খাবারের প্রতি আকর্ষণ প্রবল এমন জনমানুষের সংখ্যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কম নয় মোটেই। খাবার নিয়ে আগ্রহ এবং একে ঘিরে আনন্দেরও নেই কমতি। পরিচিত খাবারে ব্যবহৃত হয়ে যাচ্ছে এমন কিছু উপকরণ যার সম্পর্কে সম্যক ধারণা আমাদের অনেকেরই নেই। এগুলোর কিছু কিছু যেমনই আগ্রহের খোরাক তেমনি কিছু কিছু মোটেই প্রীতিকর নয়। এই লেখাটি সাজানো হয়েছে খাবার তৈরিতে ব্যবহার হওয়া এমনই কিছু অদ্ভুতুড়ে উপকরণ দিয়ে।
বিষ্ঠা!
শুরুতেই মল বা বিষ্ঠার মতো শব্দ দেখে হকচকিয়ে যেতে পারেন অনেকেই। উৎকট গন্ধযুক্ত হলুদাভ এই বস্তুটির সঙ্গে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক- মানুষের জীবন জড়িত। খাবার পাচনের পর দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া এই বর্জ্যপদার্থেই লুকিয়ে আছে খাবারে ব্যবহৃত উপাদান। খাবারে ব্যবহৃত এই উপাদানটির নাম স্ক্যাটোল (Skatole)। এই স্ক্যাটোল শব্দটি এসেছে গ্রীক ‘Skat’ শব্দটি থেকে যার অর্থ মল বা বিষ্ঠা। সেখান থেকেই নামকরণ হয় বিষ্ঠাবিদ্যা বা ‘Scatology’ এর।
স্তন্যপায়ীর বিষ্ঠা থেকে পাওয়া এই উপাদানের গন্ধটিও বলা বাহুল্য তার উৎসেরই মতো। নানান সুগন্ধি ও সিগারেটের পাশাপাশি এর ব্যবহার স্ট্রবেরি আইসক্রিমেও হয়। লেখাটির আগের পর্বে উল্লিখিত বিভারের পায়ু নিঃসরণ যেমন ভ্যানিলা ও র্যাস্পবেরি ফ্লেভারের আইসক্রিমের ফ্লেভারবর্ধক হিসেবে কাজ করে তেমনি স্ট্রবেরি আইসক্রিমে স্ক্যাটোল মেশালে এটি খাবারটির ফ্লেভার গাঢ় করার কাজ করে।
বোরাক্স
ই২৮৫ ই নাম্বার যুক্ত এই উপাদানটি আমদানিকৃত ক্যাভিয়ারে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি পরিষ্কারক হিসেবেও এর ভূমিকা আছে। এছাড়াও কিছুসংখ্যক এশীয় দেশে নুডুলস, মিটবল এবং স্টীমড রাইসেও বোরাক্স ব্যবহৃত হয়। মানুষের উপর এর মারাত্মক বিষাক্ত প্রভাব আছে।
প্রোপিলিন গ্লাইকল
অ্যান্টিফ্রিজিং এজেন্ট হিসেবে প্রোপিলিন গ্লাইকল ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি খাবারেও এর ব্যবহার আছে। খাবারের ঘনত্ব বৃদ্ধি, কেকের আইসিং স্থিতিকরণ এবং সালাদের সজীবতা ধরে রাখতে এটি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কোনোকিছু ভালভাবে মেশাতে এর ব্যবহার অতুলনীয়, কেননা এমন অনেক জিনিস আছে যা পানির চেয়ে প্রোপিলিন গ্লাইকলে বেশি মিশ্রিত হয়। সোডা, সালাদ ড্রেসিং ও বিয়ারেও এর ব্যবহার আছে।
লবণপানি
