শরৎ মানেই কাশফুল, শরৎ মানেই দুর্গাপূজা। আর দুর্গাপূজা মানেই ঢাক ঢোল আর লুচি – আলুর দম। নতুন পোশাক, দলবেঁধে পূজা দেখা আর নারিকেলের নাড়ু, আলুর দমের মাঝেই পূজার অন্যতম আনন্দ। এই পূজায় কি রাঁধবেন, কি দিয়ে আপ্যায়ন করবেন অতিথিকে তা নিয়ে আর আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। পূজা উপলক্ষ্যে কয়েকটি পদ নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন।
প্রথমেই আসা যাক পূজার অন্যতম আকর্ষণ লুচি আর আলুর দমে।
লুচি
লুচি একটি বাংলা খাবার। হাজার বছর ধরে বাঙ্গালির ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে লুচি। লুচি- আলুর দম, লুচি – সবজি, লুচি –মাংস, লুচি – শুক্ত এবং লুচি- কাবাব আমাদের অত্যন্ত প্রিয় কিছু খাবারের নাম। কেউবা আবার লুচির সাথে মোহনভোগ হালুয়া এবং গরম গরম রসগোল্লার কথা শুনলে জিভে জল ধরে রাখতে পারেন না।
তবে ফুলকো লুচি খেতে সবচেয়ে দারুণ। অনেকে মনে করেন খামিরকে বুঝি আধ ঘণ্টা ভেজা কাপড়ে ঢেকে রাখলে লুচি ফুলকো হবে। ময়দায় বেশি করে তেল বা ঘি এর খামির দিলে লুচি ফুলবে ভালো। এসব কিছুই করতে হবে না আপনাকে। চলুন দেখে নেই কিভাবে তৈরি করতে হয় এই ঐতিহ্যবাহী খাবার।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
ময়দা ৩ কাপ, তরল ঘি ১ টেবিল চামচ (মাখানোর জন্য), লবণ স্বাদ মত, সামান্য চিনি, বেকিং পাউডার ১/২ চা চামচ, পানি প্রয়োজনমত, তেল ভাজার জন্য।
প্রস্তুত প্রণালী
ময়দার সঙ্গে পানি, লবণ, চিনি এবং বেকিং পাউডার মিশিয়ে মাখাতে হবে। প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে খামিরটি বেশ নরম করুন। খামির বেশ ভাল করে হাত দিয়ে ডলে ডলে মাখান। এতে লুচি ভাজাও ভালো হবে। খামি হয়ে গেলে ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে গোল করে বেলে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে ডুবোতেলে ভেজে ফুলে উঠলে তুলে নিন। মনে রাখবেন লুচি যেন বেশি মোটা কিংবা বেশি পাতলা না হয়ে যায়।
আলুর দম
প্রয়োজনীয় উপকরণ
আলু ডুমো করে কাটা- ২ কাপ, আদা বাটা- ১ চা চামচ, রসুন বাটা- ১ চা চামচ, পিঁয়াজ বেরেস্তা- ১/৪ কাপ, মরিচ গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া- ১/৪ চা চামচ, জিরা ভাজা গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি- ইচ্ছা মত, টমেটো বাটা বা টমেটো সস, পাঁচ ফোড়ন- ১ চা চামচ, ঘি- ১ টেবিল চামচ, তেল- ২ টেবিল চামচ, ধনেপাতা- ইচ্ছামতন, তেজপাতা, লবণ- স্বাদ মত
প্রণালী
কড়াইতে প্রথমে তেল দিন। তেল গরম হয়ে এলে তেজপাতা, জিরা, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ দিতে হবে। একটু নেড়েচেড়ে তাতে রসুন বাটা, আদাবাটা, টমেটোর সস, হলুদ ও লবণ ও পানি দিয়ে মসলা কশান। কশানো হলে এবার সেদ্ধ আলু দিয়ে দিন। ফুটে এলে জিরা এবং ধনিয়া গুড়া দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। এবার আরেকটা প্যানে ঘি গরম করুন, তাতে পাঁচ ফোড়ন দিয়ে দিন এবং পুরো মিশ্রণটা আলুর মাঝে ঢেলে দিয়ে বাগাড় দিন এরপর বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন পাঁচ ফোড়ন যেন পুড়ে না যায়, তাতে পুরো খাবারটা তেতো হয়ে যাবে।
নারকেলের গুড়ের নাডু
প্রয়োজনীয় উপকরণ
নারকেল কুড়ানো ৩ কাপ, চিনি+ গুড় পরিমাণ মতো, এলাচ গুড়া হাফ চা- চামচ, কপূর এক চিমটি (যাতে নাড়ু দীর্ঘস্থায়ী হয় )
প্রণালি
নারকেল এবং গুড় একসাথে জাল দিন। ধীরে ধীরে নাড়ান। একসময় আঠালো হয়ে এলে যখন হাড়ির তলাথেকে চেড়ে আসবে তখন এলাচ গুড়া, অল্প বা কর্পূর দিয়ে নামিয়ে ছোট ছোট নাড়ু বানান।
