ইউরোপের ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর একটি এটি। রাস্তার পাশে দেয়ালের গায়ে বিভিন্ন ভাষায় দেশটির সংবিধান লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেই সংবিধানে একবার চোখ বুলালেই বিস্মিত হয়ে যেতে হবে আপনাকে। সংবিধানের একটি ধারায় লেখা, “সব মানুষেরই সুখী হওয়ার অধিকার রয়েছে।” পরেই আবার লেখা, “সব মানুষেরই অসুখী হওয়ার অধিকার রয়েছে।”
শুধু মানুষের কথাই থাকবে, কুকুর-বিড়াল বাদ যাবে, তা কেন! তাই সংবিধানের অন্য একটি ধারায় লেখা, “একটি কুকুরের কুকুর হওয়ার অধিকার রয়েছে।” এবং অপর একটি ধারায় বলা হয়েছে, “কোনো বিড়ালই তার মালিককে ভালোবাসতে বাধ্য নয়, তবে বিপদের সময় তাকে অবশ্যই সাহায্য করতে হবে।”
শুধু সংবিধানই নয়, এই দেশটির রয়েছে নিজস্ব রাষ্ট্রপতি, সরকার, মুদ্রা, এমনকি তিন বা চারটি নৌকাসমেত নৌবাহিনীও। কিছুদিন আগে তাদের ১০ সদস্য বিশিষ্ট সেনাবাহিনীও ছিল। কিন্তু শান্তিপ্রিয় দেশটি কারও সাথে বিবাদে জড়াতে ইচ্ছুক নয় বলে সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
অনেকেরই এ পর্যন্ত পড়ে মাথা গুলিয়ে আসছে, তাই না? মনে হচ্ছে না যে, এ আবার কেমন অদ্ভুতুড়ে দেশ, এমনও আবার হয় নাকি? অনেকে তো আবার নিশ্চয়ই ভাবছেন, গাঁজাখুরি গল্প ফাঁদা হচ্ছে বোধহয়। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে দেয়া ভালো, একটি কথাও বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না। যা বলছি, সর্বৈব সত্য। বাস্তবেই এমন একটি দেশের অস্তিত্ব রয়েছে। দেশটির নাম দ্য রিপাবলিক অফ উজুপিস। লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস থেকে নিজেদেরকে স্বাধীন ঘোষণা করেছে ১ বর্গ কিলোমিটারেরও কম আয়তনের এই দেশটি।
যেভাবে জন্ম দেশটির
লিথুনিয়া হলো বাল্টিক রাষ্ট্র তিনটির মধ্যে একটি (অপর দুটি এস্তোনিয়া ও লাটভিয়া), এবং ইউরোপের ভৌগোলিক কেন্দ্র। ১৯৪০-৪১ এবং ১৯৪৪-৯০ পর্যন্ত এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি রাষ্ট্রও ছিল। সে সময়ে ভিলনিয়াস জুড়ে অসংখ্য সোভিয়েত নেতার মূর্তি গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভেঙে ফেলা হয় সেসব মূর্তি। ফাঁকা পড়ে থাকে কেবল সেগুলোর স্তম্ভ।
১৯৯৫ সালে, উজুপিসে অবস্থিত সেসব শূন্য স্তম্ভের একটির উপরেই মার্কিন রক আইকন ফ্র্যাংক জ্যাপার মূর্তি গড়ে তোলেন স্থানীয় কয়েকজন ভাস্কর। অবশ্য জ্যাপা কোনোদিনই ভিলনিয়াসে যাননি। তারপরও মুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে তার মূর্তিই গড়ে তোলেন ভাস্কররা।
দুই বছর বাদে, ১৯৯৭ সালের ১ এপ্রিল আরও এক ধাপ এগিয়ে যান তারা। এপ্রিল ফুলের মজা হিসেবে তারা ঘোষণা দিয়ে বসে, উজুপিস এলাকাটি এখন বাদবাকি লিথুনিয়া থেকে আলাদা একটি স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্র। এরপর অনবিলম্বে তারা দেশটির জন্য চারটি জাতীয় পতাকার নকশা করে ফেলেন (একেক ঋতুর জন্য একেক রঙের পতাকা), কিছুকাল পর দেশটির নিজস্ব সংবিধানও প্রণয়ন করে ফেলেন। এবং সেই থেকে সত্যি সত্যিই এলাকাটি একটি স্বাধীন দেশের মতোই আচরণ করে আসছে। যদিও বিদেশী সরকারগুলো কখনোই উজুপিসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবু এই উজুপিসই এখন ভিলনিয়াস সহ সমগ্র লিথুনিয়ার গৌরবের উৎস।
উজুপিস দিবস
লিথুনিয়ার ভাষায়, উজুপিস অর্থ হলো নদীর ওপারে। বাস্তবিকই উজুপিস ভিলনিয়াস শহরের বাকি অংশের থেকে ভিলনেল নদী দ্বারা বিভক্ত। প্রতি বছর ১ এপ্রিল দেশটি তাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করে, যা স্থানীয়ভাবে উজুপিস দিবস হিসেবে পরিচিত। এই দিনে পর্যটকরা ভিলনেল সেতু অতিক্রম করে এই দেশের প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে নিজেদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে (অবশ্য অন্যান্য দিন এত আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়ে না, যে কেউই বিনা বাধায় দেশটিতে ঢুকে পড়তে পারে!)। এবং ভেতরে প্রবেশ করে তারা দেশটির স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করতে পারে, এমনকি মেইন স্কয়ারে অবস্থিত কৃত্রিম ফোয়ারা থেকে আগত বিয়ারও যত খুশি পান করতে পারে!