মুরগির স্বাদ ও ওজন বৃদ্ধির জন্য তাদের লবণপানির ইনজেকশন দেয়া হয়। তবে এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়, কেননা অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। সাধারণ মুরগির ৪ আউন্স পরিবেশনে প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম লবণ থাকে। লবণপানি যোগ করা মুরগির ক্ষেত্রে এর পরিমাণ সাধারণ মুরগির তুলনায় পাঁচগুণ অথবা আরো অধিক, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ৩০০ মিলিগ্রামেরও অধিক।
বালি
সিলিকন ডাইঅক্সাইড বালি আর্দ্রতা শুষে নিয়ে খাবারের দলা পাকিয়ে যাওয়া রোধ করে। এজন্য লবণ, স্যুপ এবং কফি ক্রিমারে এটি পাওয়া যায়। রেস্টুরেন্টে অ্যান্টি কেকিং এজেন্ট হিসেবে এটির ব্যবহার আছে। উদাহরণস্বরূপ উইন্ডিস চিলিতে সিলিকন ডাইঅক্সাইড অ্যান্টি কেকিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অ্যামোনিয়াম সালফেট
অ্যামোনিয়াম সালফেট (Ammonium Sulfate) ব্রেড বা রুটির খামিরে ব্যবহৃত হয়। এটি রুটির খামিরে যোগ করলে তা ইস্টগুলোকে আরো কর্মক্ষম করে তোলে এবং অগ্নি নিরোধক হিসেবেও কাজ করে। ফলে, রুটি সহজে পুড়ে যায় না।
বিউটাইলেটেড হাইড্রক্সিটলুইন (বিএইচটি)
বিউটাইলেটেড হাইড্রক্সিটলুইন (Butylated hydroxytoluene) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে খাদ্যে এবং জেট ফুয়েলে ব্যবহৃত হয়।
ডাইঅ্যাসিটাইল
কিছু সমীক্ষানুযায়ী, বাটার ফ্লেভারের পপকর্ন এ থাকে ডাইঅ্যাসিটাইল (Diacetyl) যা ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে কেননা এতে থাকে ডাইঅ্যাসিটাইল। নিঃশ্বাসের সাথে ডাইঅ্যাসিটাইল গেলে তা ফুসফুস ধ্বংস করে দেয়।
ষাঁড়
ভেবে বসবেন না আস্ত ষাঁড় কোনো খাবারে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে! কথা হচ্ছে না ষাঁড়ের মাংসেরও। বলা হচ্ছে ষাঁড়ের পিত্তে পাওয়া যাওয়া ‘টরিন’ নামক উপাদানের কথা। টরিন একটি জৈবপদার্থ যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। টরিন সর্বপ্রথম ১৮২৭ সালে ষাঁড়ের পিত্ত থেকে আলাদা করা হয়। ল্যাটিন ‘টরাস’ (Taurus) থেকে এর নামকরণ করা হয় টরিন। এই টরিন ব্যবহৃত হয় এনার্জি ড্রিংক এ।
সোডিয়াম নাইট্রেট এবং পলিসরবেট ৬০
পাইরোটেকনিকস এবং আতশবাজিতে ব্যবহৃত হওয়া সোডিয়াম নাইট্রেট খাবারে ব্যবহৃত হয় প্রিজারভেটিভ হিসেবে।
দুগ্ধজাত পদার্থের বিকল্পরূপে ব্যবহৃত হওয়া পলিসরবেট ৬০ পঁচে না। তাই খাবার সহজে পঁচে যায় না। তবে এরও একটি অসুবিধা আছে। ভেবে দেখুন কী সে জিনিস যা ব্যাকটেরিয়াও স্পর্শ করতে ভয় পায়! ভাবনার বিষয় বৈকি!
