Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেশে দেশে বৈচিত্র্যময় স্ট্রিট ফুড

স্ট্রিট ফুডকে শুধুমাত্র খাবারের কাতারে ফেললে ভুল হবে। কারণ স্ট্রিট ফুড ঐতিহ্যেরও একটি অংশ যা যেকোনো দেশের ইতিহাস বা পরিচয়ের সাথে মিশে যায়। আজকের গল্পটা তাহলে হয়ে যাক পৃথিবীর বিখ্যাত সব স্ট্রিট ফুড নিয়ে!

১। হালো-হালো, ফিলিপাইন

‘হালো-হালো’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘মেশানো-মেশানো।‘ গ্রীষ্মকালে ফিলিপিনের রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া এই খাবারটি মূলত একটি ডেজার্ট আইটেম। ‘হালো-হালো’ খেতে যেমন মুখরোচক, দেখতেও তেমন লোভনীয়! নারিকেল, ফলমূল, সিরাপ, কিডনি বিন দিয়ে এটি বানানো হয় এবং টপিংস্‌ হিসেবে আইসক্রিম, বরফ কুচি ও ঘন দুধ দেয়া হয়।

লোভনীয় একটি ডেজার্ট আইটেম ‘হালো-হালো’

২। বাবল টি, তাইওয়ান

বাবল টি-কে পার্ল টি ও বলা হয়। ১৯৮০ সালে তাইওয়ানের অধিবাসীরা এই বাবল টি-এর প্রচলন শুরু করে। ঠাণ্ডা চায়ে বিভিন্ন ধরনের ফল, কন্ডেন্সড্‌ মিল্ক, দুধ আর সাথে চিবিয়ে খাওয়ার মত এক রকম বল, টাপিওকা (সাগুর মত) দিয়ে বানানো হয় এই বাবল বা পার্ল টি। গরমের দিনে তাইওয়ানের রাস্তায় চলতে ফিরতে দেখা যায় এই পানীয়টি!

তাইওয়ানের গরমের দিনের জনপ্রিয় পানীয় বাবল বা পার্ল টি

৩। চুরোস, স্পেন

কুড়মুড়ে ভাজা মিষ্টি জাতীয় একটি খাবার চুরোস। এটি খালি খাওয়া যায়, দারুচিনি আর চিনি মিশিয়ে তাতে রোল করে এবং ঘন হট চকলেটে ডুবিয়েও খাওয়া যায়। বিশেষ করে মাদ্রিদে রাতের খাবেরের পর স্ন্যাকস্‌ হিসেবে চুরোস বেশ জনপ্রিয়।

মাদ্রিদের জনপ্রিয় স্ন্যাকস্‌ চুরোস

৪। সিমিট ব্রেড, তুরস্ক

তুরস্কের খাবারের কথা শুনলেই প্রথমে মনে আসে কাবাবের কথা! কিন্তু কাবাব ছাড়াও তুরস্কের আরও একটি বিখ্যাত খাবার রয়েছে যার নাম হলো সিমিট ব্রেড। তুরস্কের রাস্তাঘাটে ঠ্যালাগাড়িতে পাওয়া যায় এই ব্রেড যা সকালের নাস্তা হিসেবেই বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। বড় রিং শেপ বা গোলাকারের এই ব্রেডের উপরের পুরোটায় তিল থাকে। খুব হালকা ধরনের এই ব্রেডটি চায়ের সাথেই খাওয়া হয় বেশি।

চায়ের সাথেই বেশি খাওয়া হয় তুরস্কের সিমিট ব্রেড

৫। বানি চো, দক্ষিণ আফ্রিকা

বানি চো মূলত ভারতের খাবার হলেও বর্তমানে এটি ডারবানের স্ট্রিট ফুড হিসেবে অধিক পরিচিত। হাফ লোফের মাঝখানে মশলাযুক্ত গরু অথবা খাসির মাংসের কারি দিয়ে তৈরি করা হয় এই স্ট্রিট ফুডটি।

হাফ লোফের ভেতর মশলাযুক্ত কারি দিয়ে বানানো হয় খাবারটি

৬। টোস্টাডাস, মেক্সিকো

খাবারটি অনেকটা ভেলপুরির মত। মচমচে ভাজা পুরির উপর অ্যাভাকোডো আর চিংড়ির মিশ্রণটি দিয়ে খাওয়া হয়। মেক্সিকোর রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাবেন এই টোস্টাডাস।

