Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের অবাক করা কিছু পাথুরে গঠন

পৃথিবী জুড়ে মানবসভ্যতার ইতিহাসে পাথরকে সবসময় পবিত্র এবং বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মনে করা হয়। মানুষ পাথরকে ঈশ্বরের উপাসনালয় তৈরি থেকে শুরু করে মৃতদেহের পরকালে যাত্রার পিরামিড সবকিছুতে ব্যবহার করেছে। এমনকি রত্নপাথরের মাধ্যমে নিজের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ভাগ্য পরিবর্তনেরও চেষ্টা করেছে। বর্তমান সময়ে সারা দুনিয়ায় পাথরের তৈরি নানান স্থাপনা দেখা যায়, যা মানুষের নজর কাড়ে। তবে প্রকৃতিও মাঝে মাঝে এমন কিছু পাথরের আকৃতি তৈরি করে, যা সবকিছুকেই হার মানায়।

স্টার স্টোনস অভ লিপ্পে, জার্মানি

জার্মানির তারার পাহাড়; Image Source: Unusual Places

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়ের নাম অনেকেই শুনেছেন, কিন্তু জার্মানির তারার পাহাড়ের নাম শুনেছেন- এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। জার্মানির লিপ্পে বিভাগে তিউতবার্গ বনাঞ্চলে এক বিশেষ ধরনের বেলে পাথরের শিলা গঠন দেখতে পাওয়া যায়, যা প্রকৃতিসৃষ্ট হলেও তার আজকের আকৃতি অনেকটা মানবসৃষ্ট।

এই বিশেষ শিলা গঠনের নাম এক্সটার্নস্টাইন। এ নামের সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ‘স্টাইন’ শব্দের অর্থ শিলা বা পাথর, তবে ‘এক্সটার্ন’ শব্দের অর্থ ভাষাবিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি। এ পাথরের ব্যাপারে সর্বপ্রথম এক হাজার শতকে লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে মনে করা হয়, এর বহু শতক আগে থেকে জার্মান প্যাগানদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের জায়গা ছিল এটি।

এই শিলাখণ্ডগুলো বেলে পাথরের। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ১০০ মিলিয়ন বছর আগে এ জায়গায় এই পাথরগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্থিত হয়েছিল। প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছর আগে এটি বর্তমান ভঙ্গিল পাথরের রূপ পায়। এরপর হাজার বছর ধরে প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ক্ষয় হতে হতে বর্তমানের তেরো খণ্ড দৃশ্যমান পাথরে রূপ নিয়েছে। তবে প্রকৃতি একে যতটা না দাঁড় করিয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানুষের হাতে আর সৌন্দর্যবর্ধন হয়েছে।

স্টার স্টোন; Image source: Unusual Places

সবচেয়ে বড় প্রস্তর খণ্ডটি ১২৩ ফুট উঁচু। এতে কয়েকটি চেম্বার রয়েছে। বড় চেম্বারটিতে ডানাওয়ালা প্রাণীর আকৃতি দেয়াল খোদাই করা আছে। এই চেম্বারে একটি লিপি খোদাই করা আছে, যার সময়টা ১১১৫ খ্রিস্টাব্দ। এর সাথে একটি সরু গলির মাধ্যমে যুক্ত গুহা আকৃতির চেম্বার রয়েছে, যার ছাদ গম্বুজাকৃতির। চেম্বার থেকে বেরোনোর পথে দেয়াল কেটে একটি তাক বানানো আছে, যার মধ্যে যীশু খ্রিস্টের শিষ্য সেইন্ট পিটারের চিত্র খোদাই করা।

এর বাইরে আরেকটি দেয়ালে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে ক্রুশ থেকে নামানোর দৃশ্য খোদাই করা আছে। এই চেম্বারগুলোর বাইরে একটি কবর ফলক রয়েছে এবং বেলে পাথর কেটে একটি কবর তৈরি করে রাখা আছে, যাতে কোনো মৃতদেহ নেই। এই প্রস্তরখণ্ড থেকে অন্য প্রস্তরখণ্ডে যাওয়ার জন্য পাথর কেটে এবং কাঠের মাধ্যমে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। সিঁড়িটি আরেকটি চেম্বারকে যুক্ত করেছে।

দেয়ালে খোদাইকৃত চিত্র; Image Source: Trip Advisor

এই প্রস্তরখণ্ডগুলোতে যেসব প্রাচীন নিদর্শন দেখা যায়, তা কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের নিদর্শন নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে এখানে ১০,০০০ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু তীরের ফলক পাওয়া গেছে, যা ওই সময়ের আরহেনবার্জ যাযাবর গোষ্ঠীর। এর কয়েক শতক পর এটি প্যাগানদের ধর্মীয় আচার পালনের জায়গা ছিল। মনে করা হয়, যীশুর জন্মের পরের কয়েকশো বছর এটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। অনেকে ধারণা করে, দশ শতকে এখানে আগুন লাগে এবং প্যাগানদের ব্যবহৃত জিনিসগুলো পুড়ে যায়।