পটাশিয়াম ব্রোমেট
পটাশিয়াম ব্রোমেট (Potassium Bromate) ফ্লেভারবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এটি টুবি (2B) ক্যাটেগরির (অর্থাৎ পদার্থটির মানুষের ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকতে পারে) বিষাক্ত পদার্থ। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এটি পাওয়া যায় না বললেই চলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, পেরু এবং এমনকি চীনেও এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি)
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট সেই জিনিস যা আমরা টেস্টিং সল্ট হিসেবে চিনি। টেস্টিং সল্ট ফ্লেভারবর্ধক হিসেবে কাজ করে, পাশাপাশি এর নিজস্ব স্বাদ রয়েছে যার নাম- ‘উমামি’। তবে টেস্টিং সল্ট বা স্বাদ লবণের স্বাস্থ্যের জন্য নানান ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
ক্যালসিয়াম ট্রাইফসফেট
এটিকে পোড়া হাড় বলা যেতে পারে। প্রাণীর পোড়া হাড়ের ছাই (Bone Char) দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এটিকে চিনি পরিশোধনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
সোডিয়াম বেনজোয়েট
সোডিয়াম বেনজোয়েট কোমল পানীয়তে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোমল পানীয় খাবার সময় আপনি গলায় যে ঝাঁঝ অনুভব করেন তার জন্য এই সোডিয়াম বেনজোয়েটই দায়ী। যদিও এফডিএ এটাকে নিরাপদ ঘোষণা করেছে তার মানে এই না আপনি ধরে নেবেন এটা একেবারেই নিরাপদ।
২০০৭ সালে ‘দ্য ল্যানসেট’ এ ছাপা সমীক্ষামতে, সোডিয়াম বেনজোয়েট এবং খাবার রং এর মিশ্রণ খেলে শিশুদের মধ্যে অতিচাঞ্চল্য দেখা দেয়। যদিও এটি এখনো পরিষ্কার নয় যে এই প্রতিক্রিয়ার জন্য রং ও সোডিয়াম বেনজোয়েটের মধ্যে কোনটি দায়ী। কোমল পানীয়, কার্বনেটেড বেভারেজ, ফ্রুট জুস, জ্যাম, সালাদ ড্রেসিং, সস, কনডিমেন্টস এবং আচারে এটি ব্যবহৃত হয়।
অ্যান্টিবায়োটিকস
মানুষ জীবাণু মেরে ফেলতে অ্যান্টিবায়োটিকের শরণাপন্ন হয়, আর গৃহপালিত পশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় যেন তারা বড় হয় এবং দ্রুত বর্ধন হয়। এটা আর্থিকভাবে লাভজনকও। কিন্তু এভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে উদ্ভব হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অণুজীবের যাদের ওপর অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না।
এইরকম অ্যান্টিবায়োটিকরোধী ব্যাকটেরিয়া খাবারে থাকলে তা খাবারবাহিত রোগ ছড়াতে ভূমিকা রাখবে। ২০১১ সালে টার্কিতে এবং ২০১২ সালে মিহি করে কাটা গরুর মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী স্যালমোনেলা (Salmonella) ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
অ্যামোনিয়া
ফ্যাটের সাথে লেগে থাকা মাংসকে সেন্ট্রিফিউজ প্রক্রিয়ায় ফ্যাট থেকে আলাদা করে তার ওপর অ্যামোনিয়ার প্রয়োগ করা হয়। অ্যামোনিয়া প্রয়োগের উদ্দেশ্য হলো জীবাণু নিধন করে নিম্ন মানের ফ্যাটযুক্ত গরুর মাংসকে জীবাণুমুক্ত করা। বিতর্কিত এই পদ্ধতিটি চালু হয় ২০০১ সালে, অ্যামোনিয়া প্রয়োগের পর যা চূড়ান্তভাবে পাওয়া যায় তাকে পিঙ্ক স্লাইম বলা হয়। পিঙ্ক স্লাইমকে ‘লিন ফাইনলি টেক্সচারড বিফ’ও (lean finely textured beef or LFTB) বলা হয়।
বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ও খাবারের দোকান এটিকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে। উইন্ডিস এবং ম্যাকডোনাল্ডস এর দাবি তাদের বার্গারগুলো পিঙ্ক স্লাইমবিহীন এবং সেফওয়ে এবং ওয়েগম্যানসের মত সুপারশপগুলোও এটির চল রাখবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
কার্বন মনোঅক্সাইড
কার্বন মনোঅক্সাইড যে একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী গ্যাস সেটি আমাদের কারোই অবিদিত নেই। নীরব ঘাতক হিসেবে বিবেচিত হওয়া এই গ্যাসটির থেকে সকলেই দূরে থাকতে চান। কিন্তু যদি বলি আপনার গাড়ির নিষ্কাশন পাইপ দিয়ে যে গ্যাসটি নির্গত হয়ে ক্রমাগত পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে তার ব্যবহার হচ্ছে আপনারই খাবার তৈরির কারখানায়?
