Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করোনার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট: মহামারী নিয়ন্ত্রণের বড় অন্তরায়

বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন নতুন শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব। চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ পশ্চিমা ইউরোপের বেশ কয়টি দেশে মহামারী কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে গিয়েছিল। এর অন্যতম কারণ ধরা হয় তাদের দ্রুত ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমকে। তবে এর পরবর্তীতে অন্তরায় হিসেবে আগমন ঘটে নতুন ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের যা আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় দ্রুত সংক্রামক এবং অধিক মারাত্মক। বাংলাদেশে চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে আক্রান্তের হার ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের আগমনের সাথে সাথে তা পূর্বের তুলনায় আরো ঊর্ধ্বগতিতে বাড়তে থাকে।

ভ্যারিয়েন্ট কী?

মূল ভাইরাস থেকে ক্রমাগত বিস্তারের সময় বিভিন্ন জিনগত পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসের গঠনে বিভিন্ন পরিবর্তন চলে আসে। যেগুলো মূল ভাইরাস থেকে আলাদা। এভাবে বিস্তারের সাথে সাথে ভাইরাস ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়ে নতুন নতুন রূপ ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে থাকে। ভিন্ন রূপ ও বৈশিষ্ট্যের এই ভাইরাসগুলোকে বলা হয় ভ্যারিয়েন্ট।

ভ্যারিয়েন্ট মানেই কি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?

আবির্ভাবের পর থেকে এ যাবত কোভিড-১৯ ভাইরাসটির অনেক ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাতে সাধারণ বৈশিষ্ট্যে তেমন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। অল্প কিছু ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেমন, এটি পূর্বের তুলনায় কেমন সংক্রমিত হবে, রোগের প্রখরতা কেমন হবে, এর বিরুদ্ধে প্রচলিত ভ্যাক্সিন, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং রোগ নির্ণয় পদ্ধতির কার্যকারিতা কেমন হবে, জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক কার্যকলাপে তা কেমন ভূমিকা পালন করবে ইত্যাদি বিষয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে যেসব ভ্যারিয়েন্টে সেগুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়।

এই ভিত্তিতে ভ্যারিয়েন্টগুলো দুই ভাগে তালিকাভুক্ত করা হয়- Variant of interest (VOI) এবং Variant of concern (VOC)। ঝুঁকি বেশি আছে এমন ভ্যারিয়েন্টগুলো দ্বিতীয় তালিকাভুক্ত।

নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করা কেন জরুরি?

সংখ্যা এবং বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের আগমন পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে স্থানবিশেষে ও কালবিশেষে ভাইরাসের বিস্তার এবং সংক্রমণের প্যাটার্ন বোঝা যায়, যা স্বাস্থ্যবিধি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে খুব জরুরি। এর মাধ্যমে কোথাও কোনো শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট আগমনের অনুমান করা যায় এবং প্রচলিত স্বাস্থ্যবিধির কার্যকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যায়।

প্রচলিত ভ্যাক্সিন বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের জন্য কার্যকরী (who.int)
Image Source: WHO

নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব রোধে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কী?

আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিপরীতে প্রচলিত ভ্যাক্সিনগুলোর কম-বেশ কার্যকারিতা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো রোগের বিস্তার প্রতিরোধে, রোগের তীব্রতা কমাতে এবং মৃত্যুঝুঁকি কমাতে সক্ষম। এছাড়া নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাবেও আগের ভ্যাক্সিনগুলো পুরোপুরি অকার্যকর হবে না। নতুন ভ্যারিয়েন্টের সাথে সাথে ভ্যাক্সিনের গঠন এবং কার্যকারিতায়ও পরিবর্তন আনা যেতে পারে। রোগের বিস্তার এবং একইসাথে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাবকে মন্থর করে দিতে পারে। তবে তার জন্য সারা বিশ্বে সব দেশে একই সাথে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং সকল মানুষকে এই কার্যক্রমের আওতাভুক্ত করতে হবে। আর সেই সাথে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এভাবে বিশ্বজুড়ে সবার সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় নতুন ভ্যারিয়েন্টের আগমন প্রতিরোধ সম্ভব।  

