
প্রকৃতি আর মানুষের প্রেমটি চিরন্তন, তাদের মধ্যে রসায়নও বহুলচর্চিত। প্রকৃতি নিজেই দারুণ এক শিল্পী; আর সেই প্রকৃতিই যখন মানুষের শিল্পীমনের সংস্পর্শে আসে, তা হয়ে ওঠে অনবদ্য এক কাব্য।
আজ আমরা এমন কিছু ছবি সংগ্রহ নিয়ে হাজির হয়েছি, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের এমনই কিছু কাব্যিক মুহূর্ত ধরা পড়েছে ক্যামেরার ফ্রেমে। ছবিগুলোতে উঠে এসেছে অসাধারণ সব প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য কিংবা যাপিত জীবনের জাদুকরী সব মুহূর্ত। সাধারণ হয়েও যে ছবিগুলো নিজ গুণে হয়ে উঠেছে অসাধারণ! বলা বাহুল্য, ছবিগুলোতে কোনো ফটোশপ, এডিটিং কিংবা কোনো কৃত্রিমতা নেই। ফলে ছবিগুলোর বিশেষত্ব বেড়ে গেছে আরো!
ওরাংওটাং
ফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রিউ একবার গিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ওরাংওটাং নামের শিম্পাঞ্জির কাছে। ফটো সেশন শেষে যখন তিনি ক্যামেরা ব্যাগে ঢুকাতে যাবেন ঠিক তখনই দেখতে পান, একটি ওরাংওটাং তারু পাতা মাথায় দিয়ে বসে আছে যাতে গায়ে বৃষ্টি না লাগে। সাথে সাথে ক্যামেরা বের করে তিনি ছবিটি ফেমে বন্দী করেন। ছবিটি ২০১৫ সালের ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ছবি প্রতিযোগিতায় সাবমিট করা হয়েছিল। অল্পের জন্য সেরা ছবির পুরষ্কার না জিতলেও কপালে জোটে সান্ত্বনা পুরষ্কার।

ওরাংওটাং © Andrew Suryono
বরফের ফোয়ারা
অ্যান্টার্কটিকার বাতাসে গরম জল নিক্ষেপের পরের মহিমান্বিত মুহূর্ত।

বরফের ফোয়ারা! Source: Imgur
গ্যালাকটিক টেনিস বল
ছায়াপথবিশিষ্ট টেনিস বল দেখেছেন কখনো? নাহলে নিচের ছবিটি খেয়াল করুন। অভিজিত কুমারের ক্যামেরায় একটি টেনিসবলের অসাধারণ চিত্র, যেন এক সৌরমণ্ডল।

একটি গ্যালাকটিক টেনিস বল © Abhijeet Kumar
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল বন্যা সুরক্ষা ব্যবস্থা!
নেদারল্যান্ডের আইসেলমার উপসাগরের পাশ দিয়ে চলে গেছে লম্বা এক হাইওয়ে। জোয়ারের সময় যাতে রাস্তা পানিতে ডুবে না যায় সেজন্য পাম্প ব্যবহার করা হয়। আর সেই পাম্পের শক্তি আংশিকভাবে উৎপন্ন হয় রাস্তার পাশে এই উইন্ডমিল দিয়ে।

নেদারল্যান্ডের হাইওয়েতে উইন্ডমিলের আধুনিক বাঁধ; Source: Imgur
ছাইয়ের মন্দির
২০১৪ সালের পহেলা অক্টোবর জাপানের মধ্যাঞ্চলে মাউন্ট অন্টাকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের এভাবেই ছাইয়ে ঢেকে গিয়েছিল সেখানকার একটি মন্দির।