কার্বন মনোঅক্সাইড মিহি করে কাটা মাংস এবং কিছু মাছ যেমন- টুনা ও তেলাপিয়ার মোড়কজাতকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। ফুড এন্ড ওয়াটার ওয়াচ এর সহকারী ডিরেক্টর প্যাটি লোভেরার মতে, এটি খাবারগুলোকে তাদের সজীব গোলাপি আভা ধরে রাখতে সাহায্য করে। মোড়কজাত করার সময় মোড়কের ভেতরের বায়ু বের করে নিয়ে তাতে কার্বন মনোঅক্সাইড ভরে দেয়া হয়। এতে করে খাবারের জারণ প্রক্রিয়াটি ঘটতে পারে না যা মাংসের গোলাপি থেকে বাদামি বর্ণ ধারণের জন্য দায়ী।
লোভেরা বলেন, “যদিও মানুষের ওপর এর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই তবুও বর্তমানে এটি খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না।” ভোক্তাদের অনেকেরই অভিযোগ রয়েছে এই পদ্ধতিটি অনেক ক্ষেত্রে মাংসের নষ্ট হয়ে যাওয়াকেও আড়াল করে রাখে।
সামুদ্রিক আগাছা
কারাগিন্যান (Carrageenan) সামুদ্রিক আগাছা থেকে তৈরি একপ্রকার জেল যা খাবারের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং খাবারকে আলাদা হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। কাঁচা মুরগি কিংবা অন্য মাংসে এটিকে অনুপ্রবেশ করানো হলে তা মাংসে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে, পাশাপাশি কটেজ চিজ এবং আইসক্রিমেও এটি ব্যবহৃত হয়। দুধ থেকে চকোলেট যেন আলাদা না হয়ে যেতে পারে তাই চকোলেট মিল্কেও এটি ব্যবহৃত হয়।
তরল ধোঁয়া
স্মোকি বার্বিকিউ আমাদের কাছে জিভে জল আনা খাবার। কিন্তু লিক্যুইড স্মোক বা তরল ধোঁয়া? এ তরল ধোঁয়া কাঠের গুঁড়োকে পুড়িয়ে উপাদানগুলো পানি বা ভেজিটেবল অয়েলে মিশিয়ে ফেলে তৈরি করা হয়। এটিকে সসসহ অন্যান্য খাবার যেমন- বার্বিকিউ প্রোডাক্ট, বেকড বিনস, হট ডগ, বেকন, বিফ জার্কি প্রভৃতিতে স্মোকি ফ্লেভার আনার জন্য ব্যবহার করা হয়।
আর্সেনিক
শুধু খাবারেই নয় বিয়ার এবং ওয়াইনেও আর্সেনিকের চিহ্ন পাওয়া সম্ভব। পানীয়ের ছাঁকন প্রক্রিয়ার সময় ডায়াটমযুক্ত যে মাটি ব্যবহার করা হয় তাতে লোহা ও অন্যান্য ধাতুর পাশাপাশি আর্সেনিকও থাকতে পারে।
ফসফোরিক অ্যাসিড
এটি সোডাতে অম্লীয় স্বাদ এনে দেবার পাশাপাশি মরিচা সরাতে এবং পাওয়ার সেলেও ব্যবহৃত হয়।
যান্ত্রিকভাবে আলাদা করা মাংস
এক্ষেত্রে হাড়ের গায় লেগে থাকা মাংসকে হাড়সহই একটি জালির ন্যায় অংশের ভেতর দিয়ে বলপূর্বক পাঠান হয়। এতে করে পেস্ট বা লেইসদৃশ পদার্থ পাওয়া যায় যাতে হাড় ও তরুণাস্থির অংশও গুঁড়ো হয়ে মিশে থাকে। বোভাইন স্পঞ্জিফর্ম এনসেফালোপ্যাথি বা ম্যাড কাউ রোগের কারণে ভয়ে এখন আর এই খাবারটি আর মানুষ খায় না।
পলিডাইমিথাইলসিলোক্সেন
প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হবার পাশাপাশি এটি ড্রাই ক্লিনিং দ্রবণ ও উকুননাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
কীট-পতঙ্গ