গত বছর থেকে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করছি।

আলফা

প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল যুক্তরাজ্যে, সেপ্টেম্বর ২০২০-এ। মুল ভাইরাসের তুলনায় ৩০-৪০% অধিক সংক্রামক এবং আক্রান্তের হার, রোগের প্রখরতা ও মৃত্যুর হার বেশি। FDA অনুমোদিত ভ্যাক্সিনগুলো এই ভ্যারিয়েন্টের বিপরীতে কার্যকরী। বিশেষ করে রোগের তীব্রতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।

আবির্ভূত অধিক শক্তিশালী চারটি ভ্যারিয়েন্ট ( nationnews.com)
Image Source: WHO

বেটা

প্রথম আবির্ভূত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়, মে ২০২০-এ। এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার প্রায় ৫০% বেশি। বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্রচলিত কিছু ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা এই ভ্যারিয়েন্টের বেলায় কিছুটা কম।

গামা

এটি প্রথম পাওয়া যায় ব্রাজিলে, নভেম্বর ২০২০-এ। এক্ষেত্রেও সংক্রমণের হার অধিক। দক্ষিণ আমেরিকায় এর বিস্তার বর্তমানে বেশি। প্রচলিত ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে কম পরিলক্ষিত হয়েছে।

ডেলটা

এই ভ্যারিয়েন্টটির বিস্তার এখন ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র; এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরাক, ইরানে সব থেকে বেশি। প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল ভারতে অক্টোবর ২০২০-এ। বাংলাদেশে এটি শনাক্ত হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বেশি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট এটি, যা আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে প্রায় ৬০% বেশি। কোনো কোনো অঞ্চলে সংক্রমণের হার প্রায় ৮০% এরও অধিক। রোগের তীব্রতা এবং মৃত্যুর হারও তুলনামূলকভাবে বেশি।

FDA অনুমোদিত ভ্যাক্সিনগুলো এই ভ্যারিয়েন্টের বিপরীতে কার্যকরী। বিশেষ করে রোগের তীব্রতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। দুই ডোজ ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের আক্রমণ অনেকাংশে কম। তবে গবেষণা অনুযায়ী যারা ভ্যাক্সিন নিয়েছে তারা নিজেরা আক্রান্ত না হলেও বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে। ভ্যাক্সিন নেয়নি এমন ব্যক্তির মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা যাদেরকে এখনো ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনা হয়নি।

ডেলটা প্লাস

যুক্তরাজ্যে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের একটি নতুন রূপ শনাক্ত হয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে ডেলটা প্লাস। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এতে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও শক্তিশালী ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট থেকে আবির্ভূত হওয়ায় গবেষকরা এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন এবং সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন।

এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভ্যারিয়েন্ট আছে যেগুলোকে Variant of interest হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যেমন-

এটা

প্রথম শনাক্ত করা হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, যুক্তরাজ্য এবং নাইজেরিয়ায়। এরপর আরো ৭২টি দেশে এটি শনাক্ত হয়। এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির কার্যকারিতা কম পরিলক্ষিত হয়েছে। 

লোটা

প্রথম শনাক্ত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। মোট ৫৩টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে।

কাপ্পা

২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়। ৫৫টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।

ল্যামডা

পেরুতে  ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম শনাক্ত হয়। আবির্ভাবের পর প্রথম তিন মাসেই সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৮০%। ৪১টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে।

 মিউ

বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনায় ঝড় তুলছে এক নতুন ভ্যারিয়েন্ট। যার নাম দেয়া হয়েছে মিউ। বিশেষজ্ঞদের মতে ডেলটার পরে ভয়ের কারণ হতে পারে এটি। যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও ৪০টি দেশে এটি শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টটি কেমন ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে সেটা ঠিকভাবে জানা যায়নি এখনও। তবে শক্তিশালী কোনো ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটতে পারে এটি থেকে এমনটা আশঙ্কা করছেন অনেক গবেষক।

নিত্যনতুন রূপে পাল্টাচ্ছে করোনা ভাইরাস। বিশ্ব মহামারী পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে অন্যতম প্রধান অন্তরায় নতুন নতুন শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্টের আগমন। যা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে যার যার ভূমিকা পালন করতে হবে।

Related Articles