© media.jrn
দুই পৃথিবী
নিউ ইয়র্ক শহরের পশ্চিম সেন্ট্রাল পার্ক, যার এক পাশে সবুজের সমারোহ অন্যপাশে স্থাপত্যশিল্প; ঠিক যেন আলাদা দুই পৃথিবী। অনেকেই হয়তো মনে করছেন, মাঝখানের রাস্তার দু’পাশেই আগে একই রকম ছিল। পরে শহরায়নের লক্ষ্যেই গড়ে উঠেছে স্থাপত্যগুলো। তবে গল্প এখানে ভিন্ন। ডানপাশের বিল্ডিংগুলোই হচ্ছে সেন্ট্রাল পার্ক। আর নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি দেবার লক্ষ্যে প্রায় দু’শ বছরেরও বেশি সময় ধরে, ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হয় বাম পাশের সমারোহ।

© imgur
রেডিও টেলেস্কোপের সুপারমুন
চিত্রগ্রাহক ক্রিস পেগম্যানের কারিগরি এই ছবিটি দেখলে মনে হয়, চাঁদ যেন বাসা বেঁধেছে টেলিস্কোপের মধ্যে। এই ছবিটি ফটোশপে এডিট করে কোনো ফিল্টার কিংবা টুল ব্যবহার করে রিটাচ করা হয়নি ঠিক। তবে এটি একটি কম্পোজিট বা যৌগিক ছবি অর্থাৎ দুটি ছবিকে স্বাভাবিকভাবে একত্র করে দেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ড পেশাদার ফটোগ্রাফি ২০১৬ এর ‘আইআরআইএস’ গোল্ড পুরস্কার বিজয়ী এই ছবিটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল জন প্যানজারের জন্য, যিনি রেডিও টেলিস্কোপ তৈরির কাজ করেন।

© Chris Pegman
ধূমপায়ী ডাম্পট্রাক
আয়ারল্যান্ডের এক নির্মাণাধীন এলাকা থেকে তোলা এই ছবিটি দেখলে মনে হয়, ডাম্পট্রাকটি যেন মাত্র কাজ সেরে এসে লাঞ্চের ফাকে সিগারেট ফুঁকছে মনের সুখে।

© Trynidada
কিম ইল-সুং এর ১০০তম জন্মদিন
উত্তর কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সুংয়ের ১০০ তম জন্মদিন পালন করছেন উত্তরের সামরিক বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তারা।

© Ilya Pitalev
নীল গালিচার পাহাড়
‘শিশুর নীল চোখ’ নামে পরিচিত Nemophila menziesii দিয়ে গড়ে তোলা জাপানের হিটাচি সী-সাইড পার্কের প্রবেশ করলে মনে হবে যেন প্রবেশ করেছেন নীলের ভিন্ন এক জগতে।

© Hiroki Kondo
স্কটল্যান্ডের অ্যাবেরনেথি বনে মাকড়সার জাল

© Mark Hamblin
এয়াফিয়াৎলাইয়োকুৎল
শিরোনামের এই বিদঘুটে নামটি আসলে আয়ারল্যান্ডের ছোট আগ্নেয়গিরির একটি। সেই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় বিজলী চমকানোর এই অকৃত্রিম দৃশ্য ধারণ করেছেন স্থানীয় এক ফটোগ্রাফার।

© Sigurdur Hrafn Stefnisson / stefnisson.com
উড়ন্ত ইগল

কানাডার এক হ্রদের উপর দিয়ে ইগল উড়ে যাওয়ার দৃশ্য © Fred Johns
বরফের রঙধনু
বরফের মধ্যে রঙধনুর সাতরং মাখা ছাতার এই ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন মার্কিন ফটোগ্রাফার গ্রে ম্যালিন। এই ছবিটির মূল্য প্রায় ৮০০ থেকে ৬,৫০০ মার্কিন ডলার।

© Gray Malin
এক ইতালিয়ান সৈকত
ইতালির হোটেল আদ্রিয়া সংলগ্ন এই সৈকতের আন্তরীক্ষ দৃশ্যের ছবি তুলেছেন ফটোগ্রাফার বার্নার্ড ল্যাঙ।

