Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভবিষ্যৎ জানতে প্রাচীন মানুষদের অদ্ভুত যত প্রচেষ্টা

আজকের পর কাল কী ঘটতে যাচ্ছে, একমাস পর আমি কোথায় থাকবো, আজ থেকে এক যুগ পর আমার সামাজিক অবস্থান কেমন হবে- এমন সব চিন্তাভাবনা কমবেশি আমাদের সবার মাথাতেই ঘোরাফেরা করে। এ দলের সদস্য ছিলো আমাদের পূর্বপুরুষেরাও।

তৎকালীন সমাজের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলো নানাবিধ কুসংস্কার। আর সেসব কুসংস্কারের বশবর্তী হয়েই অনাগত দিন সম্পর্কে জানার আকাঙ্ক্ষায় তারা এমন সব কাজকারবার করতো, যা জানলে অবাক না হয়ে উপায় নেই। ভবিষ্যৎ জানার লক্ষ্যে প্রাচীন পৃথিবীর মানুষগুলোর এমনই কিছু প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানানো হবে আজকের লেখায়।

১) অ্যামনিওমেন্সি

সদ্যোজাত শিশু কখনো কখনো কোল (Caul) নামক একপ্রকার মেমব্রেন সহ জন্মে থাকে, যা তার মাথা ও মুখমন্ডলকে ঢেকে রাখে। এ ধরনের ঘটনা অবশ্য বেশ দুর্লভ। আশি হাজার শিশুর মাঝে মাত্র একজনের বেলায় এমনটা হয়ে থাকে। আর এটা শিশুর জন্য ক্ষতিকর কিছুও নয়। কোল সহ জন্মালে চিকিৎসক সহজেই সেটি অপসারণের ব্যবস্থা করতে পারেন।

Source: Pitt Rivers Museum

প্রাচীনকালে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মনে করা হতো, যদি একটি শিশু এই কোল সহ জন্মায়, তাহলে সেটা দেখে তার ভবিষ্যত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে। যদি কোলটি রক্তিম বর্ণের হতো, তাহলে জ্যোতিষীরা বলতেন, সামনের দিনে বাচ্চাটি বেশ বড় মাপের একজন মানুষে পরিণত হবে। অপরপক্ষে কোলটি যদি নীলাভ বর্ণের হতো, তাহলে মনে করা হতো অনাগত দিনগুলোতে দুর্ভাগ্য তাড়া করে বেড়াবে বাচ্চাটিকে।

কিংবদন্তী চালু আছে যে, পোল্যান্ডে এককালে মনে করা হতো, যদি কোনো শিশু কোল সহ জন্মায়, তাহলে সে ভবিষ্যতে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে! তথাকথিত এ দুর্ভাগ্য কাটাতে তারা সেই কোলটি শুকিয়ে সযত্নে কোথাও রেখে দিত। এরপর যেদিন বাচ্চাটির বয়স সাত বছর হতো, সেদিন তাকে সেটি খাওয়ানোর মাধ্যমেই এমন অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করতো তারা। কখনো কখনো শুকনো কোল চূর্ণ করে কেকের ভেতরে মিশিয়ে খাওয়ানো হতো, কখনো আবার মাংসের মতো তরকারি রান্না করেই খাওয়ানো হতো।

ভিক্টোরিয়ান যুগে ইউরোপেও এ কোলকে নিয়ে কুসংস্কারের কমতি ছিলো না। এটি শুকিয়ে নাবিকদের কাছে বিক্রি করা হতো রক্ষাকবচ হিসেবে, যেন তারা পানিতে ডুবে মারা না যায়।

২) পাইরোম্যান্সি

প্রাচীন গ্রীসে কামার, ছুতার, কারুশিল্পী, ভাষ্কর, আগুন ও আগ্নেয়গিরির দেবতা বলে মনে করা হতো হেফাইস্টোসকে। তার অনুসারীরা মনে করতো যে, আগুনের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। এজন্য হেফাইস্টোসের অনুসারীরা আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পেতে চাইতো। পাইরোম্যান্সি হলো আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার প্রচেষ্টা। এমনকি আগুন কীভাবে জ্বলছে, তার উপরও নির্ভর করতো অনাগত কালের ভালো-মন্দের কাহিনী!

