উৎসবের সাথে খাবারের সম্পর্ক বেশ পুরনো। বিশেষ কোনো উৎসবে বিশেষ কিছু খাবার যেন থাকেই। আর তেমনি বড়দিনকে ঘিরেও পৃথিবীর নানা দেশে আছে ভিন্ন ভিন্ন খাবার তৈরির প্রথা। এমন কিছু খাবার নিয়ে এই আয়োজন। এক বসাতেই দেখে ফেলুন আজকের বড়দিনে পৃথিবীর কোন দেশে কোন বিশেষ খাবারটি তৈরি হয়েছে!
কোকি সা-জ্যাক (ফ্রান্স)
শামুকের সাথে প্রাকৃতিক বেশ কিছু ভেষজ উপাদান এবং পনির মিশিয়ে তৈরি করা হয় কোকি সা-জ্যাক খাবারটি। খাবারের শুরুতে এ্যাপেটাইজার হিসেবে পরিবেশন করা হয় খাবারটি। তবে বড়দিনে এটি হয়ে পড়ে ফ্রান্সের মানুষের মূল খাবার!
চিলেস এন নোগাদা (মেক্সিকো)
আপনার জিভে পানি এনে দিতে একটুও সময় লাগবে না মেক্সিকোর বড়দিনের বিশেষ খাবার চিলেস এন নোগাদার। খাবারটির প্রধান উপাদান মাংস। তবে সেটাই শেষ নয়। এরপর মাংসের উপরে আগুন দিয়ে জ্বালানো পবলানো পিপার এবং সেটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়ে রাখা আখরোটের ক্রিম আর ডালিমের আস্তরণ। কী? লোভ লাগলো নাকি?
সাত পদের মৎস্যভোজন (ইতালি)
একটি কিংবা দুটি নয়, ইতালিতে বড়দিনে রান্না করা হয় মোট সাত রকমের মাছ। এই তালিকায় আছে- কালামারি, লিঙ্গুনি, চিংড়িসহ আরো বেশ কিছু মজাদার মাছ। যিশু খ্রিস্টের আবার ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে মানুষ, এমনটাই প্রতিফলিত হয় এই খাবারে।
হালাকাস (ভেনিজুয়েলা)
ভুট্টা আর কলার পাতা দিয়ে মোড়া থাকে হালাকাস নামক বিশেষ খাবারটি। এর ভেতরে থাকে কেইপার, কিশমিশ, মরিচ আর অনেক ধরনের মাংস। এভাবে মুড়িয়ে, বেঁধে নিয়েই রান্না করা হয় খাবারটি।
জাকাস্কি (রাশিয়া)
সাত রকমের মাছ না থাকলেও, রাশিয়ার বড়দিনের খাবার জাকাস্কিতে অনেকগুলো লবণাক্ত মাছের স্বাদ পাবেন আপনি। পানীয়ের সাথে এই খাবারটি উপভোগ করেন রাশিয়ানরা। এ্যাপেটাইজার হিসেবেই বেশি পরিচিত রাশিয়ার এই খাবারটি।
সেইয়ে জে নাতাও (ব্রাজিল)
বড়দিনে টার্কি রান্নার যে প্রথা আছে, সেটাকেই অনুসরণ করে ব্রাজিল। বিশাল এক টার্কি রান্না করা হয় এখানে বড়দিনে। সেইয়ে জে নাতাও নামের বড়দিনের এই খাবারে আস্ত টার্কিকে শ্যাম্পেন আর নানারকম মশলার মিশ্রণে রান্না করা হয়।
জাহাটর্টে (অস্ট্রিয়া)
অস্ট্রিয়াতে বড়দিনে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের মিষ্টান্ন। চকোলেট স্পঞ্জ আর এপ্রিকট ফল মিশিয়ে তারপর তৈরি করা হয় জাহাটর্টে নামক এই খাবারটি।
ডোরো ওয়াট অন ইঞ্জেরা (ইথিয়োপিয়া)
একটি থালায় অনেকগুলো খাবার একটু একটু করে রাখা। নিশ্চয়ই বর্ণনা শুনে কোনো ভারতীয় খাবারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। বাস্তবে বিশাল থালায় অনেকগুলো খাবারের সাথে পরিবেশন করা ডোরো ওয়াট অন ইঞ্জেরো খাবারটি ইথিয়োপিয়ার বড়দিনের বিশেষ খাবার।
চিকেন বোনস ক্যান্ডি (কানাডা)
কানাডায় ছেলে বুড়ো সবার প্রিয় বড়দিনের খাবার এই চিকেন বোনস ক্যান্ডি। দারুচিনির স্বাদে তৈরি এই ক্যান্ডিতে ঠিক মাঝখানে থাকে ক্রিমি মিল্ক চকোলেট। ইচ্ছে হলে ক্যান্ডিটি কিনে নিতে পারেন আপনিও!
