Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানবদেহের অদ্ভুতুড়ে কিছু রোগ

মানবদেহে যতদিন প্রাণ থাকবে, ততদিনই তাতে নানাবিধ রোগব্যাধি বাসা বাঁধার সম্ভাবনা থাকে। ছোটখাট অসুখবিসুখের মাঝে কিছু মারাত্মক ব্যাধি রয়েছে, যেগুলোতে সংক্রমিত হলে জীবন বিপন্ন হয়। তবে কিছু রোগ আছে যেগুলোর প্রখরতা অতটা বিপদজনক নয়। কিন্তু অদ্ভুত সেই রোগগুলোর উদ্ভট সব উপসর্গ সেগুলোকে অনেক সময় মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগের চেয়েও অধিক ভীতিকর করে তোলে। এরকম কিছু অদ্ভুত রোগ সম্পর্কে জানবো আজ, যেগুলো অধিকাংশের নিকটই অপরিচিত।

স্টোন ম্যান সিনড্রোম

বিশ্বখ্যাত টেলিভিশন সিরিজ ‘গেইম অব থ্রোনস’ এর স্টোনম্যানদের কথা মনে আছে তো? এ মানুষগুলো এমন একপ্রকার রোগে আক্রান্ত, যা তাদের শরীরের বহিঃত্বককে নিষ্প্রাণ করে দেয় এবং সেটা পাথরের মতো ফেটে ফেটে যায়। কাল্পনিক এই টিভি সিরিজে দেখানো এ রোগটি তেমনভাবে না হলেও একটু ভিন্নভাবে বিদ্যমান। বাস্তবে, স্টোনম্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে প্রকৃতপক্ষেই দেহের মাংসপেশিগুলো হাড়ে পরিণত হতে থাকবে, যা রোগীকে পাথুরে মানবই বানিয়ে দেবে!

Image Source: thebioconnection.com

‘ফাইব্রোডিসপ্লেসিয়া ওসিফিকানস প্রোগ্রেসিভা’ বা সংক্ষেপে এফওপি নামে পরিচিত এ রোগ অত্যন্ত বিরল। প্রতি ২০ লক্ষ মানুষে কেবল একজনের এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। জিনঘটিত এ রোগে আক্রান্ত হলে ‘এসিভিআর১’ নামক একটি জিন দেহের বিভিন্ন অংশের নরম কলাগুলোকে ধীরে ধীরে অস্থিতে রূপান্তরিত করে। অনেকক্ষেত্রে জিনটির মিউটেশন ঘটার কারণে রোগটি দেহে লুকিয়ে থাকে এবং দীর্ঘদিন ধরা পড়ে না। যখন রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয়, ততদিনে রোগীর দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অস্থিসন্ধি একীভূত হয়ে গিয়ে দেহে জটিলতার সৃষ্টি করে। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।

ট্রি-ম্যান সিনড্রোম

বাংলাদেশি বৃক্ষ মানব আবুল; Image Source: cnn.com

এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরুসিফর্মিস’ এ রোগের বৈজ্ঞানিক নাম। সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বৃক্ষমানব বলা হয়। কারণ, আক্রান্তের দেহে গাছের গুড়ির শক্ত বাকল সদৃশ কিছু একটা জন্মাতে শুরু করে। এই বাকল সদৃশ বীভৎস দেখতে বস্তুগুলো হলো হাজারো আঁচিলের সমষ্টি। এভার-১ বা এভার-২ নামক জিনের বিরল মিউটেশনের ফলে এ রোগ হয়। প্রাথমিকভাবে আঁচিলগুলো দৈহিক সৌন্দর্য বিনষ্ট করা ছাড়া আর কোনো সমস্যাই সৃষ্টি করে না। কিন্তু ক্রমে এরা ব্যথাদায়ক হতে শুরু করে এবং দেহে অন্যান্য জটিলতার সৃষ্টি করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, বৃক্ষমানব রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ কিছুটা বশে রাখা যায় কেবল। তথাপি, এ রোগে আক্রান্ত হলে সূর্যালোকে যাওয়া একদমই বারণ। কারণ, সূর্যের আলোর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ট্রি-ম্যান সিনড্রোমকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

এলিফ্যান্টিয়াসিস

হস্তী রোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তির ফুলে ওঠা পা; Image Source: nigerianmedicals.com