মহান নগরী
এতক্ষণ যারা স্রেফ মজা পাচ্ছিলেন, তাদের এবার একটু নড়েচড়ে বসা প্রয়োজন। কারণ এই দেশটির জন্মের কারণ শুধু এপ্রিল ফুলের মজাই ছিল না। উজুপিসের বিদেশ মন্ত্রী টমাস সিপাইটিস, যিনি একইসাথে দেশটির অন্যতম স্থপতিও বটে, দাবি করেন, দেশটিকে নাকি অ্যারিস্টটলের ‘মহান নগরী’ দর্শনের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে! অ্যারিস্টটলের দর্শন মোতাবেক, একটি আদর্শ মহান নগরীর অধিবাসী সংখ্যা খুবই সীমিত হবে।
“আমরা আমাদের ছোট্ট নতুন দেশটিকে সেই পুরনো ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম, যেখানে বলা হয়েছে, একটি আদর্শ রাষ্ট্রের জনসংখ্যা পাঁচ হাজারের অধিক হওয়া যাবে না। কারণ একজন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে বেশি মুখ মনে রাখা সম্ভব না। আমাদের এই দেশে সবাই সবাইকে চেনেন। তাই এখানে প্রতারণা বা ছলনা করা খুবই কঠিন একটি কাজ।”
পতাকা
এই দেশের পতাকাও নিজস্ব ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পতাকায় রয়েছে একটি নীলরঙা হাত, যার ঠিক মাঝখানে একটি গর্ত। হাতে গর্ত থাকার অর্থ হলো, ওই হাত কখনও ঘুষ গ্রহণ করতে পারবে না। দেশটির পর্যটন মন্ত্রী কেস্তাস লুকোসকিনাসের মতে, “প্রধান বিষয় হলো এই যে, আমাদের হাতে লুকানোর কিছু নেই।”
নিজেকে আবিষ্কারের সুযোগ
এই দেশটির স্থপতিদের মতে, আধুনিক জীবনধারা থেকে মুক্তি পেতে ও নিজের ভেতরের সত্যিকার ‘আমি’-কে আবিষ্কারের অসামান্য সুযোগ করে দেয় এই দেশটি। সিপাইটিসের মতে,
“আপনি সেতু অতিক্রম করা মাত্রই আপনার নিজস্ব সত্তায় পরিণত হবেন। এখানে আপনাকে কোনো সামাজিক ভূমিকা পালন করতে হবে না। এখানে আপনাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে আসবে না। আপনার নিজের মালিকানা আপনার নিজের হাতেই গচ্ছিত থাকবে। আপনি এখানে এসে চিন্তা করতে পারবেন আপনি আসলে কী। মানবজাতি একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যে খ্যাপাটে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে, তার আঁচ এখানে থাকতে আপনাকে স্পর্শ করবে না।”
একই অভিমত লুকোসনিকাসেরও,
“এখানকার জল-হাওয়া একেবারেই আলাদা। আপনি এখানে এসে সুখ খুঁজে পাবেন, ফিরে পাবেন জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যও। আপনি পাবে ঢুকে সরাসরি শহরের মেয়রের সাথে আলাপ করতে পারবেন। দেখা হবে কোনো বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড় বা বিখ্যাত শিল্পীর সাথেও। সবাই এখানে আয়েশ করছে। আপনি অন্য কোনো জায়গার বিলাসবহুল বার কিংবা রেস্তোরাঁগুলোতে ঢুকে দেখবেন, বিধিনিষেধ আর হরেক রকমের প্রটোকলের ছড়াছড়ি। উজুপিসে ওই জিনিসটি অনুপস্থিত।”
রক্তক্ষয়ী ইতিহাস
এই মুহূর্তে উজুপিসের আকাশে শান্তির পায়রা উড়ে বেড়ালে কী হবে, একসময় এই এলাকাকে (কারণ তখনও এটি দেশ হয়ে পারেনি) ভয়ংকর সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যায়ে, সোভিয়েত শাসনের অধীন থাকাকালীন, এই এলাকাটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। শহরের এই অংশটি ছিল ভয়াবহ বিপদজনক।
কেবল অসীম সাহসী অথবা নিতান্ত বোকারাই এখানে পা ফেলার কথা ভাবতে পারতো। এই এলাকার অন্যতম প্রধান সড়ক, উজুপিস স্ট্রিট, পরিচিত ছিল মৃত্যুর সড়ক হিসেবে। এর নেপথ্যের কারণ কেবল অপরাধের উচ্চহারই ছিল না, পাশাপাশি এই অঞ্চলের সেসব ইহুদী জনগণও ছিল, হলোকাস্টের সময়ে যাদেরকে সমূলে ধ্বংস করা হয়েছিল।
এখন অবশ্য সেসব বীভৎস দিন আর নেই। রাস্তার দেয়াল জোড়া অনিন্দ্যসুন্দর সব নকশা ও চিত্রকর্ম। চারদিকে প্রাণচাঞ্চল্য, মনে হবে বেঁচে থাকার মতো আনন্দময় বুঝি আর কিছুই হতে পারে না।
সংবিধান প্রণয়ন
১৯৯৭ সালে দেশটির স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকেই একটি সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত থাকে। সংবিধানই হলো একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক, এমন তাগিদ থেকেই ১৯৯৮ সালের এক গ্রীষ্মের বিকেলে মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে দেশটির সংবিধান প্রণয়ন করে ফেলেন সিপাইটিস ও রাষ্ট্রপতি রোমাস লিলেইকিস।
সংবিধান প্রণয়ন প্রসঙ্গে সিপাইটিস বলেন, “আমরা তখন সদ্যই প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছি। এরপর একদিন তিনি (লিলেইকিস) আমার বাড়িতে আসলেন, কারণ তার বাড়িতে গরম জল ছিল না। এজন্যই আমরা সংবিধানে গরম জলের কথা উল্লেখ করেছি।” সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দেশের সকল অধিবাসীর গরম জল লাভ, শীতকালে নিজেদেরকে উত্তপ্ত করা এবং মাথার উপর টালির ছাউনি লাগানোর লাগানোর অধিকার থাকবে।
“সেদিন তিনি গোসল করে বের হয়ে আসলে আমরা চিন্তা করে দেখলাম, এখন যেহেতু আমরা একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র, তাই আমাদের কিছু লিখিত দলিল থাকা প্রয়োজন। এমন চিন্তা থেকেই সেদিন আমরা দুজন বসে সংবিধানটি রচনা করে ফেলি।”
সংবিধানে সর্বমোট ৪১টি ধারা রয়েছে, যেগুলোতে উজপিসের স্বাধীন মতাধিকার ও আদর্শের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন- সংবিধানের এক জায়গায় বলা হয়েছে, “সকলেরই মৃত্যুবরণের অধিকার রয়েছে, কিন্তু এটি কোনো বাধ্যতামূলক বিষয় নয়।” আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, “প্রত্যেকেরই বোঝার অধিকার রয়েছে।” কিন্তু বিভ্রান্তিকরভাবে এরপরেই আবার বলা হয়েছে, “প্রত্যেকেরই কোনো কিছু না বোঝার অধিকার রয়েছে।”
শুরুতেই আমরা সংবিধানে কুকুর-বিড়ালের কথা বলেছিলাম। সিপাইটিসের কাছে এর ব্যাখ্যাও রয়েছে, “আমি বিড়াল নিয়ে লিখেছিলাম, কারণ আমি বিড়াল ভালোবাসি। লিলেইকিস কুকুর নিয়ে লিখেছিলেন, কারণ তিনি কুকুর ভালোবাসেন।” এভাবেই দেশটির সংবিধানে একটি পোয়েটিক ব্যালান্স স্থাপন করা হয়েছে।
সরকার ব্যবস্থা
অন্যান্য অনেক কিছুর মতো উজুপিসের সরকার কাঠামো ও কর্মকর্তা নিয়োগও বেশ হালকা চালে পরিচালিত হয়। দেশটির সংসদ ভবনটিও আসলে একটি ক্যাফে-কাম-পাব। ডজনখানেক মন্ত্রী আছেন দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। এছাড়া যারা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য স্থানীয় সংগঠনগুলোর সদস্য হওয়া আবশ্যক।
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি তা হলো স্বীকৃতি লাভ। আপনি বলতেই পারেন আমি সকার মন্ত্রী কিংবা ফ্রিসবি মন্ত্রী। সে ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকে জনগণের স্বীকৃতি পেতে হবে,” বলেন লুকোসনিকাস। পাশাপাশি দেশটির ফ্রি-স্টাইল রাজনীতির প্রতি নিজের সমর্থনের কথাও জানান তিনি।