নারকেলের চিনির নাড়ু
প্রয়োজনীয় উপকরণ
নারকেল চারটি কোড়ানো, চিনি ৩০০ গ্রাম, দুধ ২ কেজি এবং এলাচ ২-৩ টি।
প্রণালী
কড়াইয়ে দুধ দিয়ে জ্বাল দিন। ফুটে উঠলে এলাচ ও চিনি দিয়ে সাবধানে নাড়ুন। দুধ একটু ঘন হয়ে এলে নারকেল ঢেলে দিন। এভাবে ক্রমাগত নাড়ান, যেন কড়াইয়ের গায়ে লেগে না যায়। ধীরে ধীরে নারকেল ও দুধের মিশ্রণ ভালোভাবে মিশে গেলে দেখবেন নারকেল থেকে তেল বের হতে শুরু করেছে। এবার নামিয়ে হালকা বেটে গোলাকৃতির নাড়ু বানান। নাড়ু বেটে নিলে নাড়ুর ওপরের অংশটুকু বেশ মসৃণ হয়। হালকা গরম অবস্থাতেই নাড়ু বানাতে হবে। ঠান্ডা করে বানাতে গেলে গোল আকার দেওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। মনে রাখবেন নারকেল কোড়ানোর সময় যেন কালো অংশ উঠে না আসে।
লাবড়া
বহুমেশালি সবজির পদকে মূলত লাবড়া বলা হয়। লাবড়ার রান্নার লৌকিক বিধি হচ্ছে এতে তিতা, মিঠা, কষ্টে, ঝাল অর্থাৎ প্রকৃতির নানা স্বাদের মিশেল থাকে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
বিভিন্ন রকম সবজি (যেমন পটল, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, বেগুন ও আলু) কাঁচামরিচ, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা, ধনিয়া বাটা, হলুদ-মরিচ গুড়া, পাঁচ ফোড়ন, তেজ পাতা, গরম মসলা, তেল, লবন স্বাদ মত, আদা কুচি এবং ঘি।
প্রণালী
একটি কড়াইতে তেল গরম করে তাতে পাঁচ ফোড়ন, আদা কুচি, হলুদ গুড়া, মরিচ গুড়া, ধনিয়া বাটা, জিরা বাটা, তেজ পাতা, আদা বাটা, রসুন বাটা, দিয়ে একটু কষিয়ে এতে সবজি দিয়ে একটু পানি দিয়ে ঢেকে দিন। কিছক্ষন পর লবণ দিয়ে আবার ঢেকে দিন। সবজি সেদ্ধ হয়ে এলে এতে কাঁচা মরিচ, গরম মসলা, আদা কুচি, ঘি এর মিশ্রণ ছড়িয়ে দিন। ২ মিনিট পর নামিয়ে লুচি দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার লাবড়া।
দইয়ের সরবত
প্রয়োজনীয় উপকরণ
দই ৪-৫ কাপ, ঠান্ডা পানি আধা কাপ, (বরফকুচি ৪ কিউব, চিনি ২ টেবিল চামচ বা পরিমাণমতো, পুদিনা পাতা, কাঁচা মরিচ ১টা, লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালী
দইয়ের সাথে সবগুলো উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।
শুক্ত
প্রয়োজনীয় উপকরণ
করলা ২টি, আলু ২ টি, বেগুন ১টি ও কাঁচকলা সবগুলো কিউব করে কাটা, সেদ্ধ মটরশুটি আধা কাপ, পাঁচফোড়ন এক টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ কুচি দুটি, হলুদ গুঁড়া এক চা চামচ, পোস্তদানা দুই টেবিল চামচ, চিনি আধা চা চামচ, টমেটো কুচি একটি, আদা বাটা আধা টেবিল চামচ, পানি এক কাপ, তেল দুই টেবিল চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালী
প্রথমে ব্লেন্ডারে পোস্তদানা, কাঁচামরিচ, আদা ও পাঁচফোড়নের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিন। অন্যদিকে একটি প্যানে তেল দিন। তেল গরম হয়ে এলে তাতে কিউব করে কাটা করলা, আলু ও বেগুন ভালো করে ভেজে মিশিয়ে নিন। এর পর এতে কাঁচা কলা ও মটরশুটি দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট মাঝারি আঁচে ভাজতে থাকুন।
এবার ব্লেন্ডের মিশ্রণটি প্যানের তরকারীর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ৪- ৫ মিনিট রান্না কশান। টমেটো কুচি, হলুদ গুঁড়া, চিনি ও লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। এবার এতে পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। অল্প আঁচে ১০ মিনিট রান্না করুন। পানি শুকিয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে প্লেটে ঢেলে গরম গরম লুচির সাথে পরিবেশন করুন।