এলিফ্যান্টিয়াসিস’কে অনেক সময় বাংলায় হস্তীরোগও বলা হয়। নাম থেকে এ রোগ সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। হস্তীরোগে আক্রান্ত হলে, দেহের কোনো অঙ্গ, সাধারণত পা আর অণ্ডকোষ (পুরুষদের ক্ষেত্রে) অস্বাভাবিকভাবে মোটা হয়ে যায়। বীভৎস দেখতে এ রোগের উৎস অত্যন্ত সাধারণ। লসিকা নালীগুলো কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে এক স্থানে অত্যাধিক পরিমাণে লসিকা জমা হতে থাকে, যা একপর্যায়ে মাংসপেশির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হয়। লসিকা নালী বন্ধ অনেক কারণেই হতে পারে। তবে হস্তীরোগের ক্ষেত্রে সাধারণত মশাবাহিত একপ্রকার পরজীবী দায়ী। গত ১০০ বছরে বিশ্বব্যাপী ৪ কোটির অধিক মানুষ হস্তীরোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ভয় পাবার কিছু নেই। এ রোগের ওষুধ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে আরোগ্য লাভ করা যায়। অণ্ডকোষের ক্ষেত্রে তার স্ফীত হবার পরও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থতা লাভ সম্ভব। তবে পা ফুলে গেলে তা আর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না।

অটো ব্রুয়ারি সিনড্রোম

ধরুন, আপনি কখনো অ্যালকোহল পান করেন না। তথাপি আপনার মাঝে বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখে আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো শরীরে অ্যালকোহলের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য। পরীক্ষণের পর আপনাকে বিস্ময়াভিভূত করে ডাক্তার যদি জানান, আপনার দেহে অ্যালকোহলের মাত্রা সাধারণ অনুমোদিত মাত্রা চেয়েও বেশি, অথচ আপনি অ্যালকোহল পানই করেননি, তখন কী করবেন? বিস্মিত হবার চেয়ে বেশি হয়তো বিব্রতই হবেন। কিন্তু ‘অটো ব্রুয়ারি সিনড্রোম’ বা ‘গাট ফার্মেন্টেশন সিনড্রোম’ সম্পর্কে জানতে পারলে আপনার ভয় এবং বিমূঢ়তা, দুই-ই কেটে যাবে।

অটো ব্রুয়ারি সিনড্রোম; Image Source: fairlielaw.net

অটো ব্রুয়ারি সিনড্রোম হলো এমন একটি রোগ, যা মানুষের পাকস্থলী আর অন্ত্রনালীতে উপস্থিত ইস্টের মাধ্যমে শ্বেতসার জাতীয় খাবারের গাঁজন ঘটিয়ে অ্যালকোহল উৎপন্ন করে। ফলে যে ব্যক্তি কোনোকালে অ্যালকোহল ছুঁয়েও দেখেনি, তার দেহেও অ্যালকোহলের মাত্রা অনুমোদনযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আমেরিকায় গত দশকে বেশ কয়েকবার এ রোগটি পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোয় গ্রেফতার করার পর দেখা গেছে, অভিযুক্ত আসলে রোগে ভুগছেন। দেহে যখন শ্বেতসার আর কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন এরকম ঘটতে পারে। তবে অদ্ভুতুড়ে এ রোগ অত্যন্ত বিরল।

লক্ষণ

  • নিজেকে মাতাল মাতাল মনে হবে
  • সামান্য অ্যালকোহল পানেই নিজেকে চূড়ান্ত মাত্রার মাতাল হিসেবে আবিষ্কার করবেন
  • মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা
  • পেট জ্বালাপোড়া, বমি
  • ক্ষুধামান্দ

অটো ব্রুয়ারি সিনড্রোমের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। প্রাথমিকভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, বিশ্রাম এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খেলেই এ রোগ সেরে যায়।

ওয়ারউলফ সিনড্রোম

কোনো ব্যক্তি যদি সাহসী বা বীরত্বপূর্ণ কাজ করেন, তখন অনেক ক্ষেত্রে তাকে আমরা ‘বাঘের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করি। তবে বাঘের বাচ্চা হবার আরেকটি রাস্তা আছে। এ রাস্তায় বীরত্বগাঁথার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন ‘হাইপারট্রিকোসিস’ রোগে আক্রান্ত হওয়া! এটি এমন একটি রোগ, যা মানুষকে দেখতে অনেকটা নেকড়ে বাঘের মতো করে দেয়! শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সাথে চেহারাও অনেক সময় লম্বা চুলে ঢেকে যায়।

ওয়ারউলফ সিনড্রোমে আক্রান্ত এক ব্যক্তি; Image Source: reddit.com

অদ্ভুত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অতটা বেশি না হলেও এটি বিরল রোগও নয়। এর প্রকৃত কারণ না জানা গেলেও দু’ভাবে এ রোগের উপদ্রব হয় বলে জানা গেছে। প্রথমত, অনেকের এ রোগটি জন্মগতভাবেই হয়। সেক্ষেত্রে দেহে কোনো অপ্রত্যাশিত জেনেটিক মিউটেশন ঘটে, যা এই রোগ সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, জীবনের কোনো এক অংশে গিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হওয়া। এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই টাক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে মানুষ। প্রথাগত চুল অপসারণই এর একমাত্র চিকিৎসা। অনেকে ওয়াক্সিং কিংবা ‘লেজার ট্রিটমেন্ট’ও করিয়ে থাকেন। তথাপি কোনোটির ফলাফলই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