এফডিএ (Food and Drug Administration) এর মতে, শাক-সবজীতে গাছের উকুনখ্যাত কীটটি থাকতেই পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রুসেল স্প্রাউটে ৩০টি এবং এক ব্যাগ ব্রকলিতে ৬০টির মতো এই কীট থাকাকে বৈধ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। এছাড়াও, ৩.৫ আউন্সের এক টিন মাশরুমে মোট ১৯টি ম্যাগট এবং ৭৪টি পর্যন্ত মাইট থাকাকেও বৈধতা দিয়েছে তারা।
রং এ ব্যবহৃত রাসায়নিক ও আগাছানাশক
খনিতে থাকা টাইটেনিয়াম অক্সাইড অনেকসময় বিষাক্ত সীসা দ্বারা দূষিত হতে পারে। সাধারণত গাছে ব্যবহৃত হওয়া এই রাসায়নিকটি সাধারণত রং এ ব্যবহৃত হলেও প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন- সালাদ ড্রেসিং কিংবা আইসিংকে দীর্ঘক্ষণ সাদা দেখাতে এর ব্যবহার আছে।
অন্যদিকে গ্লাইফোসেট এক প্রকার আগাছানাশক। শুধুমাত্র ২০০৯ সালে, মার্কিন কৃষকগণ ৫৭ মিলিয়ন পাউন্ড পরিমাণ এই বিষাক্ত পদার্থটির ব্যবহার করেছে যা শুষে নিয়েছে গাছ এবং ফলশ্রুতিতে খাবার হিসেবে খেয়েছে মানুষ। যদিও ইপিএ (Environmental Protection Agency) গ্লাইফোসেটকে হালকা বিষাক্ত শ্রেণীতে ফেলেছে, ক্যান্সার এবং প্রজনন সমস্যার সাথে এটির যোগসূত্র রয়েছে।
অগ্নি প্রতিরোধক
ব্রোমিনেটেড ভেজিটেবল অয়েলের সক্রিয় উপাদান হলো ব্রোমিন যা এমন একটি বিষাক্ত পদার্থ যেটি কিনা আসবাবপত্রে অগ্নি প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উচ্চমাত্রায় এটি গ্রহণে স্নায়ুবিক সমস্যা এবং বয়ঃসন্ধির অকাল আগমন জড়িত আছে।
বায়োডিজেল
টারশিয়ারি বিউটাইলহাইড্রোকুইনোন বা টিবিএইচকিউ একটি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি প্রিজারভেটিভ। এটি এতটাই বিপদজনক যে, মাত্র এক গ্রামই আপনাকে অসুস্থ করে দেবার ক্ষমতা রাখে। বায়োডিজেল জ্বালানি থেকে বাবলগাম- এর ব্যবহার বিদ্যমান।
বিসফেনল এ
মস্তিষ্ক, ব্যবহারজনিত ও প্রোস্টেটের সমস্যায় ভূমিকা রাখার কারণে ‘বিসফেনল এ‘ কে বেশিরভাগ শক্ত প্লাস্টিক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এটি এখনো কিছু টিনের ক্যানে ব্যবহৃত হয়। অম্লীয় খাবার যেমন- টমেটো যদি এমন ক্যানে রাখা হয় তাহলে, অ্যাসিড বা অম্ল টিন থেকে বিসফেনল এ কে আলাদা করে খাবারে মিশে যেতে সাহায্য করে। কাজেই খাবারের টিনে বিসফেনল এ এর ব্যবহার সমস্যার কারণ বৈকি।
বাঁচার জন্য খাবার চাই এবং খাবারে বৈচিত্র্য চাই স্বাস্থ্য ও তৃপ্তির খাতিরে। খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ, তৈরি ও মোড়কজাতকরণে তাই আনা হয়েছে নানা পরিবর্তন, প্রয়োগ হয়েছে নানা বস্তু ও নিয়মের। এগুলোর কিছু খাবারকে করেছে স্বাদু ও মহিমান্বিত আবার কিছুবা নিয়ে এসেছে ক্ষতিকর সমস্যা। আধুনিক বিজ্ঞান ও মানুষের শুভবোধের মিলিত প্রচেষ্টাই পারে খাবারের যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ করে এর উৎকর্ষতা ধরে রাখতে।
প্রথম পর্বঃ খাবারে ব্যবহৃত অদ্ভুত যত উপাদান