বেঁচে থাকার জন্য মানুষের খাবারের প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজন থেকেই রান্না করতে শিখেছে মানুষ, তৈরি করেছে নানা রকম রেস্টুরেন্ট। যুগে যুগে প্রয়োজনীয়তার সাথে যোগ হয়েছে বিলাসিতা। তৈরি হয়েছে নানা রকম বিশেষত্বপূর্ণ রেস্টুরেন্ট। এদের কোনোটি হয়তো অবাক করবে আপনাকে, আবার কোনোটি করবে বাকরুদ্ধ! এই রেস্টুরেন্টগুলোকে দেখে “রেস্টুরেন্টও এমন হয়?” কথাটি ভাবতে বাধ্য হবেন আপনি। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক কেমন সেই রেস্টুরেন্টগুলো!
১. দঁও ল্য নোয়া
‘দঁও ল্য নোয়া’ কথাটির অর্থ অন্ধকারের মধ্যে। আর বাস্তবেও ‘দঁও ল্য নোয়া’ রেস্টুরেন্টে এলে সোজা অন্ধকারের ভেতরেই ঢুকতে হবে আপনাকে। ভুল করে হয়তো ভেবেও বসতে পারেন যে, রেস্টুরেন্টে লোডশেডিং চলছে। তবে এমন কিছুই নয়, বরং নামের সাথে মিল রেখেই পুরোটা সময় অন্ধকার করে রাখা হয় ‘দঁও ল্য নোয়া’ রেস্টুরেন্টকে। প্রত্যেকটি রেস্টুরেন্টই চায় নিজেদের কিছু বিশেষত্ব রাখতে। ‘দঁও ল্য নোয়া’ রেস্টুরেন্টটিও এর ব্যতিক্রম নয়। আর এর বিশেষত্ব হলো অন্ধকার।
রেস্টুরেন্টে পা রাখা থেকে শুরু করে এখান থেকে বের হওয়া পর্যন্ত নিকষ কালো অন্ধকারে ডুবে থাকতে হবে আপনাকে। সাথে থাকা মোবাইল কিংবা আলো নিঃসরণকারী সব ধরনের বস্তু রেখে দিতে হবে। সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না আপনি। আপনি কার পাশে বসে আছেন, কে আপনাকে খাবার পরিবেশন করছেন, আপনি কী অর্ডার করছেন, আসলেই কেমন খাবার খাচ্ছেন আপনি- এই সবকিছুই পুরোপুরি আন্দাজে করতে হবে আপনাকে। খাবারের স্বাদ কেমন? সেটা জানতে হলে না হয় একবার পরখ করেই আসুন অন্ধকারের রেস্টুরেন্ট ‘দঁও ল্য নোয়া’। ফ্রান্স, মস্কো এবং প্যারিসে রেস্টুরেন্টটির শাখা আছে।
২. দ্য ইটার্নিটি রেস্টুরেন্ট