বিতেল তোনে (আর্জেন্টিনা)
বিতেল তোনে আর্জেন্টিনার বড়দিনের খাবার হলেও এর উৎপত্তি ইতালিতে। সেখান থেকেই খাবারটি ১৮০০ শতকের শেষদিকে কিংবা ১৯০০ শতকের প্রথমভাগে চলে আসে আর্জেন্টিনা। বাছুরের মাংস দিয়ে তৈরি হয় বিতেল তোনে। তবে সাথে থাকে কেইপার আর টুনা সস।
স্তলেন (জার্মানি)
আমাদের চেনা পরিচিত কেক এটি। বড়দিনের দিন জার্মানিতে রাম, মশলা আর চিনির আস্তরণ দিয়ে ঘরেই তৈরি করা হয়।
স্তেলেল্যাম্প্রেরিয়া জিয়ো ভুস (পর্তুগাল)
পর্তুগালের বড়দিনে এই কেকটি ডিম দিয়ে তৈরি করা হলেও এর আকৃতি অনেকটা আমাদের পরিচিত বান মাছের মত। ইচ্ছা করেই সামুদ্রিক মাছের মতো আকৃতিতে সাজিয়ে এই মিষ্টি খাবারটি খেতে ভালোবাসে পর্তুগীজরা।
এম্বিউলিতু চেস্টনাট (মাল্টা)
দেখতে আর সব দেশের বড়দিনের খাবারের মতো লোভনীয় না হলেও, আম্বিউলিতু চেস্টনাট একবার খেলে আরেকবার না নিয়ে পারবেন না আপনি! অসাধারণ স্বর্গীয় স্বাদের এই খাবারটি তৈরি হয় মাল্টায়।
পোর্ককানালাদিকো (ফিনল্যান্ড)
গাজরের হালুয়া খেতে ভালোবাসেন? ফিনল্যান্ডের পোর্ককানালাদিকো খেতে অনেকটাই গাজরের হালুয়ার মতো। আর তৈরি হয় বড়দিন উপলক্ষ্যেই!
চোরবা দে পেরিস্যুয়ারে (রোমানিয়া)
খুব সোজাসাপ্টা এই খাবারটিতে থাকে মিটবল আর টক ঘরানার একরকম স্যুপ। খুব বেশি ভারী খাবার নয়, তবে মন আর পেট দুটোই ভরিয়ে দেওয়ার মতো।
রিসেলিমান (ডেনমার্ক)
অ্যামন্ড আর চেরী দিয়ে তৈরি এই পায়েসটি একটু ভিন্ন এই কারণে যে, বড়দিন উপলক্ষ্যে তৈরি এই পায়েসের ভেতরে নানারকম উপহার রাখা থাকে। কখনো পুরো একটি বাদাম, আবার কখনো খেলনা। কেবল একটু খুঁজে নিতে হয়, এই যা!
হাউয়িজেজট (আইসল্যান্ড)
সহজ করে বলতে গেলে, ভেড়ার মাংসকে ধোঁয়ায় সেঁকে তৈরি করা হয় হাউয়িজেজট। মুখে পানি চলে এলো বুঝি?