এই শিলাখণ্ডগুলোর ব্যাপারে সর্বপ্রথম লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় ১১২৩ সালে, যেখানে একটি খামারের বর্ণনা ছিল। এর এক অংশে এই শিলাগুলো ছিল। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, দশ থেকে তেরো শতকের মধ্যে এখানে খ্রিস্টানদের বিভিন্ন আচার পালন করা হতো। ওই সময়ে দেয়াল খোদাই করে কিছু চিত্রকর্ম করা হয়, যা এখনো দেখা যায়। আধুনিক সময়ে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর এটিকে জাতীয়তাবাদী প্রচারের অংশ করেন। তার অনুসারীরা এটিকে জার্মানির সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রচার করে।

লাটভিয়ার জঙ্গলের রহস্যময় প্রস্তর স্তূপ

পোকেই বনের রহস্যময় পাথর; Image Source: Unusual Places

লাটভিয়ার পোকেই বন। বনের মধ্যে তিন-চার ঘণ্টা হাঁটার পর হঠাৎ সামনে পড়বে মস আবৃত পাথরের স্তূপ। প্রথমে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও কিছুটা সামনে গেলেই দেখা যায়, কয়েক মিটার পরপরই এরকম পাথরের স্তুপ করা। ৯০’র দশকে একজন স্থানীয় ইতিহাসবিদ জঙ্গলে হাঁটার সময় এই প্রস্তর স্তুপের খোঁজ পান। গবেষণা করে দেখা গেছে, এগুলো দু হাজার বছরেরও বেশি সময় পুরনো এবং খুব সম্ভবত এগুলো ওই অঞ্চলের প্যাগান ধর্মের অনুসারীরা ব্যবহার করত।

তবে মজার ব্যাপার হলো, পাথরগুলো এই অঞ্চলের না। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেও এ ধরনের পাথর পাওয়া যায় না এবং গঠন অনুযায়ী পাথরগুলো অঞ্চলের অন্য পাথর থেকে ভিন্ন। কেউই সঠিকভাবে বলতে পারে না, পাথরগুলো ঠিক কী কারণে এখানে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

অদ্ভুত সব পাথর; Image source: Unusual Places

অনেকে বলে প্রাচীনকাল থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে এই বন পবিত্র। তারা মনে করে, এই বনের নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে। মানুষের দেহের বিভিন্ন রোগ সারায় এই পাথরগুলো। বিজ্ঞানীরা এর আশেপাশে খুঁড়ে দেখেছেন, তবে মাটির নিচে কিছুই পাওয়া যায়নি। এমন কিছু পাওয়া যায় না, যা এই পাথরগুলোর এখানে থাকার কারণ বিশ্লেষণ করে।

মাউন্ট ফানজিং- জোড়া পাহাড়ের জোড়া মন্দির

মাউন্ট ফানজিং চূড়ায় মন্দির; Image Source: Barcroft Media

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের উইলিং পর্বতমালার সর্বোচ্চ চূড়া হল মাউন্ট ফানজিং। এটি চিনের গুইজো প্রদেশে অবস্থিত একটি আধ্যাত্মিক স্থান। এর পর্বতশিখর চীনা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র স্থান। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘ব্রহ্মার খাঁটি জমি’ হিসেবে পরিচিত। লোকালয় থেকে বহু দূরে আধ্যাত্মিকতা চর্চার কেন্দ্র হিসেবে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা স্থানটি ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। চীনা বৌদ্ধরা এই শিখরকে আলোকপ্রাপ্তির জায়গা মনে করেন। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এটি। এর শিখর একেবারে উপরের অংশে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। এর দুই অংশে দু’টি মন্দির রয়েছে। একটি সরু সেতু দুই চূড়াকে যুক্ত করেছে।

পাখির চোখে মন্দির দু’টি; Image Source: Barcroft Media

এমনকি বিরল প্রজাতির গুইঝৌ সোনালি বানরের দেখা পাওয়া যায় এখানে এলে। তাই এই পুরো অঞ্চলটি এখন সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ৮,৪৩০ ফুট ওপরে এই মন্দিরে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। পুরোটা পথ খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওঠা লাগে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এত উপরে এসে খাড়া পাহাড়ে ওঠা অনেকের জন্যই কঠিন। তবে এর চূড়ায় উঠলে কষ্টের তুলনায় প্রাপ্তিই বেশি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং নির্জনতা মানসিক প্রশান্তি দিতে বাধ্য।  