একবার ভাবুন তো, চারপাশে থরে থরে সাজানো কফিন আর তার ঠিক পাশেই বসে আপনি খাবার খাচ্ছেন! কী, বিষম খেলেন বুঝি? বলছিলাম ‘দ্য ইটার্নিটি রেস্টুরেন্ট’ এর কথা। পোলিশ বর্ডারের খুব কাছে ত্রাস্কাভেটস শহরের এই রেস্টুরেন্টটি কফিন রেস্টুরেন্ট নামেই বেশি পরিচিত। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলেই অন্যরকম একটা আবহের ছোঁয়া পাবেন আপনি। সেই আবহকে আরো একটু মাত্রা দিতে প্রতিটি টেবিলের উপরে রাখা আছে একটা করে মোমবাতি। পাশে দাঁড়িয়ে আছে কফিন। আর মেন্যু? মেন্যুর ভেতরেও শেষকৃত্যের ছোঁয়া রেখেছেন রেস্টুরেন্ট মালিক। মেন্যুকার্ডে নানা রকম শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের নাম দেখতে পাবেন আপনি। তবে সেগুলো আসলে দ্য ইটার্নিটি রেস্টুরেন্টের খাবারের নাম। নিজেদের এই রেস্টুরেন্টকে অনন্য বলে ভাবেন দ্য ইটার্নিটির মালিকেরা।
৩. ডিনার ইন দ্য স্কাই
গৎবাঁধা নিয়মে খাবার খেতে আর ভালো লাগছে না? আপনার জন্যই হয়তো তৈরি হয়েছে ‘‘ডিনার ইন দ্য স্কাই’ রেস্টুরেন্টটি। আর দশটি রেস্টুরেন্টের মতো এই রেস্টুরেন্টের মাটিতে পা রেখে খাবার খেতে হবে না আপনাকে, খাবার-দাবারের পর্বটা আকাশের বুকেই সারতে পারবেন আপনি এখানে।
ডিনার ইন দ্য স্কাইয়ে খেতে বেশ খরচ হবে আপনার। কিন্তু তাতে কী? অন্যরকম অভিজ্ঞতার জন্য এমনটা তো করাই যায়। বিশাল এক টেবিলকে মানুষসহ উপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এই রেস্টুরেন্টে। আপনি কী খেতে চাচ্ছেন সেটাও আগেই বলে দিতে হবে। অন্যসব রেস্টুরেন্টের মতন বারবার খাবার বদলে নেওয়ার সুযোগ নেই এখানে। ডিনার ইন দ্য স্কাই রেস্টুরেন্টটি বেলজিয়ামে অবস্থিত হলেও একে ইচ্ছে মতন যেকোনো দেশে নিয়ে যাওয়া যায়। ইতিমধ্যেই প্যারিস আর ব্র্যাসেলে ভ্রমণ করেছে রেস্টুরেন্টটি। সামনে ডিনার ইন দ্য স্কাইকে দেখা যাবে নিউ ইয়র্ক ও নায়াগ্রায়। কী ভাবছেন, যাবেন নাকি একবার আকাশের বুকে খাবার খেতে?
৪. হবিট হাউজ
হবিট চলচ্চিত্রটি দেখেছেন নিশ্চয়ই? ভাবছেন, সেই চলচ্চিত্রের সাথে মিল রেখেই হবিট হাউজ রেস্টুরেন্টটি গড়ে উঠেছে? একদম না। চলচ্চিত্রের অনেক আগেই তৈরি হয়েছিলো হবিট হাউজ, সেই ১৮০১ সালে! হবিট হাউজের বিশেষত্ব হচ্ছে এখানকার সব পরিবেশকই বামনাকৃতির মানুষ!