মেন্স পাইস (ইংল্যান্ড)
বড়দিনের ঠিক আগে আগে তৈরি হওয়া এই বিশেষ খাবারটি তৈরি করা হয় মাংস আর ফল দিয়ে। এর মাধ্যমে এটি মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, খুব দ্রুতই ছুটি আসছে!
বিবিঙ্গকা (ফিলিপাইন)
বিবিঙ্গকা একধরনের কেকের নাম। ফিলিপাইনের বড়দিনের এই বিশেষ কেকে ব্যবহার করা হয় চাল, নারকেল এবং পনির।
পাভো ত্রুফাদো দে নাভিদাদ (স্পেন)
ট্রুফেলের মধ্যে টার্কির মজাদার মশলামাখা মাংস- কেমন লাগছে ভাবতে? আর স্বাদ? জানতে হলে একবার চেখেই দেখুন স্পেনের বড়দিনের এই খাবারটি!
কুলকুলস (ভারত)
বড়দিনে বাংলাদেশে বিশেষ করে কোনো খাবার ঘরে বানানোর প্রথা তেমন একটা নেই। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও এই রেওয়াজ কম। তবে বড়দিনে এখানে তৈরি হয় নারকেলের অসম্ভব মজাদার কুকি কুলকুলস।
চিকেন সুপা গোলেমোনোস (গ্রিস)
গ্রিসে বড়দিনের প্রথম খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয় চিকেন সুপা গোলেমোনোস। এতে ব্যবহার করা হয় মুরগীর মাংস, লেবু, ডিম এবং ভাত। দেখতে যেমনই হোক, খেতে কিন্তু চমৎকার বড়দিনের এই বিশেষ খাবারটি
আকোহো সি ভোয়েনিয়া (মাদাগাস্কার)
কেবল উৎসবকে নয়, উৎসবের সময়ের আবহাওয়াকে মনে রেখেই যেন তৈরি করা হয় আকাহো সি ইয়োয়েনিয়া। ভারী তরল জাতীয় খাবারটিতে চিকেন-কোকোনাট স্ট্যু থাকে। তবে সেই সাথে থাকে আমাদের খুব পরিচিত ভাত। মন এবং শরীর, দুটোকেই চনমনে করে তোলার জন্য যথেষ্ট খাবারটি!
মশলাদার গরুর মাংস (আয়ারল্যান্ড)
কেবল বড়দিনেই নয়, আইরিশ জনগণ বছরের প্রায় সব উৎসব এবং ছুটিতেই তৈরি করে মশলাদার গরুর মাংস। এতে মূল উপাদান গরুর মাংস হলেও সেই সাথে থাকে নানারকম ফল আর মশলার মিশ্রণ!
বিগোস (পোল্যান্ড)
নিরামিষভোজী না হলে পোল্যান্ডের বড়দিনের বিশেষ খাবার বিগোস আপনার পছন্দ হতে বাধ্য। এতে আপনি পাবেন নানা ধরনের মাংস। তবে সেইসাথে থাকে বাঁধাকপি আর মাশরুমও! আর স্বাদ? অতুলনীয়!
কুরিসুমাসু কেইকি (জাপান)
উচ্চারণের কারণে নামটি একটু ভিন্ন শোনালেও বাস্তবে এটি একটি কেকের নাম। জাপানে বড়দিন উপলক্ষ্যে কুরিসুমাসু কেইকি বা ক্রিসমাসের কেক তৈরি করা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ এইদিনে ফ্রায়েড চিকেন খেতে বেশি ভালোবাসে। তবে তাই বলে ঐতিহ্যকে ভোলে না কেউ। বড়দিন এলেই স্ট্রবেরীর তৈরি কুরিসুমাসু কেইকি তৈরির ধুম পড়ে যায় জাপানে।
ফিচার ইমেজঃ Momente din Viata