রাশিয়ার পাথুরে মাশরুম

পাথরের মাশরুম; Image Source: Altai Photo

রাশিয়ার আলতাই অঞ্চলের চুলস্মান নদীর তীরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কয়েক মাইল জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিশাল বিশাল মাশরুম চোখে পড়বে। কিন্তু এগুলো ভোজ্য মাশরুম নয়! এগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে পাথর। ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা এই পাথরগুলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন পানি এবং বাতাসের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। পাথরের ওপরের অংশের থেকে নিচের অংশের শিলাস্তর অধিক ভঙ্গুর হওয়ায় ওপরের অংশ কম ক্ষয় হয়েছে এবং এই ব্যাঙের ছাতার আকৃতি নিয়েছে। প্রকৃতিতে এ ধরনের জিনিস খুব কম দেখা যায়।

বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মাশরুম; Image Source: Unusual Places

তবে সম্প্রতি ভূমিকম্পে কয়েকটি পাথরের ছাতা আকৃতির উপরের অংশ ভেঙে পড়েছে। গবেষকরা মনে করেন, পরবর্তী প্রজন্মেরা এই মাশরুম দেখতে পাবে না।

ক্রোয়েশিয়ার সেটিনা নদীর ভূগর্ভস্থ উৎস

নদীর উৎসমুখ; Image source: Unusual Places

রাশিয়ার মেলাসিভ অঞ্চলে রয়েছে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নদী। নাম সেটিনা। ১০১ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে পড়েছে এই নদী। তবে এই নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর উৎস। এক গভীর ভূগর্ভস্থ জলের ধারার মাধ্যমে উৎপত্তি হয়েছে নদীটির। প্রায় ৫০০ ফুট গভীর চুনাপাথরের নিচ দিয়ে উঠে এসেছে সেটিনা। সাধারণত, চুনাপাথরের পাহাড়ের ওপরের কোনো এক জলাধার হঠাৎ করেই ভূপৃষ্ঠে গায়েব হয়ে যায়। কারণ, চুনাপাথর সহজেই ক্ষয় হয় এবং সৃষ্টি করে এমন ভূগর্ভস্থ জলের ধারার।

অদ্ভুত উৎসের সেটিনা নদী; Image Source: Unusual Places

বৃষ্টির পানিও জমা হয় এতে। আবার সুবিধাজনক কোনো ফাটল দিয়ে তুলনামূলক নিচু অঞ্চল থেকে বের হয়ে আসে নদী। এমনটাই ঘটেছে এর ক্ষেত্রে তবে এরকম গভীরতায় খুব কম নদীর উৎস পাওয়া যায়। গাঠনিক জটিলতার কারণে এর গভীরে দেখা সম্ভব নয়, তাই বিভিন্ন উপকথাপ জড়িয়ে আছে এই ভূগর্ভস্থ নদীমুখ নিয়ে।

থর’স ওয়েল- সমুদ্রতীরে নরকের দুয়ার

নরকের দুয়ার; Image Source: Unusual Places

আমেরিকার অরিগন কোস্ট হাইওয়ের ঠিক পাশেই কেপ পার্পেটুয়া প্রাকৃতিক অঞ্চলে রয়েছে নরকের প্রবেশমুখ। সমুদ্রতীরে বন্ধুর আগ্নেয় পাথরের সারির মধ্যে বিশাল এক গর্ত। তার ভেতরে সমুদ্রের অনন্তর জলধারা অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। দেখলে মনে হয়, এই গর্তের কোনো তলা নেই। এ যেন এক অসীমে যাওয়ার প্রবেশপথ। তাই স্থানীয়রা একে ডাকে নরকের দুয়ার বলে। দেখতে অতল গভীর মনে হলেও মোটেও অতল নয় এই গর্ত। মাত্র বিশ ফুট গভীর। চওড়া দশ ফুট।

অতল মনে হলেও ঠিক অতল নয় এটি; Image Source: imgur.com

সমুদ্রের পানি কঠিন আগ্নেয় পাথরকে ক্ষয় করে গুহা তৈরি করেছিল এবং পরে এই গুহার ছাদ ধ্বসে পড়ে। সৃষ্টি হয় এক বিশাল গর্তের, যার ভেতরটা গামলার মতো। ঢেউয়ের পানি যখন এর ভেতরে ঢোকে, তখন মনে হয় পানি পাতালে হারিয়ে যাচ্ছে। গর্ত পুরোপুরি ভর্তি হওয়ার আগেই ঢেউ সরে যায়। তারপর ঢেউ আবার ফিরে আসে। এর ফলে মনে হয়, সবসময়ই এর মধ্যে পানি ঢুকছে। যার ফলে আগে মানুষ মনে করত, এর ভেতর দিয়েই পাতালপুরী- অর্থাৎ নরকে যাওয়া যাবে!

This article is about some mysterious stones with unsolved history. Throughout the history human being used stones for various purposes. But in many places of the world this purposes are peculiar in many ways.

Necessary links are hyperlinked inside the article. 

Featured Image: Unusual Places

Related Articles