বামন মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এই রেস্টুরেন্টটির জন্ম। ম্যানিলার ম্যাবিনি স্ট্রিটে অবস্থিত হবিট হাউজ রেস্টুরেন্টে এলে কেবল এই সুন্দর মানুষগুলোর সান্নিধ্যই নয়, বরং বেশ ভালো মানের খাবার আর লাইভ মিউজিক উপভোগ করতে পারবেন আপনি। নিজেদের স্বাদ ও মানের কারণেই এখনো পর্যন্ত আশপাশের আরো সব রেস্টুরেন্টের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে, সবাইকে টেক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে আছে হবিট হাউজ।
৫. নিউ লাকি
এবার আর দূরে কোথাও নয়, চলুন ঘুরে আসা যাক পাশের দেশ ভারতের এক রেস্টুরেন্ট থেকে। রেস্টুরেন্টটির নাম নিউ লাকি। চা আর মাখন পাউরুটির জন্য বিখ্যাত রেন্টুরেন্টটিতে কেবল খাবার নয়, আছে অনেকগুলো কবরও! কী ভাবছেন? কবরগুলো লোক দেখানোর জন্য তৈরি? একদম নয়। আহমেদাবাদে অবস্থিত নিউ লাকি রেস্টুরেন্টের ভেতরে সত্যিই আছে অনেক বছর আগের কিছু কবর। কার কবর সেগুলো? কেউ জানে না। মূলত, কৃষ্ণা কুট্টি নায়ের নিউ লাকি শুরু করার পূর্বে এখানে ছিল একটি কবরস্থান। অনেকদিন বন্ধ থাকার পর এখানে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করেন তিনি।
রেস্টুরেন্ট নির্মাণের পর এখানকার সব কবরে সবুজ রঙ করে দেওয়া হয়। সেই সাথে প্রতিদিন ফুল দেওয়া হয় কবরের উপরে। গায়ে কাঁটা দিচ্ছে? হতে পারে ব্যাপারটা একটু উদ্ভট, তবে তাই বলে কিন্তু ভিড় কম থাকে না নিউ লাকি রেস্টুরেন্টে।
৬. মডার্ন টয়লেট
বাথরুমে কমোড দেখে অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু কমোড যদি কখনো রেস্টুরেন্টের ভেতরে দেখতে পান তাহলে? তাইওয়ানের মডার্ন টয়লেটের ব্যাপারটা একেবারেই এরকম। রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকলে আপনার মনে হতে পারে, কোনো রেস্টুরেন্ট নয়, কারও বাথরুমে চলে এসেছেন আপনি!
তবে আপনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, রেস্টুরেন্টটি বানানোই হয়েছে এভাবে। বসার জন্য কোনো চেয়ার নয়, কমোড পাবেন আপনি। চারপাশে বাথরুমের লতা-পাতা আর ফুল ফুল ছাপওয়ালা টাইলস। এরপর আগে খাবার টেবিলের বদলে হাত ধোয়ার বেসিন। অবশ্য তার উপরে স্বচ্ছ কাঁচ দেয়া থাকবে। খাবারের কথা ভাবছেন? খাবারেও বাথরুমের সাথে সঙ্গতি রাখার চেষ্টা করা হয়েছে মডার্ন টয়লেটে।
এখানে আপনার পছন্দসই খাবার পাবেন ছোট কমোডের ভেতরে। সেই সাথে আরো আছে মূত্রথলি থেকে পানীয় পান করার ব্যাপার! শেষমেশ আইসক্রিমটাও পটির আকৃতিতেই পরিবেশন করা হবে আপনাকে। কী ভাবছেন, এত বেশি সৃজনশীলতা সহ্য করতে পারবেন তো?
৭. সেফ হাউজ
খাবারের টেবিলে খানিকটা উত্তেজনা তৈরি করতে চান? তাহলে সেফ হাউজে চলে আসুন। নামটা শুনতেই একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে না? যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের মিলওয়াওকীতে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি দেখলে আসলেও একবাক্যে কোনো স্পাই থ্রিলারের গোপন সেফ হাউজ বলে দেওয়া যায়।
বাস্তবে মোটেও এ ধরনের কোনো ব্যাপার যুক্ত নেই এই রেস্টুরেন্টটির সাথে। তবে অন্যান্য সব রেস্টুরেন্টের মতো এই সেফ হাউজ রেস্টুরেন্টটির বিশেষত্ব হলো এখানে প্রবেশ করার জন্য বিশেষ পাসওয়ার্ড জানতে হবে আপনাকে। বাইরে থেকে দেখে অবশ্য বোঝার কোনো উপায় নেই যে, ভেতরে এরকম কোনো রেস্টুরেন্ট আছে। সেক্ষেত্রে রেস্টুরেন্টটি খুঁজে বের করাও আপনার দায়িত্ব। মোটকথা, সেফ হাউজ বলতে যা বোঝায় তার পুরোপুরি আমেজ পাবেন আপনি এই সেফ হাউজ রেস্টুরেন্টে।