এলিয়েনের হাত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত এক ব্যক্তি নিজে নিজেকে চড় মারছেন; Image Source: coasttocoastam.com

ইংরেজি ভাষায় একটি বুলি রয়েছে, “The left hand doesn’t know what the right hand is doing”। এর অর্থ হলো, কোনো কিছু দান করলে এমনভাবে করা যেন সেটা উপকৃত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ জানতে না পায়। তবে, কোনো কোনো সময় এই বাক্যটির আক্ষরিক অর্থই সত্য হয়ে যায় অনেকের জন্য! ‘এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম’ বা এলিয়েনের হাত নামক রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর অনিচ্ছায় তার হাত কাজ করতে শুরু করে! সৌভাগ্যক্রমে, একইসাথে দুটি হাতই এলিয়েনের হাতে রূপান্তরিত হয় না। রোগীর এক হাত যখন তার ইচ্ছায় কিছু করছে, তখন অপর তার অনিচ্ছায় সে কাজে বিঘ্ন ঘটায় এমনকি কখনো কখনো রোগীকে নিজের হাত নিজেকেই আক্রমণ করে বসে! মস্তিষ্কের কর্পাস ক্যালোসামে জটিলতা কিংবা মস্তিষ্কে আঘাতজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে এ রোগ হতে পারে। এর কোনো চিকিৎসা না থাকলেও অনুশীলনের মাধ্যমে হাতকে বশে আনা সম্ভব।

ফরেন একসেন্ট সিনড্রোম

ফরেন একসেন্ট সিনড্রোম মস্তিষ্কের জটিলতাজনিত একটি রোগ, যা নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে সেরে যায়; Image Source: theanatomyoflove.com

যারা উচ্চশিক্ষার জন্য কিংবা অন্য কোনো কাজে দেশের বাইরে যেতে চান, ইংরেজি ভাষা ব্রিটিশ কিংবা আমেরিকান বাচনভঙ্গিতে শেখার জন্য তাদের কতো প্রয়াসই না দেখা যায়। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার বা পাবলিক স্পিকিং কোর্সে ভর্তি হবার পাশাপাশি স্বপ্রণোদিত চেষ্টা তো থাকেই। অথচ ‘ফরেন একসেন্ট সিনড্রোম’ নামক রোগে আক্রান্ত হলে কত সহজেই না বিদেশি বাচনভঙ্গি শেখা সম্ভব! হ্যাঁ, এটি এমন এক অদ্ভুত রোগ যা মানুষের স্বাভাবিক বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ ও স্বর বদলে দেয়। সাধারণ, ছোটখাট স্ট্রোকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনেক সময় এটি ঘটে এবং রোগীর বাচনভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে যায়, বদলে যায় তার স্বর আর জিহ্বার নড়াচড়াও। তবে সর্বদা এ পরিবর্তন যে বিদেশি উচ্চারণের মতো শোনাবে, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় রোগীর কথা এতটা অস্পষ্ট হয়ে যায় যে তা বোঝাই যায় না। প্রচুর পরিমাণে অনুশীলনের মাধ্যমে সহজেই পূর্বের অবস্থায় ফেরা সম্ভব।

কোটার্ডস ডিলিউসন

আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে মৃত বা অমর ভাবতে শুরু করেন; Image Source: zovovo.com

এ তালিকার অন্য ব্যাধিগুলোর সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে, এটি একটি মানসিক ব্যাধি। কোনো কারণে মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমে জটিলতা সৃষ্টি হলে বা কাজে ব্যাঘাত ঘটলে মানুষ ‘কোটার্ডস ডিলিউশনে‘ আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হলে একাংশ মনে করতে শুরু করে তারা মৃত্যুবরণ করেছে এবং তাদের প্রাণবায়ু তাদের ছেড়ে চলে গেছে! আরেক অংশ আবার নিজেদের অমর ভাবতে শুরু করে! উভয় অংশই নানা ধরনের মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক জটিলতার মুখোমুখি হয়। এর সবচেয়ে ভীতিকর দিকটি হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে নিজে চিনতে পারেন না এবং আয়নায় নিজেকে দেখলেও তা অন্য কারো দেহ মনে করেন! এ রোগে আক্রান্ত মানুষজন সাধারণ খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াও কমিয়ে দেয়। রোগের প্রাবল্য বৃদ্ধি পেলে অনেক সময় রোগী কবরস্থান বা শশ্মানে গিয়ে বসে থাকেন দিন-রাত!

This article is written in Bangla language. It's written about some of the weirdest diseases of human body. Necessary references have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: CNN.com

Related Articles