ভেলপুরির মতো খাবারটি খেতে বেশ মচমচে

৭। চেভিশে, পেরু

চেভিশেকে অনেকেই পেরুর জাতীয় খাবার হিসেবে ধরে নেয় আর সময়ের সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে যাচ্ছে। এর মূল উপকরণ হলো সামুদ্রিক কাঁচা মাছ। এর সাথে যোগ করা হয় লেবুর রস, লবণ ও চিনি। এছাড়াও কেউ কেউ সুইট কর্ণ আর মিষ্টি আলু দিয়েও খায় চেভিশে।

সামুদ্রিক কাঁচা মাছ দিয়েই তৈরি হয় এই স্ট্রিট ফুডটি

 ৮। জার্ক চিকেন,জ্যামাইকা

জ্যামাইকান এই স্ট্রিট ফুডটির রেসিপি খুবই গোপনীয়। তবুও যতটুকু ধারনা করা যায় তা থেকে বোঝা যায় যে আদা, পেঁয়াজ পাতা, থাইম, কাঁচা মরিচ দিয়ে বানানো এক ধরনের মশলাযুক্ত ঝাল মুরগির আইটেম। জার্ক চিকেনের স্বাদ অনেকটাই ঝাঁঝালো।

জিভে জল আসবে ঝাঁঝালো মুরগির স্বাদে

 ৯। সুপ্পলি, রোম

রোমের বেশ জনপ্রিয় এই খাবারটি দেখতে বলের মত। বলগুলোর ভিতরে মোজ্জারেলা ও মুরগির মাংসের পুর দিয়ে বানানো হয় সুপ্পলি। রোমের রাস্তার পাশে পিৎজার দোকানগুলোতে বিক্রি হয় এটি। তবে দোকান ভেদে সুপ্পলির মশলা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

মোজ্জারেলা ও মুরগির মাংস দিয়ে বানানো স্ট্রিট ফুডটি দেখতে বলের মত

১০। বান মি, ভিয়েতনাম

রুটির মতো দেখতে এই খাবারটির প্রচলন এসেছে মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফ্রেঞ্চ কলোনি থেকে! পূর্ব এবং পশ্চিমা এই দুই ধরনেরই ধাঁচ রয়েছে খাবারটিতে। গ্রিলড্‌ মিটবল, শশা, গাজরের আচার, ধনেপাতা, মূলা কুচি ও মেয়োনিজ দিয়ে তৈরি হয় বান মি।

ভিয়েতনামের এই পথখাবারটি দেখতে রুটির মত

 ১১। ক্রেপেস, প্যারিস

পারির রাস্তায় হাঁটতে চলতে দেখা মিলবে এই খাবারের। খাবারটিতে মসলা আর চিজের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। এছাড়াও এতে দেয়া হয় কাস্টার্ড, চিনি আর নানান রকমের ফলমূল।

প্যারিসের রাস্তার মোড়ে মোড়ে মিলবে ক্রেপেস

১২। আরিপাস, কলম্বিয়া

সকালের নাস্তা হিসেবে খাওয়া এই স্ট্রিট ফুডটির দেখা মিলবে কলম্বিয়ার বাগোতায়। যদিও অনেকে দুপুরের খাবারের পর স্ন্যাকস্‌ হিসেবে খেয়ে থাকে খাবারটি। মাখন, চিজ, কন্ডেন্সড্‌ মিল্ক, ডিম আর পেঁয়াজ দিয়ে বানানো ‘হোগাও’ নামের সস ব্যবহার করা হয় এতে। টবে হট চকলেটের সাথেই আরিপাস খেতে বেশি পছন্দ করে বাগোতার স্থানীয়রা।

কলম্বিয়ার এই খাবারটি অধিকাংশ সময়ে সকালের নাস্তায় খাওয়া হয়

১৩। তাজিন, মরক্কো

উত্তর আফ্রিকার আদিবাসীদের খাবার তাজিন এখন পরিণত হয়েছে মরক্কোর শহর মারাক্কেশের স্ট্রিট ফুডে। জ্বলন্ত কয়লার উপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা হতে থাকা এই আইটেমটি মাটির পাত্রে ঢেলে পান করা হয়। ভেড়া, মুরগি অথবা গরুর মাংস, সবজি ও বেশ খানিকটা মশলাই হলো এর মূল উপকরণ। পরিবেশনের সময় এর উপরে বাদাম ও ফল ছিটিয়ে দেয়া হয়। ভিন্ন রকমের এই খাবারটি খাওয়া হয় রুটি দিয়ে। মারাক্কেশের স্ট্রিট ফুড হলেও পুরো মরক্কোতে খুব জনপ্রিয় এই খাবারটি।