Source: Guillaume Coustou the Younger

কোনোকিছু আগুনে নিক্ষেপের পর সেটা কীভাবে জ্বলছে, তা দেখে ভবিষ্যৎ বুঝতে এককালে চেষ্টা করেছে গ্রীসের মানুষেরা। যদি কোনো বস্তু আগুনে নিক্ষেপের পর খুব বেশি ধোঁয়া তৈরি না করেই সেটি তাড়াতাড়ি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যেত, তাহলে ধরে নেয়া হতো লোকটির ভবিষ্যৎ ভালো। অপরপক্ষে যদি আগুন ঠিকমতো না জ্বলতো, তাহলে ধরে নেয়া হতো লোকটির কপালে ভর করেছে শনির দশা।

৩) দ্য লং ম্যান

আমেরিকার চেরোকি আদিবাসী গোত্রের লোকেরা ভবিষ্যৎ জানতে শরণাপন্ন হতো এক লোকের কাছে, যাকে তারা ডাকতো ‘দ্য লং ম্যান’ নামে। সপরিবারেই তারা হাজির হতো লোকটির কাছে। লং ম্যান সাধারণত কোনো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতো।

চেরোকি আদিবাসী গোত্রের লোক; Source: slate.com

লোকে তার কাছে পরিবার নিয়ে আসলে তিনি বিড়বিড় করে মন্ত্রোচ্চারণ করতেন, উপর থেকে কোনো নির্দেশের আশায় তাকিয়ে থাকতেন বহমান নদীর স্রোতধারার দিকে। যদি নদী স্বাভাবিকভাবেই বয়ে যেত, তাহলে ধরে নেয়া হতো সেই পরিবারের সদস্যরা আরো অনেকদিন বেঁচে থাকবে, পরিবারে আসবে সুখ-সমৃদ্ধি। আগামী সাত বছর অন্তত এমনটাই চলবে- এটাই বিশ্বাস করতো চেরোকিরা। কিন্তু যদি নদীর পানিতে সামান্য পাতা কিংবা গাছের গুড়ি ভেসে আসতো, তাহলে মনে করা হতো নিকট ভবিষ্যতে সেই পরিবারের কোনো সদস্য পরপারে পাড়ি জমাতে যাচ্ছে!

শুধু নদীই নয়, সেই সাথে হাতে থাকা জপমালার ছোট্ট গুটিকাগুলোর নড়াচড়া দেখেও ভবিষ্যদ্বাণী করতো লং ম্যানরা। সেগুলো দেখে তারা বলতো কোনো মহিলা অপর কোনো পুরুষের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার সহধর্মিনী হবে কিনা!

৪) জুম্যান্সি

প্রাচীন পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতেই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য ভরসা রাখা হতো বিভিন্ন প্রাণীর উপর। বিখ্যাত বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কথাই ধরা যাক। বিভিন্ন অভিযানে বেরোনোর আগে অ্যারিস্টান্ডার নামক এক ভবিষ্যৎ বক্তার কথা বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতেন তিনি।

Source: wesphelan.com

একবারের কথা, আসন্ন যুদ্ধাভিযানে জয়ের আশায় একটি প্রাণী বলিদানের আয়োজন করেছিলেন আলেকজান্ডার। এমন সময় কোথা থেকে যেন একটি বৃহদাকার পাখি এসে সেই প্রাণীটিকে নিয়ে উড়াল দিলো, যাবার সময় আলেকজান্ডারের মাথায় ছুঁড়ে মারলো ছোট্ট একটি পাথর! পাশে দাঁড়িয়ে সবই দেখছিলেন অ্যারিস্টান্ডার। সব দেখে আগপিছ হিসেব করে তিনি জানালেন, এ যুদ্ধে প্রাণী বলি দেয়ার কোনো দরকার নেই। কারণ সম্রাট তাতে জিততে যাচ্ছেন!

৫) স্ক্রায়িং

বিভিন্ন সিনেমা কিংবা গল্পের বইয়ের সুবাদে ভবিষ্যদ্বাণীর একটি উপায়ের সাথে আমরা সবাই পরিচিত, যেখানে একজন ব্যক্তি ক্রিস্টালের কোনো গোলকের দিকে রহস্যজনক ভঙ্গিতে তাকিয়ে, হাত নেড়ে নেড়ে ভবিষ্যৎ বলে যেতে থাকেন। এর সবই যে বুজরুকি, তাতে তো কোনো সন্দেহই নেই। তবে এ ভন্ডামিরও সুন্দর এক নাম রয়েছে- স্ক্রায়িং (Scrying)।

Source: ghostlyactivities.com

ষোড়শ শতকের ইংল্যান্ডের কথা। রানী এলিজাবেথের পরামর্শক জন ডী টুকটাক ক্রিস্টাল বল নিয়ে ভবিষ্যৎ গণনার চেষ্টা করতেন। একবার এমনই এক প্রচেষ্টা শেষে তিনি ঘোষণা করলেন যে, এলিজাবেথের বোন মেরি মারা যাবেন, সিংহাসনে বসবেন এলিজাবেথ। এ কথা ছড়াবার পর জাদুবিদ্যা চর্চার অভিযোগে জন ডীকে গ্রেফতার করা হয়। কাকতালীয়ভাবে মাত্র তিন বছর পরেই ডীর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। এরপর আর দেরি না করে সাথে সাথেই তাকে জেল থেকে বের করে আনান এলিজাবেথ, তাকে নিযুক্ত করেন নিজের বিশ্বস্ত পরামর্শক হিসেবে।

