এদেশের প্রতি ঘরে সবচেয়ে পরিচিত সবজি কোনটি? উত্তরটা যে আলু হবে তা নিয়ে আলোচনার তেমন দরকার নেই বললেই চলে। শুধু পরিচিতই নয়, এদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় সবজিগুলোর একটিও আলু। সকালে রুটি বা পরোটার সাথে আলু ভাজি দিয়ে শুরু হয়ে রাতের ভাত বা রুটির সাথে আলু দিয়ে মাছ বা মাংসের ঝোল- প্রতি বেলার পাতে বাঙালির আলুর অন্তত একটা পদ তো চাই-ই চাই। তাই বলে বাঙালির জীবনে আলু কি শুধু ওই ভাত বা রুটির সাথে বারবার একই রকম পদ হয়ে আসবে? নাকি এবার আলু পদেও আসবে নিত্য নতুন বৈচিত্র্য?
তরকারিতে আলুর বিভিন্ন পদ তো আমরা রোজই খাই। তাই বলে বিকালের নাস্তায়, টিফিনে বা সকালের নাস্তায় রুটি বা পরোটার সাথে একটু অন্যরকম আলুর পদ খেলে কিন্তু মন্দ হয় না। তাই আজ আমরা এনেছি আলুর ঝটপট নাস্তার অন্যরকম কয়েকটা পদের রেসিপি। খাবারের পুষ্টিমান অক্ষুণ্ণ থাকলো, সময় বাঁচলো, সেই সাথে খুবই কম খরচে খাবারের টেবিলেও আসলো দারুণ বৈচিত্র্য।
ডিম- আলুর মাফিন
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- তিনটি মাঝারি আকারের ছোট ছোট কিউব করে কাটা আলু
- কুঁচানো পেঁয়াজ – এক কাপ
- কুচি করা কাঁচামরিচ – স্বাদমতো
- চারটি ডিম
- দুটি ডিমের সাদা অংশ
- চার বা পাঁচ টেবিল চামচ দুধ
- রসুন বাটা- অর্ধেক চা চামচ
- লবণ- পরিমাণমতো
- গোলমরিচ গুঁড়া- অর্ধেক চা চামচ
- টোস্ট বিস্কুটের গুঁড়া দুই টেবিল চামচ
প্রণালী
প্রথমে ওভেন ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় প্রি-হিট ও মাফিনের ছাঁচে সামান্য তেল মালিশ করে নিতে হবে। ওভেনপ্রুফ বাটিতে কাটা আলু, পেঁয়াজ ও গুঁড়া মরিচ একসাথে একটু নেড়ে প্লাস্টিক পেপার দিয়ে ঢেকে ১০ মিনিট ওভেনে সিদ্ধ করে নিতে হবে। অবশ্যই প্লাস্টিক পেপারের মাঝে বাতাস বের হয়ে যাওয়ার জন্য একটা ছিদ্র করে দিতে হবে।
এবার ডিমগুলো, ডিমের সাদা অংশ, দুধ ও অন্যান্য মসলা অন্য পাত্রে ভালো করে ফাটিয়ে নিতে হবে। মাফিনের ছাঁচে আগের আলুর মিশ্রণ ও তার ওপর ডিমের মিশ্রণ দিয়ে সবার উপরে টোস্টের গুঁড়া দিয়ে ওভেনে ১২-১৫ মিনিট বেক করতে হবে। শেষে দেখে নিতে হবে যেন সামান্য ফুলে ওঠে ও বাদামী রঙের হয়ে যায়। ছুরি দিয়ে ধারগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে পাত্রে ঢেলে বিকালের নাস্তায় বা টিফিনের বক্সে উঠুন মজাদার, তেলহীন ও অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ডিম-আলুর মাফিন।
মসলাদার আলুর চাট রেসিপি
উপকরণ
- পছন্দমতো ছোট আকৃতিতে কাটা আলু সেদ্ধ – চারকাপ
- ভোজ্য তেল – তিন টেবিল চামচ
- আদা কুচি – এক টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ কুচি – ৪/৫টি
- ধনেপাতা কুচি – ১/৪ কাপ
- লেবুর রস – এক টেবিল চামচ
- পরিমাণ মতো লবণ
চাট মসলার জন্য উপকরণ
- জিরা গুড়া – এক টেবিল চামচ
- মরিচ গুঁড়া – এক চা চামচ
- গোলমরিচ গুঁড়া – এক চা চামচ
- আদা বাটা – এক চা চামচ
- চিনি – দুই চা চামচ
- হিং – ১/৮ চা চামচ
- সামান্য বিটলবণ ও টেস্টিং সল্ট
পাঠক চাইলে বাজারে বিক্রিত চাট মসলাও ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি
চাট মসলার সব উপকরণ খুব ভালো করে একসাথে মিশিয়ে আলাদা করে রেখে দিতে হবে।
একটি ফ্রাইং প্যান অল্প আঁচে চুলায় দিয়ে তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে সিদ্ধ আলুগুলো দিয়ে উপরে কিছুটা লবণ ছিটিয়ে লালচে করে ভেজে নিতে হবে। সিদ্ধ হতে ও ভাজতে প্রায় দশ মিনিটের মতো সময় লাগবে। এরপর চুলা বন্ধ করে এতে আদা বাটা, ধনেপাতা কুঁচি, লেবুর রস, মরিচ কুঁচি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে বানিয়ে রাখা চাট মসলা এক বা দেড় চামচ দিয়ে ভাল করে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে। আলুর প্রতিটি টুকরো যেন চাট মসলায় মেখে থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।
এই অন্যরকম আলু পদটি বিকেলবেলার নাস্তা হিসেবে সস বা মেয়োনোজের সাথে পরিবেশন করতে পারেন। অথবা সকালে বা রাতে রুটি বা পরোটার সাথে পরিবেশন করুন মজাদার মসলাদার আলু চাট।
আলুর ওমলেট
উপকরণ
আলু ছাড়াও এখানে লাগছে-
- তেল – দুই টেবিল চামচ
- লাল মরিচের গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া – ১/৪ চা চামচ
- পেঁয়াজ কুঁচি – এক টেবিল চামচ
- ডিম – তিনটি
- কাঁচা মরিচ কুঁচি – চারটি
- ধনেপাতা কুঁচি – দুই টেবিল চামচ
- লবণ – পরিমাণমতো
- গোল মরিচের গুঁড়া- ১/৪ চা চামচ
প্রণালি
প্রথমে মাঝারি আকারের দুটি আলু পাতলা ফালি করে কেটে নিতে হবে। তারপর একটি প্যানে তেল দিয়ে তাতে কাটা আলু, লাল মরিচের গুঁড়া, জিরা গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে ভাজতে থাকুন। দুই থেকে তিন মিনিট পর পেঁয়াজ আর গোল মরিচ গুঁড়া দিয়ে দিন। ৬-৭ মিনিট ভাজতে হবে যেন আলুগুলো নরম হয়।
অন্যদিকে আর একটি বাটিতে ডিম ভেঙে নিয়ে তাতে লবণ, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। ৬-৭ মিনিট পর যখন আলু ভাজা হয়ে যাবে তখন আলু ভাজা গুলো, ডিম এর মিশ্রণে ঢেলে দিতে হবে। এবার প্যানে যে বাকি তেলে ডিম আলুর মিশ্রণ ঢেলে দিন। আলুর টুকরোগুলোর উভয়দিক ভালো করে ভেজে তুলে নিন আলুর ওমলেট। এটা রুটি অথবা পরটার সাথে খাওয়া যায়। আবার শুধু ওমলেট হিসাবেও খেতে পারেন। বাচ্চাদের দারুণ পছন্দের একটি খাবার এটি। তবে তাদের জন্য মরিচের পরিমাণ আলাদা হতে পারে।
আলুর মাসালা কেক
উপকরণ
- সিদ্ধ আলু – দুই কাপ
- আদা কুচি – এক টেবিল চামচ
- ধনে পাতা কুচি – ১/৪ কাপ
- মৌরি – এক চা চামচ
- গুঁড়া দুধ – দুই টেবিল চামচ
- গোল মরিচ গুঁড়া – এক চা চামচ
- পনির কুচি – দুই টেবিল চামচ
- ডিম – একটি