মরক্কোর এই খাবারটি পান করা হয় মাটির পাত্রে ঢেলে

১৪। তাং হু লু, চীন

চীনের সাংহাইতে পাওয়া এই স্ট্রিট ফুডটি খেতে যেমন মজার তেমনি দেখতেও অনেক লোভনীয়! বিভিন্ন ধরনের ফল, যেমন- আঙ্গুর, কমলা, কিউয়ি, কলা, স্ট্রবেরি একটি কাঠিতে কাবাবের মত করে সাজিয়ে এর উপর চিনির শক্ত পরত দিয়ে দেয়া হয়।

পাঁচমিশালী ফলের দারুণ এক স্ট্রিট ফুড তাং হু লু

১৫। দুরুম, ইস্তানবুল

দুরুম শব্দটির অর্থ হলো রোল! ইস্তানবুলের বিখ্যাত এই স্ট্রিট ফুডটি জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয়। পাতলা রুটির ভেতর কাবাব দিয়ে রোল করা থাকে খাবারটি। সাধারণত কবাবাটি মশলাযুক্ত ভেড়ার মাংস দিয়ে করা হয়ে থাকলেও মাঝে মাঝে গরু বা মুরগির মাংস দিয়ে অরা হয়ে থাকে। আর সাথে দেয়া হয় টমেটো, পেঁয়াজ, শসা, লেটুস কুচি, হট সস ও হারবালের দই।

পাতলা রুটি আর কাবাবের মজাদার খাবার দুরুম

১৬। চোরিপান, আর্জেন্টিনা

সসেজ স্যান্ডউইচ ধরনের এই স্ট্রিট ফুডটি পাওয়া যায় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে। আঠালো পাউরুটির মাঝে গরু বা শুকরের মাংস বানানো হয় এটি, যাতে দেয়া হয় আদার মত চিমিচুরি সস। আর্জেন্টিনার বিভিন্ন ধরনের খেলার ভেন্যুতে এই খাবারটির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।

 

আর্জেন্টিনার খেলার ভেন্যুগুলোতে চোরিপান বেশ জনপ্রিয়

১৭। তামিয়া, মিশর

মিশরের বিখ্যাত পথখাবার তামিয়া পাওয়া যায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব জায়গাতেই। তামিয়া বানানো হয় খবুজ নামের এক রকমের রুটির ভেতর ফালি ফালি করে কাটা ডিম, ফ্রেঞ্চফ্রাই, শসা, পেঁয়াজ, টমেটো, তাহিনি সস ও মেয়োনেজ দিয়ে।

মিশরের এই স্ট্রিট ফুডটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়

১৮। ফ্রায়েড জ্যাম ক্রাইস্যান্ট, লন্ডন

লন্ডনের আলবিওনের এই স্ট্রিট ফুডটি পেস্ট্রির মত একটি খাবার। কিন্তু এর শেইপটা একটু ভিন্ন, দেখতে অর্ধচন্দ্রাকৃতির হয়। আলবিওনের রাস্তায় পাওয়া এই খাবারটির স্বাদ জিভে জল আনার মত!

দেখতে অর্ধচন্দ্রাকৃতির খাবারটি খেতে পেস্ট্রির মত

১৯। চিজস্টেক, ফিলাডেলফিয়া

এই পথখাবারটি আঠালো ধরনের। গলানো চিজ ও মাংস দিয়ে স্টেকের মত করে বানানো দারুণ মুখরোচক একটি আইটেম।

 

গলানো চিজ আর মাংসের এক মুখরোচক মিশেল

২০। মোহিনগা, মিয়ানমার:

মোহিনগা হলো এক ধরনের স্যুপ যা মিয়ানমারের স্ট্রিট ফুড হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এই স্যুপটিতে ব্যতিক্রমধর্মী উপকরণ হিসেবে  কলা গাছের খাওয়ার যোগ্য একটি অংশ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এতে দেয়া হয় মাছ, হলুদ, লেবু পাতা আর শিমের বিচি গুঁড়া।

ভিন্ন রকম স্যুপ মোহিনগা

 

স্ট্রিট ফুড যে শুধুই ঐতিহ্যের অংশ তাই নয় বরং শ্রেষ্ঠ স্ট্রিট ফুড বাছাই করে পুরস্কারও দেয়া হয় চৌওত্জার ফাস্ট ফিস্ট অ্যাওয়ার্ডস নামে একটি প্রতিযোগিতায়। তো আপনি কোন স্ট্রিট ফুডটি ট্রাই করতে চান?

তথ্যসূত্র

১। edition.cnn.com/2016/08/08/foodanddrink/best-cities-street-food/

২। thrillist.com/eat/nation/best-street-food-cities-street-food-around-the-world

৩। fodors.com/news/photos/20-must-try-street-foods-around-the-world#!5-rou-jia-mo

Related Articles