চলছে লোডশেডিং? তাতে কী! মনে পড়ে সেই ছোট্টবেলার কথা, যখন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে অপেক্ষায় থাকতাম আমরা, কখন আসবে লোডশেডিং! একবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বা লোডশেডিং হওয়া মানেই কেমন একটা উৎসব উৎসব ভাব। বন্ধুদের সাথে খেলতে বেরিয়ে যাওয়া, দাদী-নানীর কাছ থেকে গল্প শোনা, ছাদের উপরে মাদুর-পাটি নিয়ে বসে পড়া, আর এসব কিছু না হলে ঘরের ভেতরেই কুপি/হারিকেন বা হ্যাজাক বাতির আলোয় গল্পের বই পড়া।
সময় বদলেছে, প্রযুক্তি আমাদের প্রায় ভুলিয়েই দিয়েছে সেই লোডশেডিংয়ের কথা। তবে আজও বিদ্যুৎ চলে গেলে জঞ্জালে ঘেরা শহরের ফাঁকে বা মফস্বল হয়ে ওঠা গ্রামে আপনিও কিন্তু উপভোগ করতে পারেন সেই অতি পরিচিত এই লোডশেডিংকে। কী কী করা যায় আজকালের এই লোডশেডিংয়ে? লোডশেডিংয়ে সময় কাটানোর দারুণ কিছু উপায় নিয়েই সাজানো এই লেখাটি।
এই যাহ! বিদ্যুৎ হুট করে চলে গেলো…
এমন সময় চাইলেই কিন্তু আপনি দারুণ কিছু সময় কাটাতে পারেন…
১) বন্ধুদের সাথে কথা বলে
স্কুল-কলেজ হয়তো পেরিয়েছেন বেশ আগে, সময়ের অভাবে কথা বলা হয় না সেই সময়ের প্রাণের বন্ধুদের সাথে। শুধু বন্ধু কেন, ব্যস্ত জীবনের কোন ফাঁক গলে কত আত্মীয় আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের হারিয়ে ফেলি আমরা কেবল একটু যোগাযোগ রক্ষার অভাবে। অন্ধকারে চারপাশ মুড়ে গেলে এবার সেই সুযোগকেই কিন্তু কাজে লাগাতে পারেন আপনি। কথা বলে নিতে পারেন দীর্ঘদিনের সেই বন্ধু বা আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষটির সাথে। এতে সম্পর্ক যেমন দৃঢ় হবে, তেমনি ভালো সময় কাটাবেন আপনিও।
২) পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটিয়ে
সারাদিন একলা থাকে পোষা বিড়াল, কুকুর বা পাখিটা? লোডশেডিংয়ে শুধু ওকেই একটু সময় দিন। কথা বলুন, খেলুন, সময় কাটান। আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতো পোষা প্রাণীটিরও নিশ্চয় আপনার সঙ্গ পেতে ইচ্ছে করে। সময় দিলে ওর মন ভালো থাকবে, তেমনি ভালো লাগবে আপনারও।
৩) পুরনো স্মৃতি ঘুরে এসে
মনে আছে আলমারির কোনো ড্রয়ারে রেখে দেওয়া পুরনো কোনো ফটো অ্যালবামের কথা? আজকাল হয়তো কেউ আর চিঠি পাঠায় না। কিন্তু আপনার ছোটবেলার বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া চিঠিগুলো, দাদা-দাদী, নানা-নানীর কাছ থেকে পাওয়া চিঠি, ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড, ঈদ কার্ড- এগুলো পুরনো ঝাঁপি থেকে খুলে লোডশেডিংয়ের এই সময়টাতে পুরনো সময় কিন্তু রোমন্থন করতেই পারেন।
৪) খানিকটা যোগব্যায়াম করে
মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য অসম্ভব উপকারী। মানসিক ও শারীরিক- দুই রকমের স্বাস্থ্যই ভালো থাকে মেডিটেশনে। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে মেডিটেশনের জন্য সময় বের করা হচ্ছে না? নিজেকে সময় দিন, নিজের যত্ন করুন মেডিটেশনের মাধ্যমে চুপচাপ, অন্ধকার আর শান্ত বিদ্যুৎবিহীন রাতে।
৫) পারিবারিক পাঠের আয়োজন করে
কখনো পরিবারের সবাই মিলে একসাথে কবিতা পাঠ বা গল্প পাঠের আসর বসিয়েছেন? লোডশেডিংয়ের সময়ে কিন্তু এমন একটা ঝটিকা আয়োজন করে ফেলতেই পারেন। শুধু কবিতা বা গল্প পাঠের আয়োজন কেন, ইচ্ছে হলে গানের কলির আসরটাও জমিয়ে ফেলতেই পারেন সেই পুরনো দিনের মতো এই খানিক বিরতিতে।
৬) খেলার আয়োজন করে
