, যেটা কি না সাধারণত মাছেই পাওয়া যায়। এটি মানুষের চোখ ও মস্তিষ্কের উন্নয়নে সাহায্য করে। এই ফ্যাট সাধারণত জলপাই তেল, স্যামন মাছ, সার্ডিন ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। শিশুদের জন্য গর্ভকালীন সময়ে ও ছোটবেলায় মানসিক উন্নয়নের জন্য ফ্যাট গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশই জন্মের আগেই পরিপূর্ণতা পায়। আর বাকিটা পূর্ণতা পায় জন্মের কিছু বছরের মধ্যেই। এজন্য শিশুদের ওমেগা-৩ গ্রহণ করার জন্য বারবার বলা হয়ে থাকে।

শুধু তা-ই নয়, দেখা যায় যে, ওমেগা-৩ কম পেয়েছে এমন শিশুর মানসিক বিকাশে বড় প্রভাব পড়ে। ইতিবাচক এই ফ্যাট গ্রহণ করলে স্মৃতিশক্তিহীনতাও কম দেখা যায়। তবে, এতকিছুর পরেও এ ব্যাপারে আরো অনেক গবেষণার স্থান রয়েছে। আরো বড় আকারে পরীক্ষা করলে এই পুরো ব্যাপারটি সম্পর্কে আরো বেশি নিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব।  

ভিটামিন ও খনিজ কীভাবে আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে?

‘বি’ ভিটামিন, ভিটামিন ‘সি’, ‘ডি’ এবং ‘ই’ মস্তিষ্কের গঠনে ও উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা যায়, ভিটামিন ও খনিজে পূর্ণ ফল অনেক বেশি গ্রহণ করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে মানসিক নানা সমস্যাগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো কম তৈরি হয়। এক্ষেত্রে, থিয়ামিন ও ভিটামিন ‘ই’ মস্তিষ্কের সেই কোষগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেটি স্নায়ু থেকে তথ্য প্রদান করে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘বি৬’ ও ‘বি১২’ এবং ভিটামিন ‘সি’ স্নায়ুর কাজ ও গঠনকে প্রভাবিত করে। ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুকে যেকোনো সমস্যা এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষিত করে। এতে করে আমাদের মস্তিষ্ক উন্নত হয়, মানসিক চাপ ও হতাশার সাথে মোকাবেলা করার শক্তি পাওয়া যায়। অ্যাভোকাডো, পালং শাক, বাদামী ভাত ও বাদামে এই ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। একদিকে বি ভিটামিন এবং ভিটামিন ‘ই’, ‘সি’ ও ‘ডি’ যেমন আমাদের স্মৃতিশক্তিকে তুখোড় করে দেয়, তেমনি মস্তিষ্কের যে শক্তি প্রয়োজন হয় সেটার উৎপাদনেও সাহায্য করে।  

ক্যাফেইন আমাদের ঘুম তাড়াতে, মানসিক শক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে; Image Source: images.medicaldaily.com

ক্যাফেইন কীভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে?

ক্যাফেইন নানা খাবারেই পাওয়া যায়। সবচাইতে বেশি আমরা ক্যাফেইন পাই কফিতে। এর প্রভাব আমাদের মস্তিষ্কে কীভাবে পড়ে সেটাও আমাদের পক্ষে বোঝা সহজ। ক্যাফেইন আমাদের ঘুম তাড়াতে, মানসিক শক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে। তবে এছাড়াও, ক্যাফেইন আমাদের আলঝেইমার্স রোগ থেকে বাঁচতেও সাহায্য করে।

ভিন্ন ভিন্নভাবে এই উপাদানগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। খাবারে তাই প্রতিদিন সুষমভাবে এই সবগুলো ইতিবাচক উপাদানকেই রাখুন।

The article is written in Bengali language. It is on Food and its impact on our brain. All the information sources are hyperlinked inside the article.

Feature Image: hhp-blog.s3.amazonaws.com

Related Articles