- মাখন – এক টেবিল চামচ
- লবণ – পরিমাণমতো।
প্রণালি
প্রথমে দুই কাপ সিদ্ধ আলুতে এক এক করে ধনেপাতা কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, মিহি করে কুচানো পনির, মৌরি, আদা কুচি,গোল মরিচ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। এরপর এতে একে একে অর্ধেক কাপ গুঁড়া দুধ ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে নেড়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণে একটি ডিম ভেঙে দিয়ে মেখে নিয়ে তাতে আবার এক টেবিল চামচ মাখন দিয়ে দিতে হবে। ভালো মিশ্রণ তৈরি করতে হাত দিয়ে মাখানোই ভালো। এবার একটি কেকের ছাঁচে বাটার লাগিয়ে তাতে মিশ্রণটি ঢেলে দিয়ে প্রি-হিট করে রাখা ওভেনে ২৫০ ডিগ্রিতে ২০ মিনিট বেক করুন। ২০ মিনিট বেক করলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার আলুর মাসালা কেক।
সকালে, টিফিনে বা বিকালের নাস্তায় পরিবেশন করুন মজাদার আলু মাসালা কেক।
শেষ করি লোভনীয় আলুর মিষ্টির একটি রেসিপি দিয়ে,
আলুর মিনি চমচম
উপকরণ
- আলু – দুটি (ছোট সাইজের)
- ময়দা – দুই টেবিল চামচ
- গুঁড়া দুধ – এক টেবিল চামচ
- বেকিং পাউডার – এক চা চামচ
- ডিম – একটি
- ঘি – এক চামচ
- চিনি – এক টেবিল চামচ
- এলাচি – পরিমাণমতো
- দারুচিনি – পরিমাণমতো
- পানি – সিরা তৈরির জন্য
প্রণালি
প্রথমে সিদ্ধ আলুগুলোকে একদম মিহি করে চটকে নিতে হবে। অথবা সিদ্ধ আলু পিষে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিলেও হয়। এবার একটি পাত্রে চটকানো আলু নিয়ে তাতে ময়দা, গুঁড়ো দুধ ও বেকিং পাউডার দিয়ে দিতে হবে। এবার অন্য একটা বাটিতে ডিম ফেটিয়ে নিয়ে আগের মিশ্রণের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি যেন হাতে না লেগে যায় তার জন্য এক চা চামচ ঘি দিতে হবে। ঘি দেওয়ার পর মিশ্রণটি ভালো করে মেখে একটি ডো বানাতে হবে। তারপর ডো থেকে ছোট ছোট বলের মতো মিষ্টি বানিয়ে নিতে হবে। বল যত সুন্দর ও মসৃণ হবে, মিষ্টিও তত সুন্দর হবে।
এবার একটি পাত্রে ১ টেবিল চামচ চিনি, এলাচ, দারুচিনি ও পরিমাণ মতো পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে আস্তে আস্তে জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করে নিতে হবে।
অন্যদিকে কড়াইতে তেল গরম করতে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেল মিষ্টিগুলো তেলে দিয়ে একদম অল্প আঁচে ভাজতে হবে। যখন গাঢ় বাদামী রঙ ধারণ করবে তখন সেগুলো সাবধানে তুলে ফুটন্ত সিরার ভেতর দিয়ে দিতে হবে। ১০ মিনিট চুলায় রেখে, চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। এবার ১ ঘন্টা সিরায় ভিজতে দিন। তারপর পরিবেশন করুন মজাদার আলুর মিনি চমচম।
চিরচেনা আলু এভাবেই নতুন রূপে ও স্বাদে মুগ্ধ করুক সবাইকে।
ফিচার ইমেজ: paleoniobie.com