© Bernhard Lang
অগ্নিদৃষ্টি
আমাদের মুখের খুবই প্রচলিত একটি বুলি, “সে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকালো বা চোখ লাল করে তাকিয়ে থাকলো”। আসলেই কি চোখ লাল করে কেউ তাকাতে পারে? হ্যাঁ, পারে, তবে কোনো মানুষ নয়। কোস্টারিকার ওয়ার্টি গাছের ব্যাঙগুলোর চোখের রং টকটকে লাল। যেন চোখের আগুনে ভস্ম করে দেবে যেকোনো মুহূর্তে।

© Ingo Arndt/ National Geographic
ড্রাগন স্নো
চীনের ইউনান প্রদেশের একটি পর্বতের নাম ইয়োলোন জুয়েশান, যার অর্থ করলে দাঁড়ায় জেড ড্রাগন স্নো।

ড্রাগন স্নো © Dimitra Stasinopoulou
জলের জোনাকি
রাতের বেলা অন্ধকারে যখন জোনাক নাচে, তখন সৃষ্টি হয় এক অপরূপ দৃশ্যের। সেই অপরূপ দৃশ্য ধারণের ক্ষমতা শুধু স্থলের হবে ভাবাটা নিতান্তই স্বার্থপর। সাগরেরও আছে নিজস্ব জোনাকি। তবে সেই রহস্যময় জলের জোনাকির দেখা মেলে শুধুমাত্র জাপানে। রাজধানী টোকিও থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরের তয়ামা উপসাগরের পাড়ে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত দেখা মিলে এই জোনাক দলের। এদেরকে বলা হয় জোনাকি স্কুইড বা হতারো আইকা। বৈজ্ঞানিক নাম Watasenia scintillans।

জলের জোনাকি © Takehito Miyatake
গিটার বাদক র্যাঙ্গো
ফটোগ্রাফার অদিত্য পারমানা একদিন ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগিকার্তা বনে একটি ড্রাগন টিকটিকিকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর সেই টিকটিকি করে বসলো এক অদ্ভুত কাণ্ড। মানুষের মতো করে গা এলিয়ে দিয়ে একটি পাতাকে এমনভাবে ধরলো, যেন মনে হলো সে গিটার বাজাচ্ছে। ছবিটির দিকে তাকালেই মনে করিয়ে দেয়, বিখ্যাত অভিনেতা জনি ডেপের ‘র্যাঙ্গো’ সিনেমার র্যাঙ্গোর কথা। দ্য মিরর পত্রিকার এর নাম দেয় ‘দ্য ক্রেজি ক্রিটার’। ফটোগ্রাফার এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,
“আমি অনেকক্ষণ যাবৎ তাকে (ড্রাগন টিকটিকি) লক্ষ্য করছিলাম। এমনকি সেই এই ভঙ্গি ধরার সাথে সাথেই আমি ছবিটি তুলিনি, যতক্ষণ না বুঝতে পারলাম আমার উপস্থিতিতে সে মোটেও বিব্রত হচ্ছে না।”

দ্য ক্রেজি ক্রিটার © Aditya Permana/Mercury Press/Caters News
প্রথম আলো
কেনিয়ার রিফতা ভ্যালির মাসাই মারা পার্কে প্রান্তে দাঁড়িয়ে নতুন দিনকে স্বাগত জানাচ্ছে একটি পুরুষ সিংহ।

দ্য ফার্স্ট লাইট © Bjorn Persson
ব্রোমো ও সেমেরু
ইন্দোনেশিয়ার জাভায় অবস্থিত ব্রোমো ও সেমেরু আগ্নেয়গিরিতে ভোরবেলার দৃশ্য।

ব্রোমো ও সেমেরু © Michael Paramonti
আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ড! নামটা শুনেই মনে হয় বরফের দেশ নিশ্চয়ই। নাহলে এমন নাম কেন হবে। ভুল! আইসল্যান্ডে রয়েছে সবুজের অপার সৌন্দর্য্য।