পরবর্তীতে রানী ঘোষণা করে জানিয়ে দেন, এরপর থেকে জন ডীর করা সকল ভবিষ্যদ্বাণীই স্রষ্টার কাছ থেকে আসা ‘সাদা জাদু’ (কালো জাদুর বিপরীত অবস্থা) হিসেবে গণ্য হবে। এ ঘোষণা ডীর জাদুচর্চার পথকে সুগম করে দেয়। তিনি পুরোপুরি এতে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের প্রতীক আঁকতেন তিনি, বলতেন এসব নাকি তাকে দেবদূতেরা এসে শিখিয়ে দিয়ে গেছে! লন্ডনস্থ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে গেলে আজও জন ডীর সেসব ক্রিস্টাল বল ও জাদুচর্চার অন্যান্য সামগ্রীর সন্ধান পাওয়া যাবে।

৬) ট্যাসিওগ্রাফি

চা পানের পর তলায় জমে থাকা সামান্য চায়ের পাতি ফেলে দিতে আমরা দ্বিতীয়বার ভাবি না। তবে প্রাচীনকালে চীনে এবং মধ্যযুগে ইউরোপে এই জমে থাকা চায়ের পাতির মাঝেও খুঁজে ফেরা হতো অদেখা ভবিষ্যতের সন্ধান।

Source: Tea Wise

উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, যদি চায়ের সেই পাতিগুলো সাপের মতো আঁকাবাঁকাভাবে ছড়িয়ে থাকতো, তাহলে সেটার মানে দাঁড়াত লোকটির পরিচিতজনদের মাঝে অবিশ্বস্ত এমন কেউ আছে, যে কিনা সামনের দিনগুলোতে তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আবার যদি সেগুলো দেখতে পাহাড়ের মতো মনে হতো, তাহলে এর দ্বারা কিছুদিন পরের কোনো ভ্রমণ কিংবা লক্ষ্য অর্জনের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা বোঝাত। এরকম আরো বিভিন্ন নিয়মই চালু ছিলো এই ট্যাসিওগ্রাফি নিয়ে। আঠার শতকের দিক থেকে ইতালির ভবিষ্যৎ বক্তারা চা পাতি ছেড়ে কফির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছিলো।

৭) নরবলি

নরবলির জন্য কুখ্যাতি আছে অ্যাজটেক ও ইনকা সভ্যতার লোকেদের। তবে সবসময় যে কেবল স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য তারা সেটা করতো, তা কিন্তু নয়। শিশুদেরকে বলি দিয়ে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে গবেষণা করা হতো ভবিষ্যদ্বাণী করার অভিপ্রায়ে।

Source: amantidellastoria.com

বলির শিকার হওয়া মানুষটিকে অমানুষিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হতো। তাদের বুক ধীরে ধীরে চিরে একে একে বের করা হতো বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। সেসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কীভাবে সাজানো থাকতো এবং মৃত ব্যক্তি মরার আগে কীভাবে আর্তনাদ করে গেছে, সেসব যাচাই করে অনাগত দিনগুলো সম্পর্কে অনুমান করতো অ্যাজটেক ও ইনকা সভ্যতার মানুষগুলো।

প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও জাপানেও এমন অদ্ভুত চর্চা প্রচলিত ছিলো। প্রাচীন গ্রীসে অবশ্য এ উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হতো কোনো কুমারী মেয়েকে।

৮) প্রাচীন আয়ারল্যান্ড

প্রাচীনকালে আয়ারল্যান্ডের মানুষেরা ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য নির্ভর করতো প্রকৃতি তথা আকাশের অবস্থা, বায়ুপ্রবাহ ও তারকারাজির বিন্যাসের উপর। ঝড়ো হাওয়ার মাঝে তারা খুঁজে বেড়াত অনাগত দিনের পূর্বাভাস। মাঝে মাঝে গাছের পাতাগুলো অদ্ভুতভাবে জড়ো হয়ে থাকতে দেখলে লোকে ভাবত তাদের পরিবারের উপর শীঘ্রই বুঝি কোনো অসুস্থতা ভর করতে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার দাবি করতো যে, বাতাসের মাঝে তারা ফিসফিসানি শুনতে পায়, যা তাদেরকে জানায় সামনে কেউ মারা যাচ্ছে কিনা!

Source: youtube.com

যখন ঝড়-বৃষ্টি থাকতো না, তখন দিনের বেলায় লোকে ভবিষ্যৎ খুঁজত আকাশের মেঘমালার বিন্যাসের দিকে তাকিয়ে। রাতের বেলায় ঠিক একই কাজ করা হতো ধূমকেতু ও তারকারাজির অবস্থানের উপর ভিত্তি করে।

ফিচার ইমেজ- shadowsmagickplace.blogspot.com

Related Articles