বাসায় ইনডোর গেইমের আয়োজন কিন্তু হতেই পারে বিদ্যুৎ বিদায় নিলে। হালকা আলোতে ক্যারম বা লুডুর মতো খেলাগুলো যে জমে উঠবে পারিবারিক আয়োজনে তা বলাই বাহুল্য। মাথা খানিকটা বেশি খাটাতে চাইলে দাবাকেও বেছে নিতে পারেন। ছোট বাচ্চাদের জন্য বাড়ির ভেতরেই থাকতে পারে বরফ-পানির আয়োজন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎবিহীন সময়টা যেমন চমৎকার কেটে যাবে, তেমনি ফেলে আসা পুরনো খেলাগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
৭) ঘর পরিষ্কার করে
ঘরের কাজ যদি লোডশেডিংয়ের মধ্যে একটু এগিয়ে রাখা যায় তাহলে কেন নয়! পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘরদোর পরিষ্কার করা শুরু করুন লোডশেডিংয়ের মধ্যে বসে না থেকে। রান্নার কাজও একটু এগিয়ে নিতেই পারেন। এতে কাজগুলো যেমন এগিয়ে যাবে, তেমনি একত্রে কাজ করার দরুন পারিবারিক মেলবন্ধনও দৃঢ় হয়ে উঠবে।
৮) প্রকৃতির শব্দ শুনে
ঠিক কতদিন হলো আপনি বাতাসের হাহাকার করা শব্দ বা ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক শোনেন না? হয়তো আপনি বলবেন, শহরের ইট-পাথরের দালানে এমন শব্দ আশা করা ঠিক নয়, তবে কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে? একটু চোখ বন্ধ করে মন দিয়ে প্রকৃতিকে শুনুন। বাতাস আর ঝিঁঝিঁ পোকা ছাড়াও প্রকৃতিতে ছড়িয়ে আছে হাজারো শব্দ। সেগুলোকে শুনুন। মন শান্ত হবে, জানা হবে প্রকৃতিকেও আরো কাছ থেকেও।
৯) সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করে
আঁকতে বা লিখতে ভালো লাগে? নাকি অন্য কোনো শিল্পে আছে আপনার মন? কাজের ফাঁকে এই শহরে নিজের জন্য সময় বের করা অসম্ভব কঠিন। তবে এতকিছুর মধ্যেও আপনি যদি নিজের এই সৃজনশীলতার চর্চা অব্যাহত রাখতে চান, লোডশেডিংয়ে এই কাজটিও করতে পারেন। নিজের পছন্দের কাজ করার মাধ্যমে মানসিকভাবে ইতিবাচক ও আনন্দপূর্ণ থাকবেন আপনিও।
১০) হাঁটতে বেরিয়ে
আলোময় ঝকঝকে শহরকে রাতে কখনো না দেখে থাকলে, এবং দেখার শখ ও ইচ্ছে থাকলে লোডশেডিংয়ে বাইরে বেরোতে পারেন হাঁটাহাঁটির জন্য। এতে আপনার শরীর ভালো থাকবে, জনমানুষের সান্নিধ্যে এসে মনটাও বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠবে। কে জানে, হয়তো দিনের আলোয় যে রাস্তাকে অনেক চেনা লাগে, সেটাই আবার নতুন করে চিনতে পারবেন আপনি রাতের অন্ধকারে, মিটিমিটি আলোয়।
১১) গল্প শুনে
বর্তমানে রাস্তায়, অফিসে, যেকোনো স্থানে যেকোনো সময়ে বই আর পড়তে নয়, শুনতেও পারা যায়। অন্য কোনো কাজে মন না বসলে অডিও বুকগুলো বেছে বেছে শুনতে পারেন। চোখের উপরে এতে চাপ পড়বে না, আর সময়ও কেটে যাবে বেশ!
১২) খাবার নিয়ে বসে পড়ে
বিদ্যুৎ হয়তো নেই, তবে আপনি ইচ্ছে করলেই কিন্তু ফ্রিজের আইসক্রিম বা ডেজার্ট নিয়ে বসে পড়তে পারেন। খাবারটা যখন বেশ ভালোই আছে, তখন খেয়ে ফেলতে দোষ কোথায়! এতে আপনার সময়টা দারুণ কাটবে, আর ফ্রিজের খাবারগুলোও নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানো যাবে।
১৩) বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে
কতদিন বন্ধুদের সাথে মন খুলে আড্ডা দেওয়া হয় না, তাই না? বিদ্যুৎ চলে গেলেই এবার তাই ডেকে নিন প্রতিবেশী বন্ধুদের, আর আড্ডা, গান, খেলা আর খাওয়া-দাওয়ায় অন্ধকার সময়ই অসম্ভব সুন্দর করে তুলুন।
১৪) ঘুমিয়ে পড়ে
আর কোনোকিছুতে মন না বসলে এই বেলা বরং খানিকটা ঘুমিয়ে নিন। সারাদিন ব্যস্ততা আর জ্যামে ভরা শহর পেরিয়ে এসে খানিকটা বোনাস ঘুম তো নিজেকে উপহার দেওয়াই যায়, তাই না?
লোডশেডিংয়ে করার মতো এতগুলো কাজের মধ্য থেকেও কোনোটা ভালো লাগছে না, মনে ধরছে নাক? তাহলে বরং সবগুলোর মিশ্রণে নিজের মতো করে একটা সময় কাটানোর দারুণ বুদ্ধি বের করে ফেলুন। আর হ্যাঁ, সেই বুদ্ধিটা জানিয়ে দিন সবাইকেই!