আইসল্যান্ড © Claire Bangser
ফ্ল্যামেঙ্গোর অবয়ব
মানুষের পতাকা দেখেছেন নিশ্চয়ই অথবা অনেক মানুষ একসাথে জড়ো হয়ে কোনো অবয়ব বানিয়ে তোলে। কিন্তু কখনো কোনো প্রাণীকে দেখেছেন অবয়ব তৈরি করতে? এমনই কিছু একটা ঘটেছে পেনিনসুলার ইউকাতান সৈকতে। একদল ফ্ল্যামেঙ্গো জড়ো হয়ে তৈরি করেছে নিজেদেরই অবয়ব। ২০১০ সালের অক্টোবরের সেরা ছবি ছিল এটি।

ফ্ল্যামেঙ্গোর ফ্ল্যামেঙ্গো © Robert B. Haas
মুক্তো খামার
উত্তর কুক দ্বীপপুঞ্জের ম্যানিহিকি দ্বীপের একটি প্রবাল ঢিবির মধ্য দুপুরের সূর্যালোকে তোলা ছবি। প্রবালের উপর ছোট বাক্সের মতো বস্তুটি আসলে একটি কালো মুক্তার খামার।

মুক্তার খামার © Richard Sidey
সুপারস্ট্রাইক
ঘুমোতে যাওয়ার সময় আরেকবার রাডার চেক করতে গিয়ে সেদিন ফটোগ্রাফার মাইক অলবিন্সকি খোঁজ পেলেন, অ্যারিজোনার সুপারস্টিশন পর্বতমালায় বজ্র নির্বাপণ করতে আসছে একটি ঝড়। আর কীসের অপেক্ষা, ঘুম রেখে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়। ছুটে গেলেন তার নির্ধারিত জায়গায়, যেখানে কয়েকদিন যাবত বজ্রপাতের ছবি ফ্রেমবন্দী করার লক্ষ্যে রোজ অপেক্ষা করতেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পর তুলতে পারলেন কাঙ্ক্ষিত ছবিটি। রাত তখন ১২টা বেজে ৫০ মিনিট।

সুপারস্ট্রাইক © Mike Olbinski
উইন্টার ইজ হিয়ার
ছবিটির দিকে তাকালে মনে হয় রূপকথার কোন দানব এসে যেন সবকিছু বরফ বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে। ছবিটি আসলে চেক রিপাবলিকের বেজিকিডি পর্বতমালায় তোলা।

Winter is here! © Jan Bainar
ডাচা
নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন। দেখে খেলনার ঘর মনে হচ্ছে? এগুলো আসলে মৌসুমি বাড়ি। রাশিয়ার আর্খানগিলস্কে তৈরি করা হয় এ ধরনের বাড়ি, স্থানীয়রা ডাকে ডাচা বলে।

ডাচা © Fyodor Savintsev
‘মৌয়াল’
সুন্দরবনের এক মধু সংগ্রহকারী তথা ‘মৌয়াল’ কর্তৃক মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের প্রাক্কালে ধারণকৃত ছবি। ছবিটি তুলেছেন আমাদের বাংলাদেশী ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান।

Honey collectors locally known as “Mawal” prepares to break a honeycomb to get honey in the Sundarbans, a UNESCO World Heritage Site and a wildlife sanctuary. Satkhira, Bangladesh. Photo: Mustafiz Mamun
হ্যারি পটার
হ্যারি পটার বই কিংবা সিনেমা দেখেছেন তো? খেয়াল করে দেখুন তো নিচের ছবিটি কোন স্পেলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে?

Levicorpus © Vadim Trunov
উত্তর দিয়েই দিচ্ছি। দেখে মনে হচ্ছে প্রথম কাঠবিড়ালিটি দ্বিতীয় কাঠবিড়ালির উপর Levicorpus স্পেল কাস্ট করছে।
মৃত মশাল

মৃত মশাল © Beth McCarley
আফ্রিকার নামিব মরুভূমিতে বসে ছবিটি তুলেছেন মেরিট প্রাইজ বিজয়ী বেথ ম্যাকার্থি। সেদিন চাঁদের আলো এতই উজ্জ্বল ছিল যে মরুভূমির বালিয়াড়ি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আবার রাতের আকাশ ছিল ঠিকই অন্ধকার, যে কারণে ফুটে উঠেছে আকাশগঙ্গা।
ফিচার ইমেজ- National Geographic