“এটি যেমন নিত্যদিনের উদ্বেগ দূর করে দেয়, তেমনি কূটনৈতিক প্রটোকলেরও হ্রাস ঘটায়। আপনি আয়েশ করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সাথে একমতও হতে পারেন। কিন্তু আপনাকে মানতেই হবে যে, আমাদের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
শুনতে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু এই ব্যবস্থাই বিগত ২১ বছর ধরে সফলতার সাথে কাজ করে এসেছে। পুরো সময় ধরেই রাষ্ট্রপতি তার নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন (যদিও তিনি প্রায়ই কৌতুক করে বলেন এবার তার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন), এবং প্রায় প্রতি সপ্তাহের সোমবারেই তিনি মন্ত্রীদের সাথে আলোচনায় বসেছেন। একত্রে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন, বাইরের দেশগুলোর সাথে সম্পর্কও স্থাপন করেন (যদিও তা অনানুষ্ঠানিকভাবে)। বিশেষ করে তিব্বতের দালাই লামার সাথে দেশটির বিশেষ সখ্যতা রয়েছে, এবং সেখানে তিব্বত স্কয়ার নামে পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি তারা দালাই লামাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্বও প্রদান করেছে। এতে অবশ্য চীনা সরকার কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক নয়, বরং রাজনৈতিক কারণেই দালাই লামাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে উজুপিস। এ ব্যাপারে উজুপিসের পক্ষ থেকে হ্যাঁ বা না সূচক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পর্যটন শিল্প
পর্যটন শিল্পে এ দেশটি আর কিছু না হোক, লিথুনিয়ার পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। অনেকের কাছেই উজুপিস বাস্তবতা আর কল্পনার মিশেলে গড়ে ওঠা অভূতপূর্ব একটি দেশ। তাই লিথুনিয়ার জনগণ তো বটেই, বাইরের দেশের অনেকেও ছুটে আসে এই দেশটি ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে। ফলে উজুপিস এখন ভিলনিয়াসের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল অঞ্চল। খুব ধনী না হলে আজকাল কেউ আর এখানে একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টও কিনতে পারে না।
শেষ কথা
উজুপিসে ঢোকার মুখেই রয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরি একটি মৎস্যকন্যার মূর্তি, নাম উজুপিস মারমেইড। ২০০২ সালে ভাস্কর রোমাস ভিলসিয়াস্কার তৈরি করেন মূর্তিটি। সেই থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানোর গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে এটি। আর এখানকার অধিবাসীদের মতে, সেতু পার হওয়ার সময়েই যখন দর্শনার্থীদের চোখ পড়ে মৎস্যকন্যার চোখে, কোনো এক দৈববলে তাদের মনের ভেতর এই চিন্তার উদ্রেক ঘটে যে, কখনোই ফিরে যাওয়া যাবে না এই অপরূপ দেশটি ছেড়ে। এরপর তারা যতই ঘুরে দেখতে থাকে দেশটিকে, তাদের এমন চিন্তা আরও পাকাপোক্ত হয়। তাই তো বাধ্য হয়ে দেশটি ত্যাগ করলেও, বারবার তারা ফিরে আসে কোনো এক অমোঘ টানে। আর এভাবেই পর্যটন শিল্পের কল্যাণে সমৃদ্ধ হতে থাকে লিথুনিয়ার অর্থনীতি। সম্ভবত সে কারণেই, দেশটির সরকার মেনে নিয়েছে উজুপিসের এমন পাগলামিকে!
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/