আজব এই পৃথিবীতে বিচিত্র কত কিছুরই তো দেখা মেলে। আমাদের এই কমলালেবুর মতো আকৃতির পৃথিবীর কত কিছুই তো আমাদের অজানা। অজানাকে আবিষ্কার করতে করতে জানার মাঝেই প্রকাশিত হয় বিস্ময়। প্রতিনিয়ত অবাক করা সৌন্দর্যের মাঝেই বিমোহিত হই আমরা। আমি যদি বলি এমনই এক অবাক করা সৌন্দর্য রয়েছে আমাদের খাওয়ার জিনিসের আকৃতির মাঝে, তাহলে কি বিশ্বাস করবেন আপনারা? অযৌক্তিক তথ্য দিয়ে উদ্ভ্রান্ত করার মতো নয়, কিন্তু সত্যি আশ্চর্য হওয়ার মতোই তেমন কিছুই জানাবো আপনাদের।
আমরা সকলেই কম বেশি মিলিয়ে স্বাস্থ্য সচেতন। এ-ও জানি যে, সুস্থ থাকতে হলে আদর্শ ডায়েট প্ল্যান আমাদের অনুসরণ করতেই হবে। আদর্শ ডায়েট প্ল্যানের অধিকাংশ জুড়ে রয়েছে নানা রকম শাকসবজি আর ফলমূল। এসব আমাদের যে কতটা উপকার করে আসছে তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এটা কি জানি যে, এমন কিছু সবজি বা ফল রয়েছে যা শুধু উপকারীই নয়, পাশাপাশি দেখতেও অনেকটা মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো। কী? অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তো? তবে চলুন দেখেই আসি কী এমন সে জিনিস।
গাজর
ছোটবেলায় নিশ্চয় বাবা-মায়ের মুখ হতে শুনে থাকবেন যে, গাজর খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে। কথাটা মোটেও অযৌক্তিক নয়। প্রাচীন মিথ হলেও এর পেছনে বিজ্ঞানসম্মত জোরালো প্রমাণ রয়েছে বৈ কি! ফ্লোরিডার এক ইন্সটিটিউশন “স্মার্ট ফর লাইফ ওয়েট ম্যানেজমেন্ট সেন্টার” এর মেডিক্যাল ডিরেক্টর স্যাশন মৌলভি জানিয়েছেন যে গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিটা ক্যরোটিন নামে পরিচিত। এর প্রভাবে ম্যাকুলার ডি-জেনারেশান বা দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া থেকে মুক্তি দেয়। তাছাড়া গাজরে আরও রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে, বি৮, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপকারী উপাদান।
এই গাজর আড়াআড়িভাবে কেটে স্লাইস করে নিয়ে খুব কাছ থেকে দেখুন তো কিছু মিল পান কিনা চোখের সাথে? চোখের পিউপিল এবং আইরিশের লাইনের মতন গাজরের স্লাইসেও কিছু চোখ সদৃশ রেডিয়েটিং লাইন দেখতে পাবেন যা অনেকটাই চোখের মতোই দেখতে।
পিঁয়াজ
একটি মাঝামাঝি আকৃতির পিঁয়াজ হাতে নিয়ে মাঝ বরাবর আড়াআড়িভাবে কেটে নিয়ে দেখুন তো? কী বুঝলেন কিছু? এর কাটা অংশটি দেখতে অনেকটা বডি সেলের মতন। অবশ্য বিজ্ঞান আর মেডিকেলের ছাত্র ব্যতীত এর মর্ম উদ্ধার করা খুব কঠিন।
গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে, পিঁয়াজ শরীরের খারাপ উপাদানগুলো পরিষ্কার করতে বিশেষ সহায়তা করে। তাছাড়া পিঁয়াজ কাটার সময় চোখে যে জ্বালাপোড়া করে পানি আসে তাতেও কিন্তু উপকার বৈ ক্ষতি কিছু হয় না। চোখের এপিথেলিয়াল নামক যে স্তর রয়েছে পিঁয়াজ কাটার পর চোখের অশ্রুজলেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। সুতরাং বেশি বেশি পিঁয়াজ কাটুন আর চোখ পরিষ্কার রাখুন।
কলা
অতি পরিচিত সুস্বাদু এই ফলটি দেখতে কীসের মতন হতে পারে নিশ্চয় প্রশ্ন জেগেছে মনে? ইন্টারনেটের যুগে ইমোজি বা ইমোটিকন চেনেন না এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যায় খুব কম। একটি আস্ত বাঁকানো কলা নিয়ে আপনার ঠোঁটের উপরে ধরুন তো। দেখুন মুহূর্তেই আপনার গোমড়া মুখখানা ইমোটিকনের হাস্যোজ্বল মুখের মতো দেখতে মনে হচ্ছে কি না!
কলাকে বলা হয়ে থাকে অ্যান্টিডিপ্রেশান ড্রাগ। কলাতে উপস্থিত সেরোটনিন নামক উপাদানটি মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রভাবিত করে যাতে আপনার মুড ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। সুতরাং বেশি বেশি কলা খান, মুড ভালো রাখুন।
শিমের বিচি
একটু বড়, লম্বা বাঁকানো, হালকা মেরুন রঙের শিমের বিচি হাতে নিয়ে মিলিয়ে দেখুন তো? দেখতে অনেকটা কিডনির মতোই দেখাবে। হ্যাঁ কিডনির মতো দেখতে হওয়াতে ইংরেজীতে এর নাম কিডনি বিন রাখা হয়েছে। বাংলাতে অবশ্য আমরা শিমের বিচি নামেই চিনে থাকি।
এতে যে ফাইবার রয়েছে তা খুব উচ্চ প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ যা কিনা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
ওয়ালনাট
ওয়ালনাটের ভেতরের ভাঁজগুলোর ধরণ দেখতেই মনে আসে মানুষের ব্রেইনের ভাঁজের কথা। হ্যাঁ, এই ওয়ালনাটের গঠন অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরের গঠনের মতোই।
লিসা অ্যাভেলিনা নামের এক ডায়েটিশিয়ান দেখিয়েছেন যে ওয়ালনাটে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মানুষের মস্তিষ্কের কার্যাবলির খুব জোরালো উন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করে।
মাশরুম
একটি মাশরুম নিয়ে লম্বালম্বিভাবে মাঝ বরাবর কেটে ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, এর গাঠনিক দিক অনেকটাই আমাদের কানের গঠনের সাথেই মিলে যায়। মাশরুমে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি শুধুমাত্র আমাদের শ্রবণ শক্তি বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে না, আমাদের হাড়ের কার্যাবলিতেও এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়।
সেলেরি
এই সেলেরি দেখতে অনেকটা হাড় বা পায়ের লম্বা শিরা সদৃশ। ছবিতেই খেয়াল করুন। আমাদের হাড়ে রয়েছে ২৫% সোডিয়াম যা কিনা সেলেরিতেও বিদ্যমান। এছাড়াও সেলেরিতে ভিটামিন এ, সি, কে এবং পটাশিয়াম পাওয়া যায়।
ব্রকলি
ব্রকলির ছোট ছোট ফুলগুলো আলাদা করে হাতে নিয়ে ছবির সাথে মিলিয়ে দেখুন। মিনি ক্যান্সার সেলের সাথে এর খুব মিল পাওয়া যায়। অনেক স্বাস্থ্যবার্তা অনুসারে জানা যায়, দৈনিক ব্রকলি খাবারের তালিকায় রাখলে ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০% কমিয়ে আনা সম্ভব।
টমেটো
টমেটো মাঝ বরাবর কেটে দেখা যায় এর গঠন অনেকটা হৃদপিন্ডের মতোই দেখতে। বিজ্ঞানী সোমার জানিয়েছেন যে, টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপেন উপাদানের কারণে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আদা
বমি বমি ভাব হলে বয়স্করা বলে থাকেন, এক টুকরো আদা মুখে দিতে, পেট ঠান্ডা থাকে। পুরোনো ধারণা হলেও কিন্তু সঠিক, আদা পাকস্থলীর হজমে এবং বমি ভাব দূরীকরণে খুবই ফলপ্রসূ। আবার আদা গাঠনিক দিক থেকে অনেকটা পাকস্থলীর মতোই দেখতে। বিষয়টা মজার না বলুন?
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু অনেকটা প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের মতোই দেখতে। তাছাড়া মিষ্টি আলু রক্তে স্যুগারের ভারসাম্য রক্ষা করে অগ্ন্যাশয়কে কাজ দ্রুততর করতে সাহায্য করে থাকে। মিষ্টি আলুতে ভিটামিন বি-৬ পাওয়া যায়।
আঙ্গুর
ফুসফুসের অ্যালভিওলাই দেখতে অনেকটা আঙ্গুরের মতোই। আঙ্গুরের প্রো-এন্থোসায়ানিডিন অ্যালার্জি বা ফুসফুসের হাঁপানি রোগ প্রতিকারে খুবই সাহায্য করে থাকে।
জিন্সেং মূল
এই জিন্সেং মূল দেখতে অনেকটা মানুষের দেহাকৃতির মতোই। অনেক ক্ষেত্রে আবার এর সাথে মিল পাওয়া যায় মানব দেহে উপস্থিত শিরা-উপশিরার সাথে। হাজার হাজার বছর ধরে এই শিকড় ব্যবহার হয়ে আসছে নানা ওষুধি গুণে বিভিন্ন রোগ সারাতে।
রোজ এই শিকড় খাদ্য তালিকায় থাকলে মেধা বর্ধক এবং শক্তি বর্ধক ভূমিকা পালন করে চির সজীব থাকতে সহায়তা করে। এছাড়া রক্তে স্যুগার লেভেল কমানো, কোলেস্টেরল কমানো, মানসিক অবসাদ বা চাপ কমানো এবং ডায়াবেটিক রোগ সারাতেও এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জলপাই
ওভারি দেখতে অনেকটা জলপাইয়ের মতোই। জলপাই এবং জলপাই তেলে উপস্থিত ